বই:বই খাতা কলম লেখক:জিয়াউল হক review

Post ID 111496

বই:বই খাতা কলম
লেখক:জিয়াউল হক
প্রকাশনী:দি পাথফাইন্ডার পাবলিকেশন্স
নির্ধারিত_মূল্য:১০০ টাকা

📝লেখকের_কথা:

একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও পরিপক্কতা না হলে সেই জাতির জীবনে অর্থবহ উন্নয়ন সম্ভব নয় । আর এই বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও পরিপক্কতা তথা ইন্টেলেকচুয়াল ম্যাচিউরিটি অর্জন সম্ভব একমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে


একটি মহান দর্শন হিসেবে ইসলাম বিশ্বের সকল মানুষের সামনে একটা সার্বিক ও অর্থবহ উন্নয়নের যে রোডম্যাপ তুলে ধরে, তার সর্ব প্রথম নির্দেশনা হলো পড়, জ্ঞান অর্জন কর । আজীবন এ কাজটা করে যেতে হবে, আমৃত্য।

দুঃখের এবং পরিতাপের বিষয়, আজীবন নিরবিচ্ছিন্ন জ্ঞান চর্চা করার অভ্যাস আজ খুব কম মুসলমানের মধ্যেই দেখা যায় । বাংলাদেশে আমরা এক্ষেত্রে শোচনীয়ভাবে পিছিয়ে আছি।  উৎসাহী পাঠক, বিশেষ করে আগামী প্রজন্মকে এই দিকটি সম্বন্ধে সচেতন করে তোলাই হলো এই বই রচনার মূল উদ্দেশ্য। 

#কি_আছে_বইয়ে:

পুরো বইয়ে লেখক গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি টপিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রথমেই লেখক বলেছেন মুসলমানরা কেবলমাত্র কুরআনুল কারীম দ্বারা সারা বিশ্বে নিজেদের কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা এতটাই ক্ষমতাধর হয়েছিলেন যে, ছয় হাজার বছর বছরের ঐশ্বর্য ও শক্তি সমৃদ্ধ পারস্য সাম্রাজ্য কে, সাড়ে চার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাশক্তিধর রোমান সাম্রাজ্য কে ধ্বংস করে তাদের উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এরপরে লেখক পড়ালেখা করার গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন,  যার মধ্যে অন্যতম হলো বেশি বেশি পড়া লেখা করার ফলে পাঠক 'অ্যালজাইমার্স' নামক মারাত্মক রোগটি হতে বেঁচে যায় খুব সহজেই। লেখক বলেছেন, পড়ুন। যত বেশি পড়বেন,তত বেশি ভাষা ও ভাষার ব্যবহার, তার প্রকাশভঙ্গি শিখবেন । এর পাশাপাশি নতুন নতুন শব্দ সম্ভার আপনার স্মৃতিতে যোগ হবে ।

এরপরে লেখক জ্ঞানের তিনটি পর্যায় ও জ্ঞানীর তিনটি স্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন । পুরো বইয়ের ভিতর এটি খুবই আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ টপিক।  লেখক বলেছেন, আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে লেখালেখির মাধ্যমে এ যুগের সমাজ বদলের প্রথম সারির কারিগর ও অগ্রদূত হওয়ার।

মানুষকে বদলে দিতে পারে কলম, বদলে দিতে পারে সমাজ ও বিশ্বকেও। স্বৈরাচারের বুলেট এর বিপরীতে গর্জে উঠুক, অনলবর্ষী, অগ্নিঝরা হয়ে আমাদের কলমগুলো
লেখক এর মতে, আগামী বিশ্ব যদি প্রকৃত অর্থেই সৎ ও যোগ্য মানুষ তৈরি করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। 

লেখালেখির রেজাল্ট সুদূরপ্রসারী। আপনার মৃত্যুর শত শত এমন কি হাজার বছর পরও কেউ হয়তো আপনার লেখা পড়ে উপকৃত হতে পারে। আর লেখাটা যদি হয় মানবতা কল্যাণধর্মী, তাহলে তা আপনার অলক্ষ্যেই মানবতার কল্যাণ প্রাপ্ত হবে । 

লেখালেখির হাতিয়ার যে কলম, তা আল্লাহ তায়ালার কুদরত ই হাতের তৃতীয় সৃষ্টি । 
একজন লেখককে হতে হবে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। তার থাকতে হবে তৃতীয় নয়ন। সাধারণ মানুষ তাদের দুটি চোখ দিয়ে যা দেখেন, সেই একই জিনিসের মধ্যে একজন লেখক নিজের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন তার চেয়েও বেশি কিছু, ভিন্ন কিছু। একজন লেখককে  হতে হবে মৌমাছির মতো অক্লান্ত পরিশ্রমী। 

লেখক এর আহবাণ, সূরা ফাতেহার ৭ টি আয়াত দিনে ১৭ বার আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত করা আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কর্তৃক  সাতশতবার ইলম অর্জনের কথা উল্লেখ করার বিষয়; এসবের গুঢ় রহস্য বুঝতে পারলে আমাদের সামনে এক ভিন্ন জগত খুলে যাবে । 

এরপরে লেখক প্রশ্ন করেন, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী 'ইবনে খালদুন' রচিত "আল মোকাদ্দামা" বর্তমান বিশ্বে অমূল্য এক দলিল হয়ে টিকে আছে। কিন্তু আমরা কি জানি? স্বেচ্ছানির্বাসনের চার বছর, চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে, অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এই বইটি লিখেছিলেন।

লেখকের মতে,  আগামী দিনের মুসলিম রাজনীতিবিদ, মুসলিম পেশাজীবীদের জন্য কর্মোপযোগী মুসলিম মানস, মুসলিম জনপদ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব হলো একদল তরুণ বুদ্ধিজীবী,পরিশ্রমী লেখক ও গবেষক,জাদরেল সাংবাদিক এবং চিন্তাবিদদের। আমাদের মত তরুনদের ই এজন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে । 

সর্বশেষে লেখক, ১০ টি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন জ্ঞান এবং সম্পদের মধ্যে জ্ঞান ই সর্বোৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠ। 

#আমার_কথা:

সর্বপ্রথম লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় বই লেখার জন্য । এক কথায় বললে বলবো, আমি মুগ্ধ । লেখক আসলেই মৌমাছির মতো অক্লান্ত পরিশ্রম করে তথ্যবহুল এ বইটি লিখেছেন ।অনেক অজানাকে জানলাম, এবং বেশি বেশি জ্ঞান অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত হলাম। আমার ব্যক্তিগত রেটিং ১০ এ ১০।যারা রিভিউ পড়বেন সবার প্রতি অনুরোধ রাখবো অসাধারণ এই বইটি সংগ্রহ করে পড়ার জন্য । মহান আল্লাহতায়ালা লেখক  zia ul haque এবং প্রকাশক Sultana Akhter কে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ