বই: বিড়াল সাধক (book review)
লেখক: তামজীদ রহমান
জনরা: প্যারানরমাল বডি হরর ও রুরাল হরর থ্রিলার
প্রচ্ছদ: সানজিদা স্বর্ণা
প্রকাশকাল: ২০২১
প্রকাশনা: কুহক কমিক্স এন্ড পাবলিকেশন
পৃষ্ঠা: ১৩৩ (ক্রাউন সাইজের বই)
মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা
কাহিনী সংক্ষেপ (ফ্ল্যাপ থেকে):
বিড়ালের সাথে জাদুবিদ্যা আর অতিপ্রাকৃতের সম্পর্ক সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রসিদ্ধ। প্রাচীন মিশরীয়রা বিড়ালকে মনে করত ইহজগত আর পরজগতের মধ্যকার প্রতিনিধি। আমাদের চেনা জগতের জাগতিক পর্দার আড়ালে লুকোনো অতিপ্রাকৃত জগতও তাদের চোখে ধরা দেয়। আঁধারের পর্দার আড়ালে থাকা মায়াবী জগতের রহস্যঘেরা অবয়ব তাদের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে। বাতাসে মিশে থাকা অশরীরী কন্ঠস্বর তাদের কানে কানে বলে যায় সহস্রাব্দ প্রাচীন গুপ্তধনের ঠিকানা, কোথায় লুকানো আছে অমরত্বের চাবি, কি করলে পাওয়া যাবে সমস্ত মানবজাতিকে নিজের দাসে পরিনত করার ক্ষমতা…
আর এই সবই একজন মানুষের পক্ষেও অর্জন করা সম্ভব। যদিও সে যাত্রা অতি ভয়ানক। ব্যর্থ হলে আছে ভয়াবহ যন্ত্রণাময় মৃত্যুর ভয়। তবু মল্লিক সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি বিড়াল সাধনা করবেন। এবার সফল না হলে তাঁর জীবনের সমস্ত অর্জন শেষ হয়ে যাবে। তাঁর পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যাবে। মল্লিক সাহেব নিশ্চিত নন পথের শেষে তাঁর জন্য কি অপেক্ষা করছে। তবুও তিনি এই ভয়াবহ কঠিন, বিপজ্জনক অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়িয়েছেন, তাঁর সামনে দ্বিতীয় কোনও পথ খোলা নেই …
পাঠ-অনুভূতি:
লেখকের বেশ কয়েকটি ছোটগল্প ইতিপূর্বে পড়ে মুগ্ধ হয়েছি তাই, তার প্রথম উপন্যাস (আমার কাছে এটা উপন্যাসিকা মনে হয়েছে) পড়ার জন্যে যারপরনাই উদগ্রীব হয়ে ছিলাম, এবং যথারীতি তার এ সাহিত্যকর্মটিও আমাকে হতাশ করেনি।
'বিড়াল সাধক' বইটি এক বসায় পড়ার মত বই। এর মাঝে ভয়ের মাত্রাটা প্রকট আকারে নেই, তবে হালকা ভয় ও গা শিউরানি ঘরনার অনুভূতি পেতে হলে অবশ্যই এটা মাঝরাতে পড়তে হবে।
মাঝরাতেই খুলে বসেছিলাম বইটা। উপন্যাসিকার শুরুটা হালকা মেজাজে হলেও, দু-তিন পৃষ্ঠা পেরোতেই আসল গল্পে ঢুকে যায়। পড়ার সময় প্রথমেই যেখানে চোখ আটকে যায়, সেটা হচ্ছে, বর্ণনাশৈলী। বর্ণনায় বাড়তি কোন মেদ ছিল না। পর্যাপ্ত চুম্বকীয় বর্ণনা। কিছু কিছু জায়গায় এত নিখুঁত বর্ণনা ছিল যে, দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। একমাত্র বর্ণনাভঙ্গির কারণেই অতিপ্রাকৃত হওয়া সত্ত্বেও প্রায় বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছিল কাহিনীটা।
বর্ণনার পরেই যেটা চোখে পড়ে, সেটা হচ্ছে লেখকের দর্শন। মল্লিক সাহেবের দ্বারা দারুণ কিছু দর্শন ফুটিয়ে তুলেছে লেখক। ভালো লেগেছে সেগুলো। বিশেষত, 'প্রশংসা করার সুযোগ মানুষ হেলায় ছেড়ে দিলেও, অপমান করার সুযোগ বাস্তবে খুব কম মানুষই ছাড়তে চায়' -- এই দর্শনটা সবচেয়ে বেশি মনে ধরেছে।
দর্শনের পরেই যেটা নিয়ে বলতে হয়, সেটা হচ্ছে উপমার ব্যবহার। কাহিনীর বর্ণনাটাকে নান্দনিক রূপ দিয়েছে বেশ কিছু জায়গায় দারুণ সব উপমার প্রয়োগ। বিশেষত, বিড়াল সাধনার ধাপগুলোয় প্রকৃতি এবং অতিপ্রাকৃত জিনিসগুলোর বর্ণনায় উপমার যথার্থ প্রয়োগে মুগ্ধ হয়েছি।
সর্বশেষ যেটা নিয়ে বলবো, সেটা হচ্ছে উপন্যাসিকার কাহিনী। বইয়ের নাম ও প্রচ্ছদের মত প্লটটাও ইউনিক। মল্লিক সাহেবের গল্পটা যত সামনের দিকে এগিয়েছে ততই যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে ধরেছে। পুরো উপন্যাসিকা জুড়ে মূল চরিত্র মল্লিক সাহেবের বর্ণনা থাকায়, তার আবেগ, উত্তেজনা, চিন্তাধারা, আকুলতা সহজেই স্পর্শ করেছে। বিড়াল সাধনার নির্মম ধাপগুলো আপাতদৃষ্টিতে গা-গুলানো মনে হলেও, ভিতরে ভিতরে গা শিউরানি ধাঁচের শীতল অনুভূতির উদ্রেক করেছে। সর্বশেষ ধাপ সম্পন্ন করার পরের অংশটুকুতে ক্ষণিকের জন্যে হালকা ভয়ও পেয়ে বসেছিল। তবে সর্বাধিক মর্মাহত হই মল্লিক সাহেবের অন্তিম পরিণতিতে। যতক্ষণ পড়ছিলাম, মল্লিক সাহেবের গল্পটা সারাক্ষণ মস্তিষ্কের ঠিক-বেঠিক নৈতিকতার সাথে খেলা করছিল। শেষের হুমায়ূনীয় ধাঁচের 'আহারে!' সমাপ্তিটা শেষমেশ এটাই অনুভব করিয়েছে, 'মল্লিক সাহেবকে নিয়ে একটা সিক্যুয়েল হলে মন্দ হয় না!'
যারা হালকা ধাঁচের হরর ভাইব ভালোবাসেন, তাদের বইটা আমার মতই বেশ ভালো লাগবে।
বইয়ের প্রোডাকশন:
বইয়ের প্রোডাকশন সন্তোষজনক ছিল। ক্রাউন সাইজ হওয়ায় শুয়ে শুয়ে আরাম করে পড়তে পেরেছি। 😄
ব্যক্তিগত রেটিং: ৮/১০
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....