বই: ইতিহাসের ধুলোকালি
লেখক: পিনাকী ভট্রাচার্য
প্রকাশণী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
মূল্য: ২৭০৳
বুক রিভুউ: ইয়াসিন আরাফাত।
আমরা ইতিহাস চর্চা করি কারণ 'ইতিহাস' আমাদেরকে প্রাকৃতিক নিয়ম ( natural laws) বুঝতে ও তাদানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
তাইতো, মার্ক টোয়েইন (Mark Twain) বলেছেন, 'ইতিহাসের হুবহু পুনরাবৃত্তি ঘটে না, কিন্তু প্রায়ই একটি অন্ত্যমিল থাকে।'
অপরপক্ষে, টেড কোপেল (Ted Koppel) বলেছেন, 'রাজনীতিবিদরা তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করেন তা হচ্ছে "ইতিহাস"।' তাই, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে 'ইতিহাসের বিকৃতিও' একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
একটি সংখ্যার 'অঙ্ক' পরিবর্তন করলে কিংবা অঙ্ক ঠিক রেখে 'অঙ্কের স্থান' এর পরিবর্তন করলে যেমন, সংখ্যার মানের হেরফের ঘটে তেমনি কোনো ঘটনার সামান্য
পরিবর্তনে ইতিহাসের পুরো প্রেক্ষাপটই পালটে যেতে পারে।
তাই, ইতিহাসের পাতায় পাতায় অনেক ধুলো-কালির আস্তরন জমে থাকতে পারে কিংবা ইতিহাসের কোনো পাতা হারিয়েও যেতে পারে। কিন্তু সত্য একদিন না একদিন তার মাথা তুলে দাড়াবেই।
এই বইটিতে তেমনই কিছু বাদ পরা কিংবা ধুলো-কালির আস্তরণে ঢেঁকে থাকা ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। যে সকল বিকৃত ইতিহাসকে ব্যবহার করে আমাদের জনগনকে বিভক্ত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যকার বিভেদকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে।
আর এই বিভেদে জালানি সরবরাহ করে স্টিয়ারিং এর ভুমিকায় আছে কিছু সো-কল্ড বুদ্ধিজীবী(?) ও পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া। এবং এর সুবিধা নিচ্ছে অসৎ রাজনীতিবিদরা আর এর মধ্য দিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারে হাবুডুবু খেয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ জনগন।
লেখক পিনাকি ভট্রাচার্য পেশায় চিকিৎসক হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলমান ইস্যুতে খুবই সরব।
এই বইটিতে বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশ সহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন আলোচিত বিতর্কের খোলসা করা হয়েছে। বিশেষত, স্যেকুলার এবং বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সৃষ্টি করা বিভ্রান্তিকর ইস্যুগুলোর বিকৃত ইতিহাসের মুখোশ উন্মোচিত করেছেন।
একইসাথে ডানপন্থীদেরও কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতার সমালোচনা করা হয়েছে। বইটির লেখাগুলো মুলত লেখক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন বিভিন্ন চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে।
প্রত্যেক ইতিহাস, সমাজ ও রাজনীতি সচেতন পাঠকদের জন্যই বইটি অনেক দরকারী ও সূখপাঠ্য হবে বলে আশা করছি। আর আমাদের জাতীয় জীবনের বিভাজন কমানোর জন্য প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের জন্যই এটি হতে পারে একটি মাষ্ট রীড বই।
বইটির সবচেয়ে বড় সার্থকতা হলো, এখানে আলোচিত ও বিতর্কিত কিছু বিষয়ের পর্দার আড়ালে থাকা তথ্যগুলো, সেই সাথে লেখকের অকাট্য যুক্তি যার সামনে খুব সহজেই মুখ থুবরে পরেছে বিকৃত রংচং মাখা ইতিহাস।
শেষ করছি বইটির সর্বশেষ লাইনটি দ্বারা, সো কল্ড বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্য করে লেখক বলেছেন,
' তাই জেনে কথা বলুন। না জেনে অনুমানে কথা বলবেন না। কারণ, আমরা ঘাস খাই না।'
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....