বইয়ের নামঃ রিক্তের বেদন।
লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম।
প্রকাশনীঃ জোনাকি প্রকাশনী।
ক্যাটাগরিঃ ছোট গল্প।
মূল্যঃ 100 টাকা।
রকমারিঃ 90 টাকা।
অসংখ্য ছোট গল্প রয়েছে বাংলা সাহিত্যের মাঝে। তার মধ্যে অন্যতম রবিন্দ্রনাথ এবং নজরুল। তবে গল্পের মাঝে সবচেয়ে বেশি গভীরতা, প্রাণ, অনুভূতি দিতে পেরেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। গল্প গুলো থেকে যেমন রয়েছে শিক্ষণীয় কিছু বিষয়, তেমনি রয়েছে অসাধারণ সব মুগ্ধকর চরিত্র! রুচিশীল পাঠকের জন্য রসগোল্লা বললে কম হবে না! চলুন! দেখে আসি কাজী নজরুল ইসলামের ছোট গল্পের দৃশ্য সমূহ।
রিক্তের বেদনের শুরুতেই 'রিক্তের বেদন!' যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিশোরের। কিন্তু বন্ধুর চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সে! পুরো গ্রাম জুড়ে সবার মুখে সেই ছেলেটির যুদ্ধে যাওয়ার গল্প! সবকিছু ছেড়ে দিয়ে, মায়ের বুক খালি করে, সকল স্নেহকে শক্তিতে পরিণত করে ট্রেনে উঠল। কিন্তু চোখের সামনে ভেসে উঠছে এক কিশোরী! সেই ফেলে আসা শাহিদা! আর কি দেখা হবে? যেই শাহিদার সাথে কথা না বলে এক দিন থাকা যেত না সেই শাহিদাকে ছেড়ে আজ দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছে! সে কি পারবে? জীবন দেওয়ার আগ মুহূর্তে কি তাঁর প্রিয় শাহিদার মুখ ভেসে উঠবে না?
নজরুলের প্রথম প্রকাশিত রচনা "বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী"। এ যেন বিরহ মাখা গল্পের শুরু! "অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়" প্রবাদের ব্যখ্যা স্বরুপ ধরা যায় নজরুলের এই বিখ্যাত গল্পটি! গল্পের শেষে হয়তো বক্তার মতো আপনিও কাউকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠবেন "এক গ্লাস জল দিবে ভাই?"
অচেনা এক পথিকের সাথে ভাব হলো "সাঁঝের তারা"র! কিন্তু কেহ কাউকে চিনে না! তবে ছেড়ে যাওয়ার মায়ায় কেদে উঠল কবির চোখ! যেন জন্ম জন্মান্তর ধরে তাঁকে নিয়ে ছোট্ট শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে সে! ক্লান্ত গলায় অজান্তেই শুনা গেল, "বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে, শূন্য ঘাটে একা আমি, পার করে নাও খেয়ার নেয়ে!" তারপর? কোথায় গেল সেই সাঁঝের তারা? আর কি দেখা হবে পাঠকের সাথে? "রাক্ষুসী" তো এক উপন্যাস! (?) কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যেই যেন কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক বেদনা কাতর বুকের অসহায় আর্তনাদের সুর! বিন্দি নামক গৃহবধুর সংসারে যে কিভাবে আগুন লাগল আর কিভাবে মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেল তা পাঠকের চোখের পলকে ঘটে যাওয়ার মতই মনে হবে! স্বামীর মদ খাওয়ার উপর তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু কিসে অভিযোগ? কিসের নেশায় পরে, কোন অভিযোগে, কোন দুঃখে জর্জরিত হয়ে সে এমন ঘৃণিত একটা কাজ করল? যা সে করল তার কি আদৌ কোনো বিচার আছে? সকল প্রশ্নের উত্তর পাঠক খুব সহজেই বইয়ের পাতায় পাবে!
অচেনা এক পথিকের সাথে ভাব হলো "সাঁঝের তারা"র! কিন্তু কেহ কাউকে চিনে না! তবে ছেড়ে যাওয়ার মায়ায় কেদে উঠল কবির চোখ! যেন জন্ম জন্মান্তর ধরে তাঁকে নিয়ে ছোট্ট শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে সে! ক্লান্ত গলায় অজান্তেই শুনা গেল, "বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে, শূন্য ঘাটে একা আমি, পার করে নাও খেয়ার নেয়ে!" তারপর? কোথায় গেল সেই সাঁঝের তারা? আর কি দেখা হবে পাঠকের সাথে? "রাক্ষুসী" তো এক উপন্যাস! (?) কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যেই যেন কবি ফুটিয়ে তুলেছেন এক বেদনা কাতর বুকের অসহায় আর্তনাদের সুর! বিন্দি নামক গৃহবধুর সংসারে যে কিভাবে আগুন লাগল আর কিভাবে মুহুর্তে সব শেষ হয়ে গেল তা পাঠকের চোখের পলকে ঘটে যাওয়ার মতই মনে হবে! স্বামীর মদ খাওয়ার উপর তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু কিসে অভিযোগ? কিসের নেশায় পরে, কোন অভিযোগে, কোন দুঃখে জর্জরিত হয়ে সে এমন ঘৃণিত একটা কাজ করল? যা সে করল তার কি আদৌ কোনো বিচার আছে? সকল প্রশ্নের উত্তর পাঠক খুব সহজেই বইয়ের পাতায় পাবে!
'সালেক' নামক গল্পে লেখক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। সকালে বাদশাহী করে বিকেলে ফকির হওয়ার সম্ভাবনা কি নেহাতই কম? ঠিক এই প্রশ্নের জবাবেই নজরুল এক কাজী সাহেবকে বানালেন 'মাতাল হাফিজ'! কিন্তু কিভাবে? কোন দৃশ্যের সম্মুখীন হয়ে কাজীর এই দুরবস্থা? জানতে হলে বইটি পড়তে হবে। "স্বামীহারা" গল্প পড়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি! এটাকে হাতে চাঁদ পাওয়া এক বধুর চাঁদ হারানোর বেদনা মিশ্রিত গল্প বললেও ভুল হবে না! কবরস্থানের কবরে শুয়ে আছে ভাই বোন! বিরতীহিন ভাবে পড়ছে গাছের পাতা! সেই সাথে পড়ছে চোখের জল! সব শেষ করল এলাকায় আসা এক অলুক্ষনে রাক্ষুসী 'কলেরা' রোগ! সেই রোগে পড়ে কত মা অসহায় হলো, কত বধূ হল বিধবা! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গল্পের মোড় খুব সহজেই ঘুরে গেল অন্যদিকে! বক্তার বর্ণনার সাথে সাথে হয়তো আচমকাই মুখ ফুটে বেরিয়ে আসবে, "কিসের এত বাহাদুরি? সবাই তো একদিন কবরে যেতে হবে!" মা চলে যাওয়ার পর এক সম্বল সেই স্বামী! কলেরাতে সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও সে রয়ে গেল মনের শক্তিতে! হঠাৎ ঘটল এক দুর্ঘটনা!
সব কিছু তছনছ করে দিয়ে গেল! কিন্তু কে সে? বক্তা নাকি অন্য কেউ? আর কাজী নজরুল এমন চমৎকার একটি বই শেষ করছেন শুরুর মতোই! যুদ্ধে যাচ্ছে পথিক। কতজন বাধা দিচ্ছে! কিন্তু সে চলছে মনের জোর নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে! পেরেছে কি সে? নাকি মমতামাখা অসহায় কন্ঠের চিৎকারে ঘুরে দাড়াবে? রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না না সেই তবে একলা চলো রে"র ব্যখ্যা যেন কাজী নজরুল ইসলাম দিলেন। অসাধারণ সমাপ্তি!
রোজা রেখে ক্লান্ত নয়নে কাজী নজরুল ইসলামের ছোট গল্পের মাঝে যেন হারিয়ে গেলাম! দেহ যেন এলিয়ে যাচ্ছে গল্পের মাঝে। পুরো বই জুড়েই বিদ্রোহী, মমতা, বিরহ মাখা আর্তনাদের চিৎকার! আর রাক্ষুসী গল্প পড়ে কিছুক্ষনের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলাম আমি! দৃশ্য চোখের সামনে ভাসার চেষ্টা করলেই যেন শরীর শিউরে ওঠে! অনেক পাঠক কোমল মনে প্রেমে পড়ে যাবে "মেহের-নেগার" নামক চরিত্রের। অনেক অহঙ্কারী হয়তো আজ থেকে নিচু মুখে হাটবে স্বামীহারা এক স্ত্রীর আত্ম চীৎকার শুনে! কবরস্থানের মায়ায় যেন পাঠক চিন্তা করবে, "আজই কবরস্থানের গিয়ে যেয়ারত করতে হবে!" এমন আরোও অনেক অকল্পনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছেন লেখক। যেন আবার প্রেমে পড়লাম কাজী নজরুল ইসলামের। যতই সামনে যাই, ততই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি পৃষ্ঠার কালো অক্ষর গুলোর দিকে! চোখের কয়েক ফোটা জল এসে পৃষ্ঠার এক কোনা হালকা করে ফেলেছে! সবশেষে বরাবরের মতই এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল! এর মধ্যে যে কতটা মমতার, বিরহের, ভালোবাসার, পিছুটানের, বিদ্রোহের আত্ম চীৎকার মিশ্রিত তা যেন নজরুল আর আমি ছাড়া কেউই জানেনা!
মুগ্ধ হতে চান? আপনি কি অলস সময় কাজে লাগিয়ে নিজের অনুভূতির ভান্ডার ভরতে চান? এই বইটি পড়ার জন্য আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি। আর কিছুই বলবো না! শুধু এইটুকুই বলবো যে, 'আমার মতো মুগ্ধ হবেন আপনিও! কথা দিলাম।'
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....