Shesher Kabita (PDF Download) Novel by Rabindranath Tagore(বইঃ শেষের কবিতা)

বইঃ শেষের কবিতা (যে উপন্যাসের কোনো শেষ নেই)
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
Shesher Kabita (PDF Download)(New Version) Novel by Rabindranath Tagore(বইঃ শেষের কবিতা পিডিএফ ডাউনলোড PDF Download Rabindranath Tagore all book Pdf



রিভিউ মোঃ শাহীন আলম_______________________
কবি গুরুর লেখা (শেষের কবিতা) বইটি যে কতটা জনপ্রিয় তা আমরা প্রায় সবাই জানি। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো লেখা নিয়ে রিভিউ দেওয়া আমার মত ক্ষুদ্র পাঠকের পক্ষে দুরূহ কাজ। আরও দুরূহ হচ্ছে (শেষের কবিতা) বইয়ের মতো চতুর্ভুজাকার কোনো বইয়ের লেখা নিয়ে রিভিউ দেওয়া। তবুও আমার বেখেয়ালি পাঠ থেকে যতটুকু সম্ভব হয়েছে সংক্ষিপ্ত রিভিউ আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। কোথায় থেকে শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না! তাই কিছুটা উইকিপিডিয়ার সাহায্যেই করেছি...
 
শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো কবিতার বই নয়। এটি রবীন্দ্রনাথের একটি কাব‍্যধর্মী রোমান্টিক উপন‍্যাস যেটিতে স্থান পেয়েছে রীতিমতো ১০টি কবিতা। বইটির মূল কাহিনী এক চতুর্ভুজাকার প্রেম কাহিনী বলেই গণ্য করা যায়। অমিত, লাবণ্য, কেতকী এবং শোভনলাল এই চার চরিত্রের Love Story.

বইয়ে অমিত আর লাবণ্যের ভালোবাসার পর্বটি আলোচনায় থাকলেও বইয়ের শেষে গিয়ে পরিনতি ঘটে ভিন্ন। কেতকী আর শোভনলাল এই দুই চরিত্র কে প্রথম দিকে আড়াল করে রাখলেও শেষ পরিণতিতে তাদেরকেও গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তুলেছে লেখক। 

উপন্যাসের নায়ক ব‍্যারিস্টার অমিত‌।রোমান্টিক কাব‍্য ভরা এক চরিত্র যার জাঁকালো ভাবে কথা বলা, মেয়েদের সাথে মধুর বাক‍্যলাপ ও মানুষকে কবিতা শোনানোর প্রবণতা আছে। একদিন অমিত ঘুরতে যায় শিলঙ পাহাড়ে। বিষন্নতায় কাটলো অমিতের কিছুটা দিন শিলঙে। তারপর দেখা হয় লাবণ্যের সাথে। 
অমিত আর লাবণ্যের পরিচয় পর্বটা বেশ মনোমুগ্ধকর, চলচ্চিত্রের অংশের মতো। ধীরে ধীরে ভালো লাগার সৃষ্টি হয় অমিতের মনে লাবণ্যের জন্য। আর সেটা প্রকাশ করতেও দেরী করেননি অমিত। লাবণ্যের মনেও যে ভালো লাগা ছিলনা তা বলা যায় না। তবুও কোনো এক ভয় ছিল লাবণ্যের মনে। 
কিন্তু কী ভায়? ভয়টা কী যথার্থ? 
লাবণ্য এটা বুঝতে পারে অমিত রোমান্টিক কাব‍্য ভরা এক ব‍্যক্তিত্ব এবং অক্সফোর্ডে ব্যারিস্টারি পড়া এক শিক্ষিত সুদর্শন পুরুষ যার দ্বারা যে কোনো মেয়েকে আকৃষ্ট করার সম্ভব। তাই লাবণ্য অমিতের কাছে নিজেকে অযোগ্য বলে ধারণা করত। যে কারণে লাবণ্য অমিত এর ডাকে সারা দিত না। 
কিন্তু লাবণ্য এই ডাক বেশি দিন উপেক্ষা করতে পারেনি। ফলে তাদের বিয়ে ঠিক হয়, অঘ্রাণ মাসে লাবণ্য আর অমিত এর বিয়ে। যোগমায়া কলকাতায় গিয়ে সমস্ত বিয়ের আয়োজন করবে। অমিত লাবণ্যে কে বন্যা বলে ডাকত। আর লাবণ্য অমিত-কে মিতা বলে ডাক। অমিত লাবণ্যকে বন্যা দেওয়া নামটা নিয়ে অনেক মিষ্টি মিষ্টি কবিতাও শোনাতো: 
                                           হে মোর বন্যা, তুমি অনন্যা,
                             আপন স্বরূপে আপনি ধন্যা।

তাদের এই মিষ্টি প্রেমময় সময় খুব বেশি দিন না যেতেই
হঠাৎ একদিন শিলঙ পাহাড়ে যোগমায়ার বাড়িতে এসে উপস্থিত অমিতের বোন সিসি,সাথে আসে(কেতকী) তারপর কাহিনি বদলে যায় হঠাৎ করে। 

কিন্তু কেন?

অমিত অক্সফোর্ডে পড়তে গিয়ে কেতকীর সাথে এক প্রকার ভাব হয়ে যায় তাঁর। ৭বৎসর আগে অমিত নিজের আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে কেতকীর হাতে পরিয়ে দেয়েছিল। তখন ওরা দুজনেই ইংলেন্ডে। 
অমিতের সাথে লাবণ্যের বিয়ের কথা শোনে কেতকীর মত মেয়ের চোখে নেমে আসে আবেগের জল।

তাহলে কী অমিত 
লাবণ্য-কেতকী দুজনকেই ঠকিয়েছে??

এই পরিণতি নিয়ে কারো দ্বিধা দ্বন্ধ থাকলে লেখক তা অমিতের এই কথার মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিয়েছেন :
                -কেতকীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালবাসারই,       
       কিন্তু সে যেন ঘড়ায় তোলা জল। প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব‍্যবহার করব। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।" 

এইবার আসি শোভনলালের চরিত্রটা নিয়ে..

লাবণ্যের বাবা অবনীশ দত্তের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে প্রায়ই পড়তে আসতেন শোভনলাল। সেখান থেকেই লাবণ্যের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় শোভনলালের।
অবনীশ দত্তের বেশ পছন্দ শোভনলাল-কে। অবশ্য নিজের মতামত মেয়ের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মানুষ নন অবনীশ। 

অমিত, লাবণ্য, কেতকীর বিষাদময় মুহূর্ত চলাকালীন লাবণ্যের কাছে একটি ছোট চিঠি আসে 
শোভনলালের লেখা: 
শিলঙে কাল রাত্রে এসেছি। যদি অনুমতি দাও তবে দেখতে যাব। না যদি দাও কালই ফিরব। তোমার কাছে শাস্তি পেয়েছি, কিন্তু কবে কী অপরাধ করেছি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট করে বুঝতে পারি নি। আজ এসেছি তোমার কাছে সেই কথাটি শোনবার জন্যে,নইলে মনে শান্তি পাই নে। ভয় করো না। আমার আর কোনো প্রার্থনা নেই। 
চিঠিটা পড়ে লাবন্যের চোখ জলে ভরে এল। চুপ করে বসে ফিরে তাকিয়ে রইল নিজের অতীতের দিকে।

-শোভনলালের এই চিঠির জবাব লাবণ্য কী দিয়েছিল?
লাবণ্যের কাছে কী শোনতে চায় শোভনলাল? যে কথা না শোনা পর্যন্ত মনে শান্তি পাচ্ছে না। লাবণ্য কী সেই কথা তাঁকে শোনাবে?? অমিত এবং কেতকী তাদেরই বা শেষ মুহূর্তে কী হয়?? জানতে হলে আপনাকে
(শেষের কবিতা) সম্পূর্ণ উপন্যাসটি পড়তে হবে। 

-শেষের কবিতা বইয়ের কোনো শেষ নেই!
এই বইয়ের মাঝে যদি কোনো ক্রুটি থেকেও থাকে তাহলে তা শেষের কবিতার শেষ কবিতাটির মাধ্যমে দারুণ ভাবে পুষিয়ে দিয়েছেন লেখক। 

শেষের কবিতার শেষ কয়েকটি লাইন:
                                                         -হে ঐশ্বর্যবান, 
                         তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান-
                গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
                                     হে বন্ধু, বিদায়।

প্রেম কি শুধু একটা সময়ে একজনের জন্যই আসে? আর যদি কারো মন একই সময়ে দুজনের জন্য দুভাবে নাড়া খায়? ভালোবাসাকে নির্দিষ্ট সংখ্যা বা গণ্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না। তাকে বয়ে যেতে দিতে হয়, উড়তে দিতে হয় আকাশের মুক্ত বিহঙ্গের মতোই। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে ভালোবাসার আচরণ একটু অন্যরকম, অনেকটাই আটপৌরে। আটপৌরে বলে তার গুরুত্ব কমে যায় না, বরং জীবনটাকে বেঁধে রাখে এই আটপৌরে প্রেমের অভ্যেস। অন্যদিকে থাকে সীমাহীন বিস্তৃত প্রেম, নিজেকেই যাতে হারিয়ে ফেলা যায়। এ প্রেমের তল পাওয়া যায় না, আকণ্ঠ নিমজ্জনে তাতে শুধু সাঁতরে বেড়ানো যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ একটি মনস্তাত্ত্বিক রোম্যান্টিক উপন্যাস এবং এতে প্রেমের দুটি স্বরূপকে খুব স্পষ্ট করে প্রকাশ করা হয়েছে। একদিকে অমিত রায়ের উচ্চমার্গীয় সমাজের নাকউঁচু লোকের সভা, অপরদিকে স্বমহিমায় বিরাজিত শিলং পাহাড়ের প্রকৃতিকন্যা লাবণ্য। দুটো মেরু মুখোমুখি দাঁড়ায়, মাঝখানে সুবিস্তৃত অঞ্চল। বহুদূর, তবু অবিরাম স্বচ্ছতা মনে করায়, তারা কাছেই আছে।
রোমান্টিসিজম ও বাস্তববাদিতা এ দুয়ের এক অদ্ভুত মিলন দেখতে পাই এ উপন্যাসে। একদিকে পেছনের সবকিছুকে তোয়াক্কা না করে অমিত-লাবণ্য একে অপরের প্রণয়ের আলিঙ্গনে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একবারও সে বন্ধনকে খেলো হতে দেয়নি তারা। একদম শেষপর্যন্ত দেখা যাবে যে তারা একে অপরের কতটা কাছে আছে, তার পরিমাপ করাটা অনেক কষ্টকর। রবি ঠাকুরের একটি কবিতার লাইনেই যেন তাদের পরিণতি বোঝা যায়,

“যারা কাছে আছে, তারা কাছে থাক

তারা তো পাবে না জানিতে

তাহাদের চেয়ে কাছে আছ তুমি

আমার হৃদয়খানিতে”

সাহিত্যের সমঝদার অমিত ও লাবণ্য দুজনেই। দুজনের বেড়ে ওঠার ধরন ভিন্ন, জীবন ও যাপনে রয়েছে বৈপরীত্য। তবু একে অপরের মধ্যে যেন নিজের পরিপূরক রূপ খুঁজে পায় তারা। অমিত কলকাতার উচ্চবিত্ত সমাজের তরুণীদের হৃদয়ে মুহূর্তেই আলোড়ন জাগানো এক যুবাপুরুষ। সে-ও তরুণীদের এই আলোড়ন খুব উপভোগ করে। কিন্তু সে যা চায়, তা যেন শুধু ঐ আলোড়ন নয়। সে ফ্যাশন চায় না, চায় স্টাইল। তার মতে, “ফ্যাশনটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী”। চারদিকে শুধু ফ্যাশনেরই ছড়াছড়ি। চাইতে না চাইতে অমিতও সেই ফ্যাশনের অন্তর্গত দলের সদস্য। কিন্তু লেখক অমিতের মনের চাওয়াটা বুঝতে পেরে বলেছেন, “অমিতের নেশাই হলো স্টাইলে”। তাই সে ফ্যাশনের সঙ্গ উপভোগ করলেও শেষমেশ স্টাইলের কাছেই আশ্রয় খুঁজতে চাইবে, এ আর আশ্চর্য কি!

অমিত চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে চলতে চাওয়া। নিজেকে আলাদা করে দেখাতে চাওয়া প্রতিটি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। যে যতই বলুক না কেন, “আমি সাধারণ”, সেই বলার পেছনেও থেকে যায় অসাধারণ হবার একটি আকুতি। অমিতের মধ্যেও সেই ছাঁচটি রয়ে গেছে। সে সবদিক দিয়ে নিজেকে আলাদা দেখাতে মরিয়া। পাঁচজনের মধ্যে তাকেই যাতে লোকে দেখে। সবাই আলাদা দেখাতে চাইলেও সবাই সেটা পারে না, পারে কেউ কেউ। অমিত সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই গর্বিত এক সদস্য।

লেখক নারীর মধ্যে সেই ‘ফ্যাশন’কে কিছুটা চিত্রকল্পের সাহায্যে দেখাতে চেয়েছেন এভাবে,

“এরা খুট খুট করে দ্রুত লয়ে চলে; উচ্চৈঃস্বরে বলে; স্তরে স্তরে তোলে সূক্ষ্মাগ্র হাসি; মুখ ঈষৎ বেঁকিয়ে স্মিতহাস্যে উঁচু কটাক্ষে চায়, জানে কাকে বলে ভাবগর্ভ চাউনি; গোলাপি রেশমের পাখা ক্ষণে ক্ষণে গালের কাছে ফুর ফুর করে সঞ্চালন করে, এবং পুরুষবন্ধুর চৌকির হাতার উপরে বসে সেই পাখার আঘাতে তাদের কৃত্রিম স্পর্ধার প্রতি কৃত্রিম তর্জন প্রকাশ করে থাকে”

এই ক’টি লাইনের মাধ্যমে সেই সময়ের উচ্চবিত্ত ও নবশিক্ষিত সমাজের একটা ছবি ধরা দেয়। কেমন ছিলেন তখনকার শিক্ষিতা মহিলারা? কেমন ছিল তাদের আচরণ? তারা তখন একটা নির্যাস নিজের মধ্যে শুষে নিতে বেপরোয়া, পাশ্চাত্যের ছোঁয়ালাগা একটা আধুনিক পরিচয় তারা নিজেদের দিতে চান।

কিন্তু উপন্যাসের নায়ক অমিত কাকে চায়?

জানতে হলে পড়ে ফেলুন বইটা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ