বইয়ের নাম : ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস
কৃতজ্ঞতায় : Islamhouse
প্রকাশনীর নাম : বিলিভার্স ভিশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩২ (পকেট সাইজ)
মুদ্রিত মূল্য : বিনামূল্যে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম ঐ নবীর ওপর যার পরে আর কোনো নবী আসবেন না এবং তাঁর সাহাবী ও যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন তাদের ওপর। অতঃপর, হে মুসলিম ভাই জেনে রাখুন, আল্লাহ সকল মানুষের ওপর দীন ইসলামে প্রবেশ করা ও তা আঁকড়ে ধরা ফরজ করে দিয়েছেন এবং ইসলাম পরিপন্থি যাবতীয় পথ থেকে সাবধান করেছেন। তিনি মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে প্রেরণ করেছেন ইসলামের প্রতি আহবান করার জন্য। আর আল্লাহ তাআলা জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর অনুসরণ করবে সে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে আর যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে।
ভ্যালেন্টাইন দিবসকে সামনে রেখে চারিদিকে যেন উজ্জ্বল লাল ও গোলাপি রং এর মেলা চলছে। কাপড়ের বিপনি বিতান গুলোতে দেখা যায় দামি ও ভারিক্কি লাল কাপড়ের সমারোহ, ফুলের দোকানে লাল গোলাপের দাম তাই চড়া, উপহারের বিভিন্ন দোকানে সুন্দর সুন্দর টেডি বিয়ারগুলির গায়ে গোলাপি কিংবা লাল রংয়ের সুদৃশ্য হার্টের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো। অলংকার ও ঘড়ি গুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে ভালোবাসা বিষয়ক রচনা বা মনরঞ্জক কোনো উক্তি দিয়ে। এমনকি মিষ্টির দোকানেও দেখা যাচ্ছে হার্টের আকৃতি সম্বলিত কেক বা চকোলেট এর ব্যবস্থা করতে, তাতে আবার অনুরোধ বা অর্ডারের ভিত্তিতে চকমকে গোলাপি কাভারে সাজানোর ব্যবস্থাও আছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এ দিবসটি শুধু পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেই নয় বরং প্রায় সবকটি মুসলিম দেশেই পালন করা হচ্ছে!
যারা এখনও বিয়ে করেননি কিন্তু রিলেশানে (!) আছেন তাদের কাছে তো এটি খুবই বিশেষ একটি দিন! অভিভাবকদের চোখের আড়ালে তরুন-তরুনীদের অনেকেই তাদের বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে দিনটিকে উদযাপন করবে বলে নানা রকম পূর্ব পরিকল্পনায় মত্ত থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দল বেঁধে এদিনের পরিকল্পনা আঁটে!
ভালোবাসার জন্য কোনো বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ পাত্র বা পাত্রীরও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা করার জন্য বিশেষ সময়, দিবস লাগে, বিশেষ পাত্রপাত্রীর দরকার পড়ে। তাই ভালোবাসার কোনো দিবস পালন করা একটি ভাওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। হ্যাঁ, বেহায়াপনার জন্য দিবস হতে পারে। কারণ অশ্লীলতা চর্চাকারীরা তাদের নির্লজ্জ আচরণ সবসময় করতে পারে না, সবার সাথে করতে পারে না। এর জন্য উপলক্ষ দরকার। যে দিবসের আড়ালে বেলেল্লাপনা চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা দিবস পালনের ধরন ও প্রকৃতিই আমাদের বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠতা প্রমাণে যথেষ্ট বলে মনে করি।
কোনো জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার জন্য শয়তান উক্ত জাতির মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটায়। মহান আল্লাহ বলেন, “শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।” (সূরা বাক্বারা: ২৬৮)
শয়তান এই কাজটা করে ধীরে ধীরে। একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, মানব জাতিতে অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্য শয়তান কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। শয়তান প্রথমে নারী ও পুরুষকে পর্দার বাইরে নিয়ে এসেছে। এটা ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। এরপর, রেডিও ও টেলিভিশন আসার আগে অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সাহিত্যের ছলে ছেলে ও মেয়েদের মাঝে মধ্যবর্তী কথাবার্তা ও হাত ধরাধরি না করে গল্প করাকে (প্রেম নাম দিয়ে) স্বাভাবিক হিসেবে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
রেডিয়ো ও টেলিভিশন আসার পরে প্রথম উপরিউক্ত ধরনের বিষয়গুলোকে ‘শোনা’ ও ‘দেখা’ এ দুটোর মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে। তার ফলে আমাদের বিংশ শতাব্দীর শেষের দশ ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যথেষ্ট পরিমানে তরুণ তৈরি হয়েছে যারা এ ধরনের প্রেমকে ‘হারাম’ মনে করত না (আল্লাহ আমাদের এ ধরনের প্রেম নামক যিনা (অবৈধ) সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে হিফাজত করুন)।
প্রথম ধাপে শয়তানের পদ্ধতি ছিল আকারে ইঙ্গিতে অশ্লীলতার বীজ মন-মগজে রোপন করা। কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে যখন শয়তানের ধোঁকা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে শয়তান অশ্লীলতা ছড়ানোর পদ্ধতিকে আরও বেশি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। যেমন, টেলিভিশন কেন্দ্রিক মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রিতেও প্রথম প্রথম সরাসরি অশ্লীলতা প্রবেশ করানো হয়নি। ধীরে ধীরে মননকে কলুষিত করে অশ্লীলতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রথম প্রেমের নামে আপাতদৃষ্টিতে অশ্লীল নয় এমন দৃশ্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সিনেমা নাটকে দু’একটা আপত্তিকর দৃশ্য ঢুকিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু এখন সব সামাজিকতার বাঁধ ভেঙ্গে মিডিয়াগুলো হন্য হয়ে নাটক, সিনেমা ও গানের নামে নিলজ্জতা, নোংরামি ও অশ্লীলতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এভাবে একদল তরুণ-তরুণীদেরকে উস্কে দিচ্ছে প্রেমের নামে অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের দিকে। মিডিয়াগুলো বিনোদনের নামে প্রকাশ্যে নোংরামি ও অশ্লীলতাকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছে।
তাই আসুন আমরা সংক্ষিপ্তভাবে ভালোবাসার প্রকৃত পরিচয় জেনে নেই।
ভালোবাসার পরিচয়: ‘ভালোবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালোবাসা’ আড়াল শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালোবাসেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম করো, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালোবাসেন।
আল্লাহ বলেন, اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَہِّرِیۡنَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আল-বাকারা:২২২)
তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালোবাসেন। তিনি বলেন, فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِين
‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান:৭৬)
পবিত্র এ ভালোবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোনো কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালোবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা, শঠতা ও স্বার্থপরতা।
ভালোবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর টান ।
কোনো দিন কাউকে না দেখেও যে ভালোবাসা হয়; এবং ভালোবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাৎ হতে পারে তা ইবনু আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন, ‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মতো (শক্তিশালী) কোনো কিছু আমি কখনো দেখি নি।’ (ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হা.২৬২)
ভালোবাসার মানদণ্ড: কাউকে ভালোবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার মানদণ্ড হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসতে হবে এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’ (মুসনাদ আহমাদ, হা.২০৩৪১)
ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালোবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালোবাসা রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার মতো তাদেরকে ভালোবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্র প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়।’ (সূরা আল-বাকারা:১৬৫)
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসতে হবে, নতুবা কোনো ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসা। ৩. কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা।’ (সহীহ আল বুখারী, হা.১৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসার ফযীলত: আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা দেবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া নেই।’ (সহীহ মুসলিম, হা.৪৬৫৫)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোনো রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোনো অর্থনৈতিক লেনদেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে,সে দিন তাঁদের কোনো ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোনো চিন্তা থাকবে না..।’ (সুনানু আবী দাঊদ, হা.৩০৬০)
পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি করার উপায় : ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে না। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে সালামের প্রচলন করো।’ (সহীহ মুসলিম, হা.৮১)
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কী? : এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর সূচনা প্রায় ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালোবাসা’র মধ্য দিয়ে। এর সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খ্রিস্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- ১.রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন সম্রাটের খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। ২.১৪ই ফেব্রুয়ারি রোমকদের লেসিয়াস দেবীর পবিত্র দিন। এদিন তিনি দু’টি শিশুকে দুধ পান করিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীতে রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিল। ৩.১৪ই ফেব্রুয়ারী রোমানদের বিবাহ দেবী ‘ইউনু’-এর বিবাহের পবিত্র দিন। ৪. রোম সম্রাট ক্লডিয়াস তার বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে গিয়ে যখন এতে বিবাহিত পুরুষদের অনাসক্ত দেখেন, তখন তিনি পুরুষদের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করেন। কিন্তু জনৈক রোমান বিশপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন ও গোপনে বিয়ে করেন। সম্রাটের কানে এ সংবাদ গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেদিন থেকে দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসাবে কিংবা এ ধর্মযাজকের নামানুসারে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায়! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালোবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি চলছে। আর এর ঠিক পিছনেই মানব জাতির আজন্ম শত্রু শয়তান এইডস নামক মরণ-পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জানত না, তখন পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাব ছিলনা। আজ পৃথিবীতে ভালোবাসার বড়ো অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালোবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে ভালোবাসা উঠিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধুই কি তাই! অঙ্কন শিল্পীরা উলকি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উলকিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কর্মসূচি! বিশ্ব ভালোবাসা দিবস না বলে বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস বললে অন্তত নামকরণটি যথার্থ হতো।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক:
১. ভালোবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি জড়িয়ে যারা ভালোবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২. তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল মায়িদাহ: ৬৪)
৩. নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪. নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে। যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
‘যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি..।’ (সূরা আন-নূর :১৯)
বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক, তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ হওয়া অবধারিত, আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’ (সুনানু ইবনু মাজাহ, হা.৪০০৯)
৫. তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোনো রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ তরুণ ইউসুফ (আ.)-কে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত! আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে— ‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিলো এবং বলল, ‘আস।’ সে বলল, ‘আমি আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তিনি আমার রব; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তো যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘যে তোমার পরিবারের সাথে কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোনো মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কি দণ্ড হতে পারে?
ইউসুফ বলল, ‘সে-ই আমার কাছ থেকে অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলো, ‘যদি তার জামার সামনের দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, ‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো; তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল, ‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনলো, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠালো, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করলো, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিলো এবং ইউসুফকে বললো, ‘ওদের সামনে বের হও।’ তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখলো তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হলো এবং নিজেদের হাত কেটে ফেললো। ওরা বললো, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বললো, ‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে, তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইউসুফ (আ.) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশি প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো। তারপর তার প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা ইউসুফ: ২৩-৩৪)
৬. শরীরে উলকি আঁকাতে যেয়ে নিজের ইয্যত-আব্রু পরপুরুষকে দেখানো হয়। যা প্রকাশ্য কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি উলকি আঁকে এবং যার গায়ে তা আঁকা হয়, উভয়য়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরচুলা (আলগা চুল) লাগায় এবং যাকে লাগিয়ে দেয়; এবং যে ব্যক্তি উলকি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন।’ (সহীহ বুখারী, হা.৫৪৭৭)
মূলত যার লজ্জা নেই, তার পক্ষে এহেন কাজ নেই যা করা সম্ভব নয়। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো।’ (সহীহ বুখারী, হা.৩২২৫)
৭. ভালোবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, ‘যে জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’ (মুয়াত্তা মালিক, হা.৮৭০)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর ভাষ্য কতটা বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS” নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোনো আরোগ্য নেই। কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে —
1. বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশি লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশি ‘AIDS’ রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’(আব্দুল খালিক,নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ.৯৬)
2. 2. ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। (Baron& Byrne, Social psychology: Understanding Human Interaction, P. 329)
3. 3. ৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫ বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে। (মাসিক পৃথিবী, ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯, পৃ.৫)
4. 4. বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে: ‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা, ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস আক্রান্ত। শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ (রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ.১-২)
5. 5. জাতিসংঘের দেয়া তথ্য মতে: ‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’ (প্রাগুক্ত)
6. 6.‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ, প্রতি মন্ত্রী ড.মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের বেশি।’ (দৈনিক ইনকিলাব, স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ইং পৃ.১)
7. সিফিলিস-প্রমেহ: বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমেরিকার শতকরা ৯০% অধিবাসী রতিজ দুষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখানকার সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রতি বৎসর গড়ে দুই লক্ষ সিফিলিস এবং এক লক্ষ ষাট হাজার প্রমেহ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। (Encyclopedia Britannica, V.23, P.45.)
8. এছাড়াও আমেরিকায় প্রতি বৎসর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার শিশু জন্মগত সিফিলিস রোগে মৃত্যুবরণ করে। (আবদুল খালিক, নারী, ঢাকা:ই.ফা.বা., ১৯৮৪ইং, পৃ.৯৬)
9. Dr. Laredde বলেন, ফ্রান্সে প্রতি বৎসর কেবল সিফিলিস ও তদ-জনিত রোগে ত্রিশ হাজার লোক মারা যায়। (প্রাগুক্ত)
10. হার্পিস রোগ: ব্যভিচারের কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital Herpes. মার্কিন জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই রোগে আক্রান্ত। এটাই শেষ নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social psychology: Understanding Human Interaction, P.329.)
11. ৮. বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
12. ৯. মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
13. প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা! ভালোবাসা কোনো পর্বীয় বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
14. বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হিফাজত করুন। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যেন কাউকে ভালোবাসি এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখি।
নবী (ﷺ) এর সময়ের একটি ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। একবার একজন সাহাবী নবী (ﷺ)-এর নিকট এলো এবং বলল, “ও আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি আপনাকে আমার নিজের প্রানের, পরিবারের এবং সন্তানদের থেকেও বেশি ভালোবাসি। যখন আমি ঘরে থাকি আর মাঝে মাঝে যখন আপনার কথা মনে পড়ে তখন আপনার নিকট এসে আপনাকে না দেখা
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....