ইমাম সিরিজ- বই রিভিউ


ইমাম সিরিজ-

১ম খণ্ড: ইমাম আবু হানিফা রাহি.

২য় খণ্ড: ইমাম মালিক রাহি .

৩য় খণ্ড: ইমাম শাফিয়ি রাহি.

৪র্থ খণ্ড: ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহি.

৫ম খণ্ড: ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহি.

৬ষ্ঠ খণ্ড: ইমাম হাসান আল-বাসরি রাহি.

প্রকাশনীঃ সমকালীন প্রকাশন

সংকলনঃ আবুল হাসানাত কাসিম, আব্দুল বারি, আব্দুল্লাহ মাহমুদ, আব্দুল্লাহিল মামুন, যোবায়ের নাজাত

সম্পাদনাঃ আকরাম হোসাইন

প্রচ্ছদ- সমকালীন গ্রাফিক্স টীম

মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৯৪৪


তারাই মোদের পূর্বসূরি,

যাদের নিয়ে গর্ব করি।

কোন মুখেতে করো বড়াই?

লও তো দেখি তাদের জুড়ি.!


১ম খণ্ড: ইমাম আবু হানিফা রাহি-

নুমান, নামটা না শোনার মতই। এটাই যে তার আসল। কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে ইলমের প্রতি প্রবল আগ্রহের ফলশ্রুতিতে হাদীস ও ফকিহ শাস্ত্রে উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেন। তার মধ্যে জ্ঞানের প্রতি অসাধারন প্রজ্ঞার জ্যোতি দেখা গিয়েছিলো।

ইমাম আবু হানিফা মোট ০৮ জন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন।

ইমাম আবু হানিফার রচিত অনেকগুলো গ্রন্থের মধ্যে কিতাবুল আসার ও আল ফিকহুল আকবার প্রধানতম।

একবার ইমাম মালিককে ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি এমন একজন বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব, তুমি যদি এই পাথরের খুঁঢি নিয়ে তার সাথে বিতর্ক শুরু করো, তবে আমি নিশ্চিত, তিনি চাইলে এই খুটিটিকে স্বর্ণের তৈরি বলে প্রমাণ করতে পারবেন ৷


২য় খণ্ড: ইমাম মালিকের (রাহি:) পুরো নাম ছিলো মালিক ইবনে আনাস।

তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিলো অসাধারণ। আধুনিক ভাষায় যাকে বলে Photographic Memory. অর্থাৎ, কোনো কিছু শোনামাত্র মুখস্ত করে নেবার দক্ষতা। ইমাম মালিক (রাহি:) হাদীসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কিতাব সংকলন করেন। তাঁর কিতাবের নাম ছিলো ‘আল-মুয়াত্তা’। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমেরও আগে এটি রচিত। প্রতিষ্ঠিত চার মাজহাবের তৃতীয় ইমাম, ইমাম আশ-শাফে’ঈ (রাহি:) ছিলেন ইমাম মালিকের (রাহি:) ছাত্র। ইমাম আশ-শাফে’ঈ তাঁর শিক্ষক সম্পর্কে মন্তব্য করেন: “হাদীসের ক্ষেত্রে ইমাম মালিক তারকাতুল্য। তারকা দেখে যেমন পথ চেনা যায়, তেমনি তাঁর মতামতের আলোকে হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাই করা যায়।


৩য় খণ্ড: ইমাম শাফিয়ি রাহি- ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর উপাধি হল, ‘‘নাসিরুল হাদীস’’ হাদীসের সাহায্যকারী বা সহায়ক, কারণ হাদীস সংগ্রহ, সংকলন, বিশেষ করে হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ে তিনি সর্ব প্রথম অবদান রাখেন, তিনিই সর্ব প্রথম হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা প্রণয়নে কলম ধরেন ‘‘আর রিসালাহ ও আল উম্ম’’ গ্রন্থদ্বয়ে। অতঃপর সে পথ ধরেই পরবর্তী ইমামগণ অগ্রসর হন। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ছোট কালেই পিতাকে হারিয়ে ইয়াতীম হয়ে যান। পিতা মারা গেলে বিচক্ষণ মা তাকে দু’বছর বয়সে মক্কার পার্শ্ববর্তী নিয়ে আসলে তিনি কুরআন মুখস্ত করায় মনোনিবেশ হন এবং সাত বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করেন। জ্ঞানপিপাসু ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর এক ব্যক্তি বা অঞ্চল হতে জ্ঞান শিক্ষা করে পিপাসা নিবারণ হয়নি, তাই তিনি এক ব্যক্তি হতে আরেক ব্যক্তি এবং এক অঞ্চল হতে আরেক অঞ্চলে জ্ঞানারহনে ভ্রমণ করেছেন, সাথে সাথে দ্বীন ও জ্ঞান প্রচার ও প্রসারেরও কোন কমতি হয়নি। ইমামুল মাদীনাহ ইমাম মালিক (রহঃ ‘‘) বলেন আমি এ যুবক (ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মত অধিক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান আর কোন কোরাইশীকে পাইনি।

৪র্থ খণ্ড: ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহি- মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহি.)-এর মাযহাব অনুসরণ করা হয়। যে কারণে আরব অঞ্চলের বাসিন্দারা হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহি.) ১৬৪ হিজরি মোতাবেক ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। বিশুদ্ধ হাদীসের সন্ধানে তিনি ছিলেন পাগলপারা। হাদীস সংগ্রহের লক্ষ্যে তিনি কুফা, বসরা, মক্কা, মদীনা, মরক্কো, সিরিয়া, ইয়েমেন, আলজেরিয়া ও ইরানে ভ্রমণ করেন। এসব স্থান থেকে তিনি প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেন। সুফিয়ান ইবনু ইয়াইনা, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ কাত্তান ও ওয়াকি ইবনুল জাররাহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহীহ হাদীস পাঠ করেন। ইমাম আহমাদ ছিলেন একজন সুবক্তা। তিনি ছিলেন চলমান জ্ঞানসাগর। তিনি সবসময় রাসূলের মহান সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত একটি বাক্য ”দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা, আর কাফিরের জন্য জান্নাতস্বরূপ” আওড়াতেন।


৫ম খণ্ড: ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহি- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) উম্মতদের ও বুযুর্গদের একজন, যাদের নাম আসলেই মনের মাঝে বিশ্বাস ও ভালোবাসার ফোয়ারা অনুভূত হতে থাকে। তিনি হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বলা হয় তিনি ওই যুগের বুযুর্গ যখন সবেমাত্র রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই দুনিয়া থেকে বিদায়ের শত বছর পার হয়েছিল। “ইমাম আওযায়ী রহ. এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারককে দেখেছ? লোকটি বলল, জ্বী না। আওযায়ী রহ. বললেন, যদি তুমি তাঁকে দেখতে তবে তোমার চোখ শীতল হয়ে যেত!” ইসলামের মহান এই ব্যক্তিত্বের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক কল্যাণ একত্র করেছিলেন। ১১৮ হিজরীতে জন্ম নেওয়ায় কল্যাণের যুগ পেয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করে পরবর্তীদের জন্যে আদর্শ হয়ে আছেন। ইমাম নববী রহ. তাঁর প্রশংসায় বলেছেন, ‘যার আলোচনা দ্বারা রহমত অবতীর্ণ হয় ও যার ভালোবাসা দ্বারা ক্ষমার আশা করা যায়।

৬ষ্ঠ খণ্ড: ইমাম হাসান আল-বাসরি রাহি- হাসান বসরি’র পুরো নাম আল হাসান ইবনে আবিল হাসান আল বসরি। তাঁর জীবনকাল ৬৪২ – ৭২৮ খ্রীস্টাব্দ। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক। হাসান বসরী অনেক সাহাবির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বলা হয় যে, বদর যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণকারী সত্তরজন সাহাবীর সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেছিলেন। সুফি সাধনার দিক দিয়ে তিনি হযরত আলীর অনুসারী ছিলেন।[ তিনি ছিলেন তাঁর প্রজন্মের অন্যতম প্রভাবশালী সুফি ব্যক্তিত্ব । তিনি ১১০ হিজরি সালের ৫ রজব তারিখে ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সমগ্র বসরার প্রায় সকল মানুষ তাঁর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। এই কারণে আসরের নামাজের সময় বসরার জামে মসজিদ খালি ছিল। বসরার ইতিহাসে এমন ঘটনা ছিল এটাই প্রথম। তাঁর ব্যক্তিত্ব সমসাময়িক সুফি সাধকদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।


রিভিউ লেখার জন্য সর্বোচ্চ শব্দসীমা মাত্র ৮০০, কিন্তু লেখতে বসার পর মনে হলো ৮০০০০০০ শব্দেও শেষ হবে না। আরও অনেক বিষয়ের বর্ণনা অল্প কথায় বলা সম্ভবপর নয়। তাই সবাইকে বইগুলো সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ