Adarsha Hindu Hotel Novel by Bibhutibhushan Bandyopadhyay(আদর্শ হিন্দু হোটেল)






আদর্শ হিন্দু হোটেল
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্যাটাগরিঃ চিরায়ত উপন্যাস
পার্সোনাল রেটিংঃ ৪.৫/৫
গুডরিডস এভারেজ রেটিংঃ ৪.৪৬/৫
আমাদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী?
আশা।
আশা একজন মানুষের জীবনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো।সেই নক্ষত্রই বেঁচে থাকার জন্য আলোর জোগান দেয়।কিন্তু সেই নক্ষত্র যখন নিভে যায় তখন নিকষ কালো আঁধার ঘনিয়ে আসে মানুষের মনের আকাশে।তখন বার্ধক্য তাকে জেঁকে বসে।এই বইটি পড়ে সেটা অনুভব করা যায়।
হয়তো এমন কোনো মানুষ নেই যার বেঁচে থাকার কোনো উদ্দেশ্য নেই।থাকলেও এমন মানুষ দুর্লভ।একটা আশাকে আঁকড়ে ধরেই মানুষ ছুটতে থাকে জীবনের গতিপথে।ছুটতে থাকে তার গন্তব্যের দিকে।আর যার জীবনে কোনো আশা নেই সে নির্জীব।তার কাছে জীবনটাও অর্থহীন।একসময় নিজের অস্তিত্বই তার কাছে হতাশার কারণ হয়ে ওঠে।সেই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে একসময় সে বুড়িয়ে যায়।নিষ্প্রাণতার মধ্য দিয়ে একসময় অবসান ঘটে তথাকথিত অর্থহীনতার।

হাজারি দেবশর্মা।
জাতে ব্রাহ্মণ।
রাণাঘাটের রেল-বাজারের বেচু চক্রবর্তীর হোটেলের ছোট্ট রান্নাঘরই যার স্বর্গ।কর্মব্যস্ততাই যার সুখ।যার কাছে নিরুপদ্রব নিশ্চিন্ত সুখ মৃত্যুর সামিল।কলকাতা অব্দি যার রান্নার সুখ্যাতি।তবে সুখ তার কপালে জোটেনি।উঠতে-বসতে মনিব আর তার প্রিয় পাত্রী পদ্মঝিয়ের ভর্ৎসনা,সারাদিন অনেক খাটাখাটুনির পরে হোটেলের খাবারের অবশিষ্টাংশের সামান্য আহার,নিজ গাঁয়ের মেয়ে কুসুমকে এটা-সেটা দেওয়া নিয়ে পদ্মঝিয়ের কটুক্তি এরূপ নানাবিধ অন্যায়-অত্যাচার তার জীবনে হতাশা ডেকে আনে।তবে এই হতাশাই জন্ম দেয় স্বপ্নের।আশার প্রদ্বীপ জ্বালায় রাঁধুনী বামুণের মনে।

হাজারি চরিত্রটির বেশ কিছু বিষয় আমাকে মুগ্ধ করেছে।হাজারির বিশেষ রন্ধন দক্ষতা,অবসর সময়ে চূর্ণী নদীর ধারের নিমতলায় বসে আপনমনে তার গভীর চিন্তাভাবনা,তার অসাধারণ কর্মস্পৃহা,সবরকম পরিস্থিতিতে সবার প্রতি তার নম্র আচরণ,পদ্মঝিয়ের অন্যায় কাজকর্মে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি।বিশেষ করে কুসুম আর হাজারির পিতা-কন্যা তুল্য সম্পর্কের কথা না বললেই নয়।রক্তের টানই যে সবচেয়ে বড় টান নয় তাদের সম্পর্ক দেখলে তা অনুধাবন করা যায়।প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ঘৃণা জন্মাবে এমন একটি চরিত্র হলো 'পদ্ম ঝি'।তাছাড়া হাজারির একমাত্র কন্যা টেঁপি,গাঁয়ের জমিদার হরিচরণবাবুর মেয়ে অতসী,নতুন পাড়ার সরলা বধূ,পাশের হোটেলের মালিক যদু বাড়ুয্যে যার সাথে বেচু চক্কতির সর্বদা রেষারেষি করেই ব্যবসার কারবার,বংশীঠাকুর ও তার ভাগ্নে নরেন এরকম বেশ কিছু চরিত্রে বইটি মুখর।

জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য স্বপ্ন থাকতে হয়।সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হয়।পরিকল্পিত উপায়ে সুনির্দিষ্ট পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয়।ইংরেজ সময়ের পটভূমিতে রচিত বইটিতে তৎকালীন ব্রাহ্মণ সমাজের এক রাঁধুনী ব্রাহ্মণ হাজারি দেবশর্মার জীবনকথা রচনার মধ্য দিয়ে এরকম বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরেছেন বিভূতিভূষণ।সহজ-সাবলীল উপন্যাসটি বেশ কিছু বিষয় উপলব্ধি করতে শেখায়।

এছাড়া লেখকের অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি তো আছেই।সাধু ভাষায় রচিত হলেও সহজবোধ্য লিখনশৈলী।বরঞ্চ আমার মনে হয় সাধু ভাষার জন্যই বইটি আরো বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে।বইটি পড়তে পড়তে গল্পে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে তাদেরই একজন মনে হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ