⦁ বইয়ের নাম: মিন্নাতুল বারী।
⦁ লেখক: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক।
⦁ প্রকাশনায়: নিবরাস প্রকাশনী।
⦁ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৬৭।
⦁ মুদ্রিত মুল্য : ২৫০ টাকা মাত্র।
ভুমিকা:
আসমানের নিচে যমীনের উপরে আল ক্বুর'আনের পর সর্ব বিশুদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে স্বহীহুল বুখারী। এই গ্রন্থটির লেখক হচ্ছেন আমীরুল মু'মিনীন ফিল হাদিছ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)। আমাদের সম্মানিত ভাই আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক প্রনীত "মিন্নাতুল বারী" গ্রন্থটি মুলত স্বহীহুল বুখারীর একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ, যা কোনো বাঙালী দাঈ কর্তৃক প্রথমবারের মতো সংকলিত হয়েছে।
.
বইটি কেন পড়বেন ?
.
হাদিছ শাস্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম আল বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-র জীবনী সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? এই মহিমান্বিত ইমাম সম্পর্কে আমাদের টুকটাক জানকারি থাকলেও অনেক কিছুই আমাদের অজানা রয়ে গেছে। মিন্নাতুল বারী এমন একটি গ্রন্থ যাতে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-র বিস্তারিত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এক কথায় - এমন একটি গ্রন্থ বাংলাভাষায় নযিরবিহীন।
.
লেখক ভুমিকাতেই বুখারীর সনদ নিয়ে আলোচনা করেছেন যা রসূলুল্লাহ (ﷺ) পর্যন্ত সমাদৃত। অত:পর প্রথম অধ্যায়ে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-র জীবনী তুলে ধরেছেন। এরপর জীবনী সংক্রান্ত তথ্যের উৎস ও তাহক্বীক পেশ করেছেন। একে একে উনার বংশধারা, শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রবৃন্দ, পান্ডিত্য, অলৌকিক জ্ঞান, স্মৃতিশক্তির অসামান্যতা ও জ্ঞানের গভীরতা, প্রজ্ঞা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, হাদিছ সংকলনে সর্তকতা, অপবাদ ও অভিযোগের খণ্ডন, তাঁর মানহাজ ইত্যাদি আলোচনা করেছেন। কিছু অ-প্রসিদ্ধ ঘটনা ও মিথ্যা কাহিনীর তাহক্বীকও উক্ত আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
.
দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বহীহ বুখারীর পরিচয় তুলে ধরেছেন।
বুখারীর নামকরণ, প্রেক্ষাপট, বুখারী লিখার সময়কাল ও কিভাবে সংকলিত হয়েছে এবং অধ্যায়ের নামকরণ ও নামবিহীন অধ্যায়, তা'লীক বা টিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি বিদ'আতি দল ও ফিরকাগুলি কর্তৃক মিথ্যা অভিযোগসমূহের দালিলিক রদ করেছেন। লেখক একদিকে যেমন আলোচনা জারি রেখেছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন অভিযোগের মুলৎপাটনও করেছেন, যা গ্রন্থটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
.
কখনো কখনো মুহাদ্দিসগন বলে থাকেন যে৷ হাদিস-টি স্বহীহুল বুখারীর শর্তে স্বহীহ অথচ তাদের এই কথা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। কেন!? তা জানতে চোখ ভুলাতে পারেন - মিন্নাতুল বারী-তে। লেখকের কলমের জাদু এখানেই ফুঁটে উঠেছে। তিনি খুবই সহজ সাবলীল ভাবে পুরো বিষয়টি তুলে এনেছেন। যাতে জেনারেল লাইনের একজন জ্ঞান পিপাসুও বিষয়টি সহজে বুঝতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা অনুবাদের এখানেই স্বার্থকতা, অন্যথায় আরবী পড়ুয়াদের জন্যে তো এবিষয়ে কিতাবের অভাব নেই বললেই চলে।
.
বুখারীর প্রতি জনমনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে অনেকেই বলে থাকেন যে, স্বহীহুল বুখারী'তে বিদ'আতি বা শিয়া আক্বীদাধারী রাবীর বর্নিত হাদিসও রয়েছে। অথচ কোন পর্যায়ের বিদ'আতি থেকে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ ) হাদিছ নিয়েছেন এবং কতটুকু পর্যালোচনার পর তিনি এমন হাদিছ সংকলন করেছেন - লেখক সে বিষয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
.
"মুহাদ্দিসগন ফক্বীহ কিনা" এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রায় ৪৮ পৃষ্ঠার আলোচনা নিশ্চয়ই বইটিকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে। এই সময়পযোগী ও ইনসাফভিত্তিক আলোচনা না থাকলে হয়ত এটি অপূর্ণ-ই থেকে যেত বলে আমার যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাস।
.
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম নাসিরুদ্দীন আল আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বহীহ বুখারীর কিছু হাদিছের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি নিজ গবেষণায় কিছু হাদিছকে" দ্বইফ" বলেছেন। এ ব্যাপারেও দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বতন্ত্র পর্যালোচনা করেছেন লেখক (হাফিয্বাহুল্লাহ)। উক্ত অধ্যায়ে তিনি এমন দশটি হাদিছের পর্যালোচনা করেছেন - যেগুলোর ব্যাপারে ইমাম আলবানী আপত্তি করেছেন।
.
লেখকের এই পর্যালোচনায় মুলত ইমাম আল আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-র গবেষণাগত ভুলকে তুলে ধরে স্বহীহ বুখারীর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইমাম আল আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এবং আহলে হাদিসদের ঝান্ডাবাহী মুজাহিদ। এতদ্বসত্ত্বেও গ্রন্থাকার তাঁর তাক্বলীদে নিজেকে আবদ্ধ করেন নি। এখানেই মুলত আহলে হাদিসদের সুপ্রসিদ্ধ মানহাজ আবারও ফুঁটে উঠে যে, আহলে হাদিসরা কারো তাক্বলীদে-শাকসী করে না একমাত্র মুহাম্মদূর রসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া।
.
ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রায়শই বলতেন, হাদিছ-টি "হাসান স্বহীহ গারিব।" একটি হাদিছ একইসাথে 'স্বহীহ' আবার 'গারীব' হয় কি করে!?
হাদিছগুলোর হুকুমের ক্ষেত্রে এই ধরণের পরিভাষার ব্যবহার নিয়ে লেখক সাবলীল ও সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করেছেন অত্র ব্যাখ্যাগ্রন্থটিতে। এছাড়াও ইলমে হাদিছ, জারাহ ওয়াত তা'দীলের মূলনীতি, জারাহ মুফাসসার ও জারাহ মুবহাম, রাবী মযবূত না দূর্বল - তা জানার পদ্ধতি, তাওছীক বা মযবূতের স্তর, তাক্বরীবুত তাহযীবের স্তর, মাক্ববুলের পরিচয়, মুহাদ্দিসগনের স্তর ও প্রকারভেদ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে এই গ্রন্থটিতে।
.
আশা করছি - ইলম পিপাসীদের গবেষণায় খোরাক জোগাবে এই বইটি। মহান আল্লাহ্ সম্মানিত লেখককে
এই গ্রন্থটি ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ করার তাওফীক দান করুন। তাঁর এই গ্রন্থটিকে বাংলা ভাষাভাষী পাঠক সমাজের মাঝে উপকারী ও গ্রহণীয় করে দিন - আমীন।
রিভিউ লেখক : আখতার বিন আমীর।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....