প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৩
প্রকাশনী: সময় প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৭২
বইয়ের মূল্য: ২৫৫ টাকা(রকমারি মূল্য)
আনিসুল হক স্যারের উপন্যাস মা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অনেক বেদনাদায়ক ও মর্মস্পর্শী ঘটনা রচিত হয়েছে। তার কতগুলোই বা আমরা জানি? এমনই এক মর্মস্পর্শী ঘটনা শহীদ আজাদ ও তার মায়ের ঘটনা। শুধু মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নয়, একজন আত্নমর্যাদা সম্পূর্ণ মায়ের কাহিনীও এটি, যিনি দেশের জন্য তার প্রিয় সন্তানকে পর্যন্ত উৎসর্গ করেন।
বিত্তশালী বাবা ইউনুস চৌধুরীর একমাত্র ছেলে আজাদ। মা সাফিয়া বেগমকে নিয়ে তাদের জীবন বেশ ভালোই কাটছিলো। এমন সময় আজাদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন, আজাদের মা স্বামীর ধন-সম্পত্তি ছেড়ে আজাদকে নিয়ে চলে আসেন। জুরাইনের একটা ছোট্ট ঘর থেকে অভাব - অনটন, দুঃখ - দুর্দশার সাথে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ।
আজাদের মা খুব কষ্ট করে আজাদকে এম এ পাশ করান। ঠিক সেই সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজাদের বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে, আজাদও তার৷ মায়ের অনুমতি নিয়ে ঢাকার গেরিলা দলে যোগ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি, ৩০শে আগস্ট ঢাকার কিছু গেরিলা যোদ্ধা পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পরে। যাদের মধ্যে আজাদও ছিলো। হানাদাররা তথ্য বের করার জন্য অকথ্য ও নির্মম নির্যাতন চালায়, কিন্তু এই নির্যাতনের মুখেও আজাদ কিছুই বলেনি।
পাকিস্তানি চর আজাদের মাকে গিয়ে বলে, তিনি যেন আজাদকে গিয়ে বলেন সবকিছু বলে দিতে। আজাদ সবার নাম পরিচয় বলে দিলেই আজাদকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা শুনে আজাদের মা ছুটে গেলেন আজাদের কাছে। না, আজাদকে মুক্ত করার জন্য নয়। বরং তিনি গিয়ে আজাদকে শক্ত হতে বলেন এবং মারের মুখে কারও নাম-পরিচয় বলতে বাড়ন করেন।
আজাদ তার মাকে বলে তার ভাত খেতে ইচ্ছা করে। দুদিন ধরে সে ভাত খায় না। আজাদের মা আজাদকে বলে তিনি পরদিন ভাত নিয়ে আসবেন। কথামতো তিনি পরদিন ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আজাদকে তিনি আর খুঁজে পাননি, আজাদ চলে গিয়েছিলো না ফেরার দেশে।
তারপর সাফিয়া বেগম ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন এবং প্রতিক্ষায় ছিলেন তার ছেলে একদিন ফিরে আসবে। কিন্তু আজাদ আর ফিরে আসেনি। আজাদের মৃত্যুর পর তিনি আর যে কয় বছর বেঁচে ছিলেন কখনো ভাত খাননি। হাঁপানি থাকা সত্ত্বেও মাটিতে শুতেন। কারণ মৃত্যুর আগে তার ছেলে ভাত খেতে পারেনি এবং জেলে মাদুরে শুয়েছে।
১৯৮৫ সালের ৩০শে আগস্ট আজাদের মা মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, তার কবরের নামফলকে তার পরিচয় হিসেবে যেন লেখা হয় ‘শহীদ আজাদের মা’। তাই আজও জুরাইন কবরস্থানে তার কবরের নামফলকে তার পরিচয় হিসেবে লেখা ‘শহীদ আজাদের মা’।
আনিসুল হক স্যার এই কাহিনীটিকে তার লেখার মাধ্যমে সু-নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসটি দেশ-বিদেশে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে বইটির শততম মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। সকল মা এবং সন্তানদের বইটি পড়া উচিত। বইটি আমাদের নতুন করে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করবে।
লেখক সম্পর্কে________________________
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ।
বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে।
তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন।
‘মা’ উপন্যাসটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
সকলে বই পড়ুন, বইয়ের সাথে থাকুন!
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....