বইঃ খ্রিস্টীয় নববর্ষ ও মুসলিম সমাজ PDF Download (সংকলন : বিলিভার্স ভিশন টিম)

বইয়ের নাম : খ্রিস্টীয় নববর্ষ ও মুসলিম সমাজ
সংকলন : বিলিভার্স ভিশন টিম
প্রকাশনীর নাম : বিলিভার্স ভিশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩২ (পকেট সাইজ)
মুদ্রিত মূল্য : বিনামূল্যে
বইঃ খ্রিস্টীয় নববর্ষ ও মুসলিম সমাজ PDF Download (সংকলন : বিলিভার্স ভিশন টিম এর সকল বই পিডিএফ ডাউনলোড করুন PDF Download খ্রিস্টীয় ধর্ম সম্পর্কে বই PDF



বছর শেষ কিন্তু কি পেলাম?
❑ আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীতা

এ বছরের শেষ দিনে মুহাসাবা তথা হিসাব কষতে হবে। মুমিন ব্যক্তি ভালো করেই জানে তার জীবন অনর্থক নয়, আর তাকে অহেতুক সৃষ্টি করা হয়নি। তার এ বিশ্বাসও আছে যে, তাকে এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে না। মানুষ জীবনে অনেক আমল করে আবার ভুলে যায়। কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের সবকিছুর প্রতিদান দেয়া হবে।
মহান আল্লাহ বলেন, সেদিন স্মরণীয়; যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন, অতঃপর তাদেরকে জানিয়ে দিবেন যা তারা করত। আল্লাহ্ তার হিসাব রেখেছেন, আর তারা তা ভুলে গেছে। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী। (সূরাহ মুজাদালাহ ৫৮:৬)
মানুষ প্রতিনিয়ত হাজারো নিয়ামতে ডুবে আছে। তাদের সামনে এমন অনেক বিষয় উপস্থিত হয় যা তাদেরকে হিসাব-নিকাশ ও আখিরাতের কথা ভুলিয়ে দেয়।

❑ আত্মসমালোচনা কীভাবে করতে হয়:

প্রত্যেকে নিজ আমলের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) আত্মসমালোচনার যে পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন তা হলো —
1. ফরযসমূহ দিয়ে কাজ শুরু করবে, যদি তাতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাও, তা সংশোধন করবে।
2. 2. অতঃপর নিষিদ্ধ কাজসমূহ, যখন সে জানতে পারবে কোনো নিষিদ্ধ কাজে সে জড়িত হয়েছে তাহলে তাওবা-ইস্তিগফার এবং গুনাহ মোচনীয় নেককাজের মাধ্যমে সংশোধন করে নিবে।
3. 3. অবহেলার জন্য আত্মসমালোচনা করা এবং এর প্রতিকার করা আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেওয়া, আল্লাহকে স্মরণ করা।
4. 4. অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার— কথা বলা, চলাফেরা, হাতের ব্যবহার, চোখের দৃষ্টি, কানের শ্রবণ ইত্যাদি ব্যবহারের ওপর আত্মসমালোচনা করা, এগুলোর ব্যবহার দ্বারা আপনার উদ্দেশ্য কী ছিল? কার জন্যে করেছেন? কোন পদ্ধতিতে করেছেন?
যদি সে এমনটি করে থাকে তাহলে সে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছে, কেমন যেন সে আল্লাহকে দেখছে। আর যদি সে তাঁকে দেখতে না পায়, তাহলে একথা মনে করবে যে, আল্লাহ্ তো তাকে দেখছে।
যে ব্যক্তি ইহকালে নিজের হিসাব গ্রহন করে সে আখিরাতে নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশি বেশি হেসে অল্প অল্প কাঁদবে তার ব্যাপারে আখেরাতে বেশি কাঁদার ভয় আছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: অতএব তারা অল্প হাসুক এবং বেশি করে কাঁদুক। (সূরা তাওবাহ ৯:৮২)

ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন: দুনিয়া অল্প সময়ের, এখানে যতটুকু ইচ্ছা হেসে নিক। যখন দুনিয়া ত্যাগ করে আল্লাহর নিকট যাবে, তখন নতুন করে কাঁদতে শুরু করবে, যে কাঁদা আর কখনও শেষ হবেনা। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবাহ, সনদ সহীহ)

আবু হুরাইরাহ ও আবু সায়ীদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন: কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, অতঃপর তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে চক্ষু, কর্ণ, সম্পদ ও সন্তান দান করিনি? এবং ক্ষেত-খামার ও চতুষ্পদ জানোয়ার বশীভূত করে দেইনি? শুধু তা-ই নয়, আমি তোমাকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আচ্ছা তুমি কি আজকের দিনের সাক্ষাতের কথা ভেবে দেখেছ?
সে তখন বলবে: না। তখন তাকে বলা হবে: আজকের দিন তোমাকে আমি ভুলে যাচ্ছি, যেমনিভাবে তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছ। (সুনানুত তিরমিযি, হা.২৪২৮। ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে সহীহ গারীব বলেছেন।)

ইমাম তিরমিযি বলেন,“তোমাকে ভুলে যাচ্ছি” কথার অর্থ হলো, আমি আজ তোমাকে শাস্তি প্রদান করলাম। তিনি আরও বলেন, কিছু আলিম (“আজ আমি তাদের ভুলে গেছি”) (সূরা আরাফ : ৫১) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আজ আমি তাদের শাস্তি কার্যকর করলাম।

❑ দেহের চিকিৎসার চেয়ে অন্তরের চিকিৎসার গুরুত্ব অধিক:

যখন শারীরিক অসুস্থ ব্যক্তি নিজের রোগ নির্ণয় করে তার চিকিৎসার জন্যে ব্যস্ত হয়ে যায়, তখন গুনাহের কারণে অন্তরের অসুস্থ ব্যক্তি আরো অধিক পরিমাণে চিকিৎসার জন্যে ব্যস্ত হওয়া উচিত। দৈহিক চিকিৎসার তুলনায় আত্মিক চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। দৈহিকভাবে মারাত্মক রোগগ্রস্ত ব্যক্তির জীবন যদি আযাবে পরিণত হয়, তাহলে আখিরাতের আযাব তো আরো অধিক কঠিন ও যন্ত্রনাদায়ক।
বর্তমান যুগে গুনাহ ও অপরাধের ময়দান বড়ো প্রশস্ত এবং এর দিকে আহ্বানকারী অনেক। আর আনুগত্যের রাস্তাগুলো সংকীর্ণ এবং তার দিকে আহ্বানকারীও অতি সামান্য। ফিতনা জোয়ারের মতো ধেয়ে এসে ঘরে-বাইরে ও বাজারে মানুষকে পাকড়াও করে, সন্তান-সন্তুতি ও নারীদের ধ্বংস করছে।
বাতিলপন্থিরা সর্বদা আল্লাহর বান্দাদের ভ্রান্ত পথের দিকে আহ্বান করে। অতএব, আমরা আমাদের নিজেদের ঘর থেকে কীভাবে তা প্রতিরোধ করব?
বছর অতিবাহিত হচ্ছে এবং গুনাহ বেড়েই চলছে, পরকার নিকটবর্তী হচ্ছে, আর আমরা তা থেকে সম্পূর্ণ গাফিল, আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত কিছু লোকের কথা ভিন্ন। তাদের সংখ্যা খুবই কম। আমরা অল্প নেক আমল করেই আল্লাহর সামনে বড়াই করি এবং কবীরা গুনাহ ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হই। আমরা যে গাফিল তা কি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি?
একদল লোক ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (রাহি.) এর নিকট এসে অনাবৃষ্টির অভিযোগ করে আল্লাহর নিকট দু‘আ চাইতে বললেন। তিনি বললেন: তোমরা অনাবৃষ্টির অভিযোগ করছ, আর আমি তো আকাশ থেকে পাথর নিক্ষেপের অপেক্ষা করছি।

❑ উম্মাতের উপর গুনাহের কুপ্রভাব:

অধিকাংশ মানুষ অধিক পরিমাণে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে মুসলিম উম্মাহ খাবারের সাধারণ দস্তরখান ও খোলা সিন্দুকে পরিণত হয়েছে, তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গিয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর লেলিয়ে দিয়েছেন।
তাদের গুনাহ ও অপরাধ তাদেরকে অপদস্থতা উপহার দিয়েছে। গুনাহের সাথে অন্তর নিস্তব্ধ হয়ে মরে গিয়েছে। ইয়াতীমদের অশ্রু দেখে এবং বিধবাদের কান্নার আওয়াজ শুনে আমাদের কর্ণ ও চক্ষুগুলো কেমন যেন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় অবিবাহিত মুসলিমের চরিত্র ধ্বংস করা খুব সহজ কাজে পরিণত হয়েছে, বরং কাফিরদের পক্ষ থেকেও তাদেরকে আনন্দ উল্লাসের জন্যে আহ্বান করা হয়। (লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম।)
সবচেয়ে বড়ো মুসীবত হলো, এসব সত্ত্বেও আজও মুসলিমরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে দ্বিধাবিভক্ত। তারা একে অপরকে অপছন্দ করে, বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক বিদ্বেষ কাফিরদের প্রতি বিদ্বেষকেও হার মানায়। এসব কেন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ