বইয়ের নাম:একদিন মেঘ জমেছিল বৃষ্টি হবার লোভে
লেখকঃ সাদাত হোসাইন।
প্রকাশনী:একটি হিজিবিজি প্রকাশনা
প্রচ্ছদ:আশিকুর রহমান।
review credit:-💕Jannatun Nesa.
প্রথম প্রকাশ:আগস্ট, ২০২০
পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ১৭৫
পড়তে পারেন_
Sadat Hossain এর আরো কিছু বই।
"বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে,তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।"
উপরোক্ত মূল্যবান কথাটি বলেছেন কালজয়ী লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এবং এই কথাটি যে কতটুকু সত্য তা যারা বইকে নিজের সঙ্গী বানিয়েছে তারা ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারে। আর এমন মানুষদের জন্যই আমি এনেছি আরেকটি অপূর্ব বইয়ের সংবাদ।
বইটির ব্যাপারে না হয় কিছু তথ্য জানা গেল,কিন্তু বইপ্রেমীরা এত কম তথ্যে সন্তুষ্ট হবেন এ কথা যে ভাবাও পাপ! তাই চলুন জেনে নেই বইটির ব্যাপারে আরও কিছু তথ্য।
❇প্রচ্ছদকথন:
গাঢ় নীল রঙে কিছু লতা-পাতা,কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি এই নিয়েই সাজানো হয়েছে এই বইয়ের প্রচ্ছদটিকে। বইটি হাতে নেয়ার পর আপনার মন চাইবে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে। আপনি বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে ছুঁয়ে দেখবেন অথচ আপনার হাত ভিজবে না। এ যেন এক অন্যরকম ছেলেমানুষী! প্রচ্ছদের পশ্চাৎ ভাগে আপনি পাবেন পঁচিশজন নামকরা ও তরুণ লেখক-লেখিকাদের তালিকা। যাদের লেখা দিয়েই অনন্য হয়ে উঠেছে বইটি।
❇বইকথন:
বইটিতে আছে পঁচিশজন লেখকের পঁচিশটি অণুগল্প। চলুন পরিচয় করিয়ে দেই কিছু লেখকের লেখনীর সাথে।
মোজাম্মেল হক,চাকরি করেন রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী পদে। হাসি-খুশি মানুষগুলো নিজেদেরকে যতটা সুখী দেখানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে,তারা আদৌ ততটা সুখী থাকে না। তেমনই একজন মানুষ মোজাম্মেল হক। কাছের বন্ধুকে পেয়ে মনের কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে গিয়ে ভেঙে পড়েন বুকচাপা কান্নায়। ছেলে-বৌমার সংসারে বসবাস তার। কী এমন কষ্টে এমন কান্নায় ভেঙে পড়লেন মোজাম্মেল হক?
উত্তর মিলবে লতিফুন্নাহার লাবনীর লেখা সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস গল্পে।
রূপক ও অনুর সংসারটা বছরখানেকের। অনুর স্বামী রূপক পেশায় একজন পুলিশ। এই মানুষটা কর্মস্থলে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে স্ত্রীর সাথে দুমিনিট কথা বলার সময় পায় না। কল দিলেই কল কেটে দেয়। তারপর ফ্রি হয়ে যদিও বা কল ব্যাক করে,কিন্তু পরমুহূর্তেই ফোন রাখার জন্য পায়তারা শুরু করে। যেদিন অনু রূপককে একটা বিশেষ খবর দেয়ার জন্য ফোন করেছিল সেদিনও রূপক এমনটাই করেছিল। অনু ঠিক করে বিশেষ খবরটা রূপককে জানাবে না,এটা তার শাস্তি। বাসায় আসার পর রূপক জানতে পারে একটা পার্সেল এসেছে তার নামে। পার্সেলটা খুব অদ্ভুত। যে আবরণে পার্সেলটা ঢাকা রয়েছে,সেটাও খুব অদ্ভুত। কী এমন আছে পার্সেলটার মধ্যে? অনু-রূপক আবার কোনো বিপদে পড়বে না তো?
মৌরি মরিয়মের লেখা 'পার্সেল' গল্পটিতে মিলবে এই রহস্যের সমাধান।
ছাদে বসে একমাত্র নাতির সাথে বিকেলটা উপভোগ করছিলেন সুফিয়া বেগম। এমন সময় বাতাসে ভেসে আসে পায়েসের ঘ্রাণ। সুফিয়া বেগম ও তার নাতি বুঝতে পারেন ঘ্রাণটা তাদের বাসা থেকেই আসছে। আরও কিছু সময় ছাদেই পার করে নিচে নেমে আসেন তারা। সুফিয়া বেগমের বৌমা তানিয়া কিছু বিস্কুট আর চা দিয়ে নাস্তা দিল শাশুড়িকে। শাশুড়ি চা নাস্তা শেষ করে নিজের ঘরে চলে যেতেই ছেলেকে একবাটি পায়েস এনে দিল তানিয়া। অথচ সে সুফিয়া বেগমকে বলেছিল কোনো পায়েস রান্না হয়নি। তবে কী সে মিথ্যা বলেছিল? সে কী তার সংসারে শাশুড়িকে বোঝা বলে মনে করে? সেই জন্যই কী মিথ্যা বলেছিল?
জানতে হলে পড়তে হবে আয়েশা সিদ্দিকার কর্তব্য নামক গল্পটি।
লকডাউনের পর থেকে একঘেয়ে জীবনে এসেছিল কিছুটা স্বস্তি। এমনিতে দম ফেলবার ফুসরত মেলে না। তাই সুযোগ পেয়ে ছাদে বেড়াতে আসে অণু। সমস্ত খারাপ লাগা ভেসে যায় মাতাল হাওয়ায়। আর সেই হাওয়ায় উড়ে আসে একটি কাগজের প্লেন। এক বিল্ডিং পরেই দাঁড়িয়ে আছে প্লেনটির মালিক,সোহান। সোহান জানাল ইচ্ছাকৃতভাবে প্লেনটি সে ওপারে পাঠায়নি। এরপর থেকে কেন যেন অণু অপেক্ষা করত সোহানের জন্য,কখন সে ছাদে আসবে। সোহান বড্ড আনমনা,চোখ দুটি বিষণ্ণ। অণু খুব করে চাইত সোহানের মত করে কাগজের প্লেন বানিয়ে মনের কথাগুলো সোহানকে জানাতে। কিন্তু অণু কাগজের প্লেন বানাতে পারে না। তাই সোহানকেও কথাগুলো জানানো হয় না। শেষ অবধি কী সোহান জানতে পেরেছিল অণুর মনের কথাগুলো?
সাদাত হোসাইনের লেখা গল্প সন্ধ্যার অরিগ্যামি দেবে সব প্রশ্নের উত্তর।
মা মরা মেয়ে দিয়া। মা যে আদৌ নেই তা নয়। সৎ মা নামক একজন মা আছে। নিজের মাকে কখনো দেখেনি দিয়া। সৎ মায়ের সংসারে আর পাঁচটা মেয়ে যেমন অবহেলিত হয়,তেমনই অবহেলিত ছিল দিয়া। আর বাবা? আপন মা মরে গেলে কী আর বাবা আপন থাকে? যে মুহূর্তে ঘরে সৎ মায়ের প্রবেশ ঘটে,বাবাও পর হয়ে যায়। দিয়ার বেলাতেও তাই। এইচএসসি শেষে দিয়া জানতে পারে পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটবে এখানেই। তাই সৎ মায়ের সংসার ছেড়ে বেড়িয়ে আসে দিয়া। গন্তব্য অজানা। দিয়ার ভালোবাসাহীন জীবনে কী সুখের দেখা মিলবে? নাকি কষ্টেই কেটে যাবে জীবনটা?
উত্তর দেবে আপসারা নূর তিথির লেখা 'একদিন মেঘ জমেছিল বৃষ্টি হবার লোভে' গল্পটি
মোনালিসা,বাবা শখ করে নামটা রেখেছিলেন। চেয়েছিলেন মেয়ে নায়িকা হবে,আর নায়িকার নামে গ্ল্যামার না থাকলে চলে! তবে শেষ অবধি আর নায়িকা হওয়া হয়ে ওঠেনি মোনালিসার। একা শহরে থাকে মোনালিসা,স্কুলের শিক্ষিকা সে। একদিন স্কুলে গিয়ে মোনালিসা দেখতে পেল অনেক মানুষের ভীড়। ব্যাপারটা বুঝতে ভীড়ের দিকে এগিয়ে গেল সে। হলরুমের মেঝেতে পড়ে আছে একটি মেয়ের মৃতদেহ। মোনালিসা লাশটি দেখে আঁৎকে ওঠে। লাশটির মুখ থেঁতলে গেছে,অথচ শরীর দেখে মোনালিসা সহজেই বুঝতে পারে এটা তারই প্রতিকৃতি। আসল রহস্যটা কী? মোনালিসা কী তবে মারা গেছে? আর তার আত্মাটাই কি হলরুমে এসে উপস্থিত হয়েছে?
রহস্যের পর্দামোচন করবে সুমাইয়া আমান নিতুর আক্রোশ গল্পটি।
বিগত ত্রিশ বছর ধরে এই জায়গাটিতে আসেন মতি মিয়া। এখানে এলেই বুকটা ভার হয়ে যায় তার। অতীতের পাপ তাকে তাড়া করে বেড়ায়। জায়গাটিতে কিছুই নেই। কোনো ঘর-বাড়ি নেই,মাটির তলায় হীরে-জহরতও নেই। তবুও মতি মিয়া এখানে আসেন। তার এখানে আসার কারণটা তিনি ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ছাড়া আর কেউ জানে না। আগে রহিমা খাতুনও আসতেন মতি মিয়ার সঙ্গে। তবে গত দশ বছর আগে তার আসাও বন্ধ হয়েছে। না তিনি মারা জাননি,আক্রান্ত হয়েছেন নাম না জানা চোখের অসুখে। তারপর থেকে একাই এই জায়গাটিতে আসেন মতি মিয়া। বয়স আশির কোঠায়। এমন বৃদ্ধ মানুষ যে জায়গায় প্রায়ই যায় সেটি কোন জায়গা হতে পারে? কী এমন মূল্য জায়গাটির?
জানতে হলে পড়তে হবে আসাদুর রহমানের লেখা ছোটগল্প প্রায়শ্চিত্ত।
১৪ই ফেব্রুয়ারি অভ্র নিজের করে পেলো তার ভালোবাসার মানুষটিকে। তার আগের ঘটনাটা একটু অন্যরকম। স্কুলের অ্যাসেম্বলি লাইনে অভ্র দেখতে পেল অসাধারণ রূপবতী একটি মেয়েকে। এমনিতে ক্লাসে অভ্রর পাশে কেউ বসতো না,তবে সেদিন সেই মেয়েটি বসল। তারপর থেকে রোজই বসত আর ধীরে ধীরে ওরা দুজন বন্ধুও হয়ে গেল। মেয়েটির নাম নীলু। বহু সময় পার করে,মনের ভেতর একগাদা সাহস সঞ্চার করে একদিন নীলুকে মনের কথাগুলো জানিয়েছিল অভ্র। তারপরেই তো ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়া। কিন্তু পথ তো আরও বাকি। সারজীবনের জন্য নীলুকে আপন করে নিতে পারবে তো অভ্র? অভ্র-নীলুর ভালোবাসার গল্পের শেষটা জানাবে মো. সেলিম রেজার 'সেদিন রাতে বৃষ্টি ছিল' গল্পটি।
পাঠকগণ,আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বইটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। এবারে আমি বইটি সম্পর্কে আমার কিছু অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই।
❇পাঠ পর্যালোচনা:
একদিন মেঘ জমেছিল বৃষ্টি হবার লোভে' বইটি সাজানো হয়েছে পঁচিশটি ছোট গল্প দ্বারা। সেখানে যেমন খ্যাতিমান লেখক আছেন,তেমনি আছেন নবীন এবং উঠতি লেখকও। সবার কাছে সবার গল্প ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই যে গল্প ভালো লাগেনি সেটাকে একপাশে রেখে ভালোলাগার গল্পগুলোকে নিয়ে আলোচনা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমার কাছে বইয়ের প্রায় প্রতিটি গল্পই কম বেশি ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস,পার্সেল,চক্র,শব্দ,মা,কাবিন,আক্রোশ,রক্তচক্ষু,সন্ধ্যার অরিগ্যামি। অন্য গল্পগুলোর নাম লেখিনি মানে এই নয় যে সেগুলো ভালো লাগেনি। এতগুলো নাম লেখতে গেলে যে বেলা ফুরিয়ে যাবে,তাই লেখিনি।
প্রেম,ভালোবাসা,বিচ্ছেদ,রহস্য,থ্রিলার,হরর সব ঘরানার গল্প যেন একসাথে এসে আশ্রয় নিয়েছে বইটিতে। একটি গল্প শেষ হবে আর মনে হবে ইশ! আরেকটু বড় কেন হলো না গল্পটা। এটাই তো ছোট গল্পের মূল বৈশিষ্ট্য। আর সব লেখিকগণই তার লেখায় তুলে ধরেছেন ছোট গল্পের এই অন্যতম বৈশিষ্ট্যটি।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে,যারা নিজের কষ্টটাকে লুকিয়ে প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অভিনয় করেছে চলেছে। আবার কেউ গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে ভাঙাচোরা ভাবে। কারোর জীবনটা স্বপ্নের মত রঙিন,আবার কেউ স্বপ্ন দেখে একটা রঙিন জীবনের। এমনই কিছু মানুষের গল্পগুলো উঠে এসেছে এই বইয়ে। যা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি।
ব্যক্তিগত মতামত:আমি বরাবরই বই পড়তে ভালোবাসি। কোনো নির্দিষ্ট ঘরানার বই পড়ি না,যখন যেটা ভালো লাগে তখন সেটাই পড়ি। তবে এই ভালো লাগার পেছনেও একটি গল্প আছে। যে বইগুলো দেখার পর আমার মনে হয় এই বইটি আমাকে পড়তেই হবে সে বইটিই আমি কিনে ফেলি। আর আজ পর্যন্ত এভাবে কোনো বই কিনেই হতাশ হইনি।
'একদিন মেঘ জমেছিল বৃষ্টি হবার লোভে' বইটির প্রচ্ছদ দেখার পরে আমার মনে হয়েছিল এই বইটি পড়া উচিত। তারপর জানতে পারলাম বইটিতে আছে আমার কিছু প্রিয় লেখক-লেখিকার গল্প। এবার তো বইটা কেনা ফরজ! আর সেই তাগিদেই কিনে ফেলি বইটি। বরাবরের মতোই বইটি কিনে আমাকে হতাশ হতে হয়নি।
আমি জানতে পেরেছি অনেকগুলো জীবনের গল্প সম্পর্কে,জেনেছি জীবনের কিছু অপ্রিয় সত্য। যা পরবর্তী জীবনে আমাকে সতর্ক হতে সাহায্য করবে। আমি জানতে পেরেছি কিছু ভালোবাসার গল্প,কিছু বিচ্ছেদের গল্প,যা আমার মনকে কখনো আপ্লুত করেছে আবার কখনো ব্যথিত করেছে।
অসাধারণ এই বইটির সম্পর্কে বলার মত আমার সকল ভাষা প্রায় ফুরিয়ে এলো।আমার উদ্দেশ্য ছিল পাঠকগণের কাছে একটি ভালো বইয়ের সন্ধান পৌঁছে দেয়া,বইটি সম্পর্কে জানানো। আমি আমার কাজে কতটুকু সফল হতে পেরেছি তা বিচার করার ভার পাঠকদের উপরে সমর্পণ করে আমি আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....