বই: মুঠো মুঠো সোনালী অতীত
লেখক: মুহাম্মদ আতিক উল্লাহ
মুহাম্মদ আল ফাতিহ! কনস্টান্টিনােপল বিজেতা। তিনি একজন কবিও ছিলেন । লাজুক কবি। আওনি' ছদ্মনামে লিখতেন। তার দীওয়ান (কাব্যসমগ্র) অনেক দিন ধরে অজ্ঞাত ছিল। জার্মান প্রাচ্যবিদ জর্জ জ্যাকব সেটা উদ্ধার করে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। তারা শুধু রাজ্যশাসনই করতেন
না, সাহিত্য-সাধনাও করতেন।
[২]
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সর্বমােট ৪৪টা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ।
এক. মুশরিকদের সাথী হয়ে ৩ বার ।
দুই. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ১২ বার ।
তিন. মুরতাদদের বিরুদ্ধে ৩ বার ।
চার. পারস্যের বিরুদ্ধে ১৫ বার ।
পাঁচ. শাম ও ইরাকে ৪ বার ।
ছয়. শামে রােমকদের বিরুদ্ধে ৭ বার ।
[৩]
‘তারা চায়, মেড ইন আমেরিকা ও মেড ইন ইসরাঈল মার্কা ইসলাম। তারা চায় ওযু ভঙ্গের ফতােয়া জানতে চাওয়া ইসলাম। তারা মুসলমানদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তােলা ইসলাম চায় না।’ - সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.)
[৪]
১৬ ই সেপ্টেম্বর। এক মহান মুজাহিদকে প্রকাশ্য দিবালোকে,ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে দেয়া হয়। একজন মাদরাসা-শিক্ষক। একজন
মরুশার্দুল ('লায়ন অব দ্যা ভেজাট’) ইমামুল মুজাহিদ শায়খ উমর মুখতার (রহ.)। মুসােলিনির পেটোয়া বাহিনী এনো ন্যাকারজনক ঘটনা ঘটায় ১৯৩১ সালে।
[৫]
সাইফুদ্দীন কুতুয (রহ.)-এর হাতে ক্ষমতা ছিল মাত্র ১১ মাস। ১২৫৯-১২৬০ |
অথচ এই এগার মাসের শাসনামলেই তিনি অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন। মােঙ্গলদের পরাজিত করেছেন। আইনে জালুতের ময়দানে।
অবশ্য সাথে রুকনুদ্দীন বায়বার্সের মতাে মানুষের তীক্ষ সামরিক মেধাও ছিল।
[৬]
ইউসুফ বিন তাশাফীন (রহ.) যখন আন্দালুসে আসেন, সেখানে ছিল কবি-কবিতা, মদ-সুরার সমারােহ। আনন্দ-বিনােদন আর আঁক-জৌলুসের ঠাট-ঠমক।ইউসুফ বিন তাশাফীন এসেই এসব বন্ধ করেছেন। কবিদেরকে শহর ছাড়া করেছেন। নর্তকীদেরকে বােরকা দিয়ে ঢেকেছেন। পানশালা
আর হাম্মামগুলােতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পাপাচার বন্ধ করেছেন। সবাই মুতামিদ বিন আব্বাদকে গালি দিতে শুরু করলাে। এ আবার কোন আপদ নিয়ে এল! কবিতা পছন্দ করে না! নাচ-গান জানে না! মােটা পশমের কাপড় পরে থাকে। গায়ের রঙ কালাে!
যদি এ-কালে ইউসুফ বিন তাশাফীন এমন করতেন, তাহলে প্রচারমাধ্যমের লোকেরা তার সম্পর্কের কী বলতো?
এক কথায় ‘খারেজী’।সন্রাসী।বর্বর।চরমপন্থী।
এমনকি তৎকালীন আন্দালুসের বড় বড় ফকীহরা পর্যন্ত এ-মহান বীরকে বর্বর-অশিক্ষিত-ইসলামের উদারতা সম্পর্কে অজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করতে পিছপা হননি! বর্তমানেও কিছু মানুষ তাই করতো! ইসলাম শান্তির ধর্ম! উদারতার ধর্ম! ক্ষমার ধর্ম! আরও কত কী!
[৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফিরদের বিরুদ্ধে, স্বয়ং নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৮টা গাযওয়ার (যুদ্ধে)।
১৯টা গাযওয়া কোনও যুদ্ধ ছাড়াই লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেছে। ৯টা পাওয়ায় যুদ্ধ করতে হয়েছে।
[৮]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)। পাঁচবার কারাবরণ করেছেন। মােট ১৭ বছর কারাবন্দী ছিলেন। পাঁচটা যুদ্ধে সরাসরি ময়দানে থেকেছেন। ভিন্নমতে একটূ যুদ্ধে।
[৯]
মুমিনের স্বপ্নও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বর্তমানে প্রতিদিন যে আযান শুনি, সেটা কিন্তু হুবহু স্বপ্নে পাওয়া। দুইজন মহান মানুষের।
মহান দুই স্বাপ্লিক হলেন,
এক, আবদুল্লাহ বিন যায়েদ (রা.)। তিনিই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগে স্বপ্নের কথা বলেছেন।
দুই. উমর (রা.)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের স্বপ্নকে স্বীকৃতি দেন।
[১০]
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন ৬৩ বছর।
আবু বকর (রা) ইন্তেকাল করেছেন ৬৩ বছর বয়সে।
উমর (রা.) ইন্তেকাল করেছেন ৬৩ বছর বয়সে।
[১১]
একজন অন্ধের শানে চৌদ্দটা আয়াত নাযিল হয়েছে। ভাবা যায়? সূরা আবাসা প্রায় পুরােটাই।
অন্ধ মানুষটা হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জিহাদের ডাক দিলেন, অন্ধ মানুষটাও যাওয়ার বায়না ধরলেন।
-আমি তাে বেশি কিছু করতে পারবাে না। এটুকু তো পারবো, ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরতে? পতাকা বহন করতে? চোখে না দেখার কারণে পরিস্থিতি যাই হােক স্থির থাকবাে। অবাক করা ব্যাপার হলাে, মহান অন্ধ মানুষটা কাদেসিয়ায় রণাঙ্গনে জামে শাহাদাত পান করেছেন।
অবাক ব্যাপার হবে কেন?
তিনি তাে সাহাবী! একজন সাহাবী এমনটাই তাে হবেন!
[১২]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)। ইমামু আহলিস সুন্নাহ। একজন সত্যিকার আশেকে রাসূল। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে যখন আব্বাসি খলীফা মামুন (৮১৩-৩৩)-এর সময় চরম নির্যাতন করে, কারাবন্দী করা হলাে। তিনি তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, আমাকে একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে চুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। নামাযের সময় ছিল। কিন্তু পানি পাব কোথায়? বিসমিল্লাহ, বলে হাত বাড়ালাম। হাতে পানিভর্তি একটা পাত্র ঠেকল। ওযু করে নামাযে দাঁড়লাম। কিবলা ঠিক করতে পারছিলাম না । বিসমিল্লাহ বলে একদিকে মুখ করলাম। সকাল হলে দেখলাম আমার কিবলা ঠিক ছিল।
[১৩]
সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) মাঝে মধ্যে দুইদিন, তিনদিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারতেন না। সারাক্ষণ চোখ দিয়ে অশ্রত
ঝরতাে আর তিনি অত্যন্ত শােকসন্ত্রস্ত হয়ে বলতে থাকতেন,
- কবে যে বায়তুল মুকাদ্দাস ফাতাহ হবে!
[১৪]
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) হলেন আমাদের উম্মতে মুহাম্মদীর বিরল ঘরানার আলিমদের একজন, যিনি নিজ মত প্রকাশের জন্যে নির্যাতন সয়েছেন।
যদিও তার ভিন্নমতগুলো কোনও কোনও সময় জমহুরের বিপরীত হয়ে যেতো। চিন্তা ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে শতভাগ নিরংকুশ হওয়া অসম্ভব।
তিনি তখন মিশরে। ইলম ও দাওয়াতের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
মায়ের কাছে চিঠি লিখলেন,
-আম্মু! আমি আপনার কাছ থেকে অনেক দূরে। মিশরে। আপনার কোনও খিদমত করতে পারছি না। ক্ষমাপ্রার্থী।
মহিয়সী আম্মাজান উত্তর দিলেন,
বৎস! আমি এজন্যই তােমাকে প্রতিপালন করেছি। ইসলাম মুসলমানদের খিদমতের জন্যে তােমাকে মান্নত মেনেছি। তােমাকে শিক্ষা দিয়েছি শরীয়তের খেদমতের জন্যে। তুমি এটা মনে করাে না, ইসলামের খেদমত না করে কাছে থাকলে আমি তােমাকে বেশি ভালবাসবাে! যত বেশি দ্বীন-ইসলাম ও মুসলানদের খেদমত করবে, আমি তত বেশি তােমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবো। বৎস! তুমি বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে দূরে পড়ে আছ, সেজন্য আমি তোমার কাছে জবাবদিহিতা চাইব না, কারণ আমি জানি, তুমি
কোথায় ও কিসে আছি।
কিন্তু আহমদ! আমি আল্লাহর সামনে তােমাকে ধরবাে, যদি তুমি দ্বীনের খিদমতে শিথিলতা করো। আল্লাহ তােমার প্রতি সন্তুষ্ট হােন। কল্যাণ দ্বারা তোমার পথকে আলােকিত করুন। তােমার পথচলা সঠিক পথে রাখুন।আমাকে এবং তোমাকে আরশের ছায়ায় জমায়েত করুন।
[১৫]
হাসানুল বান্না (রহ.) বাজারে গাশতে বের হতেন। চা-দোকানে, কফিশপে গিয়ে দ্বীনের কথা শােনাতেন। খুসুসী গাশতই বেশি করতেন।
তিনি প্রায়ই একটা কথা বলতেন,
- হে লােকসকল! আসুন আমরা জেগে উঠি! আমরা ফিরিয়ে আনি খেলাফতের সেই গৌরব!
[১৬]
- বদরযুদ্ধ হয়েছিল, মুশরিকদের বিরুদ্ধে।
- মুতার যুদ্ধ হয়েছিল, (ক্যাথলিক) রোমের বিরুদ্ধে।
- খায়বরের যুদ্ধ হয়েছিল, ইহুদিদের বিরুদ্ধে।
- আহযাবের যুদ্ধ হয়েছিল, সম্মিলিত বহিঃশত্রু ও লুকিয়ে থাকা গৃহশত্রুর বিরুদ্ধে।
- কাদেসিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল, পারস্যের অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধে।
- হিত্তীনের যুদ্ধ হয়েছিল: ক্রুশেডার (ক্যাথলিক-অর্থোডক্স)-দের বিরুদ্ধে।
- আইনে জালুতের যুদ্ধ হয়েছিল, তাতারদের বিরুদ্ধে।
- জাল্ডিরানের যুদ্ধ হয়েছিল, শিয়াদের বিরুদ্ধে।
- আজ ইরাক-সিরিয়ায় (শামে) যুদ্ধ হচ্ছে: এদের সকলের বিরুদ্ধে!
বই: মুঠো মুঠো সোনালী অতীত
লেখক: মুহাম্মদ আতিক উল্লাহ
____________
নোট: ইতিহাস মানেই যাদের কাছে মোটা মোটা বই আর সন-তারিখের ঝামেলা তাদের জন্য বলবো,বক্ষ্যমান বইটি আপনার জন্যই।বইটিতে ইসলামী ইতিহাসকে খন্ড খন্ড করে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তলে আনা হয়েছে। ছোট ছোট পরিসরে। ক্লান্তিকর একঘেয়ে ভঙ্গি এড়িয়ে। মনে রাখার কষ্টকে পাশ কাটিয়ে।চমৎকার বইটি সংগ্রহ করে আপনিও সোনালী সময় হতে ঘুরে আসতে পারেন। সময় টা ভালো কাটবে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....