আল্লাহর কসম, তিনি মিথ্যা বলেন নি.! -Zia Ul Haque

Post ID 111550

                      
প্রিয় রাসুল সা: এর সর্বশেষ ঐতিহাসিক পাবলিক ভাষণটি বিশ্বে মানবাধিকার আর নিপিড়ত মানুষের মুক্তির জন্য সবচেয়ে কার্যকর দিক নির্দেশনা হলেও তা আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হয়নি। আমরা ইচ্ছা করলেই ভাষণটিকে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করতে পারতাম। এখনও পারি। কিন্তু এর জন্য রাজনৈতিক স্বিদ্ধান্ত নেই।  

দু:খজনক বিষয়, শিক্ষিত সমাজও ভাষণটিকে কেবলমাত্র ইতিহাস আলোচনায় সীমাবদ্ধ রেখেছেন, ফলে আল্লাহর রাসুল সা: এঁর এ ভাষণটি হতে আমাদের জন্য কোন পথনির্দেশনা বের করতে পারছেন না। এর শোচনীয় ও লজ্জাকর পরিণতিটা বিশ্ব্যাপী মুসলিম চিন্তা মানস দেখলেই পরিস্কার হয়ে যায়। এই অচলাবস্থা কাটাতে না পারলে উম্মাহর এই অসহনীয় দুরাবস্থার অবসান হবে না কোনদিনই। আমাদেরকে অবশ্যই প্রিয় রাসুল সা: ঐ ভাষণটি থেকেই মুক্তি ও পরিত্রাণের পথ বের করতে হবে।

প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: সেই ভাষণটিতে বলেছিলেন; ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন সুস্পষ্ট দুটি বিষয় (বিধান) রেখে গেলাম, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ।’ 
অর্থাৎ প্রিয় রাসুল সা: সুস্পষ্ট আশ্বাসবাণী দিয়ে বলেছেন; যদি আল কুরআন ও তাঁর সুন্নাহকে আমাদের জীবন ও সমাজ পরিচালনার জন্য অনুসৃতব্য হিসেবে গ্রহণ করি, তা হলে আমরা বিপথগামী হবো না। বাক্যটিতে তিনি সা: দু’টো উৎসের কথা সুস্পষ্ট বলেছেন। এক ;আল কুরআন আর দুই; তাঁর সুন্ন্হা, তথা, কর্মপন্থা। 

উম্মাহর অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটো উৎসকেই আজ উম্মাহর অধিকাংশ সদস্যদের কাছে অত্যন্ত দুরুহ ও দূর্বোধ্য করে তোলা হয়েছে। ইসলামকে আত্মস্থ করা, তার দর্শন ও শিক্ষাকে উপলব্ধী করাটাকে কঠিন করে ফেলা হয়েছে সাধারণ মুসলমানদের জন্য। উম্মাহ আজ ত্যাক্ত বিরক্ত ও দিকভ্রান্ত হয়ে কুরআন ও সুন্নাহ হতে দুরে থাকায় অতি সহজেই শয়তানের এবং সেই সাথে ইসলাম বিরোধি নানা শক্তির সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে।

রাসুল সা: এর জীবন ও কর্ম নিয়ে যে ইতিহাস আমাদের সামনে রয়েছে, তাঁর বক্তব্য, কাজ, কর্ম, তাঁর অনুমোদন, আপত্তি এ সবই হলো হাদিস। এগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ হাদিসের মধ্যে ভেজাল মেশানো হযেছে। জাল হাদিস রচনা করা হয়েছে। এইসব জাল হাদিসকে আমাদের মুহাদ্দিসগণ বসরের পর বসর ধরে অসীম ধৈর্যে গবেষণা ও পর্যালোচনার পর সনাক্ত করেছেন। কিন্তু তার পরেও এরকম প্রশ্নবিদ্ধ অনেক বাণী (জাল হাদিস)কে প্রিয় রাসুল সা: এঁর নামে চালিয়ে দেয়ায় উম্মাহর কোটি কোটি অল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সদস্যরা প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এঁর জীবন থেকে যথাযথ শিক্ষা নিতে পারছে না বা ভুল শিক্ষা নিচ্ছে।

আরও রয়েছে আল কুরআনের প্রসঙ্গটিও। ‘আর অবশ্যই আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, তাই উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?’ (আল-কামার: ১৭, ২২, ৩২, ৪০)। স্বয়ং আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা তিনি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন বুঝার জন্য। অথচ সেই কুরআনকে কিছু কিছু আলেম ওলামা সাধারণের জন্য কঠিন করে ফেলেছেন বুঝে বা না বুঝে। 

আফসোস, আজ কোটি কোটি বনি আদম কুরআন পড়া জানে না, পড়া জানলেও বুঝে না। কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনার সাহস করাটাকে তারা দু:সাহস মনে করে। ভাবে কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করাটা কেবলমাত্র  আলেম-ওলামাদেরই কাজ। মাদ্রাসায় কামেল পাশ’সহ তাফসির, হাদিস, ফিক্বহ আরবি ভাষাসহ প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে কুরআন বুঝা সম্ভবপর নয়! অথচ আল্লাহর ঘোষণা হলো তিনি কুরআন বুঝা সহজ করে দিয়েছেন। 

অবশ্যই কুরআনের শিক্ষা ও দর্শনকে ঠিক রেখে যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো কার্যকর পথ ও উপায় বাতলে দিতে হলে কুরআনের গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে সেই গভীর জ্ঞান তো উম্মাহর প্রত্যেকটি সদস্যের পক্ষে অর্জন সম্ভবপর নয়। কুরআন কেবল মুফাসসির, ফকিহ, মুজতাহিদ ও ইমামদের জন্যই নাজিল হয়নি, নাজিল হয়েছে জ্ঞানী বা মূর্খ প্রতিটি মানুষের জন্য। সেই সাধারণ মানুষের কাছে কুরআন বুঝতে হলে তাদের নাগালের বাইরে রয়ে যাওয়া কিছু জ্ঞানের কথা উল্লেখ করে কুরআন উপলব্ধী হতে দুরে রাখা হয়েছে। উম্মাহর জন্য এটা বড় দু:খের আর কষ্টের কথা!

বাংলাদেশে যুব সমাজের মধ্যে, বিশেষ করে, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত যুবক যুবতী, এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক নারী পুরুষের মাঝেও ইসলাম জানা ও বুঝার ব্যাপারে এক ধরনের আগ্রহ জন্ম নিতে দেখছি। বিষয়টা  খুবই আশা জাগানিয়া।

এরকম একটা প্রেক্ষাপটেই সেই সব যুবক যুবতি ভ্ইা বোন, সেই সব ব্যক্তিবর্গ, যারা নানারকম জানা অজানা কারনে জীবনে কুরআন বুঝে পড়তে পারেননি, তাদের বলছি; বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বাস্তবতা হলো, ভিন্নভাষায় হলেও কুরআনুল কারিম বুঝা ও তার শিক্ষা হৃদয়ংগম করা খুবই সহজ। এতোটাই সহজ যে, আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না। 

ভিন্নভাষার এ গ্রন্থটা কি করে  তোটা সহজবোধ্য হতে পারে? স্বাভাবিক এ প্রশ্নটা আপনার মনে জাগতেই পারে। উত্তরটাও কিন্তু খুবই সহজ। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো মোজেজা কুরআনের এটাও একটা মোজেজা যে, তা বুঝা খুবই সহজ। আপনি নিজেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বড়ো আত্মবিশ্বসের সাথেই বলতে পারি, আল্লাহ আসলেই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম, তিনি মিথ্যা বলেন নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ