বই: মহাঅশ্বথের সন্ধানে লেখক: নওয়াজেশ আহমদ রিভিউ

বই: মহাঅশ্বথের সন্ধানে
লেখক: নওয়াজেশ আহমদ 
পৃষ্ঠা: ১৫৬
উৎসর্গ করা হয়েছে দুই মহীরুহ শওকত ওসমান এবং কামরুল হাসান।
জান্নাতুল ফেরদৌস হিয়া(all review credit)
______________________________________________


ড. নওয়াজেশ আহমদ একজন উদ্ভিদ জিনতত্ত্ব বিজ্ঞানী। শুধু বিজ্ঞানীই নয় তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আলোকচিত্রী। এই বইয়ে লেখক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার বর্ননা দিয়েছেন। যেহেতু লেখক একজন আলোকচিত্র শিল্পী কাজেই ছবি তোলার উদ্দেশ্যে তিনি দেশ বিদেশে ঘুরেছেন। সেসব দেশেরই সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান এবং প্রকৃতির বর্ননা দিয়েছেন তিনি। 

বইটিকে একটি প্রবন্ধ বলা চলে। কেননা তিনি এখানে অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন। এই বইয়ে  তিনি লিখেছেন মানুষের কথা, প্রকৃতির কথা। প্রকৃতিকে ঘিরেই গড়ে উঠে মানবসভ্যতা। কিন্তু এই সভ্যতাকে আধুনিক করতে গিয়ে ধ্বংস করছি প্রকৃতিকে। যার দরুণ অনেক বনজ প্রজাতি আজ বিলুপ্তের দ্বারপ্রান্তে। লেখকের লেখনীতে এমন সব ফুল,ফল গাছের নাম উঠে এসেছে যা আজ বেশিরভাগই বিলুপ্তপ্রায়। হয়ত শতবর্ষীয় কয়েকটা গাছ এখনো আছে। কিন্তু সেসব যত্নের অভাবে খুবই করুন দশায় আছে।

লেখক এই বইয়ে অধ্যায়ভিত্তিক বর্ননা দিয়েছেন। কখনো দারুচিনি দ্বীপের কথা, কখনো নারকেল জিঞ্জিরা, কখনো অশ্বথ পাকুড় কিংবা নলগোলার কথা বলেছেন। এসবই ধরতে গেলে এখন প্রায় ইতিহাস। সেজন্যই লেখক তার প্রতিটি অভিজ্ঞতায় প্রকৃতির খোঁজ করেছেন। প্রকৃতিকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এজন্যই বোধহয় বইয়ের নাম 'মহাঅশ্বথের সন্ধানে'!

হুমায়ুন আহমেদের বৃক্ষকথা বইয়ের পরে গাছ সম্পর্কিত এটিই আমার পড়া দ্বিতীয় বই। অসাধারণ লেখনী। পড়ার ফাঁকে আমিও ঘুরে এসেছে দারুচিনির দ্বীপে, নারকেল জিঞ্জিরাতে। মনে হচ্ছিল দূর থেকে কে
যেন গাইছে নজরুলের সেই গানটি-

"দূর দ্বীপ বাসিনী, চিনি তোমারে চিনি দারুচিনির দেশের
তুমি বিদেশিনী গো, সুমন্দভাষিনী"

বইটি পড়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি প্রকৃতির একদম সান্নিধ্যে চলে এসেছি। নিজের ভেতর এতটা তৃপ্তি আর কখনো হয়নি। কখনো ভাবিও নি প্রকৃতি আমাদের এতটা আপন। অথচ আমরা স্বার্থপরের মত প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। এমনকি প্রতিবছর আমরা যে বৃক্ষরোপণ করি সেখানেও শুধু সৌন্দর্য বর্ধনের গাছ লাগিয়ে নিজেদের দায় শেষ করি! অথচ বাৎসরিক হিসেব অনুযায়ী এইসব সৌন্দর্যবর্ধক গাছ থেকে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম অক্সিজেন পাই। আমাদের উচিত বিদেশী গাছের প্রতি ঝুঁকে না পড়ে দেশি গাছগুলোর প্রতি নজর দেয়া। যে হারে প্রতিদিন কার্বন-ডাইঅক্সাইড বাড়ছে প্রকৃতিতে এই দেশীয় গাছগুলো ছাড়া আমাদের আর কেউ রক্ষা করতে পারবেনা!

💕ছবিটি আমি নিজেই তুলেছিলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ