boi:- Ek Minuter amole PDF Download (১ মিনিটের আমল)

বইয়ের নাম : ১ মিনিটের আমল
কৃতজ্ঞতায় : Islamqa
প্রকাশনীর নাম : বিলিভার্স ভিশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩২ (পকেট সাইজ)
মুদ্রিত মূল্য : বিনামূল্যে
boi:- Ek Minuter amole PDF Download (১ মিনিটের আমল PDF Download) এক মিনিটের আমল পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখান থেকে নতুন ইসলামী বই পিডিএফ ডাউনলোড 2022 PDF



এক মিনিটে আপনি যে যে আমলগুলো করতে পারেন
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ ﷺ -এর প্রতি তাঁর পরিবার, সাহাবীগণ ও যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন তাদের ওপর।
আমাদের অধিকাংশই অফিসে বা কর্মস্থলে ব্যস্ততার জন্য ইবাদত-বন্দেগী ও নেককাজের তেমন কোন সময় পাই না। কাজের ফাঁকে অথবা কর্মব্যস্ততার পর বাকী যে সামান্য সময় পাই এর মধ্যে আমরা কি কি আমল করতে পারি এবং এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি এ উদ্দেশ্যে বিলিভার্স ভিশনের এবারের ১মিনিটের আমল বইটি। এই বইটি ড. মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল-হামাদ প্রণীত ‘এক মিনিটকে কাজে লাগানোর সর্বোত্তম উপায়’ শীর্ষক লিফলেট থেকে সংকলিত। সংকলনটি সংগ্রহ করা হয়েছে জনপ্রিয় ইসলামিক ওয়েবসাইট islamqa-তে একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে।

আলহামদুলিল্লাহ। সময় মানুষের জীবন। সময়কে কখনো অপচয় হতে বা অকাজে নষ্ট হতে দেয়ার মতো নয়। প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার সময়ের সদ্ব্যবহার করে। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি সময়কে অহেতুক কাজে বা অর্বাচীন কথায় ব্যয় করে না। বরং তিনি সময়কে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও ভালো কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। যে কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং মানুষের উপকার বয়ে আনে। জীবনের প্রতিটি মিনিটে আপনি একটি করে প্রস্তর স্থাপন করতে পারেন যা আপনার মর্যাদার ভবনকে উচ্চকিত করবে এবং যা দিয়ে আপনার জাতি সৌভাগ্যমণ্ডিত হতে পারবে।

আপনি যদি মর্যাদার শিখরে পৌঁছুতে চান এবং আপন জাতিকে সৌভাগ্যমণ্ডিত করতে চান তবে আরাম-আয়েশকে না বলুন এবং অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করুন।
এক মিনিট সময়ের মাঝে অনেক ভালো কাজ করা যেতে পারে এবং বিশাল সাওয়াব পাওয়া যেতে পারে। শুধু আপনার জীবনের এক মিনিট সময় ব্যয় করে আপনি আপনার দানের পরিধি বাড়াতে পারেন, কোনো কিছু উপলব্ধি করতে পারেন, কোনো কিছু মুখস্থ করতে পারেন, যে-কোনো নেককাজ করতে পারেন। শুধু এক মিনিটেই আপনার ভালো কাজের আমলনামায় এই আমলগুলো লেখা হয়ে যাবে যদি আপনি জানেন কীভাবে এক মিনিট সময়কে কাজে লাগাতে হয় এবং বাস্তবে কাজে লাগান।

কবি বলেন: “প্রতিটি মিনিটে বৃহত্তর কল্যাণে প্রবৃত্ত হও।
যদি তুমি এক মিনিটকে ভুলে যাও তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ভুলে যাবে; বরঞ্চ বাস্তবতাকে ভুলে যাবে।”

আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় এক মিনিটে আপনি যে যে আমলগুলো করতে পারেন নিম্নে এর কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো:

(১) এক মিনিটে আপনি সূরা ফাতিহা মনে মনে ৩ বার পড়তে পারেন। কেউ কেউ হিসাব কষে দেখিয়েছেন একবার সূরা ফাতিহা পড়লে ৬০০ টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ করেন তবে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় ১৮০০ এর বেশি নেকি হাসিল করবেন। এত নেকি আপনি এক মিনিটেই পাচ্ছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলার বলেন, আর আমি তো আপনাকে দিয়েছি সাতটি আয়াত যা বারবার পাঠ করা হয় এবং দিয়েছি মহা কুরআন। সূরাহ হিজর ১৫/৮৭
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, উম্মুল কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) হচ্ছে বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন। সহীহ বুখারি, হা.৪৭০৪

(২) এক মিনিটে আপনি সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) মনে মনে ২০ বার পড়তে পারেন। এই সূরা একবার পাঠ করলে কুরআন মাজীদের এক-তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি এ সূরাটি ২০ বার পাঠ করেন তবে তা ৭ বার কুরআন পড়ার সমতুল্য সাওয়াব। অতএব আপনি যদি এ সূরাটি প্রতিদিন এক মিনিটে ২০ বার পাঠ করেন তবে মাসে আপনার ৬০০ বার পাঠ করা হয় এবং বছরে ৭২০০ বার পাঠ করা হয়। যার সাওয়াব ২৪০০ বার সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার সমতুল্য।

একবার আবু হুরায়রাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে আসছিলেন। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” পাঠ করতে শুনলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: ওয়াজিব (অবধারিত) হয়ে গেছে। আমি প্রশ্ন করলাম, কী ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি বললেন: জান্নাত। সুনানুত তিরমিযি, হা.২৮৯৭ ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ ক্বুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ ক্বুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ‘কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ’ ক্বুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। সহীহ বুখারি, হা.৫০১৫; সহীহ মুসলিম, হা.৮১১

(৩) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের এক পৃষ্ঠা পাঠ করতে পারেন।
মহান আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর আল্লাহ তাদেরকে যে রিযক দিয়েছেন তাত্থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন এক ব্যবসায়ের আশা করে যাতে কক্ষনো লোকসান হবে না। সূরা ফাতির ৩৫/২৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশগুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। সুনানুত তিরমিযি, হা.২৯১০; ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উক্ত সানাদে গারীব বলেছেন।

(৪) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের ছোটো একটি আয়াত মুখস্থ করতে পারেন।

(৫) এক মিনিটে আপনি নিম্নোক্ত দুআটি ২০ বার পড়তে পারেন।
قَدِيرٌ شَيْءٍ كُلِّ عَلَى وَهُوَ الْحَمْدُ وَلَهُ الْمُلْكُ لَهُ شَرِيكَ لَا وَحْدَهُ اللَّهُ إِلا إِلَهَ لَا
লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর
এর সাওয়াব ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের ৮ জন দাসকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান সাওয়াব।

(৬) এক মিনিটে আপনি
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِه
১০০ বার পড়তে পারেন। যে ব্যক্তি একদিনে এই দুআটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় না কেন। বুখারী, হা.৩২৯৩; তিরমিযী হা.৩৪৬৬

(৭) এক মিনিটে আপনি
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيم
৫০ বার পড়তে পারেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, দু’টি কালিমাহ জিহ্বার উপর (উচ্চারণে) খুবই হালকা, মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী, রহমান (পরম দয়ালু আল্লাহ) এর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। তা হলো:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيم
“সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী সুবহা-নাল্লা-হিল আযীম”
অর্থাৎ আমি আল্লাহ তা’আলার সমস্ত প্রশংসা, পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, আমি মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’ সহীহ মুসলিম, হা.২৬৯৪

(৮) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আমি বলি-
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَر
“সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার”।
আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান”
পড়া আমার নিকট বেশি প্রিয়- সে সব বিষয়ের চেয়ে, যার উপর সূর্য উদিত হয়। সহীহ মুসলিম, হা.২৬৯৫
আপনি এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লাতে এগুলোর ওজন অনেক বেশি হবে।

(৯) এক মিনিটে আপনি
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّ
(কোনো উপায়-সামর্থ্য নেই, কোনো শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া) ৪০ বারের বেশি পড়তে পারেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ قَيْسِ أَلاَ أُعَلِّمُكَ كَنْزًا مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কাইস (আবূ মূসা)। আমি কি তোমাকে জান্নাতের অন্যতম রত্ন ভাণ্ডার সম্পর্কে জানাবো না? তা হলো “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। সুনানুত তিরমিযি, হা.৩৪৬১

(১০) এক মিনিটে আপনি
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই’ কালিমাটি প্রায় ৫০ বার পড়তে পারেন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহীদের বাণী। এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবা (উত্তম বাণী) ও সুদৃঢ় বাক্য। যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে এই বাক্য তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হলো لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই।
এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দুআ হলো الْحَمْدُ لِلَّهِ‘‘আলহামদু লিল্লাহ’’ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সুনানুত তিরমিযি, হা.৩৩৮৩; মুস্তাদরাক হাকিম, হা.১৯৩৪; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.৮৪৬ ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন। ইমাম হাকিম সানাদ সহীহ বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: কোনো বান্দা ইখলাসের সাথে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বললে তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমাহ আরশে আজীম পর্যন্ত পৌছে যায়, যতক্ষণ সে কাবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে।” সুনানুত তিরমিযি, হা.৩৫৯০; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ লিন নাসায়ি, হা.৮৩৩। ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।

(১১) এক মিনিটে আপনি
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।
এ দুআটি ১৫ বারের বেশি পড়তে পারেন। সাধারণ তাসবীহ ও যিকিরের চেয়ে এ বাক্যগুলো পাঠ করার সাওয়াব অনেকগুণ বেশি।
জুওয়াইরিয়াহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ভোরবেলা ফজরের সালাত আদায় করে তাঁর নিকট থেকে বের হলেন। ঐ সময় তিনি সালাতের স্থানে বসেছিলেন। এরপর তিনি দুহা বা চাশতের পরে ফিরে আসলেন। এমতাবস্থায়ও তিনি উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিলাম তুমি সে অবস্থায়ই আছো। তিনি বললেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার নিকট হতে রওনার পর চারটি কালিমাহ তিনবার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছো তার সাথে ওজন করা হলে এ কালিমাহ চারটির ওজনই ভারী হবে।
কালিমাগুলো এই-
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
“সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালক্বিহি ওয়া রিদ্বা- নাফসিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি”
আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।” সহীহ মুসলিম, হা.২৭২৬

(১২) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কাছে ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন তথা- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ পড়তে পারেন।
নাবী (ﷺ) বলেছেন:
طُوبَى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا ‏
যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ।
সুনানু ইবনু মাজাহ, হা.৩৮১৮; যাওয়ায়িদ ইবনু মাজাহ, হা.১৩৪৭; দুআ লিত তাবারানী, হা.১৭৮৯; আযকার লিন নববী, হা.১২২৯। ইমাম বূসীরী সানাদ সহীহ, রাবীদের ছিক্বাহ বলেছেন। ইমাম নববী সানাদ জাইয়িদ বলেছেন।
এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদাপদ রোধ, সকল কাজ সহজীকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম।

(১৩) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যা দ্বারা আল্লাহ হয়তো এমন কোনো কল্যাণের পথ খুলে দিবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।
নাবী ﷺ বলেছেন: যে লোক আল্লাহ্ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। সহীহ বুখারি, হা.৬১৩৬

(১৪) এক মিনিটে আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ৫০ বার দরূদ পাঠ করতে পারেন। শুধু পড়বেন “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”। এর প্রতিদানে আল্লাহ আপনার উপর ৫০০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন। কারণ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ ১০ বার এর প্রতিদান দেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি শুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য দশটি মর্যাদা উন্নীত করা হবে।
সুনানুন নাসায়ি, হা.১২৯৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.৯০৪; মুস্তাদরাক হাকিম, হা.২০১৮ ইমাম হাকিম সানাদ সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবি সহীহ বলেছেন।
তিনি ﷺ আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য দশটি নেকি লিখে দেন। ফাদলুস সালাত লি ইসমায়িল আল কাদী, হা.১১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.৯০৫। শাইখ আলবানী হাদীসটির সানাদ সহীহ বলেছেন।

(১৫) এক মিনিটে আপনার মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তাঁর ভালোবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর প্রতি আশা এবং তাঁর প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়তো আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।

(১৬) এক মিনিটে আপনি সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন।
আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযীয আল-উমরি (রাহি.) বলেন, কবরের চেয়ে উত্তম নাসীহাতকারী, একাকিত্বের চেয়ে অধিক নিরাপত্তা, বইয়ের চেয়ে উত্তম সঙ্গ আর নেই। আল-উযলাতু ওয়াল ইনফিরাদু লি ইবনু আবিদ্দুনইয়া, হা. ৮৪

(১৭) এক মিনিটের মোবাইল/টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি ‘সিলাতুর রাহেম’ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করতে পারেন।
আবূ হুরাইরাহ (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। সহীহ বুখারি, হা.৫৯৮৫

(১৮) এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দুআগুলো হতে পছন্দমতো যে-কোনো দুআ করতে পারেন। যেমন:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রাব্বানা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্নার’’
হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব হতে বাঁচাও। সূরা আল-বাক্বারাহ ২/২০১

নাবী (ﷺ) নিজ দু‘আতে এই শব্দগুলি বলতেন,
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন শাররি মা আমিলতু ওয়া মিন শাররি মা লাম আ’মাল।’

হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আমার কৃত (পাপের) অনিষ্ট হতে এবং অকৃত (পুণ্যের) মন্দ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (অথবা অপরের কৃত পাপের ব্যাপক শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) সহীহ মুসলিম, হা.২৭১৬
যখন কোনো ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করত তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত আদায়ের শিক্ষা দিতেন। তারপর তিনি তাকে এ কালিমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেন,

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
“আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহ্‌দিনী ওয়া’আ-ফিনী ওয়ারযুকনী।”

“হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার জীবিকা উপকরণ দান করুন।” সহীহ মুসলিম, হা.২৬৯৭(২)

নাবী ﷺ এ বলে দুআ করতেন:
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ الْهُدٰى وَالتُّقٰى وَالْعَفَافَ وَالْغِنٰى
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা- ওয়াত্তুকা- ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা

হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত [সঠিক পথ], তাকওয়া [পরহেযগারিতা], হারাম থেকে বেঁচে থাকা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রত্যাশা করি। সহীহ মুসলিম, হা.২৭২১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.৯০০; নববী, আল আযকার, হা.৫৫৮, ১১৬৬।

জাবির (রা.) রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান চাই এবং অপকারী জ্ঞান থেকে আশ্রয় চাই। সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.৮২

রাসূলুল্লাহ ﷺ আলি (রা.)-কে শিখিয়ে দিয়েছেন:
اَللّٰهُمَّ اهْدِنِىْ وَسَدِّدْنِىْ وَاذْكُرْ بِالْهُدٰى
‘‘আল্লা-হুম্মাহদিনী ওয়া সাদ্দিদনী ওয়াযকুর বিলহুদা”
‘হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়াতের পথ দেখাও এবং আমাকে সরল-সোজা রাখো।’ সহীহ মুসলিম, হা.২৭২৫

(১৯) এক মিনিটে আপনি কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন।
এক লোক নাবী ﷺ-এর নিকট এসে বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكُم ‘আসসালামু আলাইকুম’।
তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। নাবী ﷺ বললেন: দশ নেকি। এরপর আরেকজন এসে বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

নাবী ﷺ অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেন: বিশ নেকী। অতঃপর আরেকজন এসে বললো,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

নাবী ﷺ তারও জবাব দিলেন: লোকটি বসলো। তিনি বললেন: ত্রিশ নেকি। সুনানু আবু দাউদ, হা.৫১৯৫; সুনানুত তিরমিযি, হা.২৬৮৯ ই. হি.৪৯৩ নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.৩৩৭; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ লি ইবনুস সুন্নী, হা.২৩১; আল আযকার, হা.৭০৫; আল কালিমুত তাইয়িব, পৃ.৮৪। ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের আলাদা হবার পূর্বেই তাদের (ছোটো) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। সুনানুত তিরমিযি, হা.২৭২৭। ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

(২০) এক মিনিটে আপনি কোনো ব্যক্তিকে একটি মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।

(২১) এক মিনিটে আপনি একটি ভালো কাজের আদেশ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُسٰرِعُونَ فِى الْخَيْرٰتِ وَأُولٰٓئِكَ مِنَ الصّٰلِحِينَ
তারা আল্লাহর ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করে এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর থাকে। বস্তুতঃ তারা পুণ্যবানদের মধ্যে গণ্য। সূরা আলে ইমরান, ৩:১১৪

(২২) এক মিনিটে আপনি একজন ভাইকে নসিহত করতে পারেন।

(২৩) এক মিনিটে আপনি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।

(২৪) এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকারক কোনো বস্তু অপসারণ করতে পারেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটাকে রাস্তা হতে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবূল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সহীহ বুখারি, হা.২৪৭২
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সাদাকাহ রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সাদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সাদাকাহ, ভালো কথাও সাদাকাহ, সালাত আদায়ের উদ্দেশে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সাদাকাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সাদাকাহ। সহীহ বুখারি, হা.২৯৮৯; সহীহ মুসলিম, হা.১০০৯

(২৫) এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করতে পারে।
ইমাম শাফিয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যখন ঘুমন্ত লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন আমি আমার চোখের অশ্রু ফেলি এবং শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি চরণ বারবার আওড়াতে থাকি।
কোনো জ্ঞান অর্জন ছাড়া রাতগুলো কেটে যাবে এবং আমার জীবন থেকে হিসাব করা হবে- এটি কি সময়ের অপব্যয় নয়? ”

পরিশেষে জানুন আপনার ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও আল্লাহর নজরদারির অনুভূতির ভিত্তিতে আপনার প্রতিদান বাড়বে, আপনার নেকির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
জেনে রাখুন, এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি বা কায়িক শ্রম নেই। বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন যখন আপনি পায়ে হেঁটে চলছেন অথবা গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন অথবা শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন।
একইভাবে এ আমলগুলো সুখী হওয়ার উপকরণ, আত্মপ্রশান্তির মাধ্যম, চিন্তা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফীক দিন। আমাদের নাবীর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

__________________________
বিলিভার্স ভিশনের পক্ষ থেকে বইটি দাওয়াহর উদ্দেশ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিশুদ্ধ বর্ণনার এই বইটি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে আমাদের একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
চাইলে আপনিও আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ