গ্রীষ্মের বিকেলে ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া ৮ম পর্ব ©মারুফ হুসাইন

গ্রীষ্মের বিকেলে ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া
৮ম পর্ব
©মারুফ হুসাইন।
(✍️ This article is collected from author timeline📚 (All Credit To Go Real Hero The Author of this Article 📖) 


শরিফুল বেশিদিন পালিয়ে বাঁচতে পারল না৷ সামিয়াকে পড়াতে যাওয়ার পনেরো নাম্বার দিন মুনার সাথে তার ঠিকই দেখা হয়ে যায়৷ সামিয়াকে পড়ানোর সময় মুনা অফিসে থাকে। সে আসতে আসতে শরিফুল পড়ানো শেষ করে চলে যায়। মুনার ছুটির দিনগুলোতে সে পড়াতে আসে না৷ তার পাঁচ দিন পড়ানোর কথা। সে ইচ্ছাকৃতভাবেই মুনার ছুটির দু দিন না পড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছে৷

সেদিন মুনা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে৷ সে বুঝে গেছে, তার বাসায় না থাকার সময়টা শরিফুল পড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছে৷ তাই আজ সে আজ শরিফুলের দেখা পাওয়ার জন্য হাফ টাইম করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে যায়।

বাসায় ফিরে সে সোজা সামিয়ার রুমে যায়। শরিফুল সামিয়ার সাথে খেলছে। সে যে এসে দাঁড়িয়েছে সেদিকে খেয়াল করছে না। সে গলা খাকারি দেয়৷ শরিফুল তার দিকে তাকায়। কিন্তু তাকে কিছু বলে না। এমন ভাব নেয়, যেন স্টুডেন্টের মায়ের পরিচয় ছাড়া তার সাথে আর কোনো পরিচয় নেই৷
শরিফুল সামিয়ার দিকে ফিরে ফিসফিস করে বলে, 'মাম্মা! এখন খেলা বাদ দিয়ে পড়তে হবে। তোমার মামুনি দাঁড়িয়ে আছে৷'

মুনা রাগে দাঁত কামড়াচ্ছে। কিন্তু কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। শরিফুলও তার দিকে কোনো খেয়াল দিচ্ছে না। সে সামিয়াকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছে৷

মুনা নিজের রাগ সামলানোর চেষ্টা করে। তার উচ্চবাচ্য করতে ইচ্ছে করছে৷ প্রচন্ড রাগে শরিফুল চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোনো উপায় নেই৷
'পড়ানো শেষে আমার সাথে দেখা করে যাবেন।' সে নিজের রাগ দমিয়ে রেখে শরিফুলকে উদ্দেশ্য করে বলে। 
'জি, আমি চেষ্টা করব।' শরিফুল তার দিকে না তাকিয়েই বলে। 
মুনার রাগ বেড়ে যায়৷ সে নিজের দাঁত কামড়ে ধরে বলে, 'চেষ্টা নয়, যা বলছি তাই করবেন।' সে আর দাঁড়ায় না। রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷

'মামনি তোমার উপর রাগ করেছে৷ তোমাকে বকা দিবে আজ!' মুনা চলে যেতেই সামিয়া শরিফুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে৷
শরিফুল চেহারায় কান্নার ভাব এনে ঢং করে বলে, 'হ্যাঁ আমার খুব  ভয় করছে৷ আমার আজ আর রক্ষা নেই৷' বলেই সামিয়ার সাথে আবার দুষ্টুমি শুরু করে দেয়। 

পড়ানো শেষ করে শরিফুল কিছু না বলে চুপিচুপি বেরিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে৷ কিন্তু কোনো লাভ হয় না। দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই সোফায় মুনাকে বসে থাকতে দেখে। তাকে দেখেই মুনা বলে, 'দেখা না করেই চলে যেতে চাচ্ছ?'
শরিফুল কিছু বলে না। নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
'বসো!' তার সামনের সোফায় ইঙ্গিত করে বলে।
শরিফুল সামনের দিকে ঝুকে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। তার কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। 
মুনা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ শরিফুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেমন উশকো-খুশকো চুল। দেখলে মনে হয়, জীবনে চুলে চিরুনি লাগায়নি। দাঁড়ি-গোফও বড় হয়ে আছে৷ ঠিক মতো কাটে বলে তার মনে হচ্ছে না, 'চেহারার এই অবস্থা করেছ কেন? নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারো না।'
শরিফুল মাথা তুলে মুনার দিকে তাকায়। তার বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। কী উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে না। মুনার দিকে তাকিয়ে থাকার মতো শক্তিও পাচ্ছে না৷ তাই আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
'আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন? প্রথম দিন খেয়ে যেতে বললাম। কিন্তু চোরের মতো পালিয়ে গেলে। সেদিন ঠিক যেভাবে পালিয়ে গিয়েছিলে!'
শরিফুলের কষ্ট হয়। চিৎকার করে সব কিছু বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে বলতে পারে না। মুনার ভুল ভাঙ্গিয়ে সে আবার তার দিকে দূর্বল করে তুলতে চায় না। মেয়েটা তার বর্তমান নিয়ে সুখি থাকুক বলেই সে চায়, 'আমি ওঠলাম!' বলে শরিফুল উঠে পড়ে। দরজার দিকে পা বাড়ায়৷ 
'তুমি যাবে না।' মুনা চিৎকার করে ওঠে, 'আর কত পালিয়ে বেড়াবে!'
শরিফুল তার কথা কানে নেয় না। দরজা খুলে বাইরে পা বাড়ায়।
'শরিফুল তোমাকে যেতে নিষেধ করছি। আমার প্রশ্নের উত্তর চাই, তুমি আমার সাথে এমনটা করলে কেন? আমি কী দোষ করেছিলাম?'

শরিফুল বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে ভাবে, এই টিউশনিতে আর আসবে না। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে চলে গেলে জসিম রাগ করতে পারে৷ তাই সে জসিমকে ফোন দেয়, 'দোস্ত! আমি এই টিউশনিটা করতে চাই না।'
'কেন?'
'কারণ আছ৷'
'মাত্র অল্প কয়েক দিন গেলি। এখনি ছেড়ে দিতে চাচ্ছিস। কী হয়েছে বল আমাকে!' 
'জোর করিস না। বলতে পারব না দোস্ত!'
'কিন্তু তুই টিউশনিটা এভাবে ছেড়ে দিতে চাইলে আমি ঝামেলায় পড়ে যাব। বুঝিস-ই তো অফিসের বসের মেয়ের টিউশনি নিয়ে দিয়েছি। তোর কত প্রশংসা করেছি৷ এখন এভাবে ছেড়ে দিতে চাইলে আমি ঝামেলায় পড়ে যাব।'
শরিফুল কী করবে বুঝতে পারে না, 'থাক তোকে ঝামেলায় ফেলতে চাই না৷ পড়িয়ে যাই!' বলে ফোন কেটে দেয়।

তার আজকে আরো একটা টিউশনি আছে। কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছে না। সে হাঁটতে শুরু করে৷ রমনায় যাবে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে রমনায় পৌছুবে। সেখানে কোনো একটা গাছের নিচের বেঞ্চিতে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে৷
আজকে মাঞ্জুর দেখা করতে বলেছিল। সন্ধ্যায় তার ডিউটি আছে। হাসপাতালেই থাকবে৷ বিলকিস আপা যে বিভাগে ভর্তি সেখানকার ইনচার্জের সাথে নাকি কথা হয়েছে। তাই সেই ব্যপারেই তার সাথে কথা বলবে। 

এখন মাত্র বিকেল। সন্ধ্যা হতে অনেক দেরী৷ আর মাঞ্জুরের ডিউটি বেশ রাত অবধিই। তাই একটু দেরী হলেও অসুবিধা নেই।

শরিফুল রমনায় ঢুকে ছায়া দেখে একটা বেঞ্চির উপর শুয়ে পড়ে৷ চোখ বন্ধ করে, মুনার চেহারাটা তার সামনে ভেসে ওঠে৷ কিছুক্ষণ আগে তারা মুখামুখি হয়েছিল। বারবার সেই ব্যপারগুলো মাথায় ঘুরছে। সে মিনমিন করে বলে ওঠে, 'মুনা সেদিন আমার কোনো দোষ ছিল না। আমি বের হয়েছিলাম৷ তোমার জন্যই বের হয়েছিলাম৷ অর্ধেক পথ যেতেই......' শরিফুলের কথা জড়িয়ে যায়। তার চোখে ঘুম নেমে আসে। সে ঘুমিয়ে যায়৷

চলবে........


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ