বইয়ের নামঃ মুকুট লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ll book mukut PDF download with review

Post ID 1114524
.
বইয়ের নামঃ মুকুট
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের ধরণঃ ঐতিহাসিক নাটক
রিভিউ লিখেছেন: আশিকুর রহমান খান।
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৩৮
প্রকাশনাঃ বিশ্বভারতী 
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৩
গায়ের মূল্যঃ ১২৬ টাকা। 

ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব মানুষের বহুদিনের। মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে যখন থেকে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার প্রথা চালু হলো, বলতে গেলে, তখন থেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ দ্বন্দ্ব নানাভাবে, নানা দিকে ডালপালা ছড়িয়ে এক বিরাট মহীরুহের রূপ নিয়েছে। এখন এটি শুধু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের আবহে আটকে নেই; বরং এটা এক বৈশ্বিক রূপলাভ করেছে। গত শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ও নানা অন্তর্ঘাত এর সত্যতা প্রমাণ করে। 
.
এরকম ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখা এক নাটকের নাম "মুকুট"। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরুতে এ নামে একটি উপন্যাস রচনা করলেও পরবর্তীকালে এটিকে নাট্যরূপ দেন। তার মৃত্যুর মাত্র তিন বছর আগে (১৯৩৮ সালে) এ নাটক গ্রন্থ রূপে প্রকাশিত হয়। ত্রিপুরা রাজপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব এ নাটকের মূল আলোচ্য বিষয়বস্তু। শুরুতে নামযশ নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও পরবর্তীতে এ দ্বন্দ্ব একটি মুকুট লাভ কেন্দ্রিক হয়ে যায়। কে হবে এ মুকুটের মালিক? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এগিয়ে চলে নাটকের দৃশ্যপট।
.
নাটকের শুরুর দিকে ত্রিপুরা রাজপরিবারের রাজপুত্রদের অন্তর্দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ক্ষমতার মোহে উন্মত্ত হয়ে কনিষ্ঠ রাজকুমার রাজধর তার দুই জ্যেষ্ঠ সহোদরের বিরুদ্ধে নানা হীনকর্মে লিপ্ত হয়। তার এসব ষড়যন্ত্রে ইন্ধনদাতা হিসেবে যুক্ত হয় তার মামাতো ভাই ধুরন্ধর। পিতৃদেব প্রদত্ত নামের মান রক্ষার্থে নানা ধুরন্ধর বুদ্ধি সবসময় তার মাথা থেকে বের হতে থাকে। আরাকান রাজ্যের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের যুদ্ধ বাধলে নানা কূটকৌশলে রাজধর আরাকান রাজাকে বন্দী করে তার মুকুট ছিনিয়ে আনে। তখন এ মুকুটের অধিকারী কে হবে, তা নিয়ে তিন ভাইয়ের মধ্যে এক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এগিয়ে যায় নাটকের দৃশ্যপট। এরপর কী ঘটে, তা বইটি পড়লে জানা সম্ভব হবে। 
.
উক্ত নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্রে রয়েছে ইন্দ্রকুমার। ত্রিপুরা রাজপরিবারের মেজকুমার হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। এছাড়া রণকৌশল কিংবা ন্যায়নিষ্ঠা --- যেদিক থেকেই হিসেব করা হোক না কেন, ত্রিপুরা রাজ্যের পরবর্তী রাজা হিসেবে সবচেয়ে বেশি যোগ্য সে। তার বড়ভাই যুবরাজ হলেও প্রকৃতপক্ষে সে তার বড় ভাইয়ের চাইতে বেশি যোগ্য। এ কারণে সে তার কনিষ্ঠ সহোদরের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। সবকিছু জেনেও সে রাজপরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে নিরব থাকাকেই শ্রেয়জ্ঞান করে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধরের ষড়যন্ত্র ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এভাবে ক্রমশ অগ্রসর হয় নাটকের দৃশ্যপট। এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে নাট্যকার এক সাহসী যোদ্ধাকে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তার ন্যায়নিষ্ঠার দিকটিও সমানভাবে উঠে এসেছে উক্ত নাটকে। সবমিলিয়ে, একজন যোগ্য রাজার যোগ্য পুত্রের যেসব গুণাবলী থাকা দরকার, তার কোনোটিই তার চরিত্রে অনুপস্থিত ছিল না।
.
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যায় রাজধরকে। গুণাবলীর বিচারে সে ইন্দ্রকুমারের সম্পূর্ণ বিপরীত। নানা কূটকৌশল ও দুর্বল রণনীতি যেন তার প্রধান ভূষণ। সবচেয়ে কম পরিশ্রমে কেবল কূট বুদ্ধির জোরে কী করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নেওয়া যায়, সেদিকেই তার যত খেয়াল! এ জন্য এহেন কোনো কার্য নেই, যা সে করেনা। নানা কুবুদ্ধির সাহায্যে সে আরাকান রাজ্যের রাজাকে বন্দী করে জোর করে মুকুট ছিনিয়ে নেয়। সেনাপতির আদেশকে অমান্য করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য ইচ্ছেমত শর্ত দিয়ে সন্ধিপত্র রচনা করে। এ থেকে তার ক্ষমতা লোভের দিকটি প্রকাশ পায়। আরাকানের রাজাকে বন্দী করবার পর নাটকের দৃশ্যপট এক ভিন্ন দিকে মোড় নিতে থাকে। দ্রুত নানা পরিবর্তন ঘটতে থাকে এ ঘটনাপটে। এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী।
.
উক্ত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বাদেও আরো কিছু চরিত্রের সরব উপস্থিতি উক্ত নাটকে লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে সেনাপতি ঈশা খাঁ, মহারাজ, ধুরন্ধর, যুবরাজ, প্রথম দূত, দ্বিতীয় দূত, বনমালী প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে নাটকের কলেবর বেড়েছে বটে। তাছাড়া রাজতন্ত্রের স্বরূপ ব্যক্ত করতে এসব চরিত্র অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এ কারণে নাটকের কাহিনীগত দিক থেকে এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও অন্যান্য দিক থেকে এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এ নাটকে।
.
সবশেষে ভাষারীতি ও গঠনরীতি নিয়ে কিছু বলবার পালা। উক্ত নাটকের ভাষারীতি সাধু হলেও সাধুভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য লেখার মত এ নাটকে কোনো কিছু তেমন দুর্বোধ্য মনে হয়নি আমার। তাছাড়া শব্দচয়নও তেমন মন্দ লাগেনি আমার। উল্লেখ্য, পাঠক হিসেবে কোনো নাটক পড়বার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে খুব বেশি হয়নি আমার। একাডেমিক পড়ার অংশ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নাটক পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এ সংখ্যাটি আর আগায়নি। সে বিচারে নাটক নামক সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র শাখার নবীন পাঠক হিসেবে মন্দ লাগেনি আমার।
.
হ্যাপি রিডিং! ♥
.
ব্যক্তিগত রেটিং: ৭/১০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ