বই : ছোটদের প্রিয় রাসূল ﷺ (রিভিউ)
লেখক : তানভীর হায়দার
শারঈ সম্পাদনা : আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ
প্রকাশক : ইসমাইল হোসাইন
বইটি প্রকাশিত হয়েছে সত্যায়ন প্রকাশন থেকে।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
" ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে।"
সেই অন্তরের মালিক যিনি সেখানে তাঁর ও তাঁর রাসূলের ,তাঁর কালামের স্থান থাকাটা কি বাঞ্চণীয় নয়? কিন্তু এই স্থান হুট করে হয়ে যায় না। বৃক্ষের জন্য যেমন প্রথমে নরম মাটিতে বীজ বপন করতে হয় , ঠিক তেমনি মানব মনেও কচি বয়সেই স্রষ্টা,দ্বীন এবং রাসূলের মহ্বতের বীজ বপন করে দিতে হয়। আর এই নেক প্রচেষ্টাই করেছে সমর্পণ প্রকাশন ছোটদের প্রিয় রাসূল সা. সিরিজের রূপে।
বিষয়বস্তু :
বিষয়বস্তু সীরাতে রাসূল সা.। বড়দের হোক কিংবা ছোটদের , সীরাতে রাসূল সা. তো এক ও অভিন্ন। তফাৎ টা শুধু উপস্থাপনের মধ্যে । ছোট্ট সোনামনিদের জন্য গল্পের আকারে রঙিন মলাটে সীরাতে রাসূল সা. কে উপস্থাপন করা হয়েছে, ৬ টি খন্ডে।
🔯 মরুর বুকে এলেন নবি :
ছোটদের প্রিয় রাসূল সা. সিরিজের প্রথম বই এটি। এতে নবীজির জন্মপূর্ব জাহেলি সময়ের বর্ণনা থেকে শুরু করে নবুয়াতি দাওয়াতের পূর্ব পর্যন্ত স্থান পেয়েছে। মোট ১১ টি চমৎকার গল্পে সাজানো হয়েছে বইটি।
🔯 দ্বীনের দাওয়াত হলো শুরু :
এই বইটিতে মোট গল্পসংখ্যা ৮টি। রাসূল সা. এর জন্মের উদ্দেশ্য, হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা, ওহী নাযিল এবং দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার ঘটনাগুলো সোনামণিরা এই বই থেকে জানতে পারবে।
🔯 মক্কা ছেড়ে মদীনার পথে :
এখানে হিজরত পূর্ব কিছু ঘটনার অবতারণায় সাজানো হয়েছে ৯ টি গল্প। নবীজির শোক, দ্বীনের জন্য ত্যাগ প্রভৃতি বিষয়গুলো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে বইটিতে।
🔯 মদীনা এখন নবির শহর :
সিরিজের ৪র্থ বই এটি। হিজরতের পর আনসারদের সাহায্য দ্বীনের দাওয়াহ প্রচার , মসজিদে নববী নির্মাণ এবং মদীনাকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসার ভালোবাসাপূর্ণ গল্পগুলো এখানে স্থান পেয়েছে। মোট গল্প ৯ টি ।
🔯 রণাঙ্গনে প্রিয় রাসূল :
অসাধারণ এই বইটি সেজে উঠেছে রণাঙ্গণে প্রিয় নবীজির বীরত্ব গাঁথা নিয়ে। বর্তমান সময়ের শিশুদের কে সিরিজের এই বইটি সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করবে বলে আমি মনে করি। বদর,ওহুদ,খন্দক,হুদায়বিয়া সহ 'নাবীয়্যূল মালহামার' জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মালহামাগুলো ৫টি গল্পে উঠে এসেছে বইটি তে।
🔯 বিশ্বজুড়ে ওহীর আলো :
সিরিজের সমাপ্তি ঘটেছে এই বইটিতে। ৭ টি গল্প দিয়ে মুসলিমদের গৌরব দীপ্ত বিজয়গাঁথা উপস্থাপিত হয়েছে। মক্কা বিজয়,বিদায় হজ্জ এবং নবীজির ওফাতের হৃদয়স্পর্শী মুহূর্তের বিবরণ দিয়ে শেষ হয় ছোটদের প্রিয় রাসূল সা. নামের এই অসাধারণ সিরিজটি।
পাঠক উপলব্ধি :
একটি ছোট চারাগাছ কে যেভাবে রোপন করা হয় সেটা সেভাবেই বেড়ে ওঠে, বাঁকা করলে বাঁকা আর সোজা করলে সোজা । সেটা আমরা সবাই জানি। পরিপক্ক হবার পর গাছটিকে আর কিছু করা সম্ভব হয় না। মানব শিশুও ঠিক তেমন। বাবা মা তাকে যেভাবে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক, সেটা তার কচি বয়সেই করে ফেলতে হয়। শিশু বয়সে তাকে যে রকম ইলম দেওয়া হয় সে সেইরকমই বেড়ে ওঠে। বর্তমান সময়ের বাবা মায়েরা খুব ক্যারিয়ার সচেতন।
কচিকাচা শিশুদের যে বয়সটা খেলাধূলা করে কাটানোর কথা তখন তারা সেই সোনামণিদের বইভর্তি ব্যাগ গাঁধার মত চাপিয়ে দেন ক্যারিয়ারের ভিত্তি গড়ার জন্য। যে বইগুলো তাদেরকে নিতান্তই নিয়ে যায় পশ্চিমা জীবনধারায় আর হিন্দুয়ানা সংস্কৃতিতে। তারপর সহযোগি হিসেবে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের (নাচ,গান,অভিনয়)দিকে আধুনিক বাবা মায়ের রয়েছে বিশেষ খেয়াল। আজকালকের শিশুদের জীবন চাকরীজীবি মানুষের চেয়ে কম ব্যস্ত নয়।
কিন্তু এই ব্যস্ততাগুলো অমূলক এবং নাজায়েয কর্মকান্ডে ভরপুর। কার্টুন দেখিয়ে, গান শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা আজ আমাদের দেশের পরিচিত চিত্র। এমনকি টিকটকের মত নোংরা হারাম কন্টেন্টেও এসব কোমলমতি শিশুদের জড়ানো হয়েছে আজকাল। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আজকের শিশুরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আধুনিক ক্যারিয়ার সচেতন মা বাবা সন্তানদের যতটা সেক্যুলার, লিবারেল আর মডার্নিজমের ছাঁচে ঢালতে পারেন তারা সন্তানকে ততটাই উজ্জ্বল ভবিষ্যত দিয়ে পেরেছেন বলে মনে করেন। ঠুনকো এই দুনিয়াবি মোহগুলোকে চূড়ান্ত সাফল্য মনে করে তারা সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার প্রয়াস করেন খুব যত্নে।
অথচ তারা ভুলে যান নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের প্রকৃত সত্তাগত পরিচয় কোনটি। নিজের রব দ্বীন আর রাসূল সম্পর্কিত ইলম অর্জন করা বাবা মায়ের কাছ থেকে সন্তানের হক আর সন্তানদের প্রতি বাবা মায়ের অবশ্য কর্তব্য, এ বিষয়ে তারা বেগাফিল। ভুলে এই পৃথিবীই শেষ নয় ; এরপর যে জগৎ আছে সেখানে প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে কড়ায়-গন্ডায়। প্রত্যেককে জবাবদিহি করা হবে নিজনিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন -
" জেনে রেখো ! তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল,তত্ত্ববধানকারী আর তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হবে।" ( সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)
কেন বইটি শিশুদের জন্য প্রয়োজন :
বইটির প্রয়োজনীয়তা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা ইরশাদ করছেন -
" তোমাদের জন্য রাসুলের (সা.) জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ (৩৩ : ২১)।"
আজকের সোনামণিরা আগামী দিনের ভবিষ্যত, উম্মাহের অনাগত কান্ডারি। উম্মাতে মুহাম্মাদীনের বাগানের প্রস্ফুটিত ফুল তারা। তারা যদি নবীজিকে চিনতে না পারে ভালোবাসতে না পারে তবে কেমন করে তার আদর্শ অনুসরণ করবে? কেমন করে তারা উম্মাহের নেতৃত্ব দেবে,কেমন করে তারা মজবুত ঈমানের বাহক হবে? রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন -
" তোমাদের কেউ মু'মিন হতে পারবে না ,যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা,সন্তান এবং সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।"
সমালোচনা :
' ছোটদের প্রিয় রাসূল সা.' সোনামণিদের জন্য সমর্পণ প্রকাশনের এক বিশেষ উপহার এবং নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। শিশুদের কে আকৃষ্ট করার জন্য চনমনে আবেশে সিরিজটি সাজানো হয়েছে । রঙিন মলাট ও পৃষ্ঠাসজ্জার সাথে গল্প অনুযায়ী মিষ্টি সব ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে পাতায় পাতায়। গল্পের শেষে রেফারেন্সের উপস্থাপনা , শিশুদের প্রতি যত্নের প্রমাণ দেয়। তাছাড়া শিশুসুলভ সহজ ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে গোটা সিরিজে। প্রতিটি বইয়ের বাইন্ডিং, প্রচ্ছদ এবং মলাট ও ভেতরের ফন্ট চমৎকার এবং নান্দনিক। এই সিরিজটির সাথে যে আপনাদের সোনামণিদের আনন্দঘন এবং রহমতপূর্ণ সময় কাটবে, একথা বলাই বাহুল্য।
ফেতনার করাল গ্রাস থেকে আজ আমাদের কোমলমতি শিশুদেরও রেহাই নেই। অধিকন্তু অভিভাবকদের অজ্ঞতা, দ্বীনের বিষয়ে অবহেলার কারণে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রিয় রাসূল সা এর কোমলমতি সেনারা। তাদেরকে সেই ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে সমর্পণ প্রকাশন যে নেক প্রয়াস করেছে আল্লাহ যেন তাতে বারাকাহ দান করেন এবং তাদের উদ্দেশ্য সফল করেন। আমীন।
review_2
দেখতে দেখতে কেটে গেল ছয়টি বছর। মুসলিমরা আর আগের মতো দুর্বল নয়। দিনে দিনে তাদের শক্তি বেড়েই চলছে। এসব দেখে কাফিররা অস্থির হয়ে উঠল। তারা আবূ তালিবকে হুমকি দিল, মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা ওকে হত্যা করব!
ভাতিজার কথা ভেবে আবূ তালিব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। নিজ গোত্রের লোকজন ডাকলেন। তিনি তাদের কাছে সাহায্য চাইলেন। বানূ হাশিম ও বানূ মুত্তালিবের সবাই বলল, আমরা যেকোনও মূল্যে মুহাম্মাদের জীবন রক্ষা করব!
মুশরিকরা দেখল, এখন মুহাম্মাদকে হত্যা করা যাবে না। নইলে নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ লেগে যাবে। তাই তারা একটি নতুন চক্রান্ত করলো।
মুশরিকরা একজোট হয়ে একটি দলীল লিখে ফেলল। রাতের অন্ধকারে সেটা কা’বার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিল। সেখানে লেখা,
‘বানূ হাশিম ও বানূ মুত্তালিবের সাথে সকল প্রকার লেনদেন নিষিদ্ধ। তাদের সাথে বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ। এমনকি কথাবার্তা, উঠাবসা ও তাদের বাড়িতে যাতায়াত করাও নিষিদ্ধ—যতদিন না মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে!’
এককথায়, সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো তাদেরকে! বাধ্য হয়ে তারা একটি উপত্যকায় আশ্রয় নিলেন। চারটি হারাম মাস বাদে সেখান থেকে বেরোতে পারতেন না। এ যেন এক অদৃশ্য কারাগার!
কয়েক দিনের মধ্যেই মুসলিমদের জমানো খাবার ফুরিয়ে এলো। বাধ্য হয়ে সাহাবিরা গাছের পাতা খেতে শুরু করলেন! এগুলো খেতে গিয়ে তাদের মুখে ঘাঁ হয়ে গেল। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নায় চারপাশ ভারি হয়ে উঠল! একদিন-দুইদিন নয়, এভাবেই চলল দীর্ঘ তিনটি বছর!
এত কষ্ট দেখে কিছু কাফিরের মন কেঁদে উঠল। এক সময় তারা ভাবল, এই অন্যায় চুক্তি বাতিল করা প্রয়োজন! এই প্রস্তাবে রাজি হলো পাঁচজন। রাতের বেলা তারা পরামর্শ করলো, পরদিন সবাই একযোগে প্রতিবাদ করবে। এমনকি আবূ জাহলকে হুমকি দেবে, এই চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলতে হবে!
যেই কথা সেই কাজ। পরদিন সকালে তারা আবূ জাহলের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু করলো। আবূ জাহল বলল, বুঝেছি তোমরা আগে থেকেই পরামর্শ করে এসেছ!
এমন সময় সেখানে এলেন আবূ তালিব। তিনি বললেন, ‘চুক্তিনামা ছেঁড়ার দরকার নেই। আল্লাহ নিজেই ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র আল্লাহর নাম অবশিষ্ট আছে। বাকি সবকিছু পোকামাকড় খেয়ে ফেলেছে!’
কী আশ্চর্য! চুক্তিনামা তো কা’বার ভেতরে! আবূ তালিব জানলেন কী করে! আসল কথা হলো, এ বিষয়ে নবিজির কাছে ওহি এসেছিল। আবূ তালিব সেখানেই এ খবর পেয়েছেন।
এরপর কা’বাঘর খোলা হলো। দেখা গেল, আল্লাহর নাম বাদে কোনও লেখাই আর নেই! মুশরিক নেতারা হতবাক হয়ে গেল। কিন্তু নুবুওয়াতের এত বড় প্রমাণ দেখেও তারা ঈমান আনল না! এভাবেই শেষ হলো দীর্ঘ তিন বছরের বয়কট। অবসান ঘটল বন্দি জীবনের।
আবু তালিবের মৃত্যুর পর কাফিররা আবার অত্যাচার শুরু করল। তবুও নবিজি ﷺ দাওয়াত থামালেন না। তিনি দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা করলেন তায়েফবাসীদের। কিন্তু সেখানেও ঘটল এক দুঃখের ঘটনা!
.
দীর্ঘ আট মাইল পথ হেঁটে নবিজি ﷺ তায়েফ পৌঁছালেন। এই সফরে তাঁর সাথে ছিলেন যাইদ ইবনু হারিসা। তিনি ছিলেন নবিজির ﷺ খাদেম। নবিজি টানা দশ দিন দাওয়াত দিলেন। কিন্তু তায়েফের কোনাে নেতাই তার ডাকে সাড়া দিল না। উলটো দুষ্ট ছেলেদের লেলিয়ে দিল। তারা রাসূলকে ﷺ পাগল বলে তাড়া করল। হইচই করে গালাগালি শুরু করল। এমনকি রাসূলের ﷺ গায়ে পাথর ছুড়ে মারলো! তিনি রক্তাক্ত হয়ে পড়লেন। জুতায় রক্ত জমে গেল!
বই : ছোটদের প্রিয় রাসূল ﷺ
লেখক : তানভীর হায়দার
শারঈ সম্পাদনা : আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ
প্রকাশক : ইসমাইল হোসাইন
বইটি প্রকাশিত হয়েছে সত্যায়ন প্রকাশন থেকে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....