বই : সন্তানের ভবিষ্যৎ।
লেখক : ড. ইয়াদ কুনাইবী।
প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন।
Review Credit 💕 Mohammad Ullah.
বিয়ে করে আপনি স্ত্রীর সাথে জীবনের এক নতুন অধ্যায় আরম্ভ করলেন। উভয়ে সন্তান জন্ম দিলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হলো, আপনি নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন৷ পরিবারকে দেওয়ার মতো কোন সময় খুঁজে বের করতে পারছেননা। স্ত্রীর সামনে এই বলে অজুহাত পেশ করছেন যে, আমি তো তোমাদেরই কল্যাণে কাজ করছি।
.
হতে পারে আপনার এই কাজ দা'ওয়াহ পরিমণ্ডলেরই কোন মোবারক কাজ। কিন্তু নিজ দা'ওয়াহতে পরিবারকে আপনি অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হননি। বরং এই দা'ওয়াহর কারণেই তাদের থেকে আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। স্ত্রী যখন আপনার নিকট অনুযোগ করে তখন আপনার অজুহাত থাকে যে, উম্মাহর চিন্তায় আমি ব্যতিব্যস্ত... দা'ওয়াত অনেক বেশী গুরুত্বের....!
.
ঠিক বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে আপনি কাজ, দা'ওয়াহ ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণে ব্যস্ত আছেন, আপনি এসবের মাধ্যমে নিজ সফলতার গল্প লিখতে চান। আপনার সফলতার এই গল্পে পরিবার ও সন্তানের কোন অংশ নেই। পড়াশুনা ও কাজে আপনি মাত্রাতিরিক্ত সময় দিয়ে ফেলছেন। পারিবারিক কর্তব্য আদায় না করে নিজ চাহিদার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। নিজকে তো বটেই অন্যদেরও এই বলে বুঝ দিচ্ছেন যে, আমি আসলে এক প্রকার নিরুপায়!
.
আপনি ধরে নিয়েছেন, তারবিয়াত ও সন্তানদের গড়ে তোলার সব দায়িত্ব স্ত্রীর, সে-ই এই দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সন্তানদের অবহেলা করার এই রোগ ধীরে ধীরে আপনার স্ত্রীকেও পেয়ে বসবে। সে-ও তখন সন্তানদের ছেড়ে নিজেকে প্রমাণ করতে ও সাফল্যের গল্প লেখতে ব্যস্ত দিন কাটাবে, সোশ্যাল মিডিয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সময় ব্যয় করবে। সন্তান এভাবেই একসময় মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকেও বঞ্চিত হবে।
.
পিতামাতার অবহেলায় বেড়ে উঠা এই সন্তানেরা কলহ সৃষ্টি করবে। এমন সন্তানদের সাথে বাবা মায়ের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। এমনকি আপনার সাথে স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ তৈরী হবে এই সন্তানদের কারণেই। উভয়েই একে অপরকে এই করুণ পরিস্থিতির জন্যে দোষারোপ করে যাবেন। 'সন্তানের বোঝা' একে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলবে! আর এসব ঘটবে সন্তানদের চোখের সামনেই। তাদের অন্তরে এই ঘটনা দাগ কাটবে। তারা মনে রাখবে বাবা-মা কিভাবে তাদের কাছে টেনে না নিয়ে ভারি বোঝার মতো আচরণ করেছিল।
.
আপনিই তখন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। হতে পারে, কর্মব্যস্ততা সামান্য কমিয়ে আপনি সন্তানদের গড়ে তোলার পেছনে মনোযোগ দিতে শুরু করবেন। কিন্তু আপনি আবিস্কার করবেন, মায়ের যত্ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে আবার নিবিড় পর্যবেক্ষণে ফিরিয়ে আনা কতটা কঠিন কিংবা কতটা অসম্ভব!
.
প্রিয় ভাই! এমন অনেক ভুল আছে এই দুনিয়ায় যেগুলোকে পরিপূর্ণভাবে শুধরানো আর সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। হতে পারে আপনার পূর্ববর্তী অবহেলা আল্লাহ ক্ষমা করবেন। কিন্তু এই অবহেলার মাশুল আপনাকে পদে পদে দিয়ে যেতে হবে। দাওয়াহর ক্ষেত্রে নবীজির ﷺ চেয়ে অধিক আগ্রহী কেউ ছিলেননা, তবু তিনি কী বলেছেন শুনুন:
إن لربِّكَ عليك حقًّا، ولنفسِك عليك حقًّا، ولأهلِك عليك حقًّا، فأَعْطِ كلَّ ذِي حقٍّ حقَّه
> তোমার উপর তোমার রবের অধিকার রয়েছে। তোমার নিজের অধিকার রয়েছে। তোমার পরিবারেরও তোমার উপর অধিকার রয়েছে। অতএব প্রত্যেককে নিজ নিজ প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দাও। (সহীহ বুখারী: ৬১৩৯)
আপনি ঘরের একজন পুরুষ। আল্লাহর দেওয়া অভিভাবকত্বের দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে। এই অভিভাবকত্বেরই দাবি হলো, স্ত্রীর সামনে প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আদর্শে পরিণত হওয়া। স্ত্রীকে অতীত ভুলের খোঁটা না দিয়ে আপনার বরঞ্চ উচিত আল্লাহর ইচ্ছাকে মাথা পেতে নেয়া।
ঘরকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। 'প্রত্যেককে প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দাও' মূলনীতি অবলম্বন করুন।
সন্তান, সে তো আসমান থেকে পাওয়া। সন্তান, সে তো স্বর্গ থেকে আসা। সন্তান, সে তো স্বপ্ন দিয়ে বোনা সোনা-রঙা সোনালি ফসল। সন্তান পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের সম্পদ। সন্তান চোখের শীতলতা, অন্তরের কোমল উষ্ণতা, হৃদয়ের গহীনে সযত্নে চাষ-করা এক টুকরো মুক্তো। সন্তান মানে বেঁচে থাকার শক্ত অবলম্বন। সন্তান মানে সারাদিন ঘামঝরা ভীষণ খাঁটুনির পর এক অনাবিল প্রশান্তি। সন্তান মানে শত ঘুটঘুটে অন্ধকারেও আলোর ঝলকানি। সন্তান মানে অর্থবহ সার্থক বেঁচে থাকা। সন্তান মানে সহস্র হতাশার ভিড়েও আশার ফোয়ারা। সন্তানই তো উত্তপ্ত মরুভূমিতে ছায়া দেয়। হাড়-কাঁপানো-শীতে উষ্ণতা জোগায়। হাসি, খুশি আর আনন্দে জীবন রাঙায়। জীবনের শেষ বেলায় চশমা হয়ে পথ দেখায়, লাঠি হয়ে ভার নেয়, বাহন হয়ে সবখানে নিয়ে বেড়ায়, মুখে তুলে খাইয়ে দেয় আবার যত্ন করে ঘুম পাড়ায়।
কিন্তু এতসব প্রাপ্তির তৃপ্তি পেতে সন্তানকে আগে ‘মানুষ’ বানাতে হয়, তিলে তিলে গড়ে তুলতে হয়, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নোঙর ফেলতে হয়। ওহির আলোয় আলোকিত করে আপনি আপনার সন্তানকে কীভাবে জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল করে গড়ে তুলবেন, সন্তানকে কীভাবে পৌঁছে দেবেন আলোর ঠিকানায় সেজন্যই আমাদের এই সবুজ আয়োজন——সন্তানের ভবিষ্যৎ।
বি:দ্র: সন্তানের ভবিষ্যৎ বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
বই : সন্তানের ভবিষ্যৎ
লেখক : ড. ইয়াদ কুনাইবী
প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....