জীবন কখনো পরিপূর্ণ হতে পারে না, কোন এক ডালে আনন্দ পেলে আরেক ডালে গিয়ে কান্না দিয়ে সে হিসেব মিলে যায়। কোন এক প্রকারে যদি আমরা বেঁচে থাকি ভিতরে অন্য কোনো কারনে হয়তো আত্নার মৃত্যু হচ্ছে, এমনই একটি গল্প অর্ধবৃত্ত।
কাকে এ গল্পের প্রধান চরিত্র বলবো, মুনিয়া- রাফি/ নাদিয়া - শফিক - মুকিত / দিপু - সুমি। আমি দ্বিধাগ্রস্ত 😑
প্রত্যেকটি গল্পই তো কোন না কোনো একভাবে অর্ধবৃত্ত ই ছিলো।
মুনিয়া চরিত্র কে কি ভালো দৃষ্টিতে দেখবো নাকি বলে দিবো সে একটা স্বার্থপর। নিজের শান্তির খোজেঁ সে কি মানুষদের ব্যবহার করেছে?কেমন ছিলো সে? রাফিকে কি সে বাচাঁতে পারতো না? জাফরের মতো একজন চাপা মানুষকে ঠকিয়ে কিভাবে সে স্বাভাবিক ছিলো? বা শেষ জীবনেও কেমনে থাকবে? মুনিয়ার আত্নার কি মৃত্যু ঘটেছে?
এ গল্পের দুজনের মানুষের উপর খুব মায়া জন্মছে। শফিক আর জাফর। দুটো মানুষ কত কি বলে মনের মধ্যে, কিন্তু বাহিরে যেনো তাদের হাত পা শিকলে বাঁধা নিস্তেজ হয়ে থাকা। তাদের মতো চাপা মানুষের ভিতরকার কষ্ট বুঝার ক্ষমতা কি এ পৃথিবীতে কারও আছে?
আর সুমি? মানুষ কি আসলে বিপদের আগে জানতে পারে তার সাথে কেমন ঘটবে? সুমি হয়তো জেনে গেছিলো তাই বারাবার দিপুকে নিষেধ করতো। কিন্তু শেষ অবধি।ভালোবাসার পরীক্ষায় সুমি কি পাশ করলে?
পৃথিবীতে মুকিত এর মতো প্রেমিক পাওয়া যায় যেমন করে সে নাদিয়াকে ভালোবাসে বলেছিলো? আসলে কি ভালোবাসা ছিলো?
আরেকপ্রকার প্রেমিক পাওয়া যায় রাফির মতো। মুনিয়া কে পাবে না জেনে ও সে তারসবটুক মুনিয়ার জন্য উৎসর্গ করলো।কি এমন করেছিলো রাফি যে নিজের কবিতাকে প্রান দিয়ে গেলো সে, তার শেষটুকু তার কবিতার সাথে মিলে গেলো
আমি একদিন নিখোঁজ হবে,
উদাত্ত হবো রাত প্রহরে
সড়ক বাতির আবছা আলোয়
খুঁজবে না কেউ এ শহরে।
আসলে কেউ ছিলো না এ শহরে রাফির খোঁজ নেওয়ার! হৃদি কি মনে আড়ালে খুজঁতো রাফিকে?
এ গল্পের সবচেয়ে যে জিনিসটা ভালো।লেগেছে আমরা সাধারণত যে জিনিস গুলা মানতে চাই না। মুনিয়ার তর্কে রাফি সে সুন্দর বাস্তব গুলা ধরে তুলেছে। মানুষ এ জিনিস ভিতরে পোষণ করে রাখে মুখে আনতে চাইনা হয়তো। কারন এগুলা মুখে আনলে মানুষ হয়তো ভুল বুঝবে বা খারাপ ভেবে ফেলবে, রাফি নামক এ চরিত্র কি সুন্দর গোছানোভাবে এসব বাস্তবতা তুলে ধরেছে, তাও নিজের প্রেমিকার সামনে, স্পষ্টবাদী প্রেমিক না হলো কখনো এটা বলা সম্ভব না৷, মুনিয়া আমি তোমাকে তোমার শরীরের জন্য ভালোবাসি, কয়জন প্রেমিক এ সত্য প্রেমিকাকে বলতে পারে?
প্রিয় কিছু লাইন এ উপন্যাসেরঃ
"আমাকে হারাতে দিলে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে ছেয়ে যাবে তোমার শহর"
"যা পাওয়া হয় না, তাই হয়তো আরও বেশি রয়ে যায় চিরকাল "
"প্রেমিক কি বন্ধু নয়? একটু তবে পুরোপুরি নয়।কারন বন্ধুর কাছে জগতের সব কথা বলা যায় কিন্তু প্রেমিকা বা স্ত্রী কে নয়।"
"মানুষ নিজের মুখটা কখনো অন্যের আয়নায় দেখতে চাই না। সে সবসময় নিজের আয়নায় অন্যের মুখ দেখতে চায়।"
" এই যে লোকে লোকারণ্য শহর
সকাল সন্ধ্যা ভিড় ভাট্টা লাগে,
তবুও এমন একলা লাগার মানে
নিজের একটা মানুষ সবার লাগে।"
"পুরুষ যখন পর নারীতে আসক্ত হয় তখন সবচেয়ে রুপবতী স্ত্রী কেও লাগে দাসী -বান্দি। আর স্ত্রী সুরেলা কণ্ঠকে ও মনে হয় হাইড্রলিক হর্ণ। "
অন্যরকম প্লট নিয়ে লেখা একটা বাস্তবধর্মী গল্প। পড়ার আগে শুনেছি গল্পটা ভালো হয়নি,মানুষের মুখে শোনে আমি কেন জানি গল্প পড়ার আগ্রহ হারায় ফেলি না, আগ্রহ আরও বাড়ে কেবল। সে আগ্রহ নিয়ে পড়ে সে পর্যন্ত রাফি নামের একটি অবিশ্বাস্য চরিত্রকে খুজেঁ পেলাম এমন চরিত্র এ শহরে বিরল।
মানুষ উপন্যাস পড়ে নাকি কল্পনার জগত বানাতে পারে, কিন্তু এ লেখকের লেখা পড়ে আমি বাস্তবতা কে স্পর্শ করি। বাস্তবতাকে গভীরভাবে অনুভব করতে পারি। এমন বাস্তব লেখা উপহার দেওয়ার জন্য লেখক আপনাকে ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....