এই জুন মাস এলেই কি যে হয়! একটা না একটা বিপদ, মুসিবত এসেই যায় আমাদের পরিবারে। এখন জুন মাস এলেই মনের ভিতর এক ধরনের আতংক তৈরী হয়। যদিও আল্লাহ তায়ালার সব দিন, সব মাস, সব বছরই এক। কোন দিন, মাস বা বছরই অশুভ নয়। তবুও ইদানিং ভয় লাগা পেয়ে বসেছে।
আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা সাঈদী (হাফিজাহুল্লাহ)কে আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক রোষানলে গ্রেফতার করে। টানা ৪১ দিন তাকে রিমান্ডে রেখে সরকার অন্যায় ও অবৈধভাবে শারিরীক মানসিক নির্যাতন করে ঘৃন্য এক ইতিহাস সৃষ্টি করে। আজ ১১টি বছর আব্বা বিনা অপরাধে অন্ধকার কারাগারে দিনানিপাত করছেন।
আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০১২ সালের ১৩ জুন আমার কলিজার টুকরা বড় ভাই মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী আওয়ামী সরকারের বানানো ট্রাইবুনালে আমাদের পিতা আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকারের সাজানো স্বাক্ষীদের নিকৃষ্ট সব মিথ্যাচার সহ্য করতে না পেরে আদালত প্রাঙ্গনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
আজ ২০২১ সালের ৮ জুন। আজ আমার নাতিটা ইন্তেকাল করেছে। আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই রাফীক সাঈদীর ছোট মেয়ে ইশরাত লুবায়না সন্তান সম্ভবা ছিলো। লুবায়না আল্লাহর মেহেরবানীতে পরিপূর্ণ সুস্থই ছিলো। আগামী সপ্তাহেই তার সন্তান দুনিয়াতে আসার কথা ছিলো। কিন্তু মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা তো ভিন্ন। দুনিয়ার আলো দেখার আগেই আজ ৮ জুন বাচ্চাটি মায়ের পেটেই ইন্তেকাল করেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শেষবার যখন ঢাকা আলিয়া মাদরাসা মাঠের অস্থায়ী আদালতে আব্বাকে হাজির করেছিলো তখন আব্বাকে আমরা লুবায়নার সন্তান দুনিয়াতে আগমনের বার্তা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো এই জুন মাসেই আমাদের জন্য আরো একটি ভয়াবহ কষ্টের ক্ষন অপেক্ষা করছে! আব্বা তার প্রিয় নাতনী 'মিষ্টি মেয়ে' লুবায়নার (আব্বা লুবায়নাকে 'মিষ্টি মেয়ে' বলে ডাকতেন) সন্তানের জন্য তখনই একটি নাম রেখে দিয়েছিলেন। আব্বা নাম রেখেছিলেন 'নাজমুস সাকিব।' এ নামের অর্থ 'উজ্জল তারকা।' আব্বা বলেছিলেন, নাজমুস সাকিবকে তার নানা মরহুম রাফীক বিন সাঈদীর মতো অনেক বড় মাপের আলেম বানাতে হবে। তাকে হাফেজ বানাতে হবে। তাকে দ্বীনের দাঈ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে সে কোরআনের দাওয়াত নিয়ে তার নানার মতোন করে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিশ্বময়। কিন্তু আমাদের কলিজার নাতিটা উজ্জল তারকা হয়ে দ্বীনের আলো বিশ্বব্যপি ছড়িয়ে দেয়ার আগেই আল্লাহ তাকে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে পছন্দ করে নিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমাদের নাতি জান্নাতে উজ্জল তারকা হয়েই ভেসে বেড়াবে ইনশাআল্লাহ।
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي
- 'ইয়া আইয়াতুহান্নাফছুল মুতমাইন্নাহ ইরজি‘ঈইলা রাব্বিকি রা-দিয়াতাম মারদিইয়াহ ফাদখুলী ফী ‘ইবা-দী ওয়াদখুলী জান্নাতী।'
- 'হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে এসো এমনভাবে যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট; অত:পর তুমি শামিল হয়ে যাও আমার বান্দাদের সাথে এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।'
আজ সারাদিনের সব কষ্টের সাথে এখন আরো একটি কষ্ট বুকে পুষে আছি। এ খবরটি তো আব্বাকে এখনো জানাতে পারিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায় আব্বা তার মমতময়ী মাকে হারিয়েছেন, হারিয়েছেন তার স্নেহের ছোট ভাইকে, হারিয়েছেন তার কলিজার টুকরা আর বড় বেশি আদরের বড় সন্তান ও বড় পুত্রবধুকে, এখন আবার হারালেন তার নাতনীটার প্রথম সন্তানকে। এখন আব্বাকে আমি কি জানাবো? কিভাবে জানাবো? এতো কষ্ট ঐ মানুষটা আর কিভাবে সইবে? আর কতো পরীক্ষা দিতে হবে তাকে?
আমাদের পরিবারের উপর থেকে আর কোন পরীক্ষা তুমি নিও না মালিক। যে কষ্টে আমরা আছি তা সইবার শক্তি তুমি আমাদের দাও। আমাদের পরিবারের সকলকে তুমি নেক হায়াত দাও। সকলকে হেফাজতে রাখো । ঈমানের সাথে রাখো। বিশেষ করে আমাদের ভাতিজি ইশরাত লুবায়না ও তার জীবনসঙ্গী জামিল মাহমুদকে সবরে জামিল দান করো। তাদের সকল কষ্ট তুমি দয়া করে দূর করো। তুমি তাদের সকল নেক কামনা বাসনা পূরণ করো। তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করো ও উত্তম বিনিময় দান করো। আমিন। আমিন ইয়া রব।
আর্টিকেলটি লিখেছেন জননন্দিত মোফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী হুজুরের ছোট ছেলে✍️Masood Sayedee - মাসুদ সাঈদী।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....