বইয়ের নামঃ লা তাহযান (PDF Available)
লেখকঃ ড. আয়িদ আল কারণী
প্রকাশকঃ পিস পাবলিকেশন
মোট পৃষ্ঠাঃ ৫৭৪ পৃষ্ঠা
রিভিউ লিখেছেনঃ মোহাম্মদ উল্লাহ ইমরান
আলহামদুলিল্লাহ আজ শুরু করলাম ড. আইদ আল কারণির বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ 'লা তাহযান' 'হতাশ হবেন না' Don't Be Sad নামক গ্রন্থ।
এই বইতে সর্বমোট শিরোনাম হচ্ছে ৩৪৭ টি।
মোটিভেশনাল বই বলতে আমি বিশ্ববিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি, ডা. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান কে বুঝে থাকতাম।অথচ বর্তমান বিশ্বে যেসব মোটিভেশনাল লেখক আছেন তাদের মাঝে ড. আয়িদ আল কারণী অন্যতম।
এই বইটির ভুমিকায় লেখক এই বই সম্পর্কে ১০ টি কথা লিখেছেন।এর মধ্যে অন্যতম হলো : এই বইটি শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য নয়।এই বই সব ধর্ম, বর্ণ ও জাতির লোকদের জন্য।
এই বই ধনী গরীব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত,শাসক,প্রশাসক, বিচারক সহ সব শ্রেণীর মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে।
আমার মনে হয় আমাদের সবার ঘরে ড. আয়িদ আল কারণীর এই বইয়ের এক কপি সংগ্রহে রাখা এবং পরিবারের সবাইকে পড়া বাধ্যতামূলক করা উচিত।
'লা তাহযান' এই কথাটা ঐশিগ্রন্থ আল-কুরানে এসেছে।এর অর্থ হলোঃ ভয় করো না,চিন্তা করো না।এই কথাটা স্বয়ং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) তার বিশ্বস্ত বন্ধু আবুবকর (রা) কে নিয়ে যখন তার জন্মস্থান মক্কা নগরী ছেড়ে মদীনার দিকে যাচ্ছিলেন।তখন তারা একটা গুহায় আশ্রয় নেন।শত্রুরা তাদের ফলো করে প্রায় ধরে ফেলছিলো।এমন অবস্থায় আবুবকর (রা) তার প্রিয়তম বন্ধু ও নবী মুহাম্মদ (সা)কে ওরা তো আমাদের এক্ষুনি ধরে ফেলবে।তখন মুহাম্মদ (সা) প্রতিউত্তরে বলেন,"লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মা আনা।" অর্থাৎ,"ভয় করো না।আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।" জীবনের কত কঠিন মুহূর্তে তিনি তার সাথিকে যে কথা দিয়ে অভয় দিয়েছিলেন,সেই কথা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের এত পছন্দ হয়েছে যে,স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরানুল কারিমে সেই কথা উল্লেখ করেন।আমরাও জীবনের সকল পর্যায়ে মহান রব্বুল আলামীন আল্লাহর উপর বিশ্বাস,আস্থা আর নির্ভর করবো।
বর্তমান বস্তুবাদী এই আধুনিক যুগে মানুষ শান্তির জন্য হাহাকার করছে।সর্বত্র হতাশা আর উদ্বেগ উৎকন্ঠা।ভবিষ্যৎ জীবনের একটু সুখ শান্তির জন্য মানুষ নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।সেক্ষেত্রে মানুষ বৈধ, অবৈধ জিনিষের তোয়াক্কা করছে না।কার চেয়ে কে বেশি ধনী হবে,কার চাইতে কে বেশি টাকার মালিক হবে সেজন্য মানুষ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।যদি এসব না পায় সেজন্য মানুষের জীবনে হতাশা নেমে আসে।
আমাদের জীবনে হতাশা আসে মূলত কাংখিত জিনিস না পেলে।যেমনঃ কাংখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা চান্স না পাওয়া,বিসিএসে এলাও না হওয়া,কাংখিত চাকুরী না পাওয়া ইত্যাদি কারনে।অথবা যাদের বিয়ে হতে দেরি হচ্ছে,বিয়ে হলেও সন্তান না হওয়া,বিদেশে ডকুমেন্টস না পাওয়া অথবা ভালো ইনকাম করতে না পারা সেসব কারনে।এই বই তাদের সবাইকে হতাশা থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
আমাদের জীবনে অনেক সময় বেহুদা কাটিয়ে ফেলি।সময়ের সদ্ব্যবহার করিনা এবং পড়াশোনা করিনা। তাদের জন্য এই বই টনিকের মত কাজ করবে বলে আমার একান্ত বিশ্বাস।
আবার কেউ কেউ আছেন রাষ্ট্র পরিচালনা করার কাজে, বিচারিক অথবা প্রশাসনিক কাজে।তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে চান তাদেরকে এই বই যথেষ্ট উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগাবে নিঃসন্দেহে।
এই বইটি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আলোর বন্যা নিয়ে আসুক এবং লেখক, প্রকাশকদের আল্লাহ যেন উত্তম বিনিময় দান করেন সেই কামনা করছি।
প্রবাসের নানা ব্যস্ততার কারনে বই পড়ার ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও বই পড়া হয় না। আবার প্রবাসে বই ইচ্ছেমতো কিনতে পাওয়া যায় না।এই বইটি আমার প্রিয় ভাই কুমিল্লার সোলাইমান ভাই দেশ থেকে নিয়ে এসেছেন।আল্লাহ রব্বুল আলামীন যেন তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন।
আমাদের সবার জীবন হতাশা মুক্ত হয়ে হাসি খুশি আর আনন্দময় হোক মহান রব্বুল আলামীনের কাছে এই প্রার্থনা করছি।
আল্লাহ মানুষের ব্যাপারে আশাবাদী। আল্লাহ বনি আদমকে দুনিয়াতে তাঁর খলিফা বানানোর সময় যখন 'মানুষ দুনিয়াতে রক্তারক্তি করবে' ভেবে ফেরেস্তারা সংশয় প্রকাশ করেছিলো- তখনও আল্লাহ বলেছেন- "আমি যা জানি, তা তোমরা জানো না"...
মানুষ বারবার আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করেছে, আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত ও পরাজিত করেছে, এমনকি আল্লাহর নবীদের হত্যা পর্যন্ত করেছে। তবু আল্লাহ বনি আদমের প্রতি হতাশ হন নি। তিনি কখনো শাস্তি দিয়েছেন, কখনো ক্ষমা করেছেন, কিন্তু কখনোই মানুষকে ছেড়ে যান নি। আল্লাহ বারবার তাঁর নবী-রাসূলদের প্রেরণের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেছেন, সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ নিরাশা পছন্দ করেন না, কারণ তিনি নিজেই নিরাশ হন না।
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন- প্রত্যেক বনি আদম 'খাত্তাহ' অর্থাৎ অনবরত ভুল করে। কিন্তু যারা অনবরত 'তওবা' করে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।
জানেন, শয়তান আর আদমের মধ্যে পার্থক্য কী? তারা দুইজনই তো আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলো। কিন্তু শয়তান অহঙ্কার বসত নিজের ভুলে অটল ছিলো, আর হযরত আদম (আ) অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করেছিলেন। হ্যাঁ, এটাই মানুষ আর শয়তানের মধ্যে পার্থক্য।
আল্লাহর দয়া সীমাহীন। তিনি যেকোনো সময় মানুষের অন্তরকে ঈমানদীপ্ত করতে পারেন, মানুষের ভুলগুলো শুধরে দিতে পারেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তওবার দরজা খোলা। আল্লাহ মানুষের ব্যাপারে হতাশ হন নি। মানুষের ব্যাপারে আপনার কিম্বা আমারও হতাশ হওয়া উচিৎ না। হতাশ হৃদয়ে কখনো দাওয়াতের কাজ করা যায় না...।
-- ২৪/১১/২০২০
যিনি দুঃখ বেদনার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছেন বা যিনি সংকাটাপন্ন, যার ফলে দুঃখিত ও বিষণ্ণ এবং এমন অবস্থানের কারণে বিনিদ্র রজনী যাপন করছেন এই বইটি তাঁর জন্য।
রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য কুরআন, সুন্নাহ, মর্মভেদী বাস্তব ঘটনা, কাব্য, শিক্ষাপ্রদ-কল্পকাহিনী ও সত্যগল্প ইত্যাদি থেকে ওষুধের মাত্রা সংগ্রহ করে এই বইয়ের পাতাগুলো অলংকৃত করেছি।
এই পুস্তক এমনসব ভুলসমূহ নির্ণয় করে যেগুলো সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ না করাতে আমরা ভুলে যেতে বাধ্য হয়ে চিন্তা ভাবনা ও কাজ কর্মে করে ফেলি। এটা আপনাকে বলে আপনার প্রতিভাবে আপনার বিশ্বাস করা উচিত। আপনার প্রতিভাবে উন্নত করা আপনার কর্তব্য; আপনার উচিত একটি ইতিবাচক মনোভাবের দিকে মনোনিবেশ করে জীবনের সমস্যা ও উন্থান পতনের কথা ভুলে থাকা।
কেননা, ইতিবাচক মনোভাব আশাপ্রদ ও সৌভাগ্যের দিকে নিয়ে যায়। লা তাহযান বা হতাশ হবেন না, ড. আইদ আল কারণী রচিত একটি কালজয়ী গ্রন্থ যা অসংখ্য মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, আশায় বুক বাঁধতে শিখিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....