তিনি হঠাৎ করে ভবিষৎবাণী করলেন,'ফিলিস্তিনিরা কখনো ইসরায়েলকে পরাস্ত করতে পারবে না ইমাম মাহদি না আসা পর্যন্ত'!! boipaw.com

Post ID 1114511


তিনি হঠাৎ করে ভবিষৎবাণী করলেন,'ফিলিস্তিনিরা কখনো ইসরায়েলকে পরাস্ত করতে পারবে না ইমাম মাহদি না আসা পর্যন্ত'। 

২০১৪ সালের রমযানে ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। তখন বরিশাল শহরের একটা মসজিদে জুমার নামাজ পড়তাম। মসজিদের খতিব মুফতি জিহাদি। চরমোনাইপন্থী আলেম। 

হাদিসের ভবিষৎ বাণীও তাই বলে। দিন দিন ইসরাইলের ক্ষমতা বাড়বে এবং মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ক্রমান্বয়ে  দুর্বল হতে থাকবে। কিন্তু জিহাদি সাহেব কারণ দেখালেন ভিন্ন। তার মতে,' ইহুদিরা শার্ট প্যান্ট পরে ক্লিন শেভ মুখে হামলা করে, তাদের জবাব দিতে যারা ঢিল ছোঁড়ে তারাও টি শার্ট, প্যান্ট, ক্লিন শেভ ফেইস। যে মুসলমানের লেবাসের সাথে ইহুদির লেবাসের কোনো পার্থক্য নাই সেই মুসলমানকে আল্লাহ কখনও  সাহায্য করবেন না।'  কুটনৈতিক তৎপরতা,  আধুনিক সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রশিক্ষণের বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি  মুফতি জিহাদির পরামর্শ ছিল টি শার্ট প্যান্ট ছেড়ে জুব্বা পাগড়ি পরতে হবে। 

টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার পরা  ফিলিস্তিনের কিশোর বাচ্চাদের ভিডিও  দেখে মনে হত ওদের ঈমান এবং তাওয়াককুল   সাহাবী, তাবেয়িদের কাছাকাছি। বিশ্বের একটি পরাশক্তি আর্মির হাতে গ্রেফতার হয়েও বন্দুকের নলের মুখে  তারা অসীম সাহস দেখায়। মুফতি জিহাদিকে দেখতাম  মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ারের সামনেও কাঁচুমাচু করেন। 

আমাদের দেশের আলেমদের মধ্যে এরকম একটা প্রবণতা আছে যাদের  দাড়ি ছোট, জুব্বা পরে না, সবসময় মাথায় টুপি থাকে না, মাদ্রাসায় পড়েনি তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মুসলিম মনে করেন। কোরআন হাদিসের একাডেমিক ব্যাখ্যা আলেমদের এখতিয়ারে থাকাই ভালো। কিন্তু তাদের এই সুপিরিয়টির কারণে তারা সাধারণ মুসলিমদের আকৃষ্ট করতে পারেন না। সুফি দরবেশদের আচরণ  ছিল এর বিপরীত। 

তারা সবাইকে আলেম বানাতে চান এটা আরেকটা ভুল স্ট্রাটেজি। যাদেরকে আলেম বা ইসলামিক স্কলার বলা হয় সাহাবিদের মধ্যে এই সংখ্যা খুবই কম ছিল। হয়ত ৫% এরও কম হবে। নবীর সাহাবিদের মধ্যে ১৩০ জন এর মতো ছিলেন যারা ফতোয়া দিতেন। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নবীর উপস্থিতিতে ফতোয়া দিয়েছেন। সবচেয়ে ভালো ফতোয়া দিতে পারতেন সাতজন। এদেরকে বলা হত মুকসিরীন। সেকেন্ড ক্যাটেগরিতে কয়েকজন ছিলেন। তাদের বলা হত  মুতাওয়াসসীতীন। থার্ড ক্যাটেগরির যারা ছিলেন তাদের বলা হত -- মুকিল্লীন। অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ সাহাবির মধ্যে স্কলার বা প্রফেশনাল আলেম ছিলেন অল্প কয়েকজন। বাকিরা নিজ নিজ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করেছেন। 

আমাদের দেশে শুধু আলেম হওয়া বা হাফেজ হওয়াকে ইসলামিক ব্যাপার মনে করা হয়। কিন্তু হাফেজ হওয়া উম্মতের জন্য  ফরজে কিফায়া -- অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানদের মধ্যে একজন হাফেজ জীবিত থাকলে সবাই দায়মুক্ত থাকবে। আলেম হওয়া বা  হাফেজ হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা ঠিক না। কিন্তু বাস্তবজীবনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। সব প্রফেশনে রিপ্রেজেন্টেশন লাগবে। মিলিটারি জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদ বা সালাহ উদ্দীন আইউবি যে পরিমাণ অবদান রেখে গেছেন শত শত স্কলার দিয়ে তার একবিন্দুও পূরণ হবে না। আমাদের উপমহাদেশে শেরে বাংলা ফজলুল হক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখে গেছেন শত শত পীর দিয়ে তা হত না। 

মাদ্রাসা হেফজখানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট তৈরি করুন। মাদ্রাসার মানুষ যেহেতু তুলনামূলক সৎ তাই দেশে দুর্নীতিও কমবে তারা সবজায়গায় ছড়িয়ে পড়লে।  ছেলেমেয়েকে মাদ্রাসায় পাঠানোর পাশাপাশি কারো কারো ছেলেমেয়েকে স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পাঠান। আর্মি অফিসার হয়ে আপনার ছেলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করলে আপনিও নিশ্চিতে ধর্ম পালন করতে পারবেন। আপনার ইকোনমিস্ট সন্তান দেশে সুদমুক্ত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা করতে পারবে যেটা আপনি পাঁচশ বছর ওয়াজ  করেও করতে পারবেন না। 

ডক্টর কামাল হোসেন কেন আহমদিয়াদের পক্ষে মামলা লড়েন, কেন যৌনকর্মীদের হয়ে মামলা লড়েন তা নিয়ে অনেক ক্ষোভ। কিন্তু নিজেদের শত শত  ছাত্র প্রতিবছর মদিনা বা আল আজহারে পড়তে যায়। পাঁচ দশজনকে তো লন্ডনেও পাঠানো যায় ব্যারিস্টার বানানোর জন্য। নিজের মধ্য থেকেই ড. কামাল, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম তৈরি করুন। 

মূলধারা সম্পর্কে আমাদের দেশের ওলামারা যে উদাসীন তার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ আল্লামা আহমদ শফি। তিনি মেয়েদের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে বলেছেন। কিন্তু তার নিজের  স্ত্রী বা কন্যার যদি চর্মরোগ হয় তাহলে তিনি একজন নারী ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন নাকি একজন গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে জরুরতের অজুহাতে সতর খুলবেন তা তার ভাবনায় ছিল না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ