আমার বারবার মনে হয়, আসলে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়েই মনে হয়েছে, আমার রব আল্লাহ তায়ালা আমাকে বোধ হয় অনেক বেশী ভালোবাসেন। এতো ভালোবাসা পাওয়ার মত তেমন কিছুই করতে পারিনি আমি, তারপরও তাঁর ভালোবাসার ছায়া আমাকে আন্দোলিত করে, নিজের অপারগতার কথা ভেবে ভেবে কাতর হই। জীবনের পরতে পরতে তাঁর যে রহমত ও বারাকাহ পেয়েছি, পেয়েই যাচ্ছি, তার শুকরিয়া জানানোর যোগ্যতাই আমার নেই আসলে। তবে মনের গভীর থেকে সুগভীর আবেগ মিশিয়ে অস্ফূটস্বরে উচ্চারণ করে যেতে চাই- "আলহামদুলিল্লাহ"।
জীবনের এই স্তরে এসে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্বে মহান মনিব আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি আবারও তাঁর বিশেষ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এক জান্নাতি উপহার তিনি পাঠিয়েছেন আমার জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য। আল্লাহ তায়ালার যত্ন করে গড়া দ্বীনদার, বিনয়ী, সদা হাস্যোজ্জ্বল, পরিশ্রমী, আত্মীয়তার হক আদায়ে প্রয়াসী- জান্নাতি এ গিফটটি আমার কাছে এসে পৌঁছেছে গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায়। 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে রিসিভ করে নিয়েছি, প্রিয়ভাজন মানুষদের একটি প্রতিনিধিত্বশীল অংশকে সামনে রেখে। 'আলহামদুলিল্লাহ', পড়ার আগে এক মুহুর্তের জন্য চোখ বন্ধ করেছিলাম, সম্পূর্ণ মুতাওয়াজ্জা ছিল আরশের দিকে; এতো দূরের পথ পাড়ি দিতে এক মুহুর্তই যথেষ্ট ছিল, সুবহানাল্লাহ।
অত:পর আমীরে জামায়াতের আবেগঘন মুনাযাতের অসাধারণ আকুতিগুলো আমার হৃদয়ের গহীনে অনুভব করছিলাম। আমীরে জামায়াতের সাথে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, শশুর, সেক্রেটারী জেনারেল, প্রিয় সংগঠন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সেক্রেটারী জেনারেল, আত্মীয় স্বজনসহ আল্লাহর দ্বীনের অগ্রসেনানীরা হাত তুলে আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য চাইলেন। রবের করুণা চেয়ে 'দুর্বল মানুষ হিসেবে আমি' কাতর হয়ে পড়ছিলাম ক্ষণে ক্ষণে। হৃদয়ের সাথে চোখের যে গভীর সম্পর্ক আছে, তাও টের পেলাম সন্তর্পণে। জানি, সব কিছুর মালিক তিনিই, তিনিই দাতা আর আমরা গ্রহিতা; তিনিই সবল, আমরা দুর্বল; তাই তাঁর কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে হৃদয়টা আমার ব্যাকুল না হয়ে পারছিল না।
সম্বন্ধ চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে মোহরানা নির্ধারণ, অনুষ্ঠান আয়োজনসহ গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো সিদ্ধান্ত দুই পরিবার ও সংগঠনের সাবলীল ঐক্যমতে সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমীরে জামায়াত তাঁর ব্যস্ত সময়ের মাঝেও ঘটকের (প্রিয় আরিফ ভাই, আমার বন্ধু ও সাংগঠনিক ভাই) নিকট থেকে প্রাপ্ত বায়োডাটা দেখা থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত প্রত্যেকটি পর্যায়ে যেভাবে সরাসরি শারিরীকভাবে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণ করে সহযোগিতা করেছেন, ভাবতে গেলে কুল কিনারা পাইনা, শুধু প্রশ্ন মনে আসে, 'কিভাবে সম্ভব'! আমীরে জামায়াতের এই অংশগ্রহণ দেখে শ্রদ্ধেয় শশুর কমেন্ট করেছেন, "আমীরে জামায়াত বোধ হয় সিরাজকে একটু বেশীই স্নেহ করেন"। আমার পরিবারের সবাই খুব গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে আশ্চর্যান্বিত হৃদয়ে উনার এই অংশগ্রহণকে স্মরণ করেছেন এবং উনার জন্য দোয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আমার ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর থেকে দেশ বিদেশের আমার ভালোবাসার মানুষগুলো এই আনন্দের সংবাদটির প্রতিক্ষায় ছিলেন বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সবাইকে এই ক্ষণে সরাসরি পাশে দেখতে পেলে অনেক বেশী আনন্দিত হতাম। কিন্তু সার্বিক পরিবেশের কারণে সিদ্ধান্তের আলোকেই সীমিত সংখ্যক প্রতিনিধিত্বশীলদের নিয়ে আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়েছে। যাদেরকে বলতে পারিনি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা মিষ্টি অভিমান করলেও তাদের ভালোবাসার দাবীদার এ ক্ষুদ্র মানুষটির প্রতি মনে কোনই কষ্ট রাখবেন না। বরং ভালোবাসা ও দোয়া আগের চেয়েও বাড়িয়ে দেবেন।
সাক্ষাৎপর্বে আপনাদের নতুন আত্মীয়ার নিকট জানতে চেয়েছিলাম, "কেমন বর প্রত্যাশা করেন?" জবাব এসেছিল, "এমন কেউ, যার হাতটি ধরে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ"। উনার সেই চাওয়ার সাথে আমার আরও দুইটি চাওয়া আছে। দুনিয়াতে একটি জান্নাতী সংসার, তার হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ আর চিরকাল সেখানে আপনাদের প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের থাকার সুযোগ। আপনাদের পাশে আমাদের এই নব দম্পতিকে জান্নাতে রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়াটা করতে ভুলবেন না আশা করি....
📝কনটেন্টটি লিখেছেন:- ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....