বইঃ তিনি আবার আসবেন লেখকঃ রাজিব হাসান

বইঃ তিনি আবার আসবেন 

লেখকঃ রাজিব হাসান

বইঃ তিনি আবার আসবেন PDF download  লেখকঃ রাজিব হাসান এর সকল বই পিডিএফ ডাউনলোড PDF boi - Tini Abar Ashben book review and pdf ebook download notun boi


||ঈসা আলাইহিস সালামকে কি শূলে চড়ানো হয়েছিল?||


না। এটা ইহুদীদের বিশ্বাস যে তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের অন্ধ সহচর খ্রিস্টানরাও তাদের গলায় সুর মিলিয়ে কোরাস গায়। তারা উভয়েই বিশ্বাস করে তারা তাঁকে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করেছে। 


কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা তাঁকে শুলিতেও চড়াতে পারেনি, হত্যাও করতে পারেনি। তাদেরকে আসলে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। ঘটনা এই যে, তদ্বকালীন শাসক ছিল কাফির। ইমাম ইবন কাসীর রাহিমাহুল্লাহ যে বর্ণনা নিয়ে এসেছেন তাতে বলা হয়েছে, সে দামেস্কের বাদশাহ ছিলো। তারকাপূজা করতো।(২) 


ইহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বানোয়াট কথাবার্তা বলে উক্ত শাসকের কানভারী করে। সে বিনা বাপের সন্তান, ফাসাদ সৃষ্টিকারী, জনগণকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে, জনগণের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন প্রজ্জ্বলিত করছে –এসব বলে শাসকের কানভারী করে। শাসক তাদের দাবি অনুযায়ী তাকে শূলিতে চড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার নির্দেশে একটি ইহুদীদল ঈসা আলাইহিস সালাম-এর ঘর ঘেরাও করলে তিনি স্বীয় ভক্ত অনুচরগণকে সম্বোধন করে বললেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে কেউ এই ঘর থেকে বের হয়ে নিহত হতে এবং আখেরাতে জান্নাতে আমার সাথি হতে প্রস্তুত আছো কি?’ জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্য উঠে দাঁড়ালে ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের জামা ও পাগড়ি তাকে পরিধান করান। অতঃপর তাঁকে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সদৃশ করে দেওয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে জীবিতাবস্থায় ঐ ঘরের ছিদ্র দিয়ে আসমানে তুলে নেন।(৩)


তখন ইহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালামকে ভেবে তাঁর অনুসারীকে বন্দী করে। রাতের অন্ধকারে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কঠিন শাস্তি দেয়। মাথায় কাঁটার টুপি পরিয়ে শূলে চড়িয়ে তাকে হত্যা করে। এভাবেই তাঁরা ধোঁকায় পড়ে। আল্লাহ তাআলা এভাবেই তাঁদের সাথে কৌশল করেন। 


এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِى شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًۢا

 আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাঁকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তাঁর সদৃশ করা হয়েছিলো। আর নিশ্চয় যারা তাঁর সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিলো; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।”(৪)


উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়াহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, 

‘এই কথাটি (হত্যার বিষয়টি) শুধু ইহুদীদের সাথেই সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং এ কারণে তাদের লাঞ্ছনাও দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে খৃস্টানদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সাদৃশ্যকে শূলিবিদ্ধ করে হত্যা করেছিলো, তারা মূলত ইহুদী ছিলো।  খ্রিস্টানদের কেউ তাদের সাথে এ কাজে উপস্থিত ছিলো না। বরং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর হাওয়ারীগণ ভয়ে অনুপস্থিত ছিলো বিধায় তাদের কেউ ক্রুশ হত্যা (স্বচক্ষে) দেখেনি। বরং যারা তা অবলোকন করে, তারা সকলেই ইহুদী ছিলো এবং তারাই মানুষকে সংবাদ দিয়েছিল যে, তারাই মাসীহকে শুলে চড়িয়েছে। তবে যারা মাসীহকে শূলে চড়ানোর বিষয়টি প্রচার করেছে তা ছিলো খৃস্টানপ্রমুখ। তারা মূলত ঐ ইহুদীদের থেকে তা সংগ্রহ করে প্রচার করত।’(৫)


ইবন কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

‘এই আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আয়াতগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করা ও শূলে চড়ানোর ব্যাপারে ইহুদীদের দাবির অসারতা প্রমাণ করা এবং উক্ত ঘটনাকে মূর্খ খৃস্টানরা মেনে নিয়েছে এটাও বুঝিয়ে দেওয়া। অতঃপর আল্লাহ তাআলা জানালেন, আসল ঘটনা এরূপ নয়, বরং আসল ঘটনা হচ্ছে, তাদেরকে ঈসা সাদৃশ্য অন্যকে দেখানো হয়েছিলো। ফলে তারা সাদৃশ্য ব্যক্তিকে হত্যা করে। অথচ তারা কেউই প্রকৃত ঘটনা জানতো না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা জানালেন, তিনি ঈসা আলাইহিস সালামকে তাঁর নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তিনি জীবিত আছেন, কিয়ামতের পূর্বে তিনি ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করবেন।“(৬)


সুতরাং এ থেকে প্রমাণ হয় যে, তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে ক্রশবিদ্ধ করতে পারেনি এবং হত্যাও করতে পারেনি। বরং তাঁর স্থলে অন্য একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে চক্রান্তের বিরুদ্ধে কৌশল করেন। 


অন্য আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায়, ইহুদীরা এক লোককে ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার জন্য পাঠায়। কিন্তু ইতোপূর্বে আল্লাহ তাআলা তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়ায় সে তাঁর নাগাল পায়নি। ইতোমধ্যে তার নিজের চেহারা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মতো হয়ে যায়। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এলে অন্যান্য ইহুদীরা তাকে ঈসা আলাইহিস সালাম ভেবে পাকড়াও করে শূলিবিদ্ধ করে হত্যা করে। উক্ত বর্ণনা দু’টির মধ্যে যে কোনটিই সত্য হতে পারে। 


কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তাফসীর সংক্রান্ত বর্ণনার সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, প্রকৃত ঘটনা ইহুদী-খৃস্টানরাও জানতো না। চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে তারা শুধুমাত্র অনুমান নির্ভর বিভিন্ন উক্তি ও দাবি করেছিলো। ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যেই চরম মতভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি হয়। তাই কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে যে, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নানান মত পোষণ করে, নিশ্চয় এ ব্যাপারে তারা সন্দেহে পতিত হয়েছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কে কোন সত্যনির্ভর ইলম বা জ্ঞান নেই। তারা শুধু অনুমান নির্ভর কথা বলে। আর তারা যে ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করেনি, এটা সুনিশ্চিত। 


কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে যে, সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর কিছু লোক বললো, আমরা তো নিজেদের লোককেই হত্যা করে ফেলেছি। কেননা, নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মতো হলেও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল অন্যরকম। তদুপরি এ ব্যক্তি যদি ঈসা আলাইহিস সালাম হয়, তবে আমাদের প্রেরিত লোকটি গেল কোথায়? আর এ ব্যক্তি আমাদের হলে ঈসা আলাইহিস সালাম কোথায় গেলেন?  অন্যদল বললো, তারা স্বচক্ষে ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে চড়তে দেখেছে।“(৭)


মোদ্দাকথা: ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের যারাই এধরণের কথা বলে তারাই বিভ্রান্তিতে লিপ্ত। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞান নেই বরং আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কৌশল করেছেন। এ মর্মে তিনি বলেন, 

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمٰكِرِينَ

‘আর তারা কুটকৌশল করেছিল আল্লাহও কৌশল করেছিলেন; আর আল্লাহ্‌ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।(৮)


"তিনি আবার আসবেন" - বই থেকে....!


___________________________________


তথ্যসূত্রঃ 

২. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৫৫; তাফসীর ইবন কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর। 

৩. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৫৫; তাফসীর ইবন কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর।

৪. সূরা নিসা, আয়াত : ১৫৭

৫. আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দ্বীনাল মাসীহ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ৪/৩৪; সম্পাদনা: আলী হাসান নাসির এবং অন্যরা, প্রকাশকঃ দারুল আসিমা, রিয়াদ, সঊদী আরব, প্রথম প্রকাশ ১৪১৪ হিঃ।

৬. তাফসীর ইবন কাসীর, ২/৪৫৪ 

৭. তাফসীরে ফাহহুল মাজীদ, সূরা নিসা, আয়াত : ১৫৭

৮. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৫৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ