বইয়ের নাম : জোসনার ধূসর আলো।
লেখক : বদরুল মিল্লাত।
বইয়ের ধরণ : সামাজিক উপন্যাস।
প্রকাশনী : নহলী।
প্রথম প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০১৬।
মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা।
কুমিল্লার কাছাকাছি এক প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখানকার প্রভাবশালী একজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান জালালুদ্দিনের ক্ষমতা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা প্রকাশ পেয়েছে উপন্যাসটিতে।
জালালুদ্দিনের মেয়ে আমিনা ও তার বাড়ির লজ মাস্টার সেলিমের স্নিগ্ধ প্রেমের গল্পও উঠে এসেছে সুনিপুণ ভাবে।
পাশাপাশি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিও স্থান পেয়েছে।
লেখক নিখুঁতভাবে হতদরিদ্র জয়নাল, তার স্ত্রী রাজিয়া, পাঁচ বছরের মেয়ে শেফালি ও দুই বছরের ছেলে রহিমের খেয়ে না খেয়ে দিন যাপনের গল্প লিখেছেন। এক পর্যায়ে প্রাক্তন চেয়ারম্যানের অন্যায় অবিচারের মুখোমুখি হয়ে তাদের নিজের ভিটা ছেড়ে ঢাকা শহর চলে যেতে হয়।
আঠারো-উনিশ বছর বয়সী দুঃখী সফুরার মা-বাবা দু'জনেই ঢাকা শহরে থাকে। কিন্তু, তাদের ঠিকঠাক ঠিকানা না জানাতে তার বুড়ো স্বামী মারা যাওয়ার পর সে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে আসে। চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসার পর তার পোয়াতি হওয়া অস্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক৷ এর পেছনে চেয়ারম্যান দায়ী সেটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়।
জালালুুদ্দিন চেয়ারম্যানের সাহায্যেই নির্বাচনে পাশ করা গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের সততা, নিষ্ঠা প্রকাশ পায় উপন্যাসের শেষের দিকে।
বিপদগ্রস্ত সফুরাকে নিরাপদ আশ্রয় দান; জালালুদ্দিনের নির্দেশে তার ফাই ফরমাশ খাটা কিসমত মিয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেলিম যখন মৃত্যুশয্যায় শুয়ে, তখন তাকে বাঁচানোর সব ব্যবস্থা করাসহ এলাকার নানান সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতির মাধ্যমে 'মফিজ চেয়ারম্যান' চরিত্রটি সাজিয়েছেন লেখক।
তাছাড়াও অন্যান্য সব চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা ভাবনার ভিন্নতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মূলত সামাজিক ও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও উপন্যাসটির দীর্ঘ একটা অংশ জুড়ে রয়েছে 'ভালোবাসা'র ছোঁয়া।
উপন্যাসের শুরুতে শুধুমাত্র ভালো কাজে সম্পৃক্ততা দেখানো হলেও ধীরে ধীরে 'ভালো মানুষ' রূপের অন্তরালে আরো একটি নৃশংস ও অমানবিক রূপ যে লুকিয়ে আছে তা প্রকাশ করা হয়েছে 'জালালুদ্দিন' চরিত্রটির মাধ্যমে এবং তার শেষ পরিণতি হয় খুবই নির্মম। যা জানার জন্য উপন্যাসটি পড়ে দেখতে হবে।
চেয়ারম্যানের হুকুমে গুরুতর জখমের পরেও সেলিমের অবচেতন মন আমিনাকে নিয়ে যেরকম সুখ ভাবনা সাজাবে তা পাঠক হৃদয় আবেগপ্রবণ করে তোলবে বলে আশা করি।
উপন্যাসটির শিক্ষণীয় দিক হলো, মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে শেখা এবং মনের ভেতর স্বার্থ লুকিয়ে বাইরের জগতে উদারতা দেখানোর পরিণতি স্বরূপ ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্তি নিজের ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে সেটা জানানো।
আগ্রহীরা কমেন্ট করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....