শুরুতে বলে নেই, এটা আমার ব্যক্তিগত আন্ডার্সটেন্ডিং। চূড়ান্ত বুঝ নয়।
প্রশ্নটা হচ্ছে, শবে কদর কি দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দিনে হতে পারে? কিংবা শবে কদর কি একেক বছর একেক দিনে হয়? আসলে শবে কদর বলতে আমরা যা বুঝি, সেটার রহস্য কি?
২.
হাকিকত বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। হাকিকত না বুঝলে শরিয়াত ঠিক বোঝা যায় না। আমাদেরকে ফিকহ করতে হবে। এটা হৃদয়ঙ্গম করার ব্যাপার। মাকাসাদ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু টেক্সট দেখে সিদ্ধান্ত নিলে সবসময় সঠিক জিনিস পাওয়া যায় না।
৩.
শবে কদরে আসলে কী হয়? কুরআনের বক্তব্য, এ রাতে জিবরিল আমিনের নেতৃত্বে ফেরেশতারা নাযিল হন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় নাযিল হন? কুরআন বলছে, রাতে। অর্থাৎ এই রাতে ফেরেশতারা নাযিল হন। আমাদের কমন ধারণা, এ রাতে ফেরেশতারা জমিনে নাযিল হন। অথচ কুরআন ভিন্ন কথা বলেছে। হাদিসেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট নয় যে, ফেরেশেতারা জমিনে আসেন। আমি পাইনি। কেউ পেলে জানাবেন।
শবে কদরকে বুঝতে হলে, এই পয়েন্টটা ভালো দকরে বুঝতে হবে।
৪.
এবার তাহলে রাত-দিন নিয়ে একটা আলাপ দেখি। সৌর গ্রহের সব জায়গায় সমান ভাবে রাত-দিন হয় না। পৃথিবীর মতো অন্য গ্রহে দিন-রাত নেই। আর ফেরেশতারা এই গ্রহের অনেক অনেক উপরে। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, ফেরেশতারা মানুষের মতো ২৪ ঘন্টার দিন-রাতে সীমাবদ্ধ নয়।
কুরআনে এ কথার প্রমাণ আছে। সূরা মায়ারিজে আল্লাহ বলেন, ফেরেশতাদের একাদিন সমান মানুষের হিসেবে তা ৫০ হাজার বছর। কাজেই ফেরেশতাদের রাত যে আমাদের হিসেবে নয়; তা অনুমান করা যাচ্ছে।
৫.
এবার তাহলে প্রশ্নে আসা যাক। রমজানের শেষ দশকের যে রাতগুলোতে আমাদের কে কদর খুঁজতে বলা হয়েছে, তার রহস্য কী? কেন হাদিসে এতো জোর দিয়ে কদর তালাশ করতে বলা হলো।
এই প্রশ্নটার উত্তর বুঝতে হলে, আমাদেরকে আরো কয়েকটা প্রশ্ন বুঝতে হবে। তা হলো, কেন কদরের রাতটি রমজান মাসে দেওয়া হলো এবং তা কেন রমজানের শেষ দশদিনে? পাশাপাশি কদরে আমাদের কাজ কী?
আমি যা বুঝেছি তা হলো, কদরে বান্দার কাজ হলো আল্লাহর কাছে তার ক্ষমা চাওয়া। হাদিসে সে কথাই বলা আছে। আর রমজান মাস যেহেতু ইবাদতের মাস। এ মাসে দীর্ঘ রোজা পালন করায় প্রবৃত্তি দুর্বল থাকে। যে শক্তিগুলো ক্ষমা চাইতে দেয় না, সেগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রমজানের শেষ দশকে মুমিন হৃদয় অনেক বেশি আন্তরিক হয়, ইবাদতমুখি হয়। ফলে এই সময় কদর দিলে, মুমিনেরা বেশি ক্ষমা লাভ করতে পারবে।
৬.
এবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হই। কেন কদরের রাত হিসেবে ৫ রাতের কথা বলা হলো। কেন একটি রাতকে ফিক্সড করে দেওয়া হলো না?
এর উত্তর এটা হতে পারে যে, কোনো এক রাত নির্ধারণ করলে হয়তো কারো অসুস্থতা বা ব্যস্ততার কারণে মিস হতে পারে। একাধিক রাতের সুযোগ থাকলে, কারো মিস হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ কেউ যদি এই পাঁচ রাতের কোনো এক রাতে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলতে পারে, তবে সে কদরের আসল প্রাপ্তি পেয়ে যাবে।
যেহেতু ফেরেশতাদের রাত আমাদের হিসেবে নয়, কাজেই এই অপশনটি হতে পারে।
৭.
তাহলে এই প্রশ্নটাও প্রাসাঙ্গিক যে, কেন এভাবে হাদিসে নবীজি বললেন না। কারণ, সাধারণত মানুষ এভাবে ভাবতে সক্ষম নয়। মানুষ নিয়মের অধীনে চলতে পছন্দ করে। তাই তাদের সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, ৫ রাতে কদর খুজতে । তাছাড়া মানুষ নিজেও জানে না, কোন রাতে সে ক্ষমা পাবে। তাই একাধিক রাতে খোঁজ করাটা উত্তম।
পাশাপাশি বিজোড় রাতগুলো বলার পিছনে এটাও রহস্য হতে পারে যে, আল্লাহ এক। তিনি বিজোড়। আর বিজোড় তাঁর পছন্দ। আরো একটি রহস্য হতে পারে যে, একটানা প্রতিদিন ইবাদত করলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই একদিন বিশ্রাম ও একদিন ইবাদত করার জন্যেও বিজোড় রাত হতে পারে।
৮.
যাইহোক, আমার কথার সারমর্ম হলো, কোনো দেশের আগে-পরে চাঁদ ওঠায় কোনো সমস্যা নেই। কদর এটি প্রত্যেকের জন্যে এভেইলবল। কদরের দাবী একটাই, আমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইবো।
কাজেই, আমাদের ক্ষমা চাওয়ার দিকে জোর দেওয়া উচিত। কবে কদর হবে আর কবে হবে না- তা নিয়ে পড়ে থাকা উচিত নয়। আল্লাহ মহান। তিনি বান্দাকে সবসময় ক্ষমা করেন। ফেরেশতারা সবসময় লিখে চলেন। আল্লাহ মাফ না করলে, ফেরেশতাদের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই, কাউকে মাফ করার। কাজেই কদর নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে; বরং ক্ষমা নিয়ে পেরেশানি থাকা ভালো।
সর্বপরি, কদরের রাত ইবাদতের রাত। হাদিসে কদরের রাতের যে ঠান্ডা-কুল আবহাওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাও ইবাদতের উপযোগিতা প্রমাণ করে।
কাজেই, আসুন, আমরা ইবাদত করি। ক্ষমা চাই। এটাই আমাদের কদর হবে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....