বইয়ের নামঃ সেদিন লেখিকাঃলামইয়া চৌধুরী

বইয়ের নামঃসেদিন
লেখিকাঃলামইয়া চৌধুরী 
প্রকাশনীঃবইবাজার প্রকাশনী
ইসরাত জাহান আনায়া(review writer)
বইয়ের নামঃ সেদিন লেখিকাঃলামইয়া চৌধুরী pdf


'সেদিন' হলো এক মিষ্টি ভালোবাসার গল্প।ভালোবাসার এক অন্যরকম গল্প।যেটা পড়ার পর ধূসরময় ভালোবাসার ঝুম বৃষ্টিতে নিজেকে  ভিজাতে বর্ষায় নৃত্যরত ময়ূরের মতো মন বাকবাকুম করে..

◑নামকথনঃ
সেদিন!নামটা যখন শুনেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো আরে বইয়ের নাম সেদিন হয় কীভাবে? তো উত্তর কীভাবে জেনেছি! বইটা পড়ে।গল্পের থিম এর সাথে নামকরণ একদম পার্ফেক্ট।

◑প্রচ্ছদকথনঃ
এবার বলি প্রচ্ছদ এর কথা।প্রচ্ছদটা আমার ভীষণ প্রিয়,এতো নিঁখুত লেগেছে আমার কাছে।প্রচ্ছদে দেখা যায় দুজন মানব মানবী সমুদ্র বিলাস করছে।বই পড়তে গিয়েই আবিষ্কার করি এই দু'জন মানব-মানবী ভালোবাসার ঝুম-ধূসর...!
 
◑চরিত্রকথনঃ
ঝুম-ধূসর: 
"একটা ছেলে মনের আঙ্গিনাতে
ধীর পায়েতে এক্কা দোক্কা খেলে..
ঘন পাহাড়ি ঝর্ণা খুঁজে 
বৃষ্টি জলে একলা ভিজে
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে।
আমি তো বেশ ছিলাম চুপিসারে 
ছোট্ট মেয়ে সেজে একলা কোণে
সবুজ বনে নীলচে আলো জ্বেলে
স্বপ্ন ভেজা মাটিতে পা ফেলে
সেই ছেলেটা হঠাৎ এল মনে
ছোট্ট আমি দুষ্ট আমি সেজে কেমন যেন হলাম জড়সড়.
আকাশ ভরা তারার আলো দেখে-
বৃষ্টি ভেজা মাটিতে তে পা রেখে..
বুকভরা আকাশটুকু ঢেকে
হঠাৎ করে হয়ে গেলাম বড়..
বন পাহাড়ি ঝর্ণা বৃষ্টি ফেলে 
আমায় বাসলো ভালো সেই ছেলে"

ঝুম-ধূসর কে যখন পড়েছি আমার এই গানটার কথা মাথায় এসেছে।আসলেই তো ধূসর কে ভালোবাসার পর বাবা মায়ের আদরের সেই ছোট্ট ঝুম বড় হয়ে গেলো হুট করে।ঝুম-ধূসর এর চলারপথ কিন্তু মোটেও মসৃণ ছিলো না।চেনা মেঘের অচেনা অনেক পথ থমকে দিয়েছে তাদের।কিন্তু মেঘের অচেনা এই পথ গুলোই তাদের কাছে আসার এক উছিলা হয়ে ছিলো।তারা যে একে অন্যের পরিপূরক।
তাদেরকে নিয়ে এর থেকে বেশী কিছু বলা যাচ্ছে না।

এবার বলি উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র দুটি নিয়ে..

ধ্রুব-জয়া: ৩০ টাকার মাধ্যমেই পাঠকের নজর কেড়ে নেয় "জয়া-ধ্রুব"।ইন্টারেস্টিং না?হ্যা,আসলেই ইন্টারেস্টিং একটা জুটি তারা।তাদের এই সাপ নেউলের  মতন সম্পর্ক কি করে এক করল তাদের?আমিই কি সব বলব নাকি!জানতে হলে বইটা পড়তে হবে।ধ্রুবর দেয়া জয়ার নাম হলো গরমমশলা।
ধ্রুব চরিত্রটা এতো দারুন!ভাইয়ের ছোট ছোট অনুভূতিগুলো সে খুব চট করে বুঝে ফেলতো।সিরিয়াস মোমেন্ট গুলোতে ধ্রুব'র কথা শুনে হেসে কুটকুটি আমি!

ধূসরের মা-উনি হলেন পুরো বইয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র।একটা মানুষ এতোটা অমায়িক হয়!উনি যেমন একটা সার্থক মা ঠিক তেমন ই তাকে শাশুড়ী হিসেবে পাওয়াও ভাগ্যের।

ঝুমের মা-বাবা:ঝুমের বাবার প্রতি খুব রাগ হয় আমার সাথে তার জন্য কি একটু খারাপ ও লাগে?উনি এমনটা কীভাবে করতে পারলেন?নিজের বোনের কথা শুনে নিজের মেয়েকে অবিশ্বাস করলেন!ঝুমের মা কিন্তু মেয়েকে ঠিকই বিশ্বাস করেছেন।তার মাতৃত্ব দেখে চোখ ঝাপসা হয়েছে।।

 দিগন্ত:এই চরিত্রটা আমার কাছে  ভালো লেগেছে।আবার লাগেও নাই।ও কীভাবে পারলো নিজের ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করতে।আর একটা জিনিস ভালো লেগেছে ও ঝুম ধূসর এর বিয়ে হওয়ার পিছনে ওরও কিন্তু ভুমিকা ছিলো।

স্বাতী-ফুপি:এই দুটো চরিত্র সবচেয়ে অপ্রিয় চরিত্র আমার।স্বাতী শুধু  নিজের স্বার্থটা দেখেছে।অার ফুপিও শুধু তার ছেলেমেয়ের স্বার্থ টাই দেখেছে।যদিও প্রতিটা মা চায় তার সন্তান ভালো থাকুক। কিন্তু সন্তান যখন ভুল পথে পা বাড়ায় তখন মায়ের দায়িত্ব হলো তাকে সেই পথ থেকে বের করা।ভুলগুলো শুধরে দেওয়া।কিন্তু উনি সেটা করেননি।উল্টা নিজের সন্তান এর ভুল সবার সামনে থেকে যাতে দৃষ্টিগোচর থাকে তার জন্য নিজের ভাই এর মেয়েকে সবার সামনে ভুল প্রমানিত করেছেন।

ভ্যালেরিয়া:সি ইজ সাচ অ্যা সুইটহার্ট। ও যখন ডুসর বলে ডাকতো আমি খুব ইনজয় করতাম।ও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র।ঝুম ধূসর এর মাঝে ভালোবাসা বাড়াতে তার কিন্তু পরোক্ষ ভুমিকা রয়েছে।

ভালোবাসার রূপ ও আমার কিছু কথা বলি এবার:স্বাতী কিন্তু ধূসর কে ভালোবাসেনি।কারণ ভালোবাসায় পাওয়ার আসা করতে নেই।যদি পাওয়ার আসা করা হয় সেটা লেনদেন হয়ে যায়।স্বাতী হলো ভালোলাগা আর ভলোবাসা কে এক করে ফেলেছিলো।ভালোলাগা হলো বাহ্যিক সৌন্দর্যের ব্যাপার।সে ধূসর এর বাহ্যিক সৌন্দর্যের মোহে পড়েছিলো।যেটাকে সে ভালোবাসা ভেবেছে। ধূসর এর মতো কেউ আসলেই তাকে ডিজার্ভ করে না।
ধূসর আর ঝুম এর ভালোবাসাটা পবিত্র ভালোবাসা।যেটায় অনেক কাঁটা ছিলো।কিন্তু সেই কাঁটা কে জয় করেছে।
এবার আসি প্রিয় লাইনগুলোর কথায়।প্রতিটা লাইনই আমার প্রিয়।তবে থাকে না কিছু লাইন যেগুলো মনে গেঁথে যায়!সেগুলো হলো-

১."দাও দাও ক্ষত বিক্ষত করে দাও।"
আমি চেঁচিয়ে বললাম,আ'ল কিল ইউ মিস্টার বেল।"

২."আরো ভেজো ভাবী বৃষ্টিতে।অাই মিন ঝুম বৃষ্টিতে।"

৩."মানুষ যাকে ভালোবাসে সেই কখনো তার ভালোবাসা বুঝেনা।আমি যেমন দিগন্ত ভাইয়ার অব্যক্ত ভালোবাসা কোনোদিন বুঝিনি তেমনি ধূসরও আমার ভালোবাসা বুঝে না।"

৪."আমি ঝুম!প্রিয়তমের কাছে যার নাম একরাশ বিরক্তি।"

৫."শেষবারের মতো ছুঁয়ে দেখলাম আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না।"

৬."সেদিন ধূসর মেঘে ঢাকা আকাশ,ঝুম বৃষ্টি নামবার অবকাশ।"

৭."আমি তোমার আঁচলে বাঁধা  পড়তে চাই না।আমি  তোমার বুক পকেটে থাকতে চাই।"

৮."আমি চেয়ে আছি তাই তুমি লাজুকতা,আমি ভালোবাসব বলেই তুমি নবপরিণীতা।"

৯."সমুদ্র দেখতে এসে যদি ভালোবাসার  ছোঁয়াই যদি না পাও তাহলে কি লাভ সমুদ্রকে এত ভালোবেসে?"

◑অনুভূতি কথনঃ

লামইয়া আপু যেমন বইটা ঘোরের মধ্যে লিখেছে আমি এই বইটা ঘোরের মধ্যে পড়েছি।বইটা পড়তে গিয়ে কখনো অট্টহাসিতে হেঁসেছি।তো কখনো চোখ হালকা ঝাপসা করেছি।ধূসর কে দেওয়া সেই চিঠিটা যখন পড়েছি ওদের দুজনের মনের অবস্থা তখন ফিল করেছি।সেদিন বইটা আমার প্রিয় থেকে প্রিয়তর হচ্ছে দিনকে দিন।এই বইটা আমার জন্য কতটা স্পেশাল বলে বুঝাতে পারবো না।
এই যে আরেকটা কারণে স্পেশাল হয়ে গেলো।কাঁচা হাতে রিভিউ লিখার চেষ্টা করলাম।তো স্পেশাল হলো না! সেদিন হলো একখান ভালোবাসা আমার কাছে....

এত বড় রিভিউ ধের্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ