বই: মাটির টানে গাঁয়ের পানে লেখক: মোশাররফ হোসেন খান review

Post ID 1114512
বই: মাটির টানে গাঁয়ের পানে
লেখক: মোশাররফ হোসেন খান
প্রচ্ছদ: হামিদুল ইসলাম
বইয়ের ধরন: কিশোর উপন্যাস
প্রকাশনা: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ
প্রকাশকাল: ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮খ্রি:
পৃষ্ঠা: ৩৬
মূল্য: ১৩০৳


~লেখক পরিচিতি:
ভাষা আন্দোলনের ঠিক ক'বছর পরে ১৯৫৭সালে যশোর জেলার অন্তর্গত কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বাঁকড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোশাররফ হোসেন খান। বহুপথ পেরিয়ে ছয় দশকের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আজ সফল মানুষদের একজন। বর্নাঢ্য কর্মজীবনে শিক্ষক, সম্পাদনা কিংবা সাংবাদিকতা পেশাতে নিয়োজিত থাকলেও মূল পরিচয়ে একজন কবি আর এখানেই উনার বড় সাফল্য।

বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে উনার অবদান কতটুকু তা অনুধাবন করা যায় দার্শনিক দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, কথাশিল্পী শাহেদ আলী, অধ্যাপিকা জুবাইদা গুলশান আরাসহ ভাষা সৈনিক প্রফেসর চেমন আরাদের মন্তব্য থেকেই। এছাড়াও বর্তমান প্রধান কবি, কবিতার রাজপুত্র আল মাহমুদ উনার মেধা আর সাহিত্য কাজের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে বলেছেন- "মোশাররফ হোসেন খান এখন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম প্রধান কবি। শুধু কবিতাই নয়, সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সফল বিচরণশীল একজন লেখক। আমি তাঁর একজন গুণমুগ্ধ পাঠকও বটে।"

সাহিত্যের সকল শাখায় অবদান রাখলেও শিশু-কিশোরদের প্রতি ভালোবাসা থেকে শিশুসাহিত্য নিয়েই অনেক বেশি লিখেছেন। যেগুলো থেকে 'সাহসী মানুষের গল্প' সিরিজ এক অনন্য কিশোর সৃষ্টি। আর এখন কাজও করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সর্বাদিক প্রচারিত শিশু-কিশোর মাসিক নতুন কিশোরকণ্ঠের প্রধান সম্পাদক হিসেবে।

~বইটি পড়ার আগে:
গ্রামের মাঠ-ঘাট, খাল-বিল আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠা এই আমি যখন ইট পাথরের শহরে আসার দীর্ঘ সময় পরেও বাড়ী ফেরার কোন সুযোগ পাই না তখন বিষণ্ণ মনটাকে ভালো করার নানান উপায় খুঁজে বেড়ায়। খুঁজতে গিয়ে যা পাই তা যে সত্যিকার অর্থেই মনকে প্রশান্ত করে দিবে তা এক বিস্ময়করও বলা যায়।

~বইয়ের মূলকথা:
১.
কিশোর উপন্যাসটির মূল চরিত্র রিয়াজ সাহেব। গ্রাম্য প্রকৃতির মাঝে বেড়ে উঠা হলেও বাস্তবতার কারণে পঁয়ত্রিশ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। দু'ঈদের কোন এক ঈদে গ্রামে যাওয়া হলেও দীর্ঘ দিন ধরে যেতে না পারায় গাঁয়ে থাকা মা-বা, ভাই-বোনদের সাথে সাক্ষাৎ আর গ্রামের স্বাদ নিতে মনটা তাঁর ব্যাকুল হয়ে আছে। অন্যদিকে ছোট মেয়ে তারিন(যাকে আম্মু বলে ডাকে) সেও গ্রামে যাওয়ার জন্য আবদার করছে। সে হিসেবে ঈদে যাতায়াত অসুবিধার কারণে মাঠজুড়ে লোভনীয় সোনারং ধান আর শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের হেমন্ত ঋতুতেই গ্রামে যাওয়ার প্ল্যান নেওয়া। 
২.
একজন মাওলানা এমপি সহ রিয়াজ সাহেবরা যে সাত ভাই-বোন আছেন তাঁদের সফল হওয়ার কারিগর আব্বাজানটা কেমন ছিলেন? হ্যাঁ, তিনি ছিলেন গ্রাম্য কিন্তু শিক্ষক, কবি, গীতিকার, সমাজ সংস্কারক ও ধার্মিক আদর্শ পিতা হিসেবে নিজ গুণে অনন্য। তাইতো আমৃত্যু বইয়ের স্বাদ নিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন দ্বীনি মাদ্রাসা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করেছেন শিক্ষার্থী। পথসাথী করে ছেলে-মেয়েদের শিখিয়েছেন একজন আদর্শবান মানুষ হওয়ার গুণগুলো। মানুষদের প্রাণভরা ভালোবাসা নিয়ে মুসলিম-হিন্দু কিংবা ধনী-গরীব সবার সুখে-দুঃখের একজন।
আর আম্মাটা কেমন? হ্যাঁ, তিনি তো সে এক ভিন্ন মায়াবি জগৎ। সহজ-সরল অথচ নেতৃত্ব দানের দৃঢ় শক্তি নিয়েই তো ধরে আছেন প্রিয় স্বামীর ঐতিহ্যবাহী সংসারের হাল। রাত-দুপুরেও ঘুম থেকে উঠে সন্তানদের আবদার মেটানো আর রিয়াজ সাহেবদের প্রস্তানের দিন পুকুর পাড়ে বসে বসে কেঁদে যাওয়া সহ আরো অনেক কিছুর এক অসাধারণ গ্রাম্য মা।
৩.
গ্রামের সুন্দর প্রকৃতি নয় শুধু মানুষগুলোর সবুজ হৃদয়ও যে বিশাল আকাশের মত উদার সে-সবের যে অপরূপ বর্ণণা ছোট্ট পরসিরে কবি দিয়েছেন তা সত্যিই বিমোহিত করার মত। এছাড়াও প্রতিটি বাক্য এবং শব্দের যথার্থ ব্যবহার নিয়ে যায় ভাবনার জগতে। চিন্তায় ফেলে দেয়- গাঁয়ের রূপের বর্ণনা আর শিক্ষামালার বর্ণনা কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি সমৃদ্ধ!
৪.
শ্রদ্ধেয় কবি যদি কয়েকটি কঠিন শব্দ ব্যবহার না করতেন আর কিছু কিছু জায়গাতে আরেকটু বিস্তৃত আকারে লিখতেন তাহলে ভালোর মধ্যেও ভালো হতো মনে করছি।

~বইটি পড়ার পরে:
বইটি কাকে বেশি আকর্ষণ করবে? এমন প্রশ্নের উত্তর বইয়ের নাম থেকে ধারণা করা গেলেও বলতে হয় আপনার শৈশব-কৈশোর কাটে যদি গ্রামে কিংবা হন যদি গাঁয়ের স্বাদ নিতে না পারা শহুরেদের একজন অথবা গাঁয়ের আপনি বিষণ্ন মন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আছেন শহরে কিংবা প্রবাসে তবে ধরে নিতে পারেন আপনার জন্য হৃদয়কে প্রশান্ত করে দেওয়ার মত একটি বই 'মাটির টানে গাঁয়ের পানে'।
হতেপারে আমার কাঁচাহাতের রিভিউতে বইটির পাতায় পাতায় থাকা শিক্ষা আর সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে পারিনি কিন্তু বিশ্বাস করি যে, ভালো পড়ুয়ার কাছে বইটি হবে সেরা বইগুলোর একটি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ