বইয়ের নাম:নবি ইউসুফের পাঠশালা লেখক :শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল (review with pdf)

Post ID 111483

বইয়ের নাম:নবি ইউসুফের পাঠশালা
লেখক :শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল (এখানে লেখক বলতে বক্তাকে বুঝানো হয়েছে)
অনুবাদ:ইলমহাউস অনুবাদক টিম
অনুবাদ নিরীক্ষণ ও তথ‍্যসূত্র সংযোজন:শাইখ মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
মুদ্রিত মূল্য:১০০ টাকা (নির্ধারিত)
পৃষ্ঠাসংখ‍্যা:১০৮
প্রথম প্রকাশ:মে ২০১৮
আইএসবিএন নম্বর:978-984-34-4564-7


কিছু কথা:
যারা সত‍্যের পথে চলেন,যারা ভ্রান্তির সাথে আপস করেন না,যারা আর সবকিছুকে ভুলে,কোনোরকম ছাড় না দিয়ে এক আল্লাহর আনুগত্যকে আকঁড়ে ধরেন-তাঁদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।এর কোনো ব‍্যতিক্রম নেই।এটা আল্লাহর সুন্নাহ।সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর থাকলে,তাওহীদের প্রশ্নে ছাড় না দিলে,এক সময় না এক সময় আমাদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবেই।এটাই নিয়ম।আল্লাহ তাআলা বলেন:

"মানুষ কি মনে করে যে,'আমরা ঈমান এনেছি' বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে,আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম;আল্লাহ অবশ‍্যয় জেনে নিবেন,কারা সত‍্য বলে এবং অবশ‍্যয় তিনি জেনে নিবেন,কারা মিথ‍্যাবাদী।"-(সূরা আল-আনকাবুত,আয়াত:২-৩)

আল্লাহ আরো বলেন:

"আর আমি অবশ‍্যয় তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়,ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ‍্যমে।আর তুমি ধৈর্যশীলদের  সুসংবাদ দাও।যাদের উপর কোনো বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে,নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন‍্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকেই প্রত‍্যাবর্তনকারী।তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।"-(সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত:১৫৫-১৫৭)

উপরের আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন আল্লাহ অবশ‍্যয় মুমিনদের পরীক্ষা করবেন,যেমনভাবে পূর্ববর্তীদের করা হয়েছিল।এভাবেই আল্লাহ সত‍্যভাষী এবং মিথ্যাবাদীদের চিনে নিবেন।
আল্লাহ মুমিনদের ভয়,ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ‍্যমে পরীক্ষা করবেন।এসময় যারা ধৈর্যধারণ করবে তারাই আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত,রহমত ও হিদায়াত লাভ করবে।

নবী রাসূলগণ হলেন সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত এবং সেই পরীক্ষায় সবচেয়ে ধৈর্যধারণকারী ব‍্যক্তি।হযরত ইউসুফ আ. অপরাধ না করেও পরীক্ষা স্বরুপ মিশরের কারাগারে মিথ‍্যা অপবাদে জেলে বন্দি থেকেছেন।ওই সময় তিনি যে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন,তা সর্বযুগের মানুষের জন‍্য আদ‍র্শ।এজন‍্যই নবী ইউসুফ আ. এর জেল জীবনকে উনার পাঠশালা বলে অভিহিত করা হয়েছে।
যারাই পরবর্তীতে পরীক্ষা স্বরুপ জেলে গিয়েছেন এবং ধৈর্যধারণ করেছেন তাদেরকে ইউসুফ  আ. এর পাঠশালার সদস‍্য বলা হয়েছে।

ইতিহাসে এরকম অনেক ধৈর্যশীল আল্লাহর বান্দা পাওয়া যায়।এদের মধ‍্যে অন‍্যতম হলেন ইমাম আবু হানিফা রহ. এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়‍্যাহ রহ.।বর্তমান সময়েও এরকম অনেককে পাওয়া যায়।তাদের একজন হলেন শাইখ নাসির আল-ফাহ্দ হাফি.।
নবী ইউসুফের (আলাইহিস সালাম) পাঠশালা বইটি তাদের নিয়েই সাজানো হয়েছে।

বইয়ে যা আছে:
নবি ইউসুফের(আলাইহিস সালাম)পাঠশালা বইটির প্রথমেই ইউসুফ আ. এর পাঠশালা অর্থাৎ কারাগার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 
তারপর ইউসুফ আ. এর পাঠশালার তিনজন শিক্ষার্থী ইমাম আবু হানিফা রহ.,ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এবং শাইখ নাসির আল ফাহদ হাফি. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,কারাগারে বন্দি হওয়ার কারণ,তাদের উপর চালানো কারাগারের নির্মম শাস্তি,তাদের আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হক্বের উপর অটল থাকা ও কষ্ট সহ্য করা এবং শেষ পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে।

বইটিতে লেখক হাফি. তার নিজের এবং তার পিতা শাইখ মুসা জিবরিল হাফি. এর জেল জীবন নিয়েও খানিক আলোচনা করেছেন।
বইটাতে তিনি তাগুতপন্থী সরকারি আলিমদের অবস্থা তুলে ধরেছেন।বিশেষকরে ইন্টারফেইথের প্রচারকারী সেসব লোকদেখানো  আল্লাহওয়ালা(!) আলেমদের,যারা আল্লাহর ভয়ে(!)কেঁদে চোখ ভাসায়,দাড়িঁ ভিজায় অথচ শয়তানের গোলামী করে বেড়ায়।

পাঠ প্রতিক্রিয়া:
রমজানে বের হওয়ার পরেই বইটি কিনার সৌভাগ্য আল্লাহ তাআলা দান করেছিলেন।
বইটি পড়ে আমি অনেক শিক্ষা পেয়েছি।
যেমন,
১.কোনোভাবেই বন্দি হওয়ার ইচ্ছা করা যাবেনা।
২.যদি হয়েই যাই তাহলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে,নবি ইউসুফ আলাইহিস সালাম যা করেছিলেন।
৩.বাতিলের চাপের মুখে হক বলা বন্ধ করা যাবে না।সর্বদা সত‍্যের উপর অটল থাকতে হবে।
৪.তাগুতের গোলাম ইন্টারফেইথের প্রচারকারী ভন্ড আলিমদের বর্জন করতে হবে।
ইত‍্যাদি।

বইটি কেন পড়া উচিত:
নবি ইউসুফের পাঠশালা কি?একটা জটিল প্রশ্ন।একে কেনই বা নবি ইউসুফের পাঠাশালা বলা হলো।বন্দি অবস্থায় নবি ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর তাকওয়া ও ধৈর্য,ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়‍্যাহ রহ. এর তাকওয়া ও ধৈর্য সম্পর্কে জানার এক অনন‍্য বই নবি ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর পাঠশালা।

আমার পড়া একটি ভালোলাগা বই।
আমর ব‍্যাক্তিগত র‍্যাটিং:১০/১০
সবার প্রতি পড়ার আহ্বান রইল।

লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল হাফি. আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন।তিনি মাত্র এগারো বছর বয়সে পবিত্র কুরআন মাজিদ হিফজ করেন।অনন‍্য মেধার অধিকারী শাইখ আহমাদ হাইস্কুলে পড়ার সময়ই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ মুখস্থ করেন।তিনি কুতুবুস সিত্তাহর সমস্ত কিতাব মুখস্থ করেন।
শাইখ আহমাদ মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে শরিয়াহর উপর ডিগ্রি নেন।তিনি শাইখ ইবনু উসাইমিন রহ. ,শাইখ আতিয়াহ সালিম রহ. সহ সৌদি আরবের বড় বড় অনেক আলেম থেকে শিক্ষা লাভ করেন।হক কথা বলা এবং হকের দাওয়াত দেওয়ার অপরাধে  ওনাকে বন্দি করা হয়।তিনি বন্দি অবস্থায় ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখান এবং জেলেও দাওয়াত দিতে থাকেন।এখন তিনি আমেরিকায় নিজ পরিবারের সাথে অবস্থান করছেন এবং দাওয়াহর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লাহ শাইখকে নেক হায়াত দান করুন।আমিন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ