Balancing Crue by Kazi Mahbub (ব্যালেন্সিং স্ক্রু-কাজী মাহবুব)

বইয়ের নাম- ব্যালেন্সিং স্ক্রু
লেখক- কাজী মাহবুব 
সম্পাদক- সাঈদ আবরার
প্রকাশনায়- হাসানাহ পাবলিকেশন 
প্রথম প্রকাশ- নভেম্বর ২০২০
মূদ্রিত মূল্য- ২০০ টাকা
Saima Binte Kalam (review all credit)
বিভাগ : বই রিভিউ
পোস্ট নং : ০১


সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে "ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর", অথচ এ লেখার পেছনেই চলে মানব ধ্বংসের লীলাখেলা। উন্নত দেশগুলো মানবতার বুলি আওড়ায়, আবার তারাই পৃথিবী ধ্বংসের জন্য অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষ তালিকায় থাকে। সমাজ বিনির্মানের স্লোগান দেয় বিভিন্ন সংস্থা, কিন্তু নারীদের মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা তারাই ছড়ায়। তাহলে তাদের এসব সুন্দর সুন্দর বাণী কপচানোর মানে কী? মানে একটাই, সুন্দরের আড়ালে নিজেদের কুৎসিত চক্রান্তকে ধামাচাপা দেওয়া; অবৈধ উপায়ে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এমনকি নিজেদের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। এমনটাই হচ্ছে বর্তমানে! বিশৃঙ্খলাকারীদের এমন বর্ণচোরা স্বভাবকে নির্দেশ করেই মহান আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনে বলেছেন-

"আর যখন তাদেরকে বলা হয়, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করছি।" (সূরা বাকারা, আয়াত- ১১)

সব অপকর্ম করার পর এসব কুচক্রীরা "উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে" প্রবাদটির মতো করেই ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমদের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দেয়। ফলে দেশের আমজনতার কাছে এ ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে উঠে না। আর তাই, সমাজের মূল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এ সকল মানুষদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে হাসানাহ পাবলিকেশনের লেখক কাজী মাহবুবের "ব্যালেন্সিং স্ক্রু" বইটিতে। যেখানে গল্পের ছলে তুলে ধরা হয়েছে সমাজের বর্ণচোরা নিকৃষ্ট মানুষদের কূটকৌশলকে। সঙ্গে  যুক্তি খন্ডন করে মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে করা নাস্তিকদের বিষাক্ত প্রশ্নসমূহের। 

★সূচিপত্র:
এ বইয়ের সূচিপত্র নামক ঝকঝকে তকতকে পৃষ্ঠাটিতে উঠে এসেছে লেখকের তথ্যসমৃদ্ধ গল্পগুলোর চমৎকার সব নাম। গল্পের নাম নির্বাচনেও যে একটা সুন্দর আর্ট দেখানো যায়, তা এখানে চোখ না বুলালে বুঝা যাবে না। অসাধারণ শব্দচয়নে ভরপুর গল্পের এসব নামগুলো দেখাতেই যেন প্রশান্তি মেলে।

★প্রচ্ছদ ও নামকরণ:
দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এবং শ্রুতিমধুর আনকমন নামে বইটি ভুয়সী প্রশংসার দাবীদার। এক্ষেত্রে আমি শুধু এটাই বলব, কোনো বইয়ের প্রচ্ছদ এবং নামকরণে দূরদর্শিতার পরিচয় পেতে হলে সবাই যেন এ বইয়ের দিকে তাকায়।

★বইটির সারসংক্ষেপ:
উক্ত বইয়ে দশটি অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে লেখকের যুক্তিসমেত অসাধারণ কথামালা। থ্রিলারের ঢঙ্গে, এডভেঞ্চারের আতিসায্যে এতে উঠে এসেছে সমাজে অবস্থানরত কুচক্রীদের কালো চাল। রঙিন বেশভূষায় কিভাবে তারা ইসলাম ও সমাজের ক্ষতিসাধন করে নিজেদের পকেট ভারী করছে, তাদের সে চিত্রই বর্ণিত হয়েছে এখানে। ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে কুরআন ও বিজ্ঞানের অকাট্য দলীল দিয়ে। গল্পের নায়ক জায়ান, তার বন্ধু সনম এবং তার জুনিয়র প্রয়াসের সাথে কথোপকথনে এমন সব তথ্যই পাওয়া যাবে এ বইয়ে।

★ভাষাশৈলী:
বইয়ের নামটা একটু ভারিক্কি টাইপের হলেও ভাষা কিন্তু একদম সহজ-সাবলীল-প্রাঞ্জল। অত্যন্ত সুন্দর এবং গোছানো ভাষায় লেখক তার কলমের ডগায় এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর গল্পের ঢালিকে। আমার মনে হয় এ বই পড়ে পাঠকের বিরক্ত হওয়া দূরে থাক, বরং এক বসাতেই তা শেষ করে উঠতে চাইবে ইনশাআল্লাহ।

★বইটি কারা এবং কেন পড়বেন:
আমার মতে, সমাজের কুচক্রী বর্ণচোরাদের চেনার জন্য এবং নাস্তিক হতে উদ্বুদ্ধ করে এরকম প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিশোর-কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্ক সবারই পড়া উচিত। কেননা বিধর্মীদের স্বার্থান্বেষী কূটকৌশল সমাজে ছড়িয়ে পড়ায় আমরা না বুঝেই তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছি। আর নাস্তিকদের বিভ্রান্তমূলক ধর্মীয় প্রশ্নবান জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অনেকের অন্তরে নাস্তিক্যবাদকে উস্কে দিচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে নিজের ঈমান-আমল এবং আমাদের আখিরাতকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এ বইটি পড়া থাকলে আমরা তাদের পাতা এসব ফাঁদে সহজে আর পা দিব না ইনশাআল্লাহ। 

★পাঠ্যানুভূতি:
"ব্যালেন্সিং স্ক্রু বইটি বাংলার সমাজে আরিফ আজাদের পরে ২য় বারের মতো চিড় ধরাবে।" এরকমই একটি মন্তব্য এ বইটি পড়ার জন্য বারবার আমার হৃদয়কে আন্দোলিত করছিল। তারপর দেরি না করে বইটি পড়া শুরু করলাম। যতক্ষণ পড়ছিলাম ততক্ষণ কেবলই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। লেখকের অসাধারণ ভঙ্গিতে উপস্থাপিত সচেতনতামূলক লেখা বারবার হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছিল, আর ঘৃণা সৃষ্টি করছিল সমাজ বিধ্বংসীদের প্রতি। বইটি পড়ে জানতে পেরেছি অনেককিছু যা না পড়লে কুচক্রীদের ভয়াবহ পরিকল্পনা সম্পর্কে হয়তো কোনোদিন জানাই হতো না!

★সমালোচনা ও পরামর্শ:
বইটির সবকিছুই ভালো লেগেছে আলহামদুলিল্লাহ। তবে "মতাদর্শ" অধ্যায়টিতে জায়ানের পরনারী রিয়ার সঙ্গে অপ্রয়োজনে কথা বলার বিষয়টা ভালো লাগেনি।  শরীয়াহের দৃষ্টিতে এটা আমার কাছে অনুচিত মনে হয়েছে। ইসলামি ঘরনার বই হিসেবে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই লেখক ও প্রকাশকের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ রইল, পরবর্তী সংস্করণে এ ভুলটি যেন সংশোধন করা হয়। আর বইটির পৃষ্ঠাসজ্জার দিকেও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এছাড়া বইটির লেখার ফন্ট কিছুটা ছোট হলে ভালো হয়।

★শেষ কথা:
পরিশেষে বলব যে, বইটি পৌঁছে যাক প্রতিটি মানুষের দোর গোঁড়ায়। সচেতনতার রশ্মি ছড়িয়ে বদলে দিক এ সমাজটাকে। আর অবশ্যই দু'আ করি, আল্লাহ বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান দিন, আমিন।

বইয়ের নাম- ব্যালেন্সিং স্ক্রু
লেখক- কাজী মাহবুব 
সম্পাদক- সাঈদ আবরার
প্রকাশনায়- হাসানাহ পাবলিকেশন 
প্রথম প্রকাশ- নভেম্বর ২০২০
মূদ্রিত মূল্য- ২০০ টাকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ