বইয়ের নামঃ- নারী সমাচার
লেখকঃ-ডাঃ মোঃ মাহবুব হাসান রনি
প্রকাশকঃ- সাইফুল ইসলাম
আশরাফ বুক ডিপো , ৪৫ বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০
"যদি তোমরা নারীদেরকে অপছন্দ কর তাহলে তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহ তায়ালা অনেক কল্যাণ রেখেছেন।"(সূরা নিসা-আয়াত-১৯)
শ্রদ্ধেয় আরিফ আজাদ তার "আরজ আলী সমীপে" বইটিতে গর্দভ আরজ আলীর বিষদাঁত ভেঙ্গেছেন। ঠিক তেমনি মাহবুব হাসান রনিও ডঃ হুমায়ূন আজাদের মিথ্যা গাঁজাখুরি কথামালার সমষ্টি "নারী" নামক অশালীন কুরুচিপূর্ণ বইটির অযৌক্তিক কথার যুক্তিখন্ডন করেছেন কোরআন হাদীস এবং আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে।
আজকেই বইটি কিনেছি।বিকেল থেকে পড়া শুরু করে এক বসায় এশার ওয়াক্তে শেষ করে ফেললাম।
ফেসবুকের কারনে বই পড়ার নেশা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।দীর্ঘদিন পর একটি অবিশ্বাস্য সুন্দর বই পেয়ে সেই পুরোনো অভ্যাস আমার ভেতর জেগে উঠল।
নিজে ইসলামপন্থী মুসলিমা।তবুও নারীবাদীদের দেখে আমার মনেও অনেক প্রশ্ন জাগতো।
আলহামদুলিল্লাহ এই বইটি আমার সেই সব সংশয়ের জবাব দিতে পেরেছে।
জান্নাতে পুরুষ ৭২টি হুর পাবে।কিন্তু নারী কি পাবে ?
এই প্রশ্নের উত্তর আরিফুল ইসলাম তার "আরগুমেন্ট অব আরজু" বইটিতে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু আমার মনঃপূত হয়নি সে যুক্তি।কেমন যেন গোঁজামিল মনে হয়েছে।
কিন্তু এই বইটিতে এ প্রশ্নের চমৎকার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
আমার মতে সব মেয়েদের এই বইটি পড়া উচিৎ।তাহলে একজন মুসলিমা হিসেবে কতটুকু মর্যাদায় ইসলাম আমাদের ভূষিত করেছে সেটা সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যাবে।
অনেক নাস্তিক শয়তানের দল আমাদের মিথ্যা বুলি দিয়ে ধোঁকায় ফেলে দেয়।তাদের হাত থেকে ঈমান রক্ষা করা যাবে যদি "নারী সমাচার" পড়া থাকে।
বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে।সবাই পড়ুন।আশা করি সবার ভালো লাগবে।
বইটির মূল্য ১৯০৳।
রিভিউ লিখেছেন Elizabeth Anee
পাজড়ের বাকা হাড় থেকে নারী সৃষ্টি -নারীর জন্য সম্মান জনক না অসম্মানজনক?
(নারী সমাচার বই থেকে সারমর্ম)
মানবজাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ) কে হযরত আদম (আ) এর পাজড়ের বাকা হাড় থেকে সৃষ্টি করার কারনে অনেক ইসলাম বিদ্বেষী যেমন হুমায়ুন আজাদ ইসলাম নারীকে ছোট করে বলে অভিযোগ করে থাকেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই আলোচনা।
১। হযরত হাওয়া (আ) যে আদম (আ) এর পাজড়ের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা অতীব সম্মানি কেননা আল্লাহ এমন স্বত্বা থেকে হযরত হাওয়া (আ) কে সৃষ্টি করেছেন যিনি কিনা সেই সময় ফেরেশতাদের থেকে সম্মানিত মর্যাদায় ভূষিত ছিলেন এবং তাদের সম্মানসূচক সেজদা প্রাপ্ত হয়েছেন।
২। আদম (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে আত্মাজগতে আর হাওয়া (আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে জান্নাতে।
৩। বাম পাজড়ের হাড় সাহিত্য ও বীরত্বের দিক দিয়ে শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের নিদর্শন হিসেবে অনাদিকাল থেকে স্বীকৃত। কাজেই সেই হাড় থেকে নারীকে সৃষ্টি করার ঘটনা নারীকে অসম্মানের নয় বরং সম্মানের আসনে সমাসীন করে।
৪। আদম (আ) এর হাড় থেকে সৃষ্টি হওয়ার কারনে হাওয়া (আ) আদম (আ) এর কাছে ঋণী বলার কোন যৌক্তিকতা নেই কেননা কউ তখনই কারো কাছে ঋণী হয় যখন ঋণদাতা স্বেচ্চায় ঋণগ্রহীতাকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে দান করে থাকে। কিন্তু ঋণদাতার কাছে যে সম্পদ রয়েছে তা যদি অন্য কোন মালিকের অধিকারভূক্ত হয় তাহলে সেই মালিক যদি তার অধিকারভূক্ত সম্পদ যেকোন কাজে লাগাতে চায় তাহলে সেই কাজ সম্পাদনের কৃতিত্ব আসলে যার কাছে সেই মালিকের সম্পদ ছিল তার নয় বরং প্রকৃত মালিকের তাই আদম যেমন নিজের সৃষ্টির জন্য আলাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী তেমনিভাবে হাওয়াও নিজের সৃষ্টির জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছে ঋণী।
৫। হুমায়ুন আজাদ পাজড়ের হারকে অপ্রয়োজনীয় বলে অপ্রয়োজনীয় হাড় থেকে হাওয়া (আ) কে সৃষ্টি অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন অথচ পাজড়ের হার কোন দিক দিয়ে অপ্রয়োজনীয় তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেন নি। পাজড়ের হার মানুষের হৃৎপিন্ড, ফুসফুসের সংরক্ষণ ও কার্যকরি রাখার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় উপাদান। যদি পাজড়ের হাড় না থাকত তাহলে মানব শরীরের ভাইটাল উপাদানগুলো সংরক্ষিত থাকতো না।
৬। তারগীব ও মুসতাদরাক হাকীম কিতাবে হযরত আব্দল্লাহ ইবন আমর ইবনে আস (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কালামুল্লাহ শরীফ (কুরআন শরীফ পরিয়াছে সে নিজের দুই পাজড়ের মাঝে নবুয়তের এলম সমূহকে ধারণ করিয়াছে ।”এই হাদীসে পবিত্র কোরআন শরীফের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে হাফেজের পাজড়ের হাড়কে। আবার নারী সৃষ্টিকেও সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে পাজড়ের হাড়ের সাথে। তারপরেও কি পাজড়ের হাড় অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর বলে বিবেচনা করবেন?
৭। হুমায়ুন আজাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাকা হাড় থেকে সৃষ্টি হওয়ার কারণে নারীর সৃষ্টি ত্রুটিপূর্ন।অথব এ ব্যাপারে ইসলামের অভিমত সুষ্পষ্ট যে, মানুষের সৃষ্টি ত্রুটিপূর্ন নয়। পবিত্র কোরআনের সূরা ত্বীন এর চার নম্বর আয়াতে আছে, “আমি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে”। তাফসীরকারকগন এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, নারী এবং পুরুষ জাতির সমন্বয়ে মানবজাতি গঠিত এবং পুরুষ ও নারী সৃষ্টিগতভাবে ত্রুটিমুক্ত। সূরা আস-সাজদার ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃজন করিয়াছি উত্তমরুপে”। নারী শরীর পুরুষের শরীরের বাকা অস্থির পূর্নবিন্যাস হওয়ার কারণে তাকে অপমানিত ও অসম্মানিত বলে চালানোর যে মিথ্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে তা যদি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে এর অসারতা পরিস্কারভাবে আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। এখানে নারীকে বাকা হাড় থেকে সৃষ্ট বলার মানে এই নয় যে হাড়ের বাকা হওয়া ত্রুটিপুর্ণ। বরং পাজড়ের হাড়ের বাকা হওয়াই এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয়। আবার তর্কের খাতিরে যদি ত্রুটিপূর্ণ ধরেও নেই তাহলেও নারীকে যে অপমানিত করার সুযোগ নেই তা বই এ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
৮। ড. আজাদের পাজড়ের বাকা হাড়গুলোকে অতিরিক্ত হাড় বলার উক্তি একটি প্রকাশ্য মিথ্যাচার ও মানব শরীরে সম্পর্কে ভয়ানক অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। হৃদপিন্ড এবং ফুসফুসের সংরক্ষণকারী শরীরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থানকারী অস্থিকে শরীরের অতিরিক্ত অস্থি বলে অভিহিত করা বিজ্ঞজনোচিত কাজ নয়।
৯। পাজড়ের হাড় থেকে মানুষ সৃষ্টি কী সম্ভব? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে ?যে আল্লাহ মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন সে আল্লাহ পাজড়ের হাড় থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। এটা তার জন্য কঠিন কিছুই না। ক্লোনিং সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা পোস্টে সম্ভব নয়।
১০। হাদীসের প্রকৃত মর্মঃ “নারীদের সাথে সদ্বব্যবহার কর, কেননা নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাজড়ের হাড় থেকে, এবং সবচেয়ে বাকা হাড়ের উপরের অংশ থেকে, তাই তুমি যদি একে সোজা করতে যাও তাহলে এটি ভেঙ্গে যাবে আর যদি তুমি এটি যেমন আছে তেমনি থাকতে দাও তাহলে বাকাই রয়ে যাবে। তাই নারীর সাথে সদ্বব্যবহার কর” (সহীহ বোখারী হাদীস-৫৪৮, অধ্যায় ৫৫)। উপরোক্ত হাদীসদুটি হল এমন হাদীস যেখানে নারী ও পুরুষের স্বভাব ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যখন বলা হয় যে পাজড়ের হাড় বাকা, এর দ্বারা এটা বুঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, গঠনগত ত্রুটি বরং এটি দেখতে কেমন দেখা যায় সে ব্যাপারে আলাপ করেছেন। কোরআন হাদীসের কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, নারীর সৃষ্টি কম যথাযথ পুরুষের চেয়ে বরং হাদীসের দ্বারা উদ্দেশ্য হল নারী ও পুরুষের গুণাবলী ও স্বভাব পুরুষের চেয়ে ভিন্ন।
পাজড়ের হাড়ের বক্র হওয়া যেমন গুরুত্ব বহন করে ঠিক তেমনি নারীদের আচরণের দৃঢ়তাও নারীর কাজকর্ম বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করে। তারা তাদের পরিবার ও সন্তান প্রভৃতিকে রক্ষা করে। এখানে নারীর আচরনকে সম্মান দেখিয়ে বলা হচ্ছে যে, তাদের আচরণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এবং তাদের আচরণের জবাবে বিরক্ত না হতে বরং হাদীসের শুরুতে এবং শেষে উল্লেখ করা হয়েছে নারীর আচরনের জবাবে পুুরুষ যেন নারীর প্রতি সদ্বব্যাবহার করতে থাকে এবং তাদের সদুপদেশ প্রদান করতে। হাদীসের শুরুতে এবং শেষে উল্লেখ করা হয়েছে নারীর সাথে সদ্বব্যাবহার কর ও নারীদের সদুপদেশ দাও। অর্থাৎ এই হাদীসের মূল উদ্দেশ্য হল নারীর আচরণকে হীন করা নয় বরং পুরুষদের আচরণ কেমন হবে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেয়া। হাদীসে বলা হচ্ছে নারীর আচরণকে পরিবর্তনের জন্য অযথা জোরজবরদস্থি না করতে । তাদের আচরণ তাদের সৃষ্টিগত ত্রুটি নয় বরং স্বভাবজাত। আর এই আচরনের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করে স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ড. হুমায়ুন আজাদ উক্ত হাদীসের মূল অর্থ ও শিক্ষণীয় বিষয় কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে ইসলামে নারীর সৃষ্টি ও নারীর অবস্থান অসম্মান জনক বলে যে মন্তব্য করেছেন তা কার্যত নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
নারী সমাচার বই এর পাজড়ের বাকা হাড় থেকে নারী সৃষ্টি কি অসম্মানজনক অধ্যায়ের অতি সংক্ষিপ্ত সারমর্ম। উপরোক্ত প্রত্যেকটি পয়েন্ট এর বিস্তারিত আলোচনা বই এর মধ্যে রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....