বইয়ের নাম : সায়েন্সভেঞ্চার (৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস) লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী। pdf book download

বইয়ের নাম : সায়েন্সভেঞ্চার (৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস)
লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী।

প্রকাশক:প্রান্ত প্রকাশন
প্রকাশক:প্রান্ত প্রকাশন
প্রচ্ছদ:মেহরাব সিদ্দিকী সাবিত।
মূল্য:৪৫০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা : প্রায় ৩১০।
পার্সোনাল রেটিং :৮.৯/১০
রিডিং টাইম:অনেকদিন
ধন্যবাদ,হ্যাপি রিডিং...
বইয়ের নাম : সায়েন্সভেঞ্চার (৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস) লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী। pdf book download


"মাটির নিচে আছে অন্ধকার দুনিয়া।সেখানে বাস করে অমঙ্গলের দেবতা হেডিস।তাঁর দুই অনুচর- কষ্ট আর ভয়" _ হারকিউলিস।
আমাদের এই গোলাটার নামই তো পৃথিবী,তাই না?
আমাদের এই পৃথিবীর বয়স কত?১শ বছর?১ হাজার বছর?১ লক্ষ বছর?
৪৬০ কোটি বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস এর!না,শুধু যুদ্ধ আর রাজ্য দখলের ইতিহাসের কথা বলছি না!
পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে ঘটে যাওয়া প্রকৃতির সেই অদ্ভুৎ ইতিহাসের কথা বলছি।
আমরা যখন বায়োলজি পরীক্ষায় সংক্ষেপে মানুষ এর ইতিহাস লিখি,তখন আসলে আমাদের কোটি কোটি বছরের ইতিহাসই লিখে দিয়ে আসি।হয়তোবা অজান্তেই,কিংবা জেনে। আমরা মানুষ,হোমো স্যাপিয়েন্স।একইসাথে হোমিনিনি,আবার হোমিনিডি,এমনকি হোমিনইডি এবং সিমিয়ান। আমরা প্রাইমেট আবার আমরা-ই ম্যামাল।আমরা সিন্যাপসিড,আমরা বাইল্যাটারিয়া,একইসাথে কর্ডাটাও।আমরা অ্যানিমেলিয়া আবার এই আমরাই ইউক্যারিওটা!আমরা ৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস।
অনেক গুলিয়ে ফেললাম,সরি।
আজ এই পৃথিবীতে রাজ করছে মানবজাতি।বেশ আরামসে খাচ্ছি,ধ্বংস করছি।কিন্তু আমাদের এই সুযোগ টি কি আদি-তেও ছিল?পৃথিবীর জন্ম থেকেই কি চলছে আমাদের রাজত্ব?
আচ্ছা,প্রাচীনকালেও তো অনেক প্রাণী ছিল,তাদের কয়জনই বা এখন আছে?থাকলে তারা কারা এবং কেন এখনো আছে?আর যারা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে তারাই বা কেন চলে গেল?
আজ যদি আমাদের সঙ্গে ডাইনোসর থাকতো তাহলে কেমন হতো?নিশ্চই এই প্রশ্নের উত্তর আপনি আন্দাজ করে ফেলতে পারবেন,কারণ আমাদের বেশিরভাগই জুরাসিক পার্ক/ওয়ার্ল্ড মুভিগুলো দেখে এসেছি।কিন্তু সেখানে দেখানো ডাইনোসরগুলো কি আদৌ তেমন ছিলো?তারা কি এতটাই হিংস্র ছিলো যে আমাদের সঙ্গে থাকতে হলে তাদেরকে বেঁধে রাখতে হবে!
আমরা তো প্রাচীনকালে ছিলাম না(এই প্রাচীনকাল মানে কয়েকশো বছর আগের প্রাচীনকালের কথা বলছি না,ওটাকে প্রাচীনকাল বলে না।আমি কয়েক কোটি থেকে কয়েকশো কোটি বছরের আগেকার কথা বলছি)।তো,প্রাচীনকালে মানুষ না থাকলেও কিভাবে আমরা আজ বলতে পারছি,অমুক সময়ে তমুক প্রাণী ছিলো,সে এই করতো সেই করত,একে খেত ওকে খেত?!বিজ্ঞানীরা ফসিল থেকে কিভাবে এত তথ্য পান?
সব ডাইনো-রা কি খারাপ?সবাই কি শুধু চোয়াল মেলে হা করে চিৎকার করত আর অন্য দুর্বল প্রাণীদের খেয়ে ফেলতো?
আজ যে তেলাপোকা আছে সে তেলাপোকা কয়েক লক্ষ বছর আগেও ছিলো।কিন্তু এখনকার তেলাপোকা আর তখনকার তেলাপোকারা দেখতে প্রায় একই হলেও এদের মধ্যেই আছে বিশাল ফারাক।
নতুন নতুন বিবর্তন নিয়ে জানলে,সবার মনেই কিছু কমন প্রশ্ন থেকে যায়।মানুষ কি আসলেই বানর থেকে এসেছে?ডাইনোসর(টি-রেক্স) কি তাহলে সত্যিই ছোট হয়ে মুরগী হয়েছে?আসলেই এককোষী প্রাণী থেকে সকল জীবের জন্ম?
এরকম,প্রাচীন পৃথিবী,বিবর্তন এবং প্রাচীন জীবজগৎ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে একটি থ্রিলার বইয়ের মতই লেখা হয়েছে এই বইটি।এরকম কিছু প্রশ্ন,হাইথটের কথাবার্তা,আর এডভেঞ্চার নিয়ে লেখা বইটি পড়লে অনেকসময় গা শিউরে উঠা ফিলিং আসবে,কখনো বা দুর্বলদের গল্প শুনে মায়া লাগবে।আবার কখনো একটা দুটা লাইন শুনে হাসি আসবে।আবার সেগুলো বুঝতেও কাজে দিবে।যেমন:
"প্রাইমেট তোমার নাম কি,দাঁতে পরিচয়!"
বইটিতে প্রথমে আপনাকে পিপড়ার সমান মানব,তথা Ant-man বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে পুকুরে।যখন আকার হয়ে যাবে ব্যাঙাচির চেয়েও ছোট,তখন বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল!
আকার,ছোট সাথে অক্সিজেন,স্যুট আর আপনি আছেন ব্যাকটেরিয়া,ব্যাঙাচি,মাছসহ সব জলীয় প্রাণীর সাথে,যদিও আপনি আকারে প্রায়(!) সবার চেয়ে ছোট।এরপর আপনাকে পরিচয় করানো হবে সেখানকার অপরূপ সৌন্দর্যের সাথে!
এরপর কিছু জিওলজিক্যাল কথাবার্তা চলবে,তারপর আপনাকে ধরিয়ে দেয়া হবে একটা ড্রিল।নিজেই কিছু জেনে আসুন না!
এরপর ধরেন একটা টাইম মেশিন পেলেন,মন চাইবে না কোটি কোটি বছর আগের প্রাকৃতিক বৈচিত্র উপভোগ করার?আপনাকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর অতীতে নিয়ে যাওয়া হবে,সরি পৃথিবীর শুরুতে।সেখান থেকেই শুরু আসল মজা।দ্য এডভেঞ্চার বিগিন্স...
এই হলো মূলত আমার নজরে বইটির প্রকৃতি।মূলত জীববিজ্ঞান এর বই বলা যায় একে।(যদিও প্রায় ৯০% ই প্রাচীন পৃথিবী)।তবে কোথাও কোথাও হালকা পদার্থবিজ্ঞান আছে।যেমন:প্লেট টেকটোনিক্স,জিওম্যাগনেটিজম,ওরোজেনেসিস(পর্বতের জন্ম), মিনানকোভিচ সাইক্যাল(ব্যাসিক্যালি আইস এইজ কেন হয়,ঋতু পরিবর্তনের কারণ ইত্যাদি নিয়ে)ইত্যাদি।
বইটির প্রোডাকশন কোয়ালিটি এভারেজ।যদিও কাগজগুলো বেশ শক্তপোক্ত।কিন্তু ফ্লেক্সিবিলিটি কেমন জানি।চেপে ধরে রাখতে হয়,নাহলে পেজ বন্ধ হয়ে যায়।যাইহোক,প্রোডাকশন আমার কাছে এভারেজ লাগার আরেকটা কারণ আমার কয়েকটা পেজে আঠা লাগানো ছিল,যার ফলে,আলাদা করতে গিয়ে কয়েকটা লাইন এর একটু ক্ষতি হয় :’(
লেখকের লেখার স্টাইল রীতিমতো চমৎকার।কারণ বেশি প্যাচালো না।সহজবোধ্য। আর সহজবোধ্য মানেই চমৎকার।
প্রোডাকশন ভালো না লাগলেও,এই বইয়ের কভারটা আমার এবছরে কেনা সব বইয়ের মধ্যে One of the best!
আমার দৃষ্টিতে বইয়ের কিছু ত্রুটি ছিলো,যেমন:কিছু ছবি ছিলো কোনো হেডিং ছাড়া,যেমন একটা গরগনস্পিডের ছবি আছে,ছবির নিচে নাম নেই যে এটা গরগনস্পিড কিনা।হ্যা,বর্ননা বেশ সুন্দরই ছিলো।কিন্তু টানা পড়তে গেলে,ছবির সাথে এডজাস্ট করা কষ্ট হয়ে যায়।বইটাতে বানান ভুলও ছিলো মোটামোটি।তবে,তা এডজাস্ট করার মত।
সবশেষে বলবো,এই বইটি ভালো লেগেছে,কারণ লেখার স্টাইল সুন্দর।বিষয়বস্তু রেয়ার(বাংলায় এই জনরার বই নেই বললেই চলে)।আর,এই বই পড়লেই হয়ত কেও একজন বুঝবে জীববিজ্ঞান মুখস্ত করার বিষয় না।এর মাঝেও রস আছে!
এটা গল্পের বই,
বিজ্ঞানের গল্প।
বইয়ের নাম : সায়েন্সভেঞ্চার (৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাস)
লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী।
প্রকাশক:প্রান্ত প্রকাশন
প্রচ্ছদ:মেহরাব সিদ্দিকী সাবিত।
মূল্য:৪৫০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা : প্রায় ৩১০।
পার্সোনাল রেটিং :৮.৯/১০
রিডিং টাইম:অনেকদিন
ধন্যবাদ,হ্যাপি রিডিং...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ