বই পড়ার চমৎকার কিছু টিপস

Post ID 1114517

(১)“আপনি কি জানেন কীভাবে বই পড়তে হয়?”—প্রশ্নটা শুনে অনেকে আঁতকে উঠতে পারেন; ভিরমিও খেতে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে বেশিরভাগ লোকই জানেন না কীভাবে একটি বই পড়তে হয়, আত্মস্থ করতে হয়—কীভাবে একটি বইকে চিবিয়ে হজম করতে হয়!

বেশিরভাগ লোক যেভাবে পড়তে জানেন, তাতে তারা বড়জোর কিছু তথ্য জানতে পারেন। এটা আমরা ছোটকাল থেকেই শিখি। আমাদের স্কুল-কলেজে এভাবেই বই পড়া শেখানো হয়: শুধু তথ্য জানার জন্য। কিন্তু কীভাবে একটি বই পড়ে তার মর্ম উদ্ধার করতে হয়, জীবনে প্রয়োগ করতে হয় সেসব পদ্ধতি জানেন না অনেকেই।

আজকে আমরা বই পড়ার সঠিক সেসব পদ্ধতির একটি নিয়ে আলোচনা করব।
কীভাবে বই পড়তে হয় সে বিষয়ের উপর কালজয়ী একটি বই “হাউ টু রিড আ বুক”। এটি লিখেছিলেন মর্টিমার এডলার। বইটিতে তিনি চার ধরনের বই পড়ার পদ্ধতির কথা বর্ণনা করেছেন।

প্রথমটি হচ্ছে যেটা অধিকাংশ মানুষই জানেন: তথ্য জানার জন্য পড়া। যেমন: প্রতিদিনকার সংবাদপত্র পড়া। সংবাদপত্র পড়ে মানুষ কি আসলেই নতুন কিছু শেখে? দৈনন্দিন খবরাখবর পড়ে মানুষ আসলে কিছু তথ্য জানে। কোনো বিষয় সম্পর্কে এখানে পাঠক গভীরভাবে পড়াশোনা করে না।

কিন্তু বোঝার জন্য পড়াটা এত সহজ নয়।

আপনি যখন আপনার বর্তমান পর্যায় থেকে উপরের পর্যায়ের কোনো কিছু পড়বেন তখনই আপনি নতুন ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও বিষয়বস্তুর সংস্পর্শে আসবেন। শিখতে পারবেন নতুন কিছু। যখন আপনি বোঝার জন্য পড়বেন তখন আপনার আর লেখকের চিন্তার মধ্যে ফারাক কমে আসবে।

তবে বোঝার জন্য পড়া শুরু করার আগে আপনাকে আগে বাছাই করতে হবে। বইটি আসলেই বোঝার জন্য পড়ার যোগ্য কি না সেটা যাচাই করতে হবে। এজন্য যেটা করতে হবে তা হলো: অনুসন্ধানমূলক পড়া।

এভাবে পড়ার দুটো উপায় আছে।

প্রথম উপায়টি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এক ঝলক দেখে নেওয়া।

এর পদ্ধতিগুলো হচ্ছে:
ক. বইয়ের মুখবন্ধ/শুরুর কথা/লেখকের কথা পড়া
খ. সূচিপত্রে চোখ বোলানো
গ. সূচিপত্রে কোনো বিষয় আকর্ষণীয় মনে হলে বইয়ের ভেতর থেকে দুএক অনুচ্ছেদ পড়া
ঘ. বইয়ের শেষে কোনো ইনডেক্স বা নির্ঘণ্ট থাকলে সেটা দেখা
ঙ. বইয়ের কভার জ্যাকেটের ফ্ল্যাপে যা লেখা থাকে সেগুলো পড়া

এভাবে আপনি বইটি সম্বন্ধে মোটামোটি একটা ধারণা লাভ করবেন। এবং বইটি পড়ার যোগ্য কি না সে সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন।

দ্বিতীয় উপায়টি হচ্ছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলা।
এর পদ্ধতি হচ্ছে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বইয়ে উপস্থাপিত বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক, কারণ, প্রমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো কিছু চিন্তাভাবনা না করেই বইটি দ্রুত পড়ে শেষ করা।

এভাবে বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আপনার মধ্যে মোটামোটি একটা ধারণা জন্মাবে। এবারে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, বইটি আসলেই আপনি বুঝতে চান কিনা।

যদি বইটি বোঝার উপযুক্ত হয় তাহলে কীভাবে সেই বইটি পড়বেন?
সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব পরবর্তী লেখায় ইনশা’আল্লাহ। আপাতত যা জানলেন সেটাই প্রয়োগ করে দেখুন। আপনার বইয়ের তাকে ধুলোর আস্তরণ পড়ে যাওয়া বইগুলো থেকে কোনো একটি বই—যেটা আগে পড়া হয়নি—বের করে উপরে উল্লেখকৃত নিয়মগুলো অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করুন যে, বইটি আসলেই বোঝার যোগ্য কি না।

পুনশ্চ: আপনি চাইলে অনুসন্ধানমূল পড়ার দ্বিতীয় উপায়টি ইন্টারনেটে পাওয়া বিভিন্ন আর্টিকেলের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারেন। যেমন: এই লেখাটিকেই ধরুন। আপনি নিশ্চয় লেখাটি এ পর্যন্ত পড়েই এই অংশে এসেছেন। এখন ভেবে দেখুন, আপনি কি এই প্রবন্ধটি বুঝতে চান?

(২)

কীভাবে একটা বই বোঝার জন্য পড়তে হয়, বিশ্লেষণ করে পড়তে হয়। এ ধরনের বই পড়াকে আমরা বলতে পারি, “বোঝার জন্য পড়া” কিংবা “বিশ্লেষণমূলক পড়া”।

বোঝার জন্য পড়ার জন্য প্রথমেই বইটিকে একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে শ্রেণিভুক্ত করতে হবে। অনুসন্ধানমূলকভাবে পড়ার মধ্য দিয়েই আমরা বুঝতে পারব বইটি কোন ক্যাটাগরির। কাজেই শ্রেণিভুক্ত করার জন্য আলাদা কোনো কসরতের প্রয়োজন নেই।

শ্রেণিভুক্ত করার পর আমরা এবারে পুরো বইটি পড়ব। পড়তে পড়তে বইয়ের আকর্ষণীয় অংশগুলো হাইলাইট করে রাখা যায় যাতে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুসারে প্রাসঙ্গিক অংশ খুঁজতে বেগ পেতে না হয়। চাইলে বইয়ের মার্জিনের সাদা অংশে কিংবা নোটখাতায় নিজের ভাষায় নোট টুকে রাখা যেতে পারে। এভাবে বই পড়লে সেটা আর কেবল পড়ার জন্য পড়া হবে না। তখন এই পড়া হবে সক্রিয়ধর্মী। মনে হবে লেখকের সঙ্গে আমাদের একটা কথোপকথন হচ্ছে। শুধু লেখকই একনাগাড়ে তাঁর বক্তব্য বলে যাচ্ছেন না; আমরাও তার মতের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে নিজেদের মতও ব্যক্ত করছি। কিংবা কোনো অংশ পড়ে নিজের মনে নতুন যে ভাবনার উদ্রেক হলো সেটা প্রকাশ করছি।

পুরো বইটি এভাবে পড়া শেষ হয়ে গেলে নিদেনপক্ষে দুএক লাইনে বইটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লিখে রাখতে হবে। যেমন: সিয়ান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত “মাযহাব: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত” বইটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আমরা এভাবে লিখতে পারি যে: মাযহাব বলতে আসলে কী বোঝায়, কীভাবে এর উৎপত্তি, কীভাবে মাযহাবগুলো তৈরি ও বিকশিত হয়েছে এবং এক পর্যায়ে চারটি মাযহাবে এসে সীমিত হয়েছে; মাযহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণ এবং কীভাবে এর নিরসন করা যায় এগুলোই এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু। আপনি চাইলে আপনার নিজের বুঝ অনুযায়ী অন্যরকম করেও এই বিষয়বস্তু ব্যক্ত করতে পারেন। যত সুন্দরভাবে আপনি এই কাজটি করতে পারবেন, তত ভালোভাবে বোঝা যাবে যে, আপনি এই বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

এরপরের কাজ হচ্ছে বইয়ে অধ্যায়গুলো যেভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে সেই ধারাক্রম বজায় রেখে প্রতিটি অধ্যায়ের একটা সারসংক্ষেপ নিজের ভাষায় লেখা। প্রতিটি অধ্যায়ের শিরোনামের পাশাপাশি প্রয়োজনবোধে উপশিরোনাম দিয়েও আপনি সেই অধ্যায়ে আলোচিত অংশগুলো নিজের মতো করে লিখতে পারেন। পড়ার সময় প্রথমে আপনি যে অংশগুলো হাইলাইট করেছিলেন এক্ষেত্রে সেটা বেশ কাজে আসবে। অধ্যায়গুলোর বিষয়বস্তু লিখতে সুবিধা হবে।

সবশেষে আপনার কাজ হবে লেখক যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেয়েছেন সেগুলো নিজের ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা। লেখক কি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পেরেছেন না পারেননি, আর সমাধান করলে কীভাবে করেছেন সেগুলোই আপনি নিজের মতো করে লিখবেন। কোথাও আটকে গেলে বই খুলে পুনরায় সে জায়গাটা দেখে নেবেন।
উপরে বর্ণিত সবগুলো ধারা যদি আপনি অনুসরণ করেন, তাহলে.......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ