হিউম্যান বিয়িং—ভাঙো দাসত্বের শৃঙ্খল!
দু’শ বছর।
সময়টা কম নয়। এই দীর্ঘ সময় ধরে তৈরী করা হয়েছে একটা দাস-শ্রেণী। যারা রক্তে মাংসে ভারতীয় থাকবে কিন্তু চিন্তা ও চেতনায় হবে প্রাশ্চাত্যের গোলাম। তারা ভাববে পাশ্চাত্যের চিন্তায়, কথা বললে পাশ্চাত্যের সুরে, জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে তারা বেছে নেবে পাশ্চাত্যকে।
এই শৃঙ্খলে খুব সহজেই বন্দি হয়েছিল হিন্দুরা। কিন্তু মুসলমানরা তাতে ধরা দেয় নি। তারা বরং লড়াই করেছেন। সংগ্রাম করেছেন পাশ্চাত্যের মহামারির বিরূদ্ধে। দেশ দখলের পর পাশ্চাত্য আমাদের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চেয়েছে। তার বিরূদ্ধেও গড়ে তোলা হয়েছিল প্রতিরোধ।
পৃথিবীর নানান দেশেই পাশ্চাত্য তার আগ্রাসন ছড়িয়েছিল। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠি তাদেরকে মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু মানানো যায় নি মুসলমানদের৷ পাশ্চাত্যের দর্শন ও জীবন-ব্যবস্থা তারা মেনে নেয় নি। ফলে পাশ্চাত্যকে একটা ভিন্ন লড়াইয়ে নামতে হয়। ইসলামকেই তারা ঢেলে সাজায় পাশ্চাত্যের ধাঁচে৷ তারা তৈরী করে নেয় এমন কিছু লোক, যারা ইসলামের লেবেলে বিক্রি করবে পাশ্চাত্যের দর্শন।
আমাদের দেশ পাশ্চাত্যের শাসন থেকে মুক্ত হয়েছ। কিন্তু আমাদের চিন্তা এখনও পাশ্চাত্যের কারাগারে বন্দি।
স্কুল-কলেজে পাশ্চাত্যের শিক্ষা দেয়া হয়। দর্শনে তারা পাশ্চাত্যকে পাঠ করে। ইতিহাসের পাঠ্য তালিকায় পাশ্চাত্যের লেখা বই। ইসলামের ইতিহাসকে তারা জানে ইসলামের শত্রুর বই থেকে। ইসলামের দর্শন তারা শেখে পাশ্চাত্যের প্রফেসারের লেখায়৷
অথচ "পাশ্চাত্য শিক্ষা" হয় ইসলামের নামে বিষোদগার করে নয়ত ইসলামকে বিকৃত করে ঢোকায় পাশ্চাত্যের দর্শন।
২
পাশ্চাত্য শিক্ষায় দু’রকম লোক দেখা যায়।
এক, যারা পাশ্চাত্যকে পূঁজনীয় মনে করে। এর বাইরে সব কিছুকেই মনে করে বাতিল।
দুই, যারা পাশ্চাত্যের দর্শন দ্বারা আক্রান্ত। কিন্তু ইসলামের প্রতিও তারা অনুরক্ত।
এরা, দ্বিতীয় পক্ষ; ইসলামের এমন ব্যাখ্যা উদ্ভাবন করে, যা পাশ্চাত্যের চিন্তা ও দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তারা ইসলামকে মনে করে গণতান্ত্রিক, স্যাকুলার, মার্ক্সবাদী, নারীবাদী এবং আরও যা আছে।
পাশ্চাত্য যে সকল আপত্তি ইসলামের ওপর তোলে, এরা ইসলাম থেকে সেগুলোকে ছেটে ফেলে দেয়—বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে। এরা মনে করে, চার বিয়ের বিধানকে বাতিল করা উচিত। মেয়েদেরকে পুরুষের সমান করে দেয়া দরকার। পর্দা মানে একটু ঢোলা পোশাক পরা৷ ইসলামের সম্পত্তি বণ্টন তাদের মনোঃপুত হয় না। এরা মনে করে ইসলাম এতো উগ্র না। জি হা দের তাই আর নেই কোন দরকার।
এই ধরণের চিন্তা যে "বিশেষ" লোকেরা করে, তা কিন্তু নয়। বরং পাশ্চাত্যের শিক্ষায় লালিত হওয়া বড় অংশরই এমন ধারণা। তাদের চিন্তা ও চেতনা পাশ্চাত্যের দাসত্ব-শৃঙ্খলে আবদ্ধ।
মুক্তচিন্তার নামে তারা বস্তুত গোলামির জিঞ্জির বয়ে চলেছে— "আল্লাহর গোলামি" ছেড়ে তারা নাম লিখিয়েছে "মানুষের গোলামিতে"৷
৩
হিউম্যান বিয়িং বইটা মূলত এসকল চিন্তা শুদ্ধ করার একটা প্রয়াস। পাশ্চাত্যের দাসত্ব-শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার একটা প্রচেষ্টা।
আমাদের যুব-সমাজ ইসলাম চর্চা করতে গিয়ে পাশ্চাত্যের শেকলে জড়িয়ে যাচ্ছে। চিন্তার স্বচ্ছাতা না থাকায়, তারা খুব সহজেই শিকার হচ্ছে পাশ্চাত্য দর্শন ও চিন্তার। এই সকল যুবকদের চিন্তা-জগতে ঢেউ তুলতেই মূলত এই বই।
এই বই আমাদের জানাবে পাশ্চাত্যের দর্শনের শেকড় কোথায় ৷ কেন তা ইসলামের সঙ্গে যায় না। পাশ্চাত্যের প্রস্তাবনা কেন ইসলামের সঙ্গে সাজুয্য রাখে না। স্যাকুলার ইসলাম, গণতান্ত্রিক ইসলাম, নারীবাদী ইসলাম ইত্যাদি ধরণের ইসলাম যে আসলেই ইসলাম নয়, সেই কথাটা পরিস্কার হবে এই বইতে।
হিউম্যান বিয়িং—দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার জোরালো পদক্ষেপ।
© ইমরান হোসাইন নাঈম
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....