বই: অগ্নিপুরাণ
লেখক: মুহম্মদ নিজাম
প্রকাশক: বায়ান্ন
প্রচ্ছদ: চারু পিন্টু
পৃষ্ঠা: ৩৩৬
এই বইটি নিয়ে যতটা আগ্রহ ছিল, পড়ার সময় সে আগ্রহ যেন ক্রমান্বয়ে মিইয়ে আসছিল।
ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে এই উপন্যাসের সময়কাল ও চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেন বংশের সর্বশেষ শাসক লক্ষণ সেনের জীবনের অন্তিম ভাগ ও ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় করা পর্যন্ত সময় এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। ১২০৩ সালে বর্ষার শুরুতে মহারাজ লক্ষণ সেন যখন সুন্দরবনের বিদ্রোহী নৃপতি ডুম্মন পালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বখতিয়ার তখন ছক কষছেন বঙ্গদেশ আক্রমণ করার। অন্যদিকে, পাল বংশের পরিত্যক্ত রাজপুত্র নরুনের ভাবনায় উঠে আসছে প্রাচীন ঐতিহ্যের টগবগে অহম। সেন রাজাদের সে দেখে লুটেরা দস্যু হিসেবে। বাংলার ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক অধ্যায় নিয়ে যুদ্ধদিনের এই গল্প।
এই উপন্যাসে লক্ষণ সেনকে একজন মহান ও প্রজা হিতৈষী শাসক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর বখতিয়ারকে দেখানো হয়েছে দরিদ্র জীবন থেকে উঠে আসা এক সম্পদ পিপাসু সেনাপতি হিসেবে। এটা অবশ্যই লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। কিন্তু আমার মতে উপন্যাসের অন্যতম প্রধান দুই চরিত্রকে তত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি। শুধুমাত্র কিছু ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা তাদের কার্যাবলী দেখানো হয়েছে।
আর একটা উল্লেখযোগ্য চরিত্র নরুন। পাল বংশের প্রথম রাজা গোপালের একুশতম এই বংশধর পুরনো পিতাদের অহম লালন করে। নিজের বর্তমান দুরবস্থাকে সে মেনে নিতে পারে না। বড় কিছু করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলেও সেরকম উদ্যোগ তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। এজন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও শেষ পর্যন্ত বেশ দুর্বল হয়ে গেছে চরিত্রটি।
ঐতিহাসিক উপন্যাস হলেও এই বইয়ে তেমন কোনো রেফারেন্সের উল্লেখ ছিল না, হাতে গোনা ৩/৪টি উৎস ছাড়া, আগ্রহী পাঠকেরা যেটা নিয়ে উৎসুক থাকেন। গল্পের প্লট অত্যন্ত চমৎকার ও আগ্রহ জাগানিয়া। আর তার সাথে মানানসই প্রচ্ছদ থাকলেও দুর্বল শব্দচয়ন আর উপর্যুপরি বানান ভুল দেখে মনে হয় বইটি খুব তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....