বইয়ের নাম: জীবন এখানে এমন
লেখক: মারুফ ইসলাম
প্রকাশনী : নহলী (বইমেলায় স্টল নং ৪৯৮)
প্রচ্ছদ: শিশির মল্লিক
জনরা: সমকালীন গল্প
মূদ্রিত মূল্য: ২৩০ টাকা
ছাড়কৃত মূল্য: ১৭০ টাকা
বই সম্পর্কে রেটিং: ৮.৫/১০
বইসংক্ষেপ:
বইটিতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পই সমকালীন প্রেক্ষাপটে লেখা। গল্পগুলোতে প্রধান্য পেয়েছে বর্তমান সময়, বর্তমান সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের মানুষ, তাদের যাপিত জীবন, প্রেম, বিরহ, হতাশা, বেকারত্ব, দুঃখ, দারিদ্র, ক্ষুধা ও ভালোবাসা। মূলত প্রতিটি গল্পেই প্রাধান্য পেয়েছে মানুষ। মানুষগুলো সমাজের নিম্নবর্গের অবহেলিত শ্রেণি। গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোর কেউ চোর, কেউ পাগল, কেউ দেহ ব্যবসায়ী, কেউ বেকার, কেউ নারী পাচারকারী, কেউ খুনী প্রেমিক, কেউ প্রতারক প্রেমিকা, কেউ স্রেফ নিয়তির হাতে বন্দী। প্রতিটি গল্পই ভিন্ন স্বাদের এবং স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতো।
ভাষাভঙ্গি:
এই লেখকের ভাষা বর্তমান সময়ের তরুণ লেখকদের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। বর্তমানে সবাই যেখানে হুমায়ূন আহমেদের মতো ছোট ছোট বাক্যে সরল ভাষায় লেখেন, সেখানে এই লেখকের ভাষা না জটিল, না সরল টাইপের। তিনি হুমায়ূন এবং ইলিয়াসের ভাষাকে একসাথে গুলিয়ে যেন ককটেল বানিয়েছেন। তার ভাষা কখনো সরল, কখনো জটিল। কখনো ছোট বাক্য, কখনো দীর্ঘ বাক্য। তবে তার গদ্য মিষ্টি। কবিতার মতো উপমাবহুল। সংলাপ কম। বর্ণনা বেশি।
উপস্থাপন কৌশল:
মারুফ ইসলামের উপস্থাপন কৌশল তথা গল্প বলার ঢং বেশ আকর্ষণীয়। তিনি আচমকা গল্প শুরু করেন। গল্পের প্রতিটি পৃষ্ঠায় হুক লাইন থাকে। ফলে ওই হুক লাইন পাঠককে পরের পৃষ্ঠায় যেতে বাধ্য করে। তিনি চিরাচরিত বৈঠকি ঢংয়েই গল্প বলেন। যেন তিনি অনেকগুলো মানুষের মাঝখানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সবাই তার কথা শুনছে। এই লেখকের আরো একটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ার মতো। সেটি হচ্ছে, প্রতিটি গল্পের শেষেই একটা পাঞ্চ লাইন থাকে। ওই লাইন পড়ার পর পাঠককে চমকে উঠতে হয়। স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়। যেমনটা আমরা দেখি বনফুলের গল্পে।
প্লট নির্বাচন:
এখানেও এই লেখক ব্যতিক্রম। সবাই যেখানে কিশোর কিশোরীর প্রেম নিয়ে লিখছেন, স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুণ তরুণীর প্রেম নিয়ে লিখছেন, যুবক যুবতীর আবেগে ভেসে যাওয়া লুতুপুতু প্রেম নিয়ে লিখছেন কিংবা ইতিহাসের কোনো চরিত্র বা ঘটনাকে প্লট করে লিখছেন, সেখানে এই লেখক লিখছেন এক ছিচকে চোরের প্রেম কাহিনী, এক পাগলের প্রেম কাহিনী, এক মাদ্রাসা পড়ুয়া হাফেজের প্রেম কাহিনী কিংবা পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া এক তরণীর গল্প, দেহব্যবসায় নামতে চাওয়া এক যুবকের গল্প, নিয়তির ফাঁদে আটকে যাওয়া এক বন্ধুর গল্প, অসহায় এক ভাইয়ের গল্প, মৃতপ্রায় এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের গল্প, এক দশ বছর বয়সী বালকের গল্প ইত্যাদি। যে প্লটগুলো নিয়ে এই সময়ের কোনো তরুণ লেখকই লিখছেন না, সেই সব উপেক্ষিত প্লটেই আলো ফেলছেন তিনি।
সাহিত্যমান:
আমি সাহিত্যবোদ্ধা নই। সামান্য পাঠিকা। বই পড়তে ভালো লাগে বলে প্রচুর বই পড়ি। রবীন্দ্র নজরুল, বিভূতি, মানিক, তারাশঙ্কর, সুনীল, শমরেশ, শীর্ষেন্দু যেমন পড়েছি তেমনি পড়েছি হুমায়ুন, মিলন থেকে শুরু করে ইলিয়াস, জহির, হাসান এবং হালের সাদাত, কিঙ্করের বইও। ফলে সাহিত্যমান বোঝার মতো একটু হলেও জ্ঞান তৈরি হয়েছে আমার। সেই সামান্য জ্ঞান থেকে বলতে পারি এই লেখকের লেখার মান হালের যেকোনো তরুণ লেখকের চেয়ে উন্নত। তিনি লেগে থাকলে আরো ভালো করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সমালোচনা:
বইটিতে বেশ কিছু বানান ভুল রয়েছে। বাইন্ডিং ভালো নয়। ফ্ল্যাপের শেষ লাইন অসম্পূর্ণ। কিছু কিছু গল্প সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে কিন্তু শেষটা অতোটা ভালো হয়নি। আবার কিছু গল্পের শুরুটা গতানুগতিক কিন্তু শেষটা চমকপ্রদ। অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে পারেননি। এ ব্যাপারে লেখকের চর্চা আরো বাড়াতে হবে। ছাতা কিংবা দ্বিধা গল্প পড়ে যতটা মুগ্ধ হয়েছি, ঠিক তেমনিভাবে হতাশও হয়েছি কয়েকটি গল্প পড়ে। একটা গল্পে চরিত্রের নাম এক জায়গায় বদলে গেছে। আরেক গল্পে দেখলাম, 'সে' ও 'তিনি'র সমস্যা। এসব সিলি ব্যাপারে লেখককে আরও সতর্ক হতে অনুরোধ করছি।
লেখক সম্পর্কে :
বইয়ের পেছনের লেখক পরিচিতি এবং রকমারী সাইটে দেওয়া লেখকের প্রোফাইল থেকে জানলাম, তিনি হুট করে বই বের করেননি। দীর্ঘ দশ বছরের বেশি সময় ধরে দৈনিক প্রথম আলোতে লেখালেখি ও অনুবাদের মাধ্যমে নিজের হাত পাকিয়েছেন। তার গল্প প্রথম আলো, সাপ্তাহিক একতা, মাসিক গল্পকার, শব্দঘর, রহস্য প্রত্রিকা, কলকাতার গুরুচণ্ডালী সহ অসংখ্য অনলাইন প্রোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পড়ালেখা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরি করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপশি লেখালেখি করেন।
বই সম্পর্কে রেটিং: ৮.৫/১০
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....