এই বিরহকাল (Ei Biroho kal) a book written by Rabeya Khatun

বইঃ এই বিরহকাল
লেখকঃ রাবেয়া খাতুন
প্রকাশনীঃ আগামী মূল্যঃ ৩২ টাকা
পৃষ্টাঃ ৬৫
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
রেটিংঃ ৯/১০
নামঃ জিহাদ মুনতাছির সাইম.

এই বিরহকাল pdf  (Ei Biroho kal) a book written by Rabeya Khatun




লেখক পরিচিতিঃ
রাবেয়া খাতুন ঢাকার বিক্রমপুরে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে, তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত ষোলঘর গ্রামে৷ তার বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন। আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাস করেন ১৯৪৮ সালে। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গন্ডির পর তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক ও চলচিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সাথে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তানের মধ্যেে রয়েছে, ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।

রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস মেঘের পর মেঘ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র 'মেঘের পরে মেঘ'। এবং ২০১১ সালে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস মধুমতি অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র মধুমতি। এছাড়াও অভিনেত্রী মৌসুমী ২০০৩ সালে তার লেখা কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি অবলম্বনে একই শিরোনামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি। লেখালেখির পাশাপাশি রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরীবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমীর কাউন্সিল মেম্বার ও টেলিভিশনের 'নতুন কুড়ি'র বিচারক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্কের জুরীবোর্ডের বিচারক ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্ত আছেন বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
মধুমতী (১৯৬৩),সাহেব বাজার (১৯৬৫),অনন্ত অন্বেষা (১৯৬৯),রাজারবাগ শালিমারবাগ (১৯৬৯),মন এক শ্বেত কপোতী, ফেরারী সূর্য,মোহর আলী (১৯৮৫),নীল নিশীথ,
বায়ান্ন বাজার এক গলি (১৯৮৪),পাখি সব করে রব,নয়না,লেকে রূপবান দুপুর,মিড সামারে,ই ভরা বাদর মাহ ভাদর (১৯৮৮),সে এবং যাবতীয়,হানিফের ঘোড়া,হিরণ দাহ (১৯৯৫),এই বিরহকাল (১৯৯৫),হোটেল গ্রীন বাটন (১৯৯৫),চাঁদের ফোটা,বাগানের নাম মালনিছড়া,প্রিয় গুলশানা (১৯৯৭),বসন্ত ভীলা (১৯৯৯),ছায়া রমণী
সৌন্দর্যসংবাদ (১৯৯৯),হৃদয়ের কাছের বিষয় (১৯৯৯),ঘাতক রাত্রি (১৯৯৯),মালিনীর দুপুর,রঙিন কাচের জানালা,মেঘের পর মেঘ,যা কিছু অপ্রত্যাশিত,দূরে বৃষ্টি,সাকিন ও মায়াতরু
রমনা পার্কের পাঁচবন্ধু,শুধু তোমার জন্য,ঠিকানা বি এইচ টাওয়ার,কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি,প্রথম,বধ্যভূমি,কমলিকা,শঙ্খ সকাল প্রকৃতি,যা হয়না,আকাশে এখনো অনেক রাত,,জাগতিক,স্বপ্নে সংক্রামিতও, কে ছিল,মহা প্রলয়ের পর,শহরের শেষ বাড়ি,নষ্ট জ্যোস্নার আলো,মাইগো,সমুদ্রবণ ও প্রণয় পুরুষ ইত্যাদি।

সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েন অনেক পুরস্কার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার গুলো হলোঃ
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, (১৯৭৩)হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯)একুশে পদক, (১৯৯৩)বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ (১৯৯৪)নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫)জসিমউদ্দিন পুরস্কার (১৯৯৬)শেরে বাংলা স্বর্ণপদক (১৯৯৬)শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬)টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭)ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮)অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮)লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯)অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)

মিলেনিয়াম এ্যাওয়ার্ড (২০০০)টেলিভিশন রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড (২০০১)বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স এ্যাওয়ার্ড (২০০২)শেলটেক পদক (২০০২)মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (২০০৫)বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (২০০৫)স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭)
২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশানে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
শহর ঢাকা দূর থেকে গ্রামীণ মানুষের চোখে একসঙ্গে স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের নগরী।কেউ রাত না হতেই আমীর হয়।কেউ শুধু সম্পদ নয়,ফিরে যায় চৈতন্যের শেষ রেখাটুকুও বিসর্জন দিয়ে।
সমুদ্রের ডাকের মতো নাগরিক জলোচ্ছ্বাসের টানের আগুনকেও আসতে হয়।মুঠিবদ্ধ হাতে সেলিমের হাত।স্বামীত্বের মহান আশ্বাস সেখানে।

নিরাপদ নাগরিকত্বের আশায় মেগাসিটিতে প্রবেশের পর থেকে আগুনকে ঘিরে শুরু হয় পালাবদলের ঘনঘন অগ্নি পরীক্ষা।

এই উপন্যাসটি সবচেয়ে বেশি যে দিকটি পাঠকে স্পর্শ করবে তা হলো.... উপন্যাসের এক পর্যায়ে আগুনকে তার স্বামী নামক ব্যক্তিটি যখন অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দেয় অর্থের বিনিময়ে। আর তারপর আগুনের ঘুরে দাঁড়ানো।

নিম্নবিত্ত স্বামীর সীমিত শক্তি রক্ষা কবজের কাজে অক্ষম। চরম অসহায় একাকীত্বের গহ্বরে ডুবে যেতে যেতেও আগুন উপলব্ধি করে তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে দিয়েছে প্রতিকুল অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দেবার সন্তরণ ক্ষমতা। সামনে নষ্ট সমাজের পিছল পথ কিন্তু দৃষ্টি লাভ করেছে আত্মবিশ্বাসের সূর্যশিখা।
রাবেয়া খাতুনের কলম সব সময় চলতি সময়ের স্রোতকে ধারণ করে।বক্ষমান উপন্যাসটি একদিকে চিরন্তন অবলা নারীর রুপান্তরিত আদ্যাশক্তি রমনী রূপ। আর.....

অন্যদিকে একটি অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জাগরণের প্রদীপ্ত কাহিনী।
যা মিডাস টাচের মতো স্পর্শ করবে একালের বঁধু মাতা কন্যাদের।
কাহিনীর নেপথ্যেঃ
মেগাসিটি ঢাকায় মানুষের জীবনের উত্থান-পতবনের কাহিনী থেকে।

বইয়ের নামঃ
এই উপন্যাসের নায়িকা আগুনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরহের চাপ সুস্পষ্ট। বিরহের বলয়ে আটকে পড়া আগুনের জীবনের উত্থান-পতনকে কেন্দ্র করেই এই উপন্যাসের নাম দেওয়া হয়েছে 'এই বিরহকাল।'
ব্যক্তিগত মতামতঃ
মেগাসিটি ঢাকাতে মানুষের জীবনের উত্থান-পতন নিয়ে এই রকম উপন্যাস খুবই কম। সেই হিসেবে রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসের যে জিনিসটি ধরতে চেয়েছেন, তার সুন্দর ভাবেই তিনি ধরতে পেরেছেন।তাছাড়া তিনি কাহিনী বর্ণণায় যে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন তা প্রংশানিয়।আর এই উপন্যাসের ভাষা শৈলী, শব্দ চয়ন, কাহিনী বিন্যাস,কাহিনির ঘনগটা,চরিত্রে খামখেয়ালিপনা, ঘটনার আকস্মিকতা সব মিলিয়ে অসাধারণ একখানা উপন্যাস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ