রাসূলের চোখে দুনিয়া মূল নাম:কিতাবুয যুহদ (review with pdf)

Post ID 111482

বইয়ের নাম:রাসূলের চোখে দুনিয়া
বইয়ের মূল নাম:কিতাবুয যুহদ
লেখক:ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহ.
অনুবাদ:শায়খ জিয়াউর রহমান মুন্সী
মুদ্রিত মূল‍্য:২৭৫ টাকা
পৃষ্ঠাসংখ‍্যা:১৯৮(+১ টি পাঠকের পাতা)
সংস্করন:২য়।
প্রাপ্তিস্থান:রকমারী.কম এবং ওয়াফি লাইফ
আইএসবিএন নম্বর:৯৭৮-৯৮৪-৩৪-২৬৪৯


আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন "দুনিয়া মুমিনের জন‍্য জেলখানা আর কাফিরের জন‍্য জান্নাতস্বরুপ।" [রাসুলের চোখে দুনিয়া, হাদিস নং-১৪৬]

বইয়ে যা আছে :
বইটি কয়েকজন বিখ‍্যাত নবী-রাসূলের দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি এবং আখিরাতের প্রতি আসক্তি অর্থাৎ যুহদ বিষয়ক হাদিসের এক উজ্জ্বল ভান্ডার। এতে রাসূল (আ.)-দের যুহদ নিয়ে হাদিসভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে ১১ জন বিখ‍্যাত রাসূলের যুহদ সম্পর্কিত হাদিস তুলে ধরা হয়েছে।
.
বইটিতে যে রাসূলদের যুহদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে , তারা হলেন : 
১) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
২) হযরত আদম আলাইহিস সালাম
৩) হযরত নূহ আলাইহিস সালাম
৪) হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম
৫) হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম
৬) হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম
৭) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম
৮) হযরত মুসা আলাইহিস সালাম
৯) হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম
১০) হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম
১১) হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম
.
বইটি রাসূলদের যুহদ সম্পর্কে জানার এবং রাসূলদের আদর্শ জীবনে বাস্তবায়ন করার এক অনন‍্য মাধ‍্যম।
.
প্রতিক্রিয়া :
আমি বইটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি (আলহামদুলিল্লাহ)। বইটি আল্লাহর প্রতি,আখেরাতের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি এবং দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি করার একটি মাধ‍্যম।বইটিতে বান্দাদের প্রতি আল্লাহর,উম্মতের প্রতি রাসূলদের ভালোবাসার চিত্রও ফুটে উঠেছে।বইটির বিভিন্ন জায়গায় রাসূলদের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অবস্থা দেখে শিহরিত হচ্ছিলাম। 
যদি এসব হাদিসের উপর আমল করা যায়,তাহলে বান্দার আল্লাহকে পাওয়ার মনোবাসনা পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।
শিহরন জাগানিয়া একটি হাদিস,
মাসলামা রহ. থেকে বর্ণিত, দাঊদ আলাইহিস সালাম বলেন,"হে আমার ইলাহ!আমি কীভাবে তোমার (অনুগ্রহের জন‍্য) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব?(কারন) আমি যে তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব-সেটিও তো তোমার অনুগ্রহ!"
.
এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তার নিকট ওহী প্রেরন করেন "দাঊদ,তুমি কি জানো না-তোমার জীবনের সকল অনুগ্রহ আমার দেওয়া?"
তিনি বললেন, "অবশ‍্যই, হে আমার রব!"
আল্লাহ বলেন,"তাহলে তোমার এটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই আমি সন্তুষ্ট।"
[রাসুলের চোখে দুনিয়া, হাদিস নং-৩৪১]
.
আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার! আল্লাহ তো সৃষ্টিকে এমনই ভালোবাসেন। কিন্তু আমরা বুঝি না। আর বুঝতেও চাই না।

বইটি কেন পড়া উচিত :

বইটি পড়ে আমরা রাসূলদের যুহদ সম্পর্কে জানতে পারব।
উনারা দুনিয়াকে কতটা ঘৃণা করতেন, আর আখিরাতকে কতটা ভালোবাসতেন-সে সম্পর্কে জানতে পারব।
বিভিন্ন রাসূলদের আল্লাহ প্রেমের স্বরুপ জানতে পারব।
আল্লাহর কাছে এবং রাসূলদের কাছে দুনিয়া কতটা নিকৃষ্ট তা জানতে পারব।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের চিনতে পারব, অপ্রিয়দের কেউ চিনতে পারব।
আল্লাহকে খুশি করার মাধ‍্যম এবং আল্লাহ কেন বান্দার প্রতি নারাজ হন তা জানতে পারব।
এছাড়াও আরো অনেক কিছু জানতে পারব, যা দ্বারা আমরা আমাদের জীবনকে রাঙিয়ে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে পারব।

বইটি যেসব বিষয়ে আরো উন্নতি করতে পারতো:
আলহামদুলিল্লাহ।বইয়ের লেখার মান,প্রচ্ছদ,পৃষ্ঠার মান সবই সুন্দর হয়েছে।
তবে বইটিতে যদি কিছু সংযোজন করা হতো তাহলে আরো ভালো হতো।
যেমন:
১.হাদিসগুলির শেষে যদি হাদিসের মান অর্থাৎ সহিহ,হাসান,যয়ীফ ইত‍্যাদি দেওয়া থাকতো তাহলে ভালো হতো।কারন,অনেকেই আছেন যারা হাদিসের মান দেখে আমল করতে চান।তাই যেহেতু এটি হাদিসগ্রন্থ,তাই এতে হাদিসের মান যোগ করলেই ভালো হয়।

২.বইটার অধিকাংশ হাদিসই মুরছাল অর্থাৎ সাহাবীর নাম উল্লেখ নেই।
তাই বইটির প্রথম দিকে মুরছাল হাদিসের গ্রহনযোগ্যতা এবং ইমামদের বক্তব্য নিয়ে একটা স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদ করা দরকার।এতে হাদিস বিষয়ে পাঠকদেরও জ্ঞানের উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ।
৩.বইটির প্রথমদিকের কয়েকটি হাদিসে গ্রহনযোগ্য হাদিসগ্রন্থের নাম এবং হাদিস নম্বর উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ হাদিসেই তা নেই।তাই গ্রহনযোগ্য হাদিসগ্রন্থের যেখানে উক্ত হাদিসটি উল্লেখ আছে,তা সংযোগ করলেও ভালো হয়।এতে আলেম এবং তালিবে এলেমদের জন‍্য ভালো হবে।

আহ্বান:
বইটি আত্মাকে দুনিয়ার প্রতি প্রেম-ভালোবাসা থেকে পৃথক করে আল্লাহমুখী করার একটি উত্তম গ্রন্থ।বইটি পড়ে সবার একটু না একটু আত্মার উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ।
তাই বইটি সবার পড়া উচিত।
আল্লাহ সবাইকে বইটি পড়ার এবং আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ