বইঃ নবীজি সা. যেমন ছিলেন তিনি লেখকঃ ড. আয়িব আল-কারনী book review

বইঃ নবীজি সা. যেমন ছিলেন তিনি

লেখকঃ ড. আয়িব আল-কারনী

অনুবাদকঃ মুরসালিন নিলয়

সম্পাদনাঃ আকরাম হোসাইন, আবুল হাসানাত

প্রকাশনীঃ সমকালীন প্রকাশন

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২০১

প্রচ্ছদ মূল্যঃ ৩৩৪৳ 


#পাঠপূর্ব_প্রতিক্রিয়াঃ

অনেক আগে সংগ্রহ করা বই। কিন্তু পড়া হয়নি। যেহেতু নিয়ত দুই মাস শুধু সীরাত পড়ব। তাই দেরি না করে শুরু করে দিলাম। 


#সংক্ষিপ্ত_লেখক_পরিচিতিঃ

আয়িব ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনি আল-কারনী। আরববিশ্বের প্রখ্যাত আলিম, বিশ্ববরেণ্য ও পাঠকনন্দিত একজন তারকা লেখক। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে যিনি ড. আয়িব আল-আরনী নামেই সমাধিক পরিচিত। ১৩৭৯ হিজরীতে সৌদি আরবের দক্ষিণ অঞ্চলের মাজদূ আল-আরনী গোত্রে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেছেন রিয়াদের 'ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সাউদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়' এ। হিজরী ১৪০৩-১৪০৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি এখান থেকেই 'উসুল আদ-দ্বীন' এর ওপর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৪০৮ হিজরীতে তিনি 'উচ্চতর হাদীসশাস্ত্রে' স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৪২২ হিজরীতে তিনি লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। 


#কাহিনী_সংক্ষেপঃ

নবীজি সা. আমাদের জন্য অসংখ্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন। মানবজাতির জন্য বয়ে এনেছেন অজস্র আনন্দবার্তা। আর এর মধ্যে সব চেয়ে বড় সুসংবাদ ছিল মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের আহ্বান। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারার চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে? রাসূল সা. এর আগমনের আগে মানুষ অন্ধকার ও কুফরের যুগে বাস করত। তাদের সকল চিন্তা কেবল এই দুনিয়া ও পার্থিব জীবন কেন্দ্রিক ছিল। উদ্দেশ্যহীনভাবে তারা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিল এই বিশ্বাসে যে, মৃত্যুই শেষ। মৃত্যুর পর শুধুই শূন্যতা। জান্নাত বা জাহান্নাম বলতে কিছু নেই। তা নবীজি সা. যখন পরকালের সুসংবাদ নিয়ে হাজির হন তখন তারা তাদের রবের কৃপায় জান্নাতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তাদের এই স্বপ্ন ছিল আসমান ও যমীনের চেয়েও অধিক প্রশস্ত। তাদের রবের ব্যাপারে সুসংবাদ তো তিনিই এনেছেন।


#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ

বইটির প্রতিপাদ্য বিষয় সাধারণ কারও জীবনী নয়; বরং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ সা. এর জীবনচরিত। বইটিতে কোন মেকি নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করা হয়নি। বইটির প্রতিটি পাতায় পাতায় মিশে আছেন নবীজি সা.। এখানে এমন এক মহামানবের গল্প আঁকা হয়েছে যিনি আঁধার জগতের আলোকবর্তিতা ও মহান স্রষ্টার অবারিত দানস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন।


যিনি জীবনের পরতে পরতে তার অনুসারীদের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন। তাই সালাত আদায় করতে গেলে তার কথা মনে পড়ে৷ হজ করতে গেলে তার কথা মনে পড়ে৷ দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজেই তার শ্রুত স্বরধ্বনি কানে বেজে ওঠে। 


তিনি আমাদের জ্ঞান অন্বেষণ করতে শিখেয়েছেন। তিনি অজ্ঞতা ও মূর্খতাকে ভস্মিভূত করে জ্ঞানের আলোক রেখা ফুটিয়ে তুলেছেন। এ জন্যই তো "পড়ো" শব্দ দিয়ে আলোর পথের এই যাত্রা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, পড়া কোনো শখের বিষয় না৷ অবসর কাটানোর বিষয় তো কিছুতেই না৷ বরং পড়া হলো জীবনের চালিকাশক্তি৷ কাজেই জীবনকে গতিশীল করতে হলে মূর্খতাকে পরিত্যাগ করে জ্ঞান অন্বেষণ করার বিকল্প নেই৷ বরং এটাই মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এমনও হয়েছে নবীজি সা. বন্দিদের মুক্তি দিয়েছেন শুধু মাত্র মুসলিমদের লেখাপড়া শেখানোর শর্তে। আর যেখানে নবুওয়াতের শুরুই হয়েছে "পড়ো" শব্দের মাধ্যমে তাহলে পড়ার এবং জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবনে আসে।


তিনি আরও শিক্ষা দিয়েছেন দয়া, ক্ষামা, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যবাদিতা, সদাচারণসহও আরও অনেক কিছু। কেউ যদি প্রকৃত সুখ খুঁজে পেতে চায় তবে রাসূল সা. কে অনুসরণ করতে হবে। কেউ যদি ইহকালীন নিরাপত্তা এবং পরকালীন মুক্তি কামনা করে তবে রাসুল সা. কে অনুসরণ করতে হবে। তার নিতি ও আদর্শ মেনে চলতে হবে। যে রাসূল সা. এর আদর্শ ধারণ করবে, সে কখনো পরাস্ত হবে না। তার হিদায়াতের তরীতে যে আরোহণ করবে সে কখনো দিকভ্রষ্ট হবে না।


#ভালোলাগাঃ

বইটির প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে। এই লেখক বা অনুবাদকের বই এর আগে কখনো পড়া হয়নি। তাই একটু দ্বিধায় ছিলাম বুঝতে কষ্ট হবে কিনা। কিন্তু চমৎকার অনুবাদের বইটি পড়ার পর আর বুঝতে কষ্ট হয়নি। 


#মন্দলাগাঃ

বইটিতে কয়েক জায়গায় বানান ভুল পেয়েছি। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক হয়ে যাবে।


#বইটি_কেন_পড়বেনঃ

এখানে এত বর্ণনা দিয়ে কিছু লিখছি না। শুধু এতটুকুই বলতে চাই প্রকৃত সুখ, ইহকালীন নিরাপত্তা এবং পরকালীন মুক্তি পেতে চাইলে রাসূল সা.সম্পর্কে জানতে হবে৷ তাকে মানতে হবে। আর এই বইটি পড়লে তাঁর সম্পর্কে জানা যাবে। তাই সংগ্রহে থাকলে আমার মতো দেরি না করে দ্রুতই পড়া উচিত বলে মনে করি।


#প্রিয়_বাক্যঃ

১. তারা বুঝতে পারে না যে-আগুনের স্বভাব সব কিছু পুড়িয়ে ফেলা। সে-আগুন কীভাবে পরিত্রাণের নিয়ামক হতে পারে।


২. সদাকা কখনো সম্পদ কমায় না।


৩. একজন ব্যক্তি যত বেশি দুনিয়াবি জিনিসের অধিকারী হবে, ততবেশি এই দুনিয়ার মায়াজালে আটকা পড়ে যাবে।


৪. কেউই সমাজের সামনে উগ্র ভাবমূর্তি ধারণ করতে চায় না। কিন্তু ঘরের চার দেওয়ালের ভেতর রাগ প্রকাশ করা অনেক সহজ। তাতে সমাজে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবার আশঙ্কা থাকে না। বরং তা গোপন থাকে।


৫. আল্লাহর পথের অভিযাত্রীরা কখনো আশাহত হয় না। কারণ, তাদের পরাজয়ের ভয় নেই।


৬. কলম তুলে নেওয়া হয়েছে, লেখার কালি শুকিয়ে গেছে। আর জেনে নিয়ো, ধৈর্যের সাথেই রয়েছে বিজয়। দুঃখের সাথেই রয়েছে মুক্তি এবং কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।


৭. তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না৷ তোমারাই বিজয়ী হবে। যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। 


#পরিশেষেঃ

আমরা মহান আল্লাহকে প্রভু হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে কৃতজ্ঞ এবং মুহাম্মাদকে নবী হিসেবে পেয়ে ধন্য। [বই থেকে]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ