বই শঙখনীল কারাগার (১৯৭৩) - হুমায়ুন আহমেদ (PDF Download)

শঙখনীল কারাগার(১৯৭৩)
- হুমায়ুন আহমেদ 

যে শিশুটি জন্মাবে সে এত আয়োজন, এত প্রতিক্ষণ ও যন্ত্রনার কিছুই জানছে না।

শঙখনীল কারাগার PDF Download(১৯৭৩)" - হুমায়ুন আহমেদ এর সকল বই পিডিএফ ডাউনলোড PDF Download Humayun Ahmed all book pdf download 2022 Shonghonil PDF Downl


চরিত্র : 
মা (শিরিন সুলতানা) উচু বংশের সুন্দরী, শিক্ষিতা মেয়ে। ভালো গান করতেন। জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। পরে আজহারউদ্দীনের সাথে বিয়ে হয়। আপাতদৃষ্টিতে মা হিসেবে স্বার্থপর মনে হবে। তবে উপন্যাসের শেষে গিয়ে কিছুটা হলেও তার জন্য মন খারাপ লাগবে। স্মৃতিকাতরতায় নিজের সাথে সাথে সন্তানদেরকেও ভালোবাসা বঞ্চিত করেছেন। ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে, শুধু রাবেয়ার প্রতি আলাদা টান থাকলেও, বাকিদের সাথে মা সুলভ আচারনের ঘাটতি উপলব্ধ হয়। 

বাবা : (আজহার উদ্দিন) গ্রামের কলেজ থেকে বি এ পাশ করে শহরে এসেছিলেন চাকুরী খুজতে। শিরিন সুলতানার বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। নিতান্তই সাধাসিধা চরিত্র। সর্বদা হীনমন্যতায় ভোগা লোকটি স্ত্রী মৃত্যুর পর যেন নতুন করে জেগে উঠেন। 

রাবেয়া : পরিবারের বড় মেয়ে। খোকার ৫ বছরের বড়। গায়ের রঙ কালো। বাকি ভাইবোনদের মতো মায়ের ফর্সা রঙ পাই নি। গল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র। বয়স ৩১ এর উপড়ে হলেও কোনো এক বিশেষ কারনে এখনো বিয়ে করেন নি। 

খোকা : পরিবারের বড় ছেলে। ধীরস্থীর। ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। তার জবানীতেই পুরো গল্পটা বলা। 

মন্টু, রুনু, ঝুনু, নিনু : পাওয়া- না পাওয়ার দ্বন্দ্বে সদা হাস্যোজ্জ্বল ভাইবোন। নদীর ঢেউয়ের মতই তাদের চরিত্রের উত্থান-পতন ঘটেছে। 

আবিদ হোসেন : ধনী লোক। গল্পের ক্লাইমেক্স চরিত্র। 

তাছাড়া কিটকী, সুহাসীনি মাসি, খালা, মামা চরিত্রগুলো গল্পের প্রয়োজনে এসেছেন।

কাহিনী সংক্ষেপ ও পর্যালোচনা :
গল্পটা একটা পরিবারের। আর ৮/১০ টা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতই ছাপোষা, উত্তেজনাহীন, সাদামাটা পরিবার। মধ্যবিত্তদের যেরকম হয় আরকি। সুখ আর দুঃখের ভারসাম্য আনয়নের যে অবিরাম চেষ্টা, তা এখানেও পরিলক্ষিত হয়। তবে অন্যদের সাথে প্রধান পার্থক্য হল, এখানের প্রধান চরিত্রটা বাড়ির বড় মেয়ের। আজকাল আমাদের সৃষ্টিশীল মানুষজন নাটক-সিনেমায় "মধ্যবিত্ত বাবা" টার্মটাকে কচলাতে কচলাতে তিক্ত বানিয়ে ফেলছেন। তাই মধ্যবিত্তের এই ভিন্নধর্মী গল্পটা পড়ে, আমার স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই ভালো লেগেছে। 

আজহার ও শিরিন দম্পতির পরিবারে মোট ৬ ছেলে-মেয়ে। যদিও সবার ছোট মেয়ে নিনুর আগমন ঘটবে শিরিন বেগমের প্রস্থানের সাথে সাথেই। কি অদ্ভুত না? মা তার সন্তানের জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। পরিবারের বড় মেয়ে রাবেয়া। তারপর খোকা, রুনু, মন্টু, ঝুনু, নিনু। প্রত্যেকটা সদস্যই অদ্ভুতভাবে বয়সের তুলনায় অধিক পরিপক্ব। যেন দুঃখগুলোকে খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে শিখে গিয়েছে। এখানেই শিরিন বেগমের একটা কথা খাটে, 
আমি আমার বাচ্চাগুলোকে এমনভাবে তৈরি করছি, যাতে জীবনে কখনো ভালোবাসাহীন দুঃখের কাছে ভেঙে না পড়ে।
এজন্যই মায়ের মৃত্যুর পরে খোকা বলতে পারে
অতি প্রিয়জন যদি পাশে না থাকে তবে কি করে বেঁচে থাকা যাবে--ভাবনাটা অর্থহীন মনে হয়।

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর একটা কমন বৈশিষ্ট্য হল, পরিবারের যেকোনো একজনের নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে পরিবারটা দাঁড়িয়ে থাকে। সেই ব্যাক্তিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হন বাবা। তানাহলে মা'কেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু এখানে আমরা দেখবো, নিঃস্বার্থ ব্যক্তিটি হলেন পরিবারের বড় মেয়ে রাবেয়া। সে ই মুলত পরিবারটাকে ধরে রাখে। তাদের মা কোনো এক কারনে রাবেয়া বাদে বাকিদের প্রতি খুব একটা স্নেহপ্রবন নন। তারা বুঝতে পারে। 

তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই পীড়া দেয়। তবুও তারা মাকে খুব ভালোবাসে, তার স্নেহ চায়। সাথে, তাদের প্রতি মায়ের স্নেহের অপুর্নতা খুব সুন্দরভাবে মানিয়েও নেয়। যেন তারা শঙখনীল কারাগার বা মায়ার শক্ত বন্দনে আবদ্ধ। যেটা ভাঙ্গা এত সহজ নই।

ভাইবোনদের প্রতি মায়ের এই নির্লিপ্ততার সাথে রাবেয়া নিজেকে কোনো এক ঘটনার মাধ্যমে সম্পর্কিত কর‍তে পারে। তাই নিজের স্বাদ আহ্লাদ, সুখ-দুঃখ সব চাপা দিয়ে এই পরিবারের মানুষগুলোকে মায়া-মমতার বাহুডোরে আগলে রাখে। রাবেয়ার যে কষ্ট হয় না, তা না। যখন সবাই ঘুমিয়ে যায়, কষ্টের ভারে সে রাতের আঁধারে কাঁদে। আবার ভোর হলে সেই স্বাভাবিক মেয়ে হয়ে প্রতিদিনকার রুটিন কাজে নেমেও পড়ে। একে একে ছোট ভাইবোন গুলো বড় হতে থাকে। 

খোকার চাকুরী হয়, মন্টুও কবি হিসেবে বেশ নাম ঢাক করে, রুনুটা মারা যায় আর ঝুনুরও বিয়ে হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে পরিবারটা ঘুচানো হয়ে গিয়েছে। এবার বোধয় একটু সময় হয়েছে তার নিজেকে নিয়ে ভাবার। কিন্তু বয়স ত আর থেমে থাকে না। ৩১ যে হয়ে গেলো। তবুও সে নিজেকে নিয়ে ভাবার চেষ্টা করে। আবার কলেজে ভর্তি হয়। 

পড়াশোনা শেষ করে অন্যত্র চাকুরীতে চলে যায়। এরপর থেকে পরিবারের দায়িত্ব মানে গল্পের প্রধান ফোকাস চলে যায় খোকার দিকে। যদিও তিনি ব্যকাগ্রাউন্ডে আমাদের সাথে সবসময় ছিলেন। খোকা তার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত এতদিন রাবেয়া পুরো পরিবারটাকে একা হাতে সামলিয়েছেন। এখন খোকার পালা। এই জন্যই গল্পের শেষে দেখবেন, রাবেয়া তার কোনো এক সুত্রে পাওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা খোকার কাছে পাঠিয়ে দেয়, যাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো মতো থাকতে পারে। পুরো উপন্যাস পড়ে আপনার মনে কয়েকটা চিন্তার উদ্রেক হবে। 

শিরিন বেগম কেন তার সংসার জীবনের ২৩ বছর একদম নির্লিপ্ত ছিলেন। আজহার আলী গত ২৩ বছরের সংসার জীবন নিতান্ত ছাপোষা জীবন-যাপন করলেও, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর হঠাৎ এত প্রাণোচ্ছল হতে পেরেছিলেন কেন। রাবেয়ায় বা কেন এতটা ত্যাগ স্বীকার করলেন। এসবের উত্তর পাবেন উপন্যাসের শেষে খোকাকে লেখা রাবেয়ার চিঠিতে। লেখাটি শেষ করব উপন্যাসের শেষের দুটি লাইন দিয়ে।

জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ