হারকিউলিস রহস্য

☆বইয়ের নাম: হারকিউলিস রহস্য
☆ধরণ : গোয়েন্দা উপন্যাস (গোয়েন্দা কবি সাহেব
সিরিজের ৩য় উপন্যাস)
☆লেখক: মুহাম্মাদ ইব্রাহীম
☆প্রচ্ছদ: মো:আবিদ মিয়া
☆প্রকাশনী: অবসর প্রকাশনী
☆মুদ্রিত মূল্য: দুইশ টাকা মাত্র
☆পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২
☆প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২১



🔹️উৎসর্গ পত্র
লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন কাহিনীর মূল চরিত্র-'তনু' নামের একটি ধর্ষিত মেয়েকে। তিনি তনুকে বোন বলে সম্বোধন করেছেন এবং এদেশের ধর্ষণের বিচার-ব্যবস্থা নিয়ে অনুতপ্ততা প্রকাশ করেছেন।

আমাদের এই দেশে এখনো ধর্ষণের বিচার হয় না। আজও ধর্ষিতার লাশ পড়ে থাকে। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে হয়তো তনুর মতো মেয়েরা আমাদের অভিশাপ দেয় 😌
লেখক তনুর ধর্ষণের বিচার চেয়ে হয়তো রাস্তায় নামতে পারেননি, কিন্তু একজন লেখকের অস্ত্র হচ্ছে কলম।
তিনি তার লেখনী দিয়ে তনুকে ছোট্ট একটা উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

🔹️ভূমিকা
২০১৬ সালের ২১ মার্চ পত্রিকায় তনু নামের একটি মেয়ের ধর্ষণের খবর ছাপা হয়। লেখক খবরটি দেখে এক মুহূর্তের জন্য তনুকে নিজের এক বোনের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু লেখক খবরটি ভালোমতো পড়ার পর এটা উনার বোন না নিশ্চিত হয়ে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন, ঠিক পরমুহূর্তে নিজেকে স্বার্থপর ভাবতে শুরু করেন। কেননা তনুও তো উনার বোনেরই মতো, একটি বোনের ধর্ষণের খবর শুনে তিনি কিছুতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে পারেন না।

তনু বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হলো, অনেকে রাস্তায় আন্দোলনে নামলো। কিছুদিন পর সব থেমে গেল, তনু হত্যার বিচারও হলো না।
কিন্তু লেখকের মাথায় তনু থেকেই গেলো। রাস্তায় আন্দোলনে না নামলেও তিনি তার অস্ত্র- কলম দিয়ে লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করলেন। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে লেখার পর অবশেষে তিনি তনুকে উপহার দিলেন "হারকিউলিস রহস্য "।
🔹️চরিত্র
এই কাহিনীতে বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র👉🏻
▪️কবি সাহেব
▪️ডঃতামিম (কবি সাহেবের বন্ধু)
▪️মিজানুর রহমান ( রামপুরা থানার ওসি)
▪️মিস রিমি (কবি সাহেবের এই কেসের অ্যাসিস্ট্যান্ট)
▪️তনু (যদিও কাহিনীতে তনুকে অল্প সময়ের জন্য রাখা হয়েছে)
▪️হারকিউলিস
☆কাহিনীতে তনু ছাড়া সকল চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক।

🔹️ কাহিনী সংক্ষেপে
গত দেড় মাস ধরেই পত্রিকায় খুনের খবর ছাপা হচ্ছে। খুনের খবর নতুন কিছু নয়, তবে রহস্যজনক ব্যাপার হলো খুনের ধরণ । সব খুনই করা হয়েছে একই কায়দায়, যৌনাঙ্গ ফালা ফালা করে কেটে দেওয়া হয়েছে। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এরা সবাই ধর্ষণ মামলায় জড়িত। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই লাশের পাশে একটা করে কম্পিউটারে টাইপ করা চিরকুট পাওয়া যায়, যেখানে ধর্ষকের নাম লেখা থাকে। যেমন-

__________________________
| " আমি ধরষক রাকিব। |
| ধরষকের পরিনতি ইহাই। |
| ধরষকরা সাবধান! |
| |
| - হারকিউলিস " |
| _________________________|
কে এই খুনগুলো করছে হারকিউলিস নামে এবং কেনই বা করছে?
কেসের কোনো কূল কিনারা খুঁজে না পেয়ে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আকরাম আহমেদ আর রামপুরা থানার ওসি মিজানুর রহমান এলেন কবি সাহেবের কাছে সাহায্যের জন্য। কবি সাহেব প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে তিনি রাজি হন এই কেস তদন্ত করার জন্য। এই কেসের পুরো জার্নিতে কবি সাহেবের সাথে ছিলেন তার বন্ধু তামিম আর সহকারী গোয়েন্দা রিমি ।

কবি সাহেব বের করলেন যে হারকিউলিস নামে যে বা যারা এই খুন গুলো করছে, তারা সবাই একই লোক। কারণ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই চিরকুটে 'ধরষক' আর 'পরিনতি' বানান ভুল।
কিন্তু গোয়েন্দার এই জার্নি মোটেও সহজ ছিল না। গত দুই কেসে খুনি কিছু না কিছু ক্লু রেখে গিয়েছিল। কিন্তু এইবার খুনি কোনো ধরণের ক্লু রেখে যায়নি।

এই কেস সমাধান করতে গিয়ে অনেক বিপদ এবং ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়েছে কবি সাহেবকে ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি কবি সাহেব পারবেন "হারকিউলিস"-কে খুঁজে বের করতে? তিনি কি পারবেন " হারকিউলিস রহস্য " সমাধান করতে? নাকি পুরোটা রহস্যই রয়ে যাবে?
এইসব কিছু জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে " হারকিউলিস রহস্য "।

🔹️ ভালো লাগার কিছু দিক
আমরা অনেকেই রহস্য উপন্যাস ভালোবাসি।
" হারকিউলিস রহস্য " সেই রকমই একটা রহস্য উপন্যাস। কাহিনীর শেষ পর্যন্ত লেখক রহস্য ধরে রাখতে পেরেছেন, এখানেই লেখকের সার্থকতা।
এই উপন্যাসে তামিম নামে চরিত্রটির ভোজনরসিকতা নিয়ে কিছু কিছু মজার অংশ পড়ে খুব মজা লেগেছে।
লেখক বইটির কিছু কিছু অংশে ধর্মের এবং কুরআনের দিক তুলে ধরেছেন, যা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
যেমন তিনি লিখেছেন-
♡"পৃথিবীতে সবাই খাওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মায় নি।
খেতে পারাও আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত।
"( পৃষ্ঠা ৬৭)
♡"পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, বান্দা তাকে
ডাকলে তিনি কখনই তার বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না।
কোনো না কোনো উপায় বের করে দেনই ।"
( পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮) ।
এছাড়া ভূমিকাতে লেখকের একটা কথা আমার খুব ভালো লেগেছে-
♡" আমার ক্ষমতা থাকলে এদেশের একজন ধর্ষকও
বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতির অক্সিজেন খরচ করতে
পারতো না। "

🔹️ দৃষ্টিকটু কিছু দিক
কাহিনীর প্রথম দিকে শব্দচয়নে কিছুটা অপরিপক্কতা পরিলক্ষিত হয়েছে, যেমন লেখক শুরুর দিকেই দুইবার " ভোদাই " শব্দটা ব্যবহার করেছেন; এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দও ব্যবহার করা যেতে পারতো। তবে লেখক পরে ব্যাপারটা বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া একদম শেষ দিকে কয়েকবার "ভিডিও" বানানটা ভুল লিখে "ভিডিয়ো" লেখা হয়েছে। পাঠক যদি মন দিয়ে পড়েন, তাহলে ব্যাপারগুলো চোখে পড়বে।
তাছাড়া অন্যসবকিছু ঠিকঠাক ছিল ।
আশা করি দ্বিতীয় মুদ্রণের সময় বিষয়গুলো দেখা হবে।
🔹️বিবিধ
কাহিনীর সাথে মিল রেখে বইয়ের নাম এবং প্রচ্ছদ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। এছাড়া বইয়ের মলাট এবং পৃষ্ঠার মান খুব ভালো ছিলো।

🔹️পরিশিষ্টি
" হারকিউলিস রহস্য " ছিল মুহাম্মাদ ইব্রাহীম এর গোয়েন্দা কবি সাহেব সিরিজের তৃতীয় উপন্যাস। আগের দুটো উপন্যাস পাঠক সানন্দে গ্রহণ করেছে। এটাও আশা করা যায় পাঠকের মন ছুঁতে পারবে।
আমি উপন্যাসটি একটানা পড়ে শেষ করেছি, কোথাও একটুর জন্যও আগ্রহ হারাইনি। আপনারাও একবার পড়ে দেখতে পারেন, বেশ ভালো সময় কেটে যাবে।
☆আমার ব্যাক্তিগত রেটিং ৪.৭৫ / ৫.০০

______________________________________________
কোনো লেখনীর সমালোচনা করার স্পর্ধা আমার নেই। যেটুকু পেরেছি, বইটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন আর অবশ্যই জানাবেন কেমন লেগেছে আমার বুক রিভিউ।
♡হ্যাপি গ্রুপিং
♡হ্যাপি রিডিং 💙💙

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ