বইঃ কারাগারে রাতদিন। bangla book review with pdf download

বইঃ কারাগারে রাতদিন।

লেখকঃ  জয়নব আল গাজালী।

কখনো কি এমন হয়েছে আপনার? বই পড়ছেন আর দুই চোখ বেয়ে টেপ-টেপিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। কিংবা কখনো কি এমন হয়েছে কোন বই পড়ছেন যে বইয়ের প্রতিটি বাক্য আপনাকে পরদে পরদে শিহরণ জাগিয়েছে?


একদিন আমার এক ভাইকে বললাম, 

-ভাই কিছুই বই সাজেস্ট করেন। কি বই পড়বো বুঝে উঠতে পারছিনা। 

-তুমি কি কারাগারে রাতদিন পড়েছো?

-নাহ ভাই! পড়ি নাই।

-তাহেলে তো কিছুই পড়ো নাই। 


ভাইয়ের কথায় খানিকটা কৌতূহল নিয়ে বইটি পড়া শুরু করলাম। বইপড়তেছি আর চোখ ভিজে যাচ্ছে পড়তে পড়তে চিন্তা করলাম "এমন লোহমর্ষক ঘটনা কি কোন মহিলার সাথে ঘটতে পারে "? আমার জীবনে এ যাবতকালে কোন বই,সিনেমা, গল্প আমাকে এভাবে অন্তরত্না কাঁপাইনি যতটুকু জায়গা দখল করে বসে আছে এই বইটি। বইয়ের প্রতিটি বাক্য,প্রতিটি পৃষ্ঠায় হৃদয়ে ঢেউ তুলেছে ডোকরান কান্নার উর্মিমালা। 


বই রিভিউঃ- এই বইয়ের কোন রিভিউ হয় না। এই বইয়ের রিভিউ দেওয়ার মতো মন মানসিকতা, শক্তি বা সামর্থ্য কোনটি আমার নেই। শুধুমাত্র পাঠককে বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশের জন্য খানিক কয়েকটি বাক্য প্রকাশ করলাম। একটা বই কখনো এমনভাবে কাউকে নাড়া দিতে পারে বইটি না পড়লে আপনি বুঝবেন না।দ্বীনের জন্য আমরা যারা বই পড়ি বইটি পড়েনি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।


কী এমন আছে বইটিতে- ত্যাগের এক অনুপমদৃষ্টান্ত জয়নাব আল গাজালি।১৯১৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। মিশরের ইসলামি মহিলাসংস্থার সভানেত্রী ছিলেন তিনি।তার সংগঠন করার কারণে ততকালীন মিশরের স্বৈরশাসক জালেম নাসের তাকে অমানবিক নির্যাতন করেন। 


নির্যাতনের কিছু নমুনা উক্ত বইটিতে তিনি তুলে ধরেন। জেনে নেওয়া যাক কী পরিমাণ নির্যাতন করা হতো সেলে তাকে। তার সেলে প্রতিদিন কয়েকদিনের অভুক্ত কুকুর ছাড়া হতো,ফুলপ্যান্ট পরিয়ে পা উপরে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে চাবুক ও হান্টার মারা হতো। সারা শরীরে চাবুকের দাগ। কোন চিকিৎসা করা হতো না। একসময় তার পিঠ ও পা থেকে পুঁজ পড়া শুরু হয় এবং ব্যান্ডেজ করে ব্যান্ডেজের উপর আার হান্টারের আঘাত করা হতো। দিনের পর দিন পানিতে বসিয়ে রাখা হতো। উঠলেই চাবুক, ওযু করার জন্য আবার কোন পানি দেওয়া হতো না,তায়াম্মুম করে নামাজ পড়তে হতো। সিজদায় গেলে তাকে পিটানো হতো। ক্ষুধার্ত ইদুরের পাল ছেড়ে দেয়া হতো। 


আলো অন্ধকারের সংমিশ্রণে মানসিক শাস্তি দেওয়া হতো একপ্রকার ।খাবার বলতে পঁচা বাসি একটি রুটি দেওয়া হতো না খেলেই চাবুক। এবং কি প্রস্রাব পায়খানার কোন সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হতো না। ধর্ষণ এর চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু একটুও সফল হয়নি।আরো কতো কী তবুও তার আর্দেশ থেকে তাকে সরাতে পারেনি। অকৃত্রিম ইসলামের প্রতি ভালোবাসা ছিলো তার। এই মহীয়সী নারী মোট সাতবার নবী(সাঃ) কে স্বপ্ন দেখেছেন। একজন নারীকে কতখানি সমীহীন নির্যাতন করেও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি তা এই বইটি না পড়লে চিন্তায় আসতো না কখনো।


 ইসলামকে যারা মনেপ্রাণে ভালোবাসে তাদের কাছে এই অত্যাচার যেন একটু ঠুনকো মাত্র। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জয়নব আল গাজালী।কারাজীবনে বিচিত্র এই ঘটনাগুলো আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করবে এই আমার বিশ্বাস।একটা জিনিস কী জানেন? আজ ইসলাম পিছিয়ে থাকার কারণ আমাদের ইতিহাস না জানা। কতো অজস্র শহীদের মমতায় ঘিরে আছে আমাদের ইসলাম তা আমরা অনুভবই করতে পারছি না। ভালোবাসা ও সালাম সকল শহীদের প্রতি। নিঃসন্দেহে আমরা সত্যপথের অভিযাত্রী। আজ যারা পশ্চিমা লেন্সের মাধ্যম ইসলামকে ছোট করছে তাদের বিরুদ্ধে এই বইগুলোয় এক একটি হাতিয়ার। সালাম তাদের প্রতিও যাদের মনে অনুবরাবর হলেও ইমানের আলো প্রদীপ্ত রয়েছে।হতেপারে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েতের সৌভাগ্য ভূষিত করবেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ