স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে bd book review with pdf download ll boipaw.com


পিনাকী দাদার বইটা হাতে পেয়েছি কয়েকদিন আগে।লকডাউনের দুই দিনে পড়া শেষ করলাম।ওনার পরিচিত স্টাইলে মানে সহজ ভাষায় , বস্তুনিষ্ঠ ও যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত বর্ননা।


একসময় রাজা বাদশাহরা ইতিহাস লিখাতেন নিজেদের শৌর্য,বীর্য প্রকাশের জন্য।সেই পথ পাড়ি দিয়ে ইতিহাস বহুদূর এসেছে।এখন আপনি যা পাবেন তা একেকটি মহাআখ্যানের (গ্রান্ড নেরেটিভ) কে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা।কাজেই একই সময়ের ইতিহাসের পাঠ এবং প্রতিপাঠ দুটোই পাবেন আপনি খুঁজলে।এই বইয়েও আপনি আখ্যান খুঁজে পেতে পারেন আবার না ও পেতে পারেন।


তত্ত্বের কথা বাদ দেই।বই প্রসঙ্গে আসি।বইটির নাম "স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ"। সময়কাল পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পন থেকে বঙ্গবন্ধুর ট্রেজিক ডিমাইজ পর্যন্ত।মোট দশটি অধ্যায় এবং প্রতিটি অধ্যায়  প্রয়োজন মাফিক অনুচ্ছেদে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায় শেষেই প্রয়োজনীয় বরাত সংযুক্ত।একজন পাঠকের জন্য খুবই জরুরী যেটা।উপরি পাওনা আছে কিছু দুর্লভ ছবি এবং সাথে পরিচিতি ও সংক্ষিপ্ত নোট।মানে, বইটা পুর্নাঙ্গ করার সবরকম চেষ্টাই করেছেন দাদা।


স্বাধীনতার সূবর্নজয়ন্তী পালিত হলো।সময় কিভাবে চলে যায়! দেখতে দেখতে আমাদের বয়সও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।এতটা সময় পরে এসে একটা সময়কে মলাটবদ্ধ করার কাজটা মোটেই সহজ কাজ নয়।অনেক পড়তে হয়,অনেক ঘাটাঘাটিও করতে হয়।পিনাকী দাদাও সেই চেষ্টার কমতি রাখেন নাই।এই ক্ষেত্রে হতেপারে উনি দেশে থাকলে আরো কিছু বই ঘাটতে পারতেন, কিছু নতুন তথ্যও যোগ হতে পারতো।তবে এর জন্য বইয়ের কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি।অন্ততঃ উনি যা বলতে চেয়েছেন তা পরিস্কার করেই  উপস্থাপন করতে পেরেছেন।


সব ঘটনাই কোন না কোন বই,ম্যাগাজিন,দৈনিক  থেকে নেয়।কাজেই চাইলেই বইটিকে কল্পকাহিনী বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। তবে বইটার নতুনত্ব কী?


হ্যাঁ, জরুরী প্রশ্ন এটাই।আপনি অনেক বই পড়ে যা জানবেন, একটা বইয়ে ক্রমানুসারে তা খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করার কৃতিত্ব ওনাকে দিতেই হয়।বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা,ইস্যু তিনি যত্ন সহকারে ক্রমান্বয়ে লিপিবদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন এবং আমি মনেকরি এর বাইরে আর তেমন কিছু বাদ নেই।এরকম পূর্নাঙ্গ বই এই প্রথম,এটাও বোধকরি সত্য।


স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রজন্ম প্রায় শেষ হয়ে আসছে।আমরা যারা সেই সময়ে খুবই ছোট ছিলাম,অনেক কিছু বুঝার মতো বয়স হয় নাই,তাদের কাছেও সেই সময়টা ধূসর প্রায়।আর নবপ্রজন্মের কাছেতো পুরোটাই এক ফ্যান্টাসি।


এই ফ্যান্টাসি থেকে বেরিয়ে আসতে বইটা একটু হলেও কাজে লাগবে।এর মানে এই না যে, তখন  শুধু ভুলই করেছেন আমাদের অগ্রজরা।হয়তো ওনাদের ভাবনা আর কাজ একবিন্দুতে মিলতে পারে নাই।বঙ্গবন্ধু প্রশাসনের যে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতা ছিল এটাতো সত্য।আমলাতন্ত্রও ততটা সবল ছিল না।তদুপরি ছিল দেশ স্বাধীনকরা একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুন যারা নানা গোষ্ঠী থেকে এসেছেন,যাদের চাওয়া এবং পাওয়ার স্বপ্নেও ছিল ভিন্নতা।কেউ বাঁকা পথে সাফল্য চেয়েছেন-পেয়েছেন, কেউ হতাশ হয়ে অস্ত্রের ভাষায় মিটাতে চেয়েছেন লাভালাভের হিসাব।যুদ্ধে জয়ী, সদ্য স্বাধীন,যুদ্ধ বিধ্বস্থ যেকোন দেশের পরিচিত ফেনোমেনান ই এইগুলি।


এতসব টানাপোড়েনের মাঝ দিয়ে সময় কেটেছে।কিছু অনাকাঙ্খিত ভুল, ত্রুটি,কিছু রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত.... সবই হয়েছে তখন।মোটকথা একটা ইনসাফভিত্তিক সমাজ বা উদারনৈতিক সমাজ আর রাষ্ট্র তৈরির সুন্দর মওকা আমাদের অগ্রজরা কিছুটা হেলায় নষ্ট করেছেন।অবশ্য এর বীজ লুকিয়েছিল স্বাধীনতা .যুদ্ধের মাঝেই।প্রতিটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পরিনতি এমনই হয়।যখন চুড়ান্ত বিজয়ের পর সব গোষ্ঠী নিজ নিজ হিস্যা বুঝে নিতে চান তখনই সৃষ্টি হয় কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।আমাদেরও তাই হয়েছে।সেটা ভুল কি শুদ্ধ ছিল সেই আলোচনা করে লাভ নেই আর।তখন তেমনটা হয়েছে এটাই সত্য।আর বইটা এই জিনিসগুলিই তুলে ধরতে চেয়েছে।কোন ব্যক্তিবিশেষকে হিরো বা ভিলেন বানাবার মিশন নয় এই বই।অন্তত আমার এটাই মনেহয়েছে।


এই চাওয়া, পাওয়া, না পাওয়ার দ্বন্দগুলি যদি মাথায় রাখেন তাহলে বইটা পড়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারবেন।


আমাদের নবপ্রজন্ম তাদের অতীত জানতে চায়।মিলিয়ে দেখতে চায় চলমান ক্ষমতাভাস্যের সাথে।এই ক্ষেত্রে বইটা সহায়ক হবে।এবং বইয়ের ব্যাপক চাহিদাও সেটাই প্রমান করে।সময়ের প্রয়োজন ধরতে পারা একজন সচেতন মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য।এই ক্ষেত্রে পিনাকী দাদা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটিই করেছেন।


আশাকরি ৭৫ পরবর্তী ইতিহাসও আসবে মলাটবদ্ধ হয়ে আগামীতে।সেই প্রত্যাশা এবং লেখক,প্রকাশক,পাঠক সবার জন্য শুভকামনা।।

ফুটনোট : একটু খেয়াল রাখবেন,বইয়ে বিধৃত অনেক ঘটনারই ভিন্নতর বয়ানের অস্তিত্বও থাকা  সম্ভব এবং আছেও।লেখক তার ইচ্ছামাফিক যেকোন একটা বয়ান উপস্থাপন করেন। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও সেটা সত্য।যেহেতু এটা কোন বিশেষ ঘটনার পূর্বাপর আলোচনার বই নয় তাই আন্তঃবয়ানের আলোচনা, সমালোচনা এখানে পাবেন না।একটি নির্দিষ্ট ঘটনার একটি বয়ানই পাবেন।

রিভিউটি লিখেছেন কাজী মাহমুদুল হক।পিনাকী ভট্টাচার্য

পিনাকী ভট্টাচার্য


বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলা বগুড়ার এক বহুমাত্রিক প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব ডঃ পিনাকী ভট্টাচার্য। তার অনেকগুলো পরিচয়। তিনি জনপ্রিয় মূলত একজন ব্লগার এবং অনলাইন সোশ্যাল এক্টিভিস্ট হিসেবে। মানবাধিকার রক্ষায় একজন প্রতিবাদী চরিত্র তিনি। 

চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র হয়েও চিকিৎসক পেশাকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে বেছে নিয়েছেন শিল্পসত্ত্বাকে, মনোনিবেশ করেছেন সাহিত্য রচনায়। তিনি বাংলাদেশের একজন লেখক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই পিনাকী ভট্টাচার্য রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। যেকোনো অপরাধ, অনাচার, শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সদা সোচ্চার। 

তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক অথবা টুইটার সবসময়ই গরম থাকে ক্ষমতায় থাকা সরকারের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং চলমান অপ্রীতিকর ঘটনার আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে। কৌতুকবোধসম্পন্ন এবং ব্যঙ্গাত্বক লেখনীর জন্য তিনি কিছুটা বিতর্কিতও বটে। তাঁর এমন চাঁচাছোলা লেখনীর কারণে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন কোনো কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে। কিন্তু কেউই তার কলম থামাতে পারেনি। 

পাঠকবৃন্দ লেখক পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখায় যেমন খুঁজে পাবেন চলমান রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, দর্শন, কিংবা হারানো ইতিহাসের চিত্র, তেমনি স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়েও জানতে পারবেন নতুন নতুন তথ্য। পিনাকী ভট্টাচার্য এর বই সমগ্র, যেমন; মার্কিন ডকুমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সোনার বাংলার রূপালী কথা, ভারতীয় দর্শনের মজার পাঠ, নানা রঙের রবীন্দ্রনাথ, ধর্ম ও নাস্তিকতা বিষয়ে বাঙালি কমিউনিস্টদের ভ্রান্তিপর্ব প্রভৃতি তার সাড়া জাগানো রচনা। পিনাকী ভট্টাচার্য এর বই সমূহ সংখ্যায় প্রায় ২০টি। 

নেতিবাচক এবং ইতিবাচক, দু’ভাবেই বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অনুসরণকারীর সংখ্যা দু’লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ