কমান্ডো by রাজীব হোসেন book review 2021 with author details, boipaw

কমান্ডো by রাজীব হোসেন...

Book Specification

Titleকমান্ডো
Authorরাজীব হোসেন
Publisherনালন্দা
Qualityহার্ডকভার
ISBN9789849509455
Edition1st Published, 2021
Number of Pages278
Countryবাংলাদেশ
Languageবাংলা




"স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও"। 

স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।" "কমান্ডো" বইয়ের লেখক "রাজীব হোসেন" স্যারের সাথে ঠিক এমনটাই হয়েছিল।


রাশিয়ার কার্গো বিমান আন্তানভ-৩২ থেকে ঝাঁপ দেয়ার স্বপ্ন নিশ্চয়ই তাঁকে রাতের পর রাত নির্ঘুম থাকতে আর সেই নির্ঘুম রাতের স্বপ্ন পূরণের সারথী হতে উৎসাহিত করেছিল। কাপ্তাইয়ের জলে হংস শাবক সাঁতার কিংবা শাশুড়ি সংক্রান্ত ঘটনা পাঠে দাঁতে দাঁত চেপে হেসেছি। কারণ তখন ঘড়িতে সময় প্রায় রাত 2 টা বেজে 40 মিনিট। যখন স্যার কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তুমি কেন কমান্ডো হতে চাও? এর উত্তরে স্যার যা বলেছিলেন......উহু সেটা তো বলা যাবেনা। সেটা সিক্রেট... ভেরি ভেরি সিক্রেট! বড় বড় লক্ষ্যগুলোকে কিভাবে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হয় তার একটা জমজমাট শিক্ষা পেয়ে যাবেন। 



বইটি পড়ার একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পোস্তগোলার এক অজানা অধ্যায়ের সাথে আপনি পরিচিত হবেন। বৃষ্টি বিলাসী থেকে শুরু করে দরজায় লাথি মারানি এই বিষয়গুলো আপনাকে বিমোহিত করবে। কমান্ডো ট্রেনিং লাইফের কঠোর নিয়ম আবর্তের মাঝেও যে একটা ভয়ঙ্কর সুন্দর জীবন আছে সেটা একটু একটু করে উপলব্ধি করতে পারছি। এক আহত সৈনিক আর একজোড়া বুট এর গল্প আপনার সাহারা মরুভূমির মতো হৃদয়কে নিশ্চিত মরুদ্যানে পরিণত করবে। 



আনন্দ-বেদনার বিরহ- মিলনে সংঘাত কিংবা খবরদার কমান্ডো, থামবেন না এই শব্দগুলোর বিশেষ্য বিশেষণে মাঝে মাঝে কোথায় যে হারিয়ে যাই তা নিজেও জানিনা। এসএসজি নিয়ে এক অভূতপূর্ব তথ্য পাবেন যা হয়তো অনেকের কাছে অজানা কিংবা অনেকে প্রথমবারের মতো জানতে পারবেন। সেই সাথে অনেক জীবন্ত লিজেন্ডদের সাথে পরিচিত হবেন। কমান্ডো ট্রেনিং এর কষ্টের যাপিত দিনগুলো পড়ে হাজার কষ্টের অনুভূতির মাঝখানে আপনার ঠোঁটের কোণে এক হাস্যজ্জল ভাব ফুটে উঠবে। "কামান্ডো" বই পড়ে একটা জিনিস নতুন করে জানতে পারলাম আর সেটা হল শুধু কমান্ডরাই না জোঁকেরাও প্যারেড করে! ভারী অদ্ভুত তো!! কমান্ডো ট্রেনিং এর দিনলিপি কখনো আপনাকে হাসাবে কখনোবা কাঁদাবে। 



তাই কন্ট্রোল ইউর ইমোশন এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করুন। বইটা পড়ার সময় কতবার যে দাঁতে দাঁত চেপে হেসেছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। এই যেমন ফ্লাইং কিক আর এয়ারবোর্নের অসাধারণ কম্বিনেশন পড়ে বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছি। আর একটা কথা। "রিফাত" নামের একজন বন্ধু আছে। তাঁর বিষয় পড়ার সময়ে ল্যাপ কাথার মধ্যে গিয়ে যতখুশি ততবার হাসবেন। কারণ ঐ হাসি মোটেই থামবার নয়। দীর্ঘ ছয় মাস কষ্টকর ভয়ঙ্কর সুন্দর ট্রেনিং এর মাঝের ঘটনাগুলো বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 



নিশি রাতে নিস্তব্ধ নগরীতে বইটি হাতে নিয়ে যখন পড়া শুরু করতাম তখন মনে হতো আমি এই বাস্তবধর্মী উপজীব্য এর মাঝে ঢুকে গেছি। একটা সময় কষ্টকর মুহূর্ত গুলো যখন সামনে চলে আসলো তখন সেই মুহূর্তগুলো আর কন্ঠনালী থেকে বাইরে বের হচ্ছিল না। এতটা যাতনা এতটা যন্ত্রণা আর কষ্টকর যাত্রা, অনেক সময় আমার কন্ঠনালী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই ভয়ঙ্কর সুন্দর যাত্রার পদচারণায়। সত্যি কথা বলতে কি এক প্রকার লোভে পড়েই বইটা কিনেছি। স্যার যখন তাঁর এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন যে, বইতে এমন কিছু ছবি থাকবে যে গুলো গুগলে বা ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে না। তখন আমাকে আর পায় কে। 



মূলত সেই দুর্লভ অদেখা ছবিগুলোর একটুখানি ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি পেতেই মূলত বইটি কেনা। বইটা যখন রকমারিতে অর্ডার করি তখন আমার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করেছিল। বাংলাদেশের প্যারা-কমান্ডো নিয়ে লেখা প্রথম বই বলে কথা। যখন বইটি পাওয়ার দিনগুলো একটু একটু করে ঘনিয়ে আসছিল তখন আমার মাথায় অনুভূতিগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল। 


অনুভূতিটা এমন, আমি সেই সব প্রথম সারির লোকজনদের একজন যারা বাংলাদেশের আর্মি প্যারা কমান্ডো দূর নিয়ে লেখা সর্বপ্রথম বইটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পড়তে পারবে, স্যারের অটোগ্রাফ আর স্পেশাল গিফট ছুঁয়ে দেখতে পারবে। ভেবেছিলাম বইটা ধীরেসুস্থে পড়ে রিভিউ দেব। তবে কিছুদিন পর স্যারের একটা অ্যানাউন্সমেন্ট অতঃপর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিলাম। 



বইটি ১২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক প্রায় 1 টা 35 মিনিটে পড়া শুরু করি। শেষ করি আজ রাতে ঠিক নয়টা বেজে তিরিশ মিনিটের সময়। বইটি পড়ার সময় কমান্ডো ট্রেনিং এর একটা টেকনিক ব্যবহার করেছিলাম। মানে টার্গেট কে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিয়েছিলাম। ছোটবেলা যখন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম তখন পথিমধ্যে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ দেখতে পেতাম। তখন হা করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৃষ্টি সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। 



পরে মনে মনে একটা সময় কল্পনা করতাম একদিন আমিও সেখানে পড়বো। কিন্তু ভাগ্য অন্যদিকে মোড় নিল। আমি "হেল কমান্ডো" বইটি এখনও পড়িনি কিন্তু রাজীব স্যারের লেখা "কমান্ডো" করি ঠিকই পড়ে ফেলেছি। এটা আমার জীবনে একটা অন্যরকম আনন্দময় সুখ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার আপনার মত সাধারন মানুষ হয়তো আপন ছায়া দেখেই ভয় দু'কদম পিছিয়ে যাই। কিন্তু কমান্ডারা প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুকে হাতছানি দিয়ে আসে। তাঁদের জীবনে ভয় ডর বলে কিছুই থাকেনা। তাঁরা পরিণত হয় রক্তমাংসের যন্ত্র মানবে। 


আমি বিশ্বাস করি 'হেল কমান্ডো' যেমন কয়েক প্রজন্মকে কমান্ডো হতে উদ্বুদ্ধ করেছে ঠিক তেমনি স্যারের "কমান্ডো" বইটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম কে কামান্ডো হতে উদ্বুদ্ধ করে যাবে। Happy


review by:- Azmal Hosain



লেখক সম্পর্কে____________________________


Rajib Hossain-এর লেখার পরিধি বিচিত্র। গ্রামে জন্ম নেয়া এবং সেখানে ক্ষেতের আইলে দৌড়ে বেড়ে ওঠার কারণে, দস্যিপনায় ভরা স্মৃতিমুখর শৈশব। লুকিয়ে মাছ ধরা, আম চুরি করা আর তল্লাট চষে বেড়ানো সেই শিশু, তার কৈশোরে এসে পাড়ি জমায় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের বিস্তৃত প্রাঙ্গনে। ১৭৫ একরের চারণভূমিতে ভিত গড়ে ওঠা। 


এক সময় সেনাবাহিনীতে যোগদান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ আর্মি স্পেশাল ফোর্সে কাজ করার সুযোগ হয়। সেনা পরবর্তী দ্বিতীয় জীবনে সুন্দরবনের গহীনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কঞ্জারভেসন প্রজেক্টে কাজ করার সুবাদে, গহীন জঙ্গলের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন আন্তর্জাতিক আল্ট্রা ম্যারাথন রানার হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। এহেন বিচিত্র কর্মজীবন হবার কারণে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা বাবা খন্দকার আবু হোসেন একজন রাজনীতিবিদ এবং মা শামসুন্নাহার একজন শিক্ষিকা ও নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী হবার কারণে, প্রান্তিক মানুষের জীবনের সাথে জীবনভর সখ্যতা। 

জগত সংসারের অনেক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পথের অভিযাত্রী রাজীব হোসেন কবিতা, রম্য রচনা, ভ্রমণ কাহিনী, এডভেঞ্চার, প্রকৃতি কিংবা মিলিটারি বিষয়ে লিখলেও- প্রথম বইয়ের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন নিজের লাইফ কোডঃ “কমান্ডো”। লম্বা সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে খণ্ড আকারে প্রকাশ পাওয়া এই বইটির পাঠক চাহিদা থাকায়, বইটির আয়োজন। লক্ষ্য- তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি সম্মান ও পরিশ্রমের জীবনের চিত্র তুলে ধরা। 

যাত্রা সবে শুরু হলো। তিনি চান, সামনের দিনগুলোতে পাঠকের আত্মার কাছে পৌঁছানোর লেখা নিয়ে আসতে, যেন মানুষের বই পড়ার অভ্যাস আরও পোক্ত হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ