বইঃ নন্দিনী উপাখ্যান
লেখকঃ কাওসার পারভীন
ধরণঃ উপন্যাস
প্রকাশনাঃ বাংলার প্রকাশন
প্রচ্ছদঃ রাজিব রায়
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭
-----------------------------------
কাহিনী সংক্ষেপঃ
উপন্যাসের নায়িকা নন্দিনী। পিতৃমাতৃহারা নন্দিনীর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য ও যৌবনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে কাহিনীর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।
ভাগ্য বিড়ম্বনায় আপন ফুপুর কাছে শৈশবের কিছুদিন তুচ্ছ, তাচ্ছিল্যের মধ্য দিয়ে কাটানোর পর বড় বোন দামিনী আর ভগ্নীপতি রাইসুল নন্দিনীর দায়িত্ব নেয়। পরম মমতায় ঘেরা বোনের সংসারে নন্দিনী বড় হতে থাকে। পড়াশোনাও চলতে থ্যাকে।
অনিন্দ্য সুন্দরী নন্দিনী নিজের মার্জিত ব্যবহার এবং স্বভাবগত সরলতায় সকলের কাছে ছিল প্রিয়ভাজন। কিশোরী বেলায় তমাল নামের একজন এসেছিল নন্দিনীর জীবনে। ছিল প্রবল ভালোলাগা। কিন্তু সেই ভালোলাগার নাম কি প্রেম কিংবা ভালোবাসা?
এখান থেকেই শুরু হয়েছে নন্দিনীর প্রণয়ের গল্প। কিন্তু নাহ! তমালের সঙ্গে ঘর বাঁধা হয়নি। নন্দিনী তার একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী, দামিনী আর রাইসুলের ইচ্ছেয় সংসার পেতেছিল নিলয়ের সঙ্গে।
সুদর্শন নিলয় যেন নন্দিনীর যোগ্য পাত্রই ছিল। নতুন জীবনের সন্ধান পায় নন্দিনী। ভালোবাসা, খুনসুটি, অভিমান, অনুরাগ সবকিছু মিলে সুখের রংতুলি দিয়ে সে সাজাতে থাকে সংসারের ক্যানভাস। কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু নন্দিনীর সুখের দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে রাখে অন্য এক নারী। দুজনের মাঝে দূরত্ব, সন্দেহ আর ষড়যন্ত্রের বিষ একদিন ডেকে আনে বিচ্ছেদ। স্বামী, সন্তানকে হারিয়ে নন্দিনী আবারও বোন, দুলাভাইয়ের ঘাড়ে চাপে। তাকে ঘিরে আশেপাশে চলতে থাকে নানারকম কানাঘুষা। চরিত্র আর সৌন্দর্যের ব্যঙ্গভরা বাক্য। মেয়ের জন্য মরিয়া হয়েও মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে পারেনি সে।
একদিকে স্বামী পরিত্যাক্তা অন্যদিকে সন্তানহারা নন্দিনী এসব থেকে রেহাই পেতে একসময় বোনের বাড়ি ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি দেয়। স্টেশনে টিকেট চাওয়া নিয়ে তাকে ঘিরে ধরে উপস্থিত জনতা। হঠাৎ অচেনা একজন নন্দিনীর হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে চলন্ত ট্রেনে তোলে। নন্দিনীর জীবনের বাঁক ঘুরে যায় অন্য পথে। এরপর ঘটতে থাকে উপন্যাসের চমকপ্রদ সব ঘটনা।
প্রিয় লাইনঃ
"সন্ধ্যা নামা লালচে আকাশ। সূর্যডোবা সময়। গাছগাছালিতে পাখিদের কিচিরমিচির। ওরা বোধহয় নীড়ে ফিরছে। নন্দিনীর জীবনটা পাখির চেয়েও অধম। পাখিদের স্বাধীন জীবন আছে, দিনশেষে নীড়ে ফেরার তাগিদ আছে। নন্দিনীর কিছু নেই, নন্দিনী আজ নিঃস্ব।
"আকাশে থালার মতো পূর্ণিমা চাঁদ। পূর্ণিমার রাতে গাছের পাতায় সোনালি আভার নাচন দেখতে বেশ ভালো লাগে। এর আগেও দেখেছে নন্দিনী। তবে আজ কেন যেন অন্যরকম ভালো লাগছে।"
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
এক কথায় অসাধারণ লেগেছে উপন্যাসটি। শেষের দিকের এত এত চমকের রেশ এখনো যেন তরতাজা রয়েই গেছে আমার পাঠক হৃদয়ে। প্রথমদিকে খুব সাদামাটা মনে হয়েছে কাহিনীটি। সাংসারিক ভালোবাসা, টানাপোড়েন, ষড়যন্ত্র সবকিছু সাধারণ নিত্য দেখা ঘটনার মতো লেগেছিল। পরবর্তিতে গল্পের মোড় আমার মন ছুঁয়ে দিয়েছে। কোথা থেকে কী হয়ে গেল বুঝতেই পারছিলাম না। এটাই সবচেয়ে বড় গুণ এই উপন্যাসের।
আমার খুঁতখুঁতে মনটাকে বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছিল কৌতূহলগুলো। উপন্যাসের আগন্তুক চরিত্রটি ভীষণ ভালো লেগেছে। অন্যরকম একটা টার্নিং পয়েন্ট চরিত্রটির মাঝে পেয়েছি। শেষের দিকে পলক ফেলতেই পারছিলাম না। কত যে কৌতূহল জমা হচ্ছিল মনে!
গল্প পড়ে যদি কৌতূহল না আসে তবে সে গল্পে কোনো সার্থকতা থাকে না। সেক্ষেত্রে "নন্দিনী উপাখ্যান" আমার কাছে সার্থক, চমকপ্রদ একটি নাম।
নন্দিনী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যে চিঠিটা লিখেছিল, সেই চিঠিটা এবং পরের ঘটনাগুলি আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এছাড়া নন্দিনী আর নিলয়ের সাংসারিক জীবনের ঘটনাগুলি, বেশ উপভোগ করেছিলাম। সর্বোপরি দুঃখ, সুখ, হাসি, কান্নার সংমিশ্রণে মনোমুগ্ধকর এবং সার্থক একটি উপন্যাস নন্দিনী উপাখ্যান।
-----------------------------------
.
মন্তব্যঃ
বইটির শুরু থেকে শেষ সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করেছে। উপন্যাসের প্লট, কাহিনীবিন্যাস, ধারাবাহিকতা, সাবলীলতা, চরিত্র, গল্পের মোড়, সমাপ্তি প্রতিটিতেই ছিল নিখুঁত লেখনীর শৈল্পিক আঁচড়। বইয়ের প্রচ্ছদটিও নিঃসন্দেহে মনকাড়া আর নজরকাড়ার মতো। ভেতরের পাতাগুলো খুব উন্নতমানের মনে হলো। এক একটা পাতা উল্টোনোর খটখটে শব্দগুলো বড়ই তৃপ্তিকর। ঠিক যাকে বলে সোনায় সোহাগা। সবমিলিয়ে পাঠক হিসেবে বইটির জন্য আমার রেটিং ৯.৫/১০।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....