গল্পঃ ব্লাড পেইন্টিং পর্ব ৭ || © মারুফ হুসাইন।
✋এক নজরে ব্লাড পেইন্টিং পর্ব সমূহ💕
১৩.
সাজেদ পেইন্টিংটা ভালো করে দেখতে থাকে, 'দোস্ত! পেইন্টিংটা আসলেই অদ্ভুত। অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকে কেমন হিপ্নোটাইজ করে ফেলে। কোনো সাধারণ আর্টিস্টের পক্ষে এমন পেইন্টিংও আঁকা সম্ভব না।'
'এই পেইন্টিংটা আমার কাছে মোটেও সাধারণ মনে হচ্ছে না৷'
'এটার জন্য ২জন সুইসাইড করেছে। আমার কলিগও সুইসাইড এটেম্প করেছে৷' থেমে গোলাম মাওলা কেশে নিয়ে বলল, 'সুইসাইড সংখ্যা বা এটেম্প সংখ্যা আরো বেশিও হতে পারে। আমার কাছে এই তিনটার খবরই আছে।'
'তুই ধরেই নিচ্ছিস, এই পেইন্টিংয়ের জন্য সুইসাইড এটেম্প নিয়েছে?'
'হ্যাঁ৷ আমি ড্যাম সিউর। এই পেইন্টিংটাই সব নষ্টের গোড়া!'
'সামনে গিয়ে ডানে মোড় নে!'
'তোর কাছে এই পেইন্টিংটা আরো আট-দশটা সাধারণ পেইন্টিংয়ের মতো মনে হচ্ছে?'
'না। প্রথমেই তো বললাম, পেইন্টিংটা দেখতেই কেমন অদ্ভুত লাগছে৷'
'আর কদ্দুররে?' গোলাম মাওলা বুঝতে পারল, সাজেদের সাথে পেইন্টিংয়ে নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ হবে না৷ তাই সে কথা ঘুরিয়ে ফেলল।
'আর পাঁচ মিনিট লাগবে।'
কলিং বেল বাজাতেই একটা পিচ্চি এসে দরজা খুলে দিল, 'আসেন! স্যার আপনাদের বসতে বলেছে।'
'কিরে কেমন আছিস?' সাজেদ পিচ্চিটাকে জিজ্ঞাসা করল।
'ভালাই।' বলে পিচ্চিটা গেট লাগিয়ে কোথায় চলে গেল৷
সাজেদ, গোলাম মাওলাকে নিয়ে আর্ট বিশেষজ্ঞ সত্যেন্দ্রনাথের ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসল। সত্যেন্দ্রনাথের ড্রয়িং রুমের সবগুলো দেয়ালে বিভিন্ন পেইন্টিং টানানো৷ বিভিন্ন পেইন্টিংয়ের পাশে মেডেলও টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। গোলাম মাওলার বুঝতে অসুবিধে হলো না, মেডেলগুলা বিভিন্ন ফেস্টিবলে সত্যেন্দ্রনাথের পাওয়া। সে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেইন্টিংগুলা দেখতে লাগল।
'দুঃখিত আপনাকে অনেক্ষণ বসিয়ে রাখলাম।' প্রায় মিনিট বিশেক পর সত্যেন্দ্রনাথ এসে বললেন।
'আদাব স্যার!' বলেই সাজেদ দাঁড়িয়ে গেল।
'না না, অসুবিধে নেই।' বলে গোলাম মাওলাও দাঁড়াল।
'আরে বসেন, দাঁড়াতে হবে না।' বলেই সত্যেন্দ্রনাথ তাদের সামনের সোফায় বসে পড়লেন, 'হ্যাঁ, সাজেদ! এতো জরূরী দেখা করতে চাইলে?'
'স্যার! ও আমার বন্ধু গোলাম মাওলা৷ গোয়েন্দা বিভাগে আছে৷ ও এখন খুব অদ্ভুত একটা কেস হাতে পেয়েছে। মেয়েরা সুইসাইড করছে৷ তবে অদ্ভুত বিষয়টা হলো, একটা পেইন্টিং। যেই মেয়ে সুইসাইড করছে বা সুইসাইড এটেম্প করছে, তার বাসাতেই ঐ পেইন্টিংটা পাওয়া যাচ্ছে৷ কিভাবে পেইন্টিংটা ঐ মেয়ের কাছে যাচ্ছে, তাও রহস্য...'
'না, না। ঠিক তা নয়।' গোলাম মাওলা সাজেদকে থামিয়ে দিয়ে বলে, 'এই পেইন্টিংটা যে মেয়ের কাছে যাচ্ছে সে মেয়ে সুইসাইড করছে৷ প্রথম যখন পেইন্টিংটা নজরে আসে, তখন আমি এটায় গুরুত্ব দেইনি৷ তার দুয়েক দিন বাদে আরেকটা মেয়ে সুইসাইড করে৷ তার বাসায় গিয়ে এই পেইন্টিংটা আমি দেখি৷ তখন আমার খেয়াল হয়, আগের কেসটায় এই পেইন্টিংটা দেখেছিলাম৷ তারপর ওখানে গিয়ে দেখি সেটা নেই। আমি পেইন্টিংটা আমাদের হেফাজতে নিয়ে নেই। তারপরই হুট করে পেইন্টিংটা গায়েব৷ ইনভেষ্টিগেট করে দেখি, আমার সহযোগীই নিয়েছে৷ এখান থেকে নিশ্চিত হই, পেইন্টিংটা একা একা কোথাও যাচ্ছে না। কেউ না কেউ কোনোভাবে এটাকে নিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা আর দেরী করি না৷ তৎক্ষনাৎ আমার সহযোগীর বাসায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে তালে বেহুশ অবস্থায় পাই। সেও সুইসাইড এটেম্প করে পড়ে আছে৷ কিন্তু আমরা ঠিক সময়ে সেখানে পৌছে যাই বলে বড় কিছু হয়নি। আরেকটা অদ্ভুত বিষয় হলো, প্রত্যেকের সুইসাইড করার ধরণ এক, হাতের রগ কেটে।'
সত্যেন্দ্রনাথ খুব মনোযোগসহকারে কথাগুলো শুনলেন, 'দেখি পেইন্টিংটা!'
সাজেদ পেইন্টিংটা এগিয়ে দেয়৷
'ফ্রেম থেকে বের করে দেও!'
সাজেদ ফ্রেম খুলে পেইন্টিংটা সত্যেন্দ্রনাথের হাতে দেয়৷
'এই পেইন্টিংটা আমরা সাধারণত যেসব মাধ্যম দ্বারা আর্ট করি৷ সেসবের কিছু দিয়ে পেইন্টিংটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।' সত্যেন্দ্রনাথ পেইন্টিংটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দেখে নিজের সফেদ দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলেন৷
'তাহলে?' গোলাম মাওলা একটু এগিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করে৷
'বলতে পারছি না। আপনাদের তো কত উন্নত যন্ত্র আছে৷ সেগুলো দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেই তো হয়।'
'আর পেইন্টিংটায় কী বুঝানো হয়েছে?'
সত্যেন্দ্রনাথ পেইন্টিংটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, 'বসো, আসছি!' বলে উঠে চলে গেল।
কয়েক মিনিট পর হাতে কয়েকটা মোম নিয়ে ফিরে আসলেন৷ মোম জ্বালিয়ে লাইট বন্ধ করে দিলেন৷ জ্বলন্ত মোমগুলো থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে মোমের সামনে পেইন্টিংটা ধরলেন, 'এবার দেখুন!'
গোলাম মাওলা, সাজেদ দুই জনই সোফা থেকে উঠে এসে সত্যেন্দ্রনাথের বরাবর মোমের অপর সাইডে বসে পেইন্টিংটার দিকে তাকায়৷
'উহু, ওপাশে নয়৷ আমার পাশে বসে পেইন্টিংটার উলটো পাশ দেখুন৷ যে পাশে আঁকা হয়েছে সে পাশ দেখলে আগের মতোই লাগবে।'
তারা সত্যেন্দ্রনাথের পাশে গিয়ে বসে পেইন্টিংটার দিকে তাকায়৷ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতেই ব্যপারটা তাদের বুঝে আসে৷
'ওহ মাই গড! এটা তো একটা মেয়ের ছবি।'
'হ্যাঁ। এটাও আর্টের একটা ধরণ। তবে এই আর্ট সবাই পারে না। এটা করতে হলে যথেষ্ট মেধাবি আর ক্রিয়েটিভ হতে হয়। সামনে থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, রঙ দিয়ে হিবিজিবি কিছু আঁকা। আবার খালি চোখে পিছন থেকে তাকালেও বুঝা যায় না৷ যখনি আলো পড়েছে ঠিক তখনি আসল ছবিটা বুঝা গেছে৷' বলে একটু থেমে বললেন, 'এটা আঁকার রঙ মানে মাধ্যম কী আমি বুঝতে পারছি না। তার মানে সাধারণত শিল্পিরা যেসব মাধ্যম ব্যববার করে তার কোনোটাই নয়। তাই এটা আপনাদেরই বের করতে হবে। আর ছবিটার মূল বিষয়বস্তু বের করে দিলাম। এই পেইন্টিংটার এই দুইটা বিষয়বস্তু ছাড়া আমার কাছে সাধারণ একটা পেইন্টিংই মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়টা আর্টের একটা ধরণ হলে অস্বাভাবিক বললাম, কারণ এই আর্টটাকে সাধারণ কোনো আর্ট হিসেবে ধরা হয় না। খুবই উচ্চ বুদ্ধি সম্পন্ন এবং ক্রিয়েটিভ না হলে এই আর্ট কেউ করতে পারে না।'
'কিন্তু মেয়েটা কে?' বিড়বিড় করে বলে গোলাম মাওলা উঠে দাঁড়ায়, 'ধন্যবাদ স্যার! অনেক উপকার হলো। এখন কেসটা সলভ করতে অনেক সুবিধা হবে। আশা করি এখন এই পেইন্টিং রহস্যের মূলে যেতে পারব।'
১৪.
গোলাম মাওলা অফিসে ফিরে আসে৷ ফারুক চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে৷ গোলাম মাওলার পায়ের শব্দ শুনেই ধড়ফড়িয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়৷
'ঘুমুচ্ছিলে?'
'সরি স্যার!'
'আরে ব্যপার না। কাল রাত থেকে তোমার উপর অনেক ধকল গেছে। এখন ঝিমুনি আসাটা স্বাভাবিক।'
ফারুক সৌজন্যমূলক হাসি দেয়৷ এমন ফ্রেন্ডলি সিনিয়রের সাথে কাজ করতে পেরে মনে মনে খুশি হয়।
'শোনো! ঝিমুনি আসলেও কেসটা সলভ হওয়া পর্যন্ত এমন খাটাখাটনি করতেই হবে। সায়মার সাথে দূর্ঘটনা ঘটল। ওর সাথেও তো কারো থাকা দরকার। তাই রাফাতকে রেখে দিয়েছি৷ তাই এখন তোমার উপর একটু বেশি খাটনি যাবেই।' একটু থেমেই বলল, 'ভাবছি, সায়মার দেখাশোনার জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে রাফাতকে নিয়ে আসব৷ ওকে দরকার।' গোলাম মাওলা চেয়ারটা টান দিয়ে বসল, 'আরে তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসে পড়!'
ফারুক বসে পড়ল।
'ডা. শেখের কোনো খোঁজ পেয়েছ?'
'না, স্যার!'
'আমার কিছুই বুঝে আসছে না।' বলে গোলাম মাওলা কয়েক সেকেন্ড ভাবল, 'সন্ধ্যা অবধি দেখি। তারপর খোঁজ না পেলে অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে।' মুখে এ কথা বললেও ডা. শেখের ব্যপারটা গোলাম মাওলাকে ভাবাচ্ছে। তাকে কেউ নিখোঁজ করেছে নাকি অন্য কিছু? সায়মাকে ফোন দিয়ে ল্যাবে নিয়ে তার বাইরে চলে যাওয়া, তারপর তাকে দেখা করতে বলার পর থেকেই নিখোঁজ৷ সব কিছুতেই তার কেমন গড়মিল মনে হচ্ছে৷
'ঠিক আছে। স্যার!'
'আর আরিফকে কোথায় রেখেছো? চলো তার সাথে কথা বলি। কিছু জানা যায় কিনা দেখি! যদিও আমার মনে হচ্ছে কোনো লাভ হবে না। এই কেসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাটা ফর্মালিটিজ ছাড়া কিছুই না।'
'ফারুক! তুমি এক কাজ করো?' আরিফকে আটকে রাখা রুমের দিকে গিয়ে গোলাম মাওলা বলল।
'কী কাজ স্যার?'
'গাড়ি থেকে পেইন্টিংটা নিয়ে ল্যাবে নিয়ে যাবে। প্রথমে আর্টের মাধ্যম বের করার জন্য তাদেরকে স্যাম্পল রাখতে বলবে। তারপর পেইন্টিংটা উলটো করে এক্সরে ফিল্ম ভিউয়ারে লাগাবে। তখন একটা মেয়ের ছবি দেখতে পাবে। সেটাকে উদ্ধার করে মেয়েটাকে খোঁজ লাগাও। তাকে পেলে আশা করি, কেস সলভ হতে আর সময় লাগবে না। আর এভাবে ছবিটা না পেলে আমাকে ফোন দিবে। তখন অন্য উপায় বলে দিব।'
'ঠিক আছে স্যার!' ফারুক গাড়ির চাবি নিয়ে চলে যায়।
'নাম?' গোলাম মাওলা একটা চেয়ার টেনে আরিফের সামনে বসে জিজ্ঞাসা করে৷
'আরিফ রহমান'
'পেশা?'
'শিক্ষকতা'
'কোথায়?'
আরিফ তার কলেজের নাম বলে। গোলাম মাওলার আরিফের পার্সোনাল ব্যপারে দুয়েকটা প্রশ্ন করেই মূল প্রশ্নে ফিরে যায়, 'জেরিনের সাথে সম্পর্ক কেমন ছিল?'
'ছিল মানে কী! এখনো আছে।'
'সম্পর্ক কেমন ছিল?'
'ভালো।' বলেই আরিফের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, 'কী শুরু করেছেন আপনারা? কাল রাত থেকে আমাকে ধরে হয়রানী করেই যাচ্ছেন। আমার অপরাধ কী?'
'এমন ভাব করছ যে কিছুই জানেন না।'
'আমি কী জানব?' আরিফ একটু দমে যায়। নিচু গলায় বলে, 'ঘটনা কী আমাকে বলবেন? এমনিই খুব টেনশনে আছি। তার উপর আপনারা কাল রাত থেকে ধরে হয়রানি করছেন।'
'জেরিনের সাথে আপনার শেষ কবে দেখা হয়েছিল?'
'৯-১০ দিন আগে।'
'কোথায়?'
'ওর ফ্ল্যাটে ওর সাথেই ছিলাম৷ আমার কলেজ দূরে হওয়ায় আমি সেখানে থাকি৷ ছুটিতে ওর জন্য শহরে আসি।'
'আপনার মোবাইল বন্ধ কেন?'
'সেদিন ওর সাথে ঝগড়া হয়। আমি রাগ করে চলে যাই। কয়েক দিন পর আমি যখন ভুল বুঝতে পারি৷ তখন আমি ওকে ফোন দেই। ও ধরে না। বুঝতে পারি, এ কদিন ওর ফোন না ধরায় রাগ করে আছে। তাই ফোন ধরছে না। তাই আমিও ওর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য সারা রাত জেগে থেকে ফোন দিতে থাকি। ও ফোন ধরে না। একটা সময় ফোন বন্ধ পাই। সকাল হয়, তখনও মোবাইল বন্ধ পাই। তখন রাগে মোবাইল ঢিল মারি। আমার কোয়াটারের সামনেই একটা পুকুর আছে। আমি পুকুরের সামনেই যে দাঁড়িয়েছিলাম খবর ছিল না। মোবাইলটা পুকুরে গিয়ে পড়ে।'
'সিম উঠাননি কেন?'
'সিমটা জেরিনের নামে। তাই আর উঠাতে পারিনি। নতুন সিম কিনে ওকে ফোন দেই। তবুও নাম্বার বন্ধ পাই। ভাবলাম আমার সাথে রাগ করে হয়তো মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। রাগ কমলে এমনিতেই মোবাইল চালু করবে। কিন্তু তিন-চার দিন পার হওয়ার পরও যখন মোবাইল অন হয়নি। তখন আমার চিন্তা হয়। তাই আমি গতকাল রওনা দিয়ে চলে আসি। কিন্তু এখানে নামতে হুট করে কত্থেকে দু-তিন জন পুলিশ এসে আমাকে উঠিয়ে নেয়। কী করেছি না করেছি কিছুই বলে না।'
'আপনাদের ঝগড়া হয়েছিল কী নিয়ে?'
আরিফের রাগ উঠে যায়। মনে কেমন অনিশ্চয়তাও চলে আসে, 'অফিসার ঠিক কী হয়েছে বলবেন?'
'আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন৷'
'তেমন কিছুই না। ও মিডিয়ায় কাজ করে৷ বুঝেনই তো মিডিয়ায় কাজ করলে, কত বাজে অফার আসে৷ সেগুলার একটা দেখেই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। সে আমাকে বারবার করে তার উপর বিশ্বাস রাখার কথাও বলেছে। কিন্তু আমার মাথা গরম ছিল বলে তার কোনো কথাই মানতে চাইনি। সেখান থেকেই ঝগড়া একটু বড় হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি রাগ করে চলে যাই।'
'ঠিক আছে৷ এতোক্ষণ আপনি যা বলেছেন। তার সত্যতা যাচাই করে দেখব। যদি দেখি, আপনি সত্য বলেছেন। তাহলে আপনাকে বিষয়টা জানানো হবে। আর মিথ্যা বললে তো আপনি জানেনই কী হয়েছে৷ তখন তো আর আমার বলার দরকার নেই।' বলেই গোলাম মাওলা উঠে পড়ে৷
গোলাম মাওলা হাসপাতালে যায়৷ রাফাত আর সায়মা গল্প, হাসি ঠাট্টা করছে৷ গোলাম মাওলাকে দেখে তারা থেমে যায়৷ রাফাত দাঁড়িয়ে সালাম দেয়৷
'কী অবস্থা তোমার?' সায়মাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
'অনেকটাই ভালো স্যার!'
'দেখেই বুঝা যাচ্ছে!' বলে গোলাম মাওলা রাফাতের দিকে তাকায়, 'কখন এসেছো তুমি?'
'ঘন্টাখানেক হবে।'
'ঠিক মতো বিশ্রাম হয়েছে?'
'জি স্যার!'
'আচ্ছা তোমার আর এখানে থাকা চলবে না। কেসটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে৷ তোমার হেল্প লাগবে৷ সায়মার দেখাশোনার জন্য অফিস থেকে অন্য কাউকে আনিয়ে নিব।'
'স্যার! আমিও থাকব না। আমি কেসটা সমাধানে থাকব!' সায়মা লাফ দিয়ে উঠে বসে।
রাফাত, গোলাম মাওলা দুই জনই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, 'না, তুমি আগে সুস্থ হও! তারপর কেস দেখবে!'
'দেখেন স্যার আমি সুস্থ হয়ে গেছি!' বলতে বলতে সায়মা গোলাম মাওলার হাত ধরে ফেলে, 'প্লিজ স্যার!' চঞ্চল মেয়েগুলা তাদের ভালোবাসার মানুষের কাছে কোনো আবদার করলে নাকোচ করে দিলে আবদারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য ঠিক যেভাবে হাত ধরে আবদার করে। ঠিক সেভাবে৷ গোলাম মাওলা তাদের হাতের দিকে তাকাতেই সায়মা জিহবায় কামড় দেয়, কাজটা উচিৎ হয়নি৷ অসুস্থ হয়ে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ ভুলেই গেছে গোলাম মাওলা তার সিনিয়র, 'সরি স্যার!' বলে সে হাত সরিয়ে নেয়।
গোলাম মাওলা এ সম্মন্ধে আর কিছু বলে না৷ তারও কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করে৷ তবুও সে প্রফেশনাল হয়ে বলে, 'না, এখন তোমার রেস্টের সময়।'
'ঠিক আছে স্যার!' সায়মা নিচের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে সম্মতি জানায়। তার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে৷
'আমি অফিসে ফোন করে কাউকে আসতে বলছি৷ সে আসলে অফিসে এসে আমার সাথে দেখা করো! ' গোলাম মাওলা রাফাতকে উদ্দেশ্য করে বলে।
'ঠিক আছে স্যার!'
গোলাম মাওলা কেবিন থেকে বের হয়ে ফারুককে ফোন দেয়, 'ছবিটা উদ্ধার করতে পেরেছ?'
'না স্যার! আশা করি, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ে যাবে৷'
গোলাম মাওলা কল কেটে দেয়৷ সাথে সাথে ফারুকের ফোন আসে, 'হ্যাঁ ফারুক বলো!'
'স্যার! পেইন্টিংটার মাধ্যম জানা গেছে।'
'কী?'
'ব্লাড। মানুষের ব্লাড দ্বারা আঁকা হয়েছে।'
'ওহ মাই গড! কী বলছো!'
'জি স্যার! ল্যাব থেকে এমনটাই জানাল।'
'কার ব্লাড ম্যাচ করতে পেরেছে?'
'না, স্যার! আমাদের ডাটাবেজের কারো সাথে মিলেনি।'
'ঠিক আছে, তুমি ছবিটা উদ্ধার করে মেয়েটাকে খুঁজে বের করো!'
'ঠিক আছে স্যার!'
গোলাম মাওলা আবার সায়মার কেবিনে যায়, 'রাফাত! তুমি এখনি ল্যাবে যাও। ল্যাব থেকে ব্লাডের রিপোর্টটা নিয়ে যেভাবেই হোক খোঁজ নিবে, কার ব্লাড!'
'কিসের ব্লাড স্যার?'
'পেইন্টিংটা ব্লাড দ্বারা আঁকা হয়েছে।'
'ওহ মাই গড!' রাফাত, সায়মা দুই জনই বলে উঠে।
'হ্যাঁ, কুইক যাও! আমার দ্রুত রেজাল্ট চাই৷ যেভাবেই হোক, ঐ রক্ত কার আমার জানা চাই!'
রাফাত বেরিয়ে পড়ে। গোলাম মাওলা কেবিনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কাউকে পাঠানোর জন্য অফিসে ফোন করে৷
সায়মা আড় চোখে গোলাম মাওলার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবে, 'কী পাষাণ লোকটা! সব কিছু জেনেও কেমন ইগ্নোর করছে, মনে হয় যে কিছুই জানে না!'
চলবে.......
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....