বই পড়ো, বই পড়ে হক্ব'টা গ্রহণ করো বাতিলটা বর্জন করো - ভাষান্তরঃ জুহাঈর আবছার

বই পড়ো,
বই পড়ে হক্ব'টা গ্রহণ করো বাতিলটা বর্জন করো”
--- এটা সালাফদের মানহাজ না...!
✍️ Article Credit:-ভাষান্তরঃ জুহাঈর আবছার
বই পড়ো, বই পড়ে হক্ব'টা গ্রহণ করো বাতিলটা বর্জন করো - ভাষান্তরঃ জুহাঈর আবছার


.
অনেক লোক যুবকদের ধোঁকা দেয় এই বলে যে “বই পড়ো, বই পড়ে হক্বটি গ্রহণ করো,বাতিলটা বর্জন করো” যদিও যুবকরা এই বিষয়ে মিসকিন! যুবকরা হক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, ফলে তারা বাতিল'কে হক্ব মনে করে গ্রহণ করে তারপরে তারা হক্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লিপ্ত হয় এবং তারা মনে করে যে হক্বটাই বাতিল এবং এই ফাঁদে অনেক লোক পতিত হয়েছে! সালাফগণ কখনোই আহালুল বিদা'আহদের বই পড়তেন না!
.
আহালুল বিদা'আহ বই-পুস্তক পড়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ করে অনেক কিতাব-আদি লিখা হয়েছে। সেইগুলোর মধ্যে একটি হল, ইবনে কুদামাহ রচিত আল মুওয়াফফাক পুস্তিকাটি [এটি আহালুল বিদা'আহ বই পড়া হারাম বিষয়ে লেখা হয়েছে] তাহরীম আন-নাদার, ফ্বী কুতুব আহলুল বিদা'আহ!
.
আহালুল বিদা'আহ বই-পুস্তকের ব্যাপারে সতর্কীকরণ বিষয়ে ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল, আয-যাহাবী, ইবনে ত্যাইমিয়াহ এবং ইবনুল কাইয়্যিম ও প্রমুখদের লিখনী রয়েছে! তারা সবাই আহালুল বিদা'আহদের বইগুলো বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই মনে করতেন যে, এইগুলো পুড়িয়ে বা ধ্বংস করে  দেওয়া উচিত। তাদের মধ্যে ইবনে কাইয়িম এবং আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ! কারণ তারা এইসব বই-পুস্তক মধ্যে দিয়ে উম্মাহ'কে ধ্বংস করা এবং বিশৃঙ্খলা তথা ফিতনার মাধ্যম হতে পারে। সুতরাং মুসলিমদের মাঝে যখন আহালুল বিদা'আহ বই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেক মুসলিম হক্ব ও বাতিলের পার্থক্য বুঝতে পারে না, অতএব তারা আহালুল বিদা'আহ জালে আটকে পড়ে যায়! তাই তাদের মধ্যে কেউ মুতা'যিলা, কেউ জাহমিয়া, কেউ আশা'আরী, কেউ সুফি ইত্যাদি ইত্যাদি.....! আর আহালুল বিদা'আহ মধ্যে থেকে গুটি কয়েকজন'ই সালাফূস সালেহীনের মানহাজ অবলম্বন করে। অপরদিকে আহালুল বিদা'আহ বিপুল পরিমাণের! 
.
এমন হওয়ার কারণ কী?
.
--- এর মূল কারণ আমার দৃষ্টিতে হলো “আমরা হক্বটা গ্রহণ করবো, বাতিলটা বর্জন করবো!” এটাই তাদের মূলনীতি....! সুতরাং তারা বাতিল'কে গ্রহণ করে, হক্ব'টাকে বর্জন করে! 
.
ইবনে আক্বিল ছিলো একজন ইলমের পাহাড়, অথচ তিনিও আহালুল বিদা'আহ থেকে ইলম হাসিল করা শুরু করেছেন, এমনকি মুতা'যিলাদের থেকে ও! ভৃত্যবর্গ'রা থাকে সতর্ক করেছিলো কিন্তু সেই সতর্ককতা'কে উপেক্ষা করে, একগুঁয়ে ভাবে তাদের থেকে ইলম হাসিল করে, সুতরাং সেই আহালুল বিদা'আহদের ফাঁদে পড়ে যায়। এবং সেই তার বইয়ে [আহালুল বিদা'আহ বিভ্রান্তি] তা প্রচার প্রসার করে, ফলে হানাবিলার কয়েকজন তাকে হত্যার হুমকি দিলো।
--- অতঃপর কিছু লোক তাকে নাসিহা করেছিলো এবং তাকে সতর্ক করেছিলো ফলে সেই তওবা করেলো এবং ফিরে আসেলো এবং সেই তার অনুতপ্ত লিখে দিলো! মোদ্দা কথা হলো যে ইবনু আক্বিলের প্রচুর পরিমাণের ইলম ছিলো, তবুও সেই আহলুল বিদা'আহদের ফাঁদে পড়েছিলো! কারণ সেই আহালুল বিদা'আহদের আলেম দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলো, ফলে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে! বারেক আল্লাহু ফ্বীকুম!
.
আহালুল বিদা'আহদের মধ্যে অনেকেই এবং আমি তাদের মধ্যে কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না যারা আহালুল বিদা'আহদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলো! তারা যারা ধার্মিকতা এবং জুহদ প্রদর্শন করেছিলো তারা এই বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর গর্তে মধ্যে পড়ে গেলো! সালাফ আইম্মাতুস সুন্নাহ ইমাম ইবনে সীরিন এবং আইয়ুব আস-সাখতিয়ানি' কাছে যখন একজন আহালুল বিদা'আহ মধ্যে থেকে একটি কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে শুনাতে চাইতো, তখন তারা বলতোঃ “একটি আয়াতের অর্ধেক ও না!”
--- কেনো? 
কারণ তারা জানতো যে এই ব্যক্তিগুলো তাদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলো এবং তাদের কাছে আয়াতটি পাঠ করতে চেয়েছিলো কেবল এটি থেকে সন্দেহ বের করার জন্য। সুতরাং তিনি বললেনঃ “আমি শুনতে ও চাই না”
--- তাই তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলো কেনো, তিনি বললেনঃ "আমার অন্তরে উপর আমার কোনো হাতে নেই, এবং আমি নিজের জন্য ফিতনাকে ভয় করি!” 
যদি আইম্মারা ফিতনাকে' নিজের জন্য ভয় করেন, তাহলে আপনি কীভাবে নিজেকে ফিতনা থেকে নিরাপদ মনে করেন? সাহাবীগণ নিজেদের জন্য ভয় করতেন, তারা নিজের নিফাক্বি'র জন্য ভয় করতেন, তাহলে আপনি কীভাবে নিজেকে নিফাক্বি থেকে নিরাপদ মনে করেন? আপনি কিভাবে নিজেকে বিদা'আহ গর্তে পড়া থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করেন! আপনি এমন অর্থ গ্রহণ করেন যা একজন বিদা'আতী গ্রহণ করে, তারপরেও আপনি নিজেকে কিভাবে নিরাপদ  মনে করেন? আর এই বইগুলো হলো সঙ্গীর মত [যা তোমার পাশে বসে থাকে] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ" সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিস্ক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।"---[১]
.
সুতরাং যে ব্যাক্তি আহলুল বিদা'আহদের কিতাব পাঠ করবে সেই নিজের উপর অনিবার্যভাবে ক্ষতি ডেকে আনবে, ভাবো যে এই বইগুলো তোমার সঙ্গী [যা তোমার সাথে বসে আছে] 
তাই একজন কবি বলেছেনঃ “পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান একটি ঘোড়ার জিন, এবং সর্বোত্তম সঙ্গী হলো বই!”
--- আমি [রাবী আল মাদখালী] বলি, “সবার সবচেয়ে খারাপ সঙ্গী হতে পারে একটি বই!” এই বইগুলো অনেকটা ছড়িয়ে পড়া কোনকিছুর মতন, বরং আরও বিপজ্জনক, তেমনই মানুষের অসৎসঙ্গও ঠিক এরকম যে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং অনিবার্যভাবে বসে বসে নিজের ক্ষতি করবে এই বইগুলোর মাধ্যমে! 
.
--- আহালুল বিদা'আহ'র চেয়ে মন্দ আর কে?
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ “অতঃপর নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দীনে (মনগড়াভাবে) নতুন জিনিস সৃষ্টি করা এবং (এই রকম) সব নতুন সৃষ্টিই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)।” ---[২] 
.
সুতরাং, এই মুতবাদি ফিরকা আহালুল বিদা'আহ ও ক্ষতিকর!
- সাবধান!!
এটি তোমাকে পুড়িয়ে ফেলবে, এমনকি তুমি এটির অনুভব করতে পারবে না! এমনকি যদি আহালুল বিদা'আহ আপনাকে জুহদ এবং তাকওয়া দিয়ে প্রতারিত করে, তাহলে ও থাকে নিরাপদ মনে করবেন না! প্রথমবারে সেই আপনাকে মধু দিবে খাওয়ার জন্য,  দ্বিতীয়বারে, তৃতীয়বার.... তারপর থেকেই ধীরে ধীরে সেই আপনাকে স্লো-পয়োজনীন করাবে, ডোজের পরে ডোজে!
.
তাদের মধ্যে থাকা প্রতারণা, ছলনা, চালাকি এবং সন্দেহ আছে যা তারা মানুষের প্রতি ছুড়ে দিবে, ফলে একজন দুর্বল ঈমানের ব্যক্তি এটি থেকে পরিত্রাণ পাবে না, বরং সে এর শিকার হয়।
.
.
পাদটীকাঃ
---[১] সহীহ্ বুখারীঃ ২১০১
---[২] মুসলিম ৮৬৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১০, সহীহ আত্ তারগীব ৫০, বুলূগুল মারাম ৪৪৮, দারেমী ২০৬, ইবনু মাজাহ্ ৪৫, নাসায়ী ১৫৭৮, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৭৮৫
.
মূলঃ শাইখ রাবী' আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)
.
উৎসঃ https://youtu.be/rPjWyigfbn8
.
ভাষান্তরঃ জুহাঈর আবছার 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ