⦁ বইয়ের নাম: হাদীসের নামে জালিয়াতি।
⦁ লেখক: ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।
⦁ প্রকাশনায় : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন।
⦁ পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৭১।
⦁ মুদ্রিত মুল্য : ৪৫০ টাকা মাত্র।
❒ ভূমিকা,
.
আল্লাহর ক্বুর'আনের পরেই দ্বীন ইসলামের মূলভিত্তি হল হাদীস। এইজন্যই প্রানাধিক প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস বিশুদ্ধভাবে মুখাস্তকরন, লিপিবদ্ধকরন ও প্রচার-প্রসারের নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসাথে মিথ্যা হাদীস বলতে ও সেটা তাঁর নামে চালিয়ে দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এমনকি মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামী পর্যন্ত বলেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন --- "নিশ্চয়ই আমার উপর মিথ্যা বলা, কারো উপর মিথ্যা বলার মত নয়, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।" --- [স্বহীহ বুখারী: ১২৯১]।
তিনি আরও বলেছেন --- "যে ব্যাক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।" --- [স্বহীহ বুখারী: ১০৯]।
তিনি আরও বলেছেন --- "নিশ্চয়ই মানুষ এমন কথাও বলে, যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করেনা; অথচ এর জন্যই সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।”--- [তিরমিযী, হা/২৩১৪]
.
এতদ্বসত্ত্বেও মিথ্যা হাদীস বর্ণনা ও জালিয়াতির প্রচেষ্টা প্রচীন যুগ থেকেই চলে আসছে। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন থেকে শুরু করে আমাদের সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ কোনটি রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস আর কোনটি রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস নয়, তা পৃথক করেছেন। তবুও তাহক্বীক্বী জ্ঞানের অভাবে অনেক দাঈ, বক্তা ও স্বনামধন্য লেখকগণ জাল হাদীস বর্ণনা, বলা ও লিখার মাধ্যমে এ-কঠিন পাপে পতিত হচ্ছেন। সেইসাথে পথভ্রষ্ট করছেন দিকভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহকে।
.
❒ বইটি কেন পড়বেন,
.
বাজারি বক্তা, হুযুর ও কতিপয় লেখকের ধোঁকায় পড়ে, জাহালতের কারণে কিংবা তাহক্বীক্বী জ্ঞানের অভাবে প্রচলিত জাল-দ্বইফ হাদীসের উপর আমল করে আমরা যারপরনাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) যা করতে বলেন নি, তা করে পণ্ডশ্রম করছি। এমনকি জাল হাদীসের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সেটাকেই শরীআহ'র অংশ মনে করছি।
.
আমাদের সমাজে জাল হাদীসের বিষয়ে দু'প্রকারের বিভ্রান্তি বিরাজমান। অনেকেই মনে করেন "হাদীস" মানেই রাসূলের বাণী, সুতরাং কোনো হাদীস দূর্বল বলার অর্থ রাসুল (ﷺ)-এর কথা বা বাণীকে দূর্বল মনে করা। কেউবা মনে করেন, যতই দূর্বল বা দ্বইফ হউক না কেন যেহেতু ইহা রাসূলের কথা আর তাই তা গ্রহণ ও পালন করা আবশ্যক। এভাবেই একদল লোক মুহাদ্দিসদের রক্ত পানি করা খেদমতকে কবর নিয়ে সমাজে প্রচলিত জাল ও বানোয়াট হাদীসের বীজ বপন করে থাকে।
অন্যদিকে আরেকদল যাহিল পন্ডিত মনে করেন, হাদীস যেহেতু মৌখিকভাবে সনদ ও বর্ণনাকারীর পরম্পরায় বর্ণিত এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মউতের কয়েকশো বছর পরে লিখিত ও সংকলিত, আর তাই তাতে ভুলভ্রান্তি থাকা আবশ্যক। এইজন্য-ই হাদীসের উপর নির্ভর করা অনুচিত। কেউবা বলেন, হাদীসের মধ্যে অনেক জাল কথা আছে আর তাই আমরা নিজের বিবেকের মিজান দিয়ে হাদীসের অনুসরণ করব। এ-সকল বিভ্রান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে, হাদীসের সনদ বিচার ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাইকরণে সালাফদের গৃহীত মুলনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা ।
যাইহোক, আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে হাদীসের পঠন, পাঠন ও চর্চা থাকলেও স্বহীহ, দ্বইফ, মওযূ, বানোয়াট হাদীস বাছাইকরণে বিশেষ অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে । অতএব, সমাজে প্রচলিত বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা হাদীসের নামে চালিয়ে দেয়া সম্পর্কে জানতে "হাদীসের নামে জালিয়াতি" গ্রন্থটি অবশ্যপাঠ্য।
.
❒ এক নজরে সূচিপত্র,
.
আলোচ্য গ্রন্থটি এগারো-টি পরিচ্ছদে সাজানো হয়েছে।
প্রত্যেক পরিচ্ছদে বিস্তারিত আলোচনা গ্রন্থটিকে আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। গ্রন্থাকার প্রচলিত মিথ্যা ও জাল হাদীসের উপর নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি অত্যান্ত চমৎকার, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশে এ-বিষয়ে লেখা পুস্তককাদীর সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল, তাই সর্ব শ্রেণীর মানুষ তথা ইসলামী শিক্ষিত, সাধারণ শিক্ষিত এবং স্বল্পশিক্ষিত লোকজনও যেন বইটি পাঠ করে মিথ্যা ও জাল হাদীস সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানার্জন করতে পারেন সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমার কাছে এই মাস্টারপিস গ্রন্থটি সময়োপযোগী, যৌক্তিক ও জ্ঞান পিপাসুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
.
আলোচ্য বইটি পড়তে যেয়ে বেশকিছু ভালো আলোচনা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যাইহোক, কথা লম্বা না করে সংক্ষিপ্তাকারে অধ্যায়গুলির বিষয়বস্তু তুলে দেই, যাতে আপনারা প্রাথমিক ধারণা পেতে পারেন ----
⦁ হাদীস ও হাদীসের নামে জালিয়াতি।
⦁ অশুদ্ধ হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা।
⦁ স্রষ্টা, সৃষ্টি ও পূর্ববর্তী নবীগণ।
⦁ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বিষয়ক জাল হাদীস।
⦁ আহলে বাইত, সাহাবী - তাবেঈ ও উম্মত।
⦁ বেলায়াত, আওলিয়া, ইলম বিষয়ক।
⦁ ঈমান বিষয়ক।
⦁ সালাত ও আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ।
⦁ বার চাঁদের সালাত ও ফযীলত।
⦁ যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ।
⦁ মৃত্যু জানাযা, দু'আ, যিকর ইত্যাদি।
⦁ শুভাশুভ, সাজসজ্জা, পানাহার ও বিবিধ।
⦁ অন্যান্য কিছু বানোয়াট হাদীস।
.
পরিশেষে দো'আ করছি, মহান আল্লাহ্ গ্রন্থটির লেখককে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আমাদেরকে সংশয়হীন স্বহীহ দলীল প্রমাণের অনুসরণ করার তাউফ্বীক দান করুন - আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
.
রিভিউ লেখক : আখতার বিন আমীর।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....